ভূতের কীর্তি
বৃষ্টির শব্দ বাতাসের
শব্দ কুয়াশা-ঢাকা আকাশ ঘিরে ভূতুড়ে অথবা সাংঘাতিক ফিসফিস রাত। সচল ল্যাপটপ, তবুও
এম. এস. ওয়ার্ডে টাইপ করার সময় সেই ভূতটিও কিছু এডিট করে বসে।
সেদিন টুম্পা বেশ বিচলিত
বোধ করছিল। ঘরভর্তি মানুষ। অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর কীর্তিকলাপ দেখতে আগ্রহে অপেক্ষমান
বন্ধু আত্মীয়স্বজন। এমন সময় পায়েলের মোবাইলে রিং হচ্ছে।
“হ্যালো... আরে এ তো
টুম্পার নম্বর!” পায়েল সবাইকে মোবাইল দেখালো।
ঝুম্পা, ঊষা, সুধা,
ঝর্না, রাজা, চিন্টু সবাই ভেজ প্যাটিস খাচ্ছে। পুলিশকাকু জিতেন্দ্র বোস-ও এসেছেন।
টুম্পার বাবা সমীরণ চক্রবর্তী সময় মতো থানায় এফ. আই. আর করেছেন।
জিতেন্দ্রকাকু কফির কাপে
চুমুক দিয়ে বললেন, “নম্বরটা একজনের আর ফোন করছে অন্য কেউ!”
সবাই সমস্বরে ভবলল,
“মানে?”
“মানে, এটা একটা সাইবার
ক্রাইম। এখানে হ্যাকার টুম্পার মোবাইল হ্যাক করে কল্ পাঠাচ্ছে পায়েলকে”।
ইতিমধ্যে টুম্পার
মোবাইলে রিং শুরু হয়ে গেল। পায়েল কল্ দিচ্ছে।
“পুরো ব্যাপারটা হ্যাকার
করে যাচ্ছে”। ঝুম্পা বলল।
ততক্ষণে ল্যাপটপ সচল হয়ে
গিয়েছে। টুম্পা এম. এস. ওয়ার্ডে টাইপ করতে বসল। কিন্তু প্রতিবার লেখাগুলো ডিলিট
হয়ে গেল।
জিতেন্দ্রকাকু ল্যাপটপের
সামনে বসে লিখলেন, “আমি লিখি, সেটা আপনি চান না, মিস্টার হ্যাকার?”
হ্যাকার লিখল, “হ্যাঁ,
কারণ আমি লিখতে পারছি না”।
“কেন?”
“ফেসবুক অ্যকাউন্ট,
কম্পিউটার, মোবাইল, মেল আইডি হ্যাক করার জন্য গল্প, কবিতা লেখার সময় পাচ্ছি না”।
“হ্যাকিংটা কি খুব জরুরি
কাজ?”
“না”।
“তবে এত মানুষকে বিরক্ত
করছেন কেন?”
“জাস্ট টাইম পাস। অন্যের
পার্সোনাল কথা শুনি”।
“আর কী কাজ করেন?”
“আর কিছু নয়”।
“ফুড আর শেল্টার কীভাবে
পান?”
“সুবলভাইয়ের বাড়ি থেকে
রোজ খাবার আসে – কাবাব, বিরিয়ানি এইসব। ওর বউয়ের সঙ্গে আমার প্যায়ার-মহব্বতও চলে।
এই আর কী! হা... হা... হা...!
“সে কী!”
“রোজ দশটা করে ঘুমের বড়ি
খাই, তবুও ঘুম আসে না”।
“সাইক্রিয়াট্রিস্ট
দেখান, সুস্থ হয়ে উঠবেন”।
“ফোন করো, প্লিজ
টুম্পাদি, অনেকদিন তোমার সঙ্গে কথা হয়নি!”
“এই ফোন থেকে তো ফোন হয়
না মিস্টার হ্যাকার!”
“মোবাইল থেকে করো দিদি”।
“আপনার নম্বর!”
“তোমার কাছে তো আছে
দিদি!”
“না তো!”
“মাসুম রনি নামে সার্চ
করো”।
ওনার কথা আলাদা। উনি
নির্বিরোধ মানুষ। আপনার নিজের নম্বরটা দিন, মিস্টার হ্যাকার”।
“আমি তো উনিই বলছি। আমিই
মাসুম রনি”।
“প্লিজ আপনার মোবাইল
নম্বরটা দিন”।
“কেন? ফেসবুকে আগের
চ্যাট দেখ”।
“আচ্ছা!”
“ও, তুমি তো সব চ্যাট
ডিলিট করে দিয়েছ, দিদি!”
“আপনার অমূল্য সময়
দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ, মিস্টার হ্যাকার”।
“আর ন্যাকামো করতে হবে
না। ঘরভর্তি লোকের কথাবার্তা শুনতে পাচ্ছি। চোপ্!”
হ্যাকড ল্যাপটপ হাতে
জিতেন্দ্রকাকু হাসতে হাসতে বললেন, “চিন্তার কিছু নেই। ল্যাপটপ এখন কিছুদিন
শ্বশুরবাড়ি থাকবে। টুম্পা, আমার একটা ল্যাপটপ বাড়িতে পড়ে আছে, ক’দিন ওতেই কাজ করিস্, মা!”
“কাকু, আমাদের
মোবাইলগুলো নেবে না?”
“হ্যাঁ মা, দে, সবগুলোর
একটু ট্রিটমেন্ট দরকার। আর ভূতটারও তো যথাযথ ব্যবস্থা করতে হবে!”
ভূতটা জিতেন্দ্রকাকুর
ঘাড়ে চেপে চলে গেল। টুম্পারা সবাই মিলে দৃশ্য-অদৃশ্য যুগ যুগান্তরের স্রোতে অন্তর
ভাসিয়ে ‘হম্ হোংগে কামিয়াব একদিন...’ গাইতে থাকল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন