অমর্ত্য মুখোপাধ্যায়
অথ ভারতপ্রসঙ্গ গীতোপাখ্যানঞ্চ
গীতাকে ভারতবর্ষের জাতীয় ‘গ্রন্থ’ করা নিয়ে একটি কুতর্ক চলছে। হয়তো কুতর্ক আর বেশি দিন থাকবে না। কারণ
জাতীয় ক্রীড়া কবাডি, জাতীয় পক্ষী ময়ূর, জাতীয় পশু বাঘ, আর জাতীয় ফুল পদ্মের
পাশাপাশি জাতীয় গ্রন্থ হিসেবে গীতা সাধারণ জ্ঞানের বইতে এসে যাবে। তাতে গীতার যে
খুব এসে যাবে তা নয়, তবে দেশের বোধহয় একটু এসে যাবে। কারণ একটি হিন্দু রাষ্ট্র হয়ে
ওঠার দিকে একটা খুব ছোট্ট ‘ঠুমক চলত’ পা ফেলবে দেশ। গীতা নিয়ে আলোড়ন তাই ঠিক ‘নেই
কাজ তো খই ভাজ’ গোছের ব্যাপার নয়। কিন্তু কুতর্কটিকে ঠিক মতো বুঝতে হলে একে আরো
বৃহত্তর প্রেক্ষিতে স্থাপন করতে হবে। সেই প্রেক্ষিতটি হলো ভারতরাষ্ট্রের
আত্মপরিচয়।
জাতীয় গ্রন্থ খোঁজার ব্যাপারটা অবশ্যই রাষ্ট্রের আইডেন্টিটি
বা আত্মপরিচয় খোঁজার সঙ্গে যুক্ত। যেমন ভারত স্বাধীন হওয়ার পর একদিন জবাহরলাল
নেহরু রাষ্ট্রের প্রতীক খুঁজতে বেরোলে তাঁর এই প্রতীক-সন্ধানের সংকট অসাধারণ মরমি
মুন্সিয়ানায় দেখিয়েছেন নৃতত্ত্ববিদ ম্যাক্কিম ম্যারিয়ট তাঁর ‘কালচারাল পলিসি ইন
দ্য নিউ স্টেটস’ প্রবন্ধে। ইংরেজরা আসার আগে ভারতকে মহাদেশীয়, সাম্রাজ্যিক
আয়তন দেওয়ার কারণে, তাঁদের রাজধানী নগরীর উত্তরাধিকারের কারণে, আর মুঘল ‘পলিটি’
থেকে আমাদের উত্তর-ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রযন্ত্রের অনেক উপাদান নেওয়ার কারণে
রাষ্ট্রপ্রতীক খোঁজার ব্যাপারে মুঘল প্রতীকিতা (সিম্বলিজম) ভীষণ
প্রাসঙ্গিক ছিল।১ আর শ্রীঅরবিন্দ মুঘল সাম্রাজ্য সম্পর্কে বলেছিলেন একটি মহৎ ও জমকালো নির্মাণ, আর ঔরংজেবের কথা বাদ দিলে, “সমসাময়িক মধ্যযুগের
বা তৎকালীন ইয়োরোপের যে কোনো রাজ্য বা সাম্রাজ্যের তুলনায় অনেক বেশী
উদার ও সহিষ্ণু’২ উপরন্তু ১৮৫৭ সালের
প্রথম সর্বভারতীয় ব্রিটিশবিদ্রোহের সময় এক বৃদ্ধ, দুর্বল, অশক্ত, অক্ষম দ্বিতীয়
বাহাদুর শাহ্কেই বিদ্রোহী চেতনার আশ্রয়বিন্দু করা হলো। কিন্তু ভারতের আছে অনেক
অতীত, যাদের কোনোটাই ভারতের সমস্ত লোকসমাজ/সম্প্রদায়, এমনকি সকল অংশের/খণ্ডের কাছে
সমভাবে গ্রহণীয় নয়। কোনো একরৈখিক, সাধারণ অতীত না থাকায়, ইতিহাসের অনেক উত্তুঙ্গ
মুহূর্তই সমাজের এক অংশ গৌরবান্বিত বলে স্মরণ করতে চাইলেও অন্যগুলি কলঙ্কজনক অ-লজ্জাকর হিসেবে
ভুলতে ব্যগ্র। এই অবস্থায় নেহরুকে হিন্দু বা
মুসলিম সম্রাট, রাজন্যবর্গকে ত্যাগ করে” প্রায় আড়াই হাজার
বছর পেছিয়ে, খোঁজ করতে হলো
আধ্যাত্মিক উৎকর্ষের দাবিদার এমন
এক স্বদেশী শাসকের, যিনি কোনো জাতপাত, কোনো যুদ্ধাক্রান্ত অঞ্চল বা কোনো ভীতিকর
বসা ভীতিগ্রস্ত ধর্মের সঙ্গে যুক্ত বসা সম্পর্কিত নন। এইভাবেই এলেন অশোক এবং তাঁর
স্তম্ভ ও চক্র।৩
কথায় বলে, সেই রামও নেই আর
সেই অযোধ্যাও নেই। নেহরুর সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা কোনো
সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী দল বা ‘পরিবারের’ থেকে আশা করাই বাতুলতা। কেন বাতুলতা, তার কারণ অনেক।
সুদীপ্ত কবিরাজ তাঁর ‘রিলিজিয়ন, পলিটিক্স এবং মডার্নিটি’ (১৯৯৫) প্রবন্ধে লিখলেন
দেখালেন “যদিও সাম্প্রদায়িকতাবাদ ধর্মকে চিৎকৃত উগ্রতায় ব্যবহার
করে, তবুও তাকে দেখতে হবে ধর্মীয় বিশ্বাসগুলির
নিঃশেষিতকরণের ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার, যাকে হ্বেবর নাম দিয়েছিলেন মোহভঙ্গ (disenchantment)”, এক দুঃখজনক, কিম্ভুত
অংশ হিসেবে। কবিরাজ দেখিয়েছিলেন
যে, এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ঔপনিবেশিক আধুনিকতার প্রেরণা, যা হিন্দুধর্মের
সমাজতাত্ত্বিক এবং ঐতিহাসিক ভাবে বিকেন্দ্রীকৃত কাঠামোর বিরুদ্ধে গিয়ে একটি ‘সেমিটিসাইজ্ড’ এককেন্দ্রিক হিন্দুধর্মের প্রস্তাব করে।৪ অমর্ত্য সেন তাঁর ‘সংকটের মুখে
ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতা’ প্রবন্ধে এই এককেন্দ্রিকায়নের একটি দিক হিসেবে তুলে ধরেন। তাঁর
বক্তব্যটিকে একটু বিশদে উদ্ধৃত করি:
“হিন্দু নেতারা ভারতীয় সভ্যতার প্রকৃত অবদানগুলির বিষয়ে — এমন
কি যা হিন্দু নেতাদের দ্বারাই সাধিত — সে সম্বন্ধে অবহেলা প্রকাশ করেন এবং জোর দেন অনিশ্চিত
প্রসঙ্গগুলির উপর। তাদের চোখে পড়ে না উপনিষদ বা গীতা অথবা ব্রহ্মগুপ্ত,
শঙ্কর, কালিদাস এবং শূদ্রকের রচনার উচ্চকোটির দর্শন ও মণীষা। তাঁদের পছন্দ রামের মূর্তি বা হনুমানের অবয়বের পূজা”।৫
হিন্দুধর্মের এই একমাত্রিক
সংকীর্ণায়ন কিন্তু রাম-হমুমান-সর্বস্বতায় থেমে থাকেনি। করিরাজ দেখিয়েছেন কীভাবে তার জন্য
রামবিগ্রহের ব্যাকরণ দূষণের দিকেও এগিয়েছে। তাই
বাল্মীকির ‘ধীরোদাত্ত নায়ক’, যা্ঁর প্রতিমার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ‘শান্ততা’ এবং
‘করুণা্’, তাঁকে বাবরি-পরবর্তী রাজনৈতিক
নির্বাচনী লড়াইয়ে দেখানো হয় যুদ্ধবাজ বা
রণোচিত চেহারায়, উত্তোলিত ছিলাটান ধনুতে শরসংযোগ করে হিংসায় উদ্যত হতে, সাধারণভাবে
ন্যায়ের এবং বিশেষতঃ একটি হিন্দুত্ববাদী
দলের সরকার গঠনের মহোদ্দেশ্যে।৬
এই দল ও পরিবারের সঙ্কীর্ণ হিন্দুত্বের সাম্প্রতিকতম অধ্যায়
গীতার জাতীয় গ্রন্থায়ণ প্রচেষ্টা। একে কুতর্ক বলছি এই জন্যেই যে এর পক্ষে বা
বিপক্ষে বলতে গিয়ে মুদ্রিত বা বৈদ্যুতিন মাধ্যমের অনেক বিদগ্ধজন এই প্রতর্কের
বহুস্তরীয় দিকটা খেয়ালই করছেন না। হাল্কা
ভাবে প্রশ্ন করা যায়, গীতা জাতীয় গ্রন্থ হলে অ-জাতীয় গ্রন্থ বা জাতীয় অ-গ্রন্থ কারা, কারা? কোন গ্রন্থ ‘বিজাতীয়’ সে
প্রসঙ্গ আনছিই না। যদিও আসে। দেরিদা আমাদের শিখিয়েছেন যে
দুটি শব্দের মধ্যে পরিষ্কার, উপরিতলের বিরোধিতা স্পষ্টত্ব এবং বিরোধিতা উভয় দিকের থেকেই বিভ্রমমূলক।
বরং তাদের সম্পর্ককে
অনেক ভালো করে দেখা যায় একটি কাঠামোগত ‘পরজীবিতা’ (‘parasitism’) সংক্রমণের (‘contamination’)-এর ভাষায়। কারণ দুটি শব্দের ‘মধ্যে’ (‘between’)পার্থক্য
প্রায় কখনোই তাদের ভিতরে স্বল্প-লুক্কায়িত পার্থক্যের থেকে আলাদা ভাবে থাকে না।
কোনো শব্দই বিশুদ্ধ, স্বয়ংসম্পূর্ণ, ঠিক নিজের মতো, অন্য শব্দের থেকে বদ্ধ,
রুদ্ধদ্বার থাকে না।
অস্থিতিশীলতার যে সব উপাদান প্রতি শব্দের উপরে চাপ দেয় সেগুলোকে বের করে আনা, আর
দুটি শব্দের মধ্যে ‘দান’ (‘give’) এবং ‘গ্রহণ’ (‘take’)-কে বের করে এনে, ‘বিশুদ্ধতার’ গোটা প্রশ্নটিকে তর্কায়িত
করাই ‘অবনির্মানের’ (‘deconstruction’) কাজ।৭ এখানে জাতীয় কথাটির অর্থ কী? ইংরিজিতে বললে ‘national’-এর
গণ্ডগোল নেই। কিন্তু ‘national’এর বাংলা কী? রবীন্দ্রনাথ আত্মশক্তি গ্রন্থের ‘নেশন কী?’ প্রবন্ধে ‘নেশন’-এর বাংলা করতে রাজি হন নি।
তার প্রধান কারণ ইংরিজি ‘নেশন’-এর মধ্যে ‘স্টেট’-এর দ্যোতনা আছে, বেনেডিক্ট
অ্যান্ডারসন কথিত ‘নেশন-স্টেট’-এর ‘হাইফেনের সংকট’ সত্ত্বেও।৮ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মরিস-জোন্স বলেছিলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই ভারতীয় রাষ্ট্র ক্রমাগতঃ ভারতীয় সমাজের কাছে
আসছে। আর ভারতীয় সমাজও ‘আমার মিলন লাগি তুমি আসছো কবে থেকে’ না গেয়ে রাষ্ট্রের
দিকে এগোচ্ছে। এই পারস্পরিক টানের কারণেই ভারতীয় রাষ্ট্র তার স্বাধীনোত্তোর প্রথম পনেরো বছর ঠিক কঠোর অর্থে ধর্মনিরপেক্ষতা অনুশীলন না
করে’ একটি ‘বহুধর্মীয় সাংস্কৃতিক কর্মপন্থা’ অনুসরণ করে, যা মধ্যে ছিল: (ক)ঐশ্লামিক,
হিন্দু এবং বৌদ্ধ গবেষণার প্রভূত কেন্দ্র স্থাপন; (খ) মন্দিরসমূহের সংস্কার; (গ)
কিছু হিন্দু মন্দিরে সাংবিধানিক সম্মতিতে বার্ষিক অর্থপ্রদান (যেমন ২৯০ক) ধারায়; (ঘ)
বিভিন্ন হিন্দু মন্দিরের শীর্ষে অন্য ধর্মের বা ধর্মহীন ব্যক্তিদের বসানো; (ঙ)
বিভিন্ন দেবতার, মহাপুরুষের বা ধর্মগুরুর জন্মদিনে সরকারি ছুটির অন্তর্ভুক্তি (কৃষ্ণ
শিব, বুদ্ধ, নানক এবং শেষে মহম্মদ); (ছ) ধর্মগুরুদের শিক্ষাগুলিকে ইতিহাসের বইতে
সাংস্কৃতিক শিক্ষার নামে ঠাঁই দেওয়া, তাদের ধর্মীয়/আধ্যাত্মিক গুরুত্বের কারণে নয়,
সেগুলি ভারতবর্ষের সাংস্কৃতিক মোজেইকের অংশ বলে।৯ ভারতের এই বহুসাংস্কৃতিকতার কারণেই মহাভারতের
ভীষ্মপর্বের শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা নামক ক্ষুদ্র অংশটিকে বাদশাহ শাহ্জাহানের জ্যেষ্ঠ
পুত্র দারা শিকো ফার্সি অনুবাদে আনলেন। আর বহু পরে, একেবারে হালে এস টি বেঙ্কট
অপালাচারী ‘নাগ্মে ইলাহি’ নামে উর্দূ ভাষায় অনুবাদ করলেন।১০
রাষ্ট্রিক
গ্রন্থ হিসেবে গীতার মহিমায়ন এই সাংস্কৃতিক কর্মপন্থা সহ এই সামাজিক (পরমত) সহিষ্ণুতারও বিরোধী, এবং সেই
কারণেই বিতর্কিত। আজো বিভিন্ন দলের অনেক অহিন্দু
রাজনৈতিক নেতা বলছেন, সমাজের ক্ষেত্রে ভারতবর্ষের সাংস্কৃতিক- ধর্মীয় বৈচিত্র্যের
কথা, আর আপত্তি জানাচ্ছেন গীতায়। ঠিকই তো, কোনো মুসলমান, খৃস্টান, বৌদ্ধ, জৈন গীতাকে জাতীয় গ্রন্থ করতে
চাইবেন কেন? রাষ্ট্রিক গ্রন্থ তো হতেই পারে না। কারণ সংবিধানের প্রস্তাবনা অনুযায়ীই ভারতীয়
রাষ্ট্র ধর্মনিরপেক্ষ। কোনো ধর্মগ্রন্থ তার রাষ্ট্রিক মুখপত্র/মুখপুস্তক হতেই পারে
না। কোনো বৈদ্যুতিন চ্যানেলে কয়েকদিন এক মুসলিম রাজনৈতিক
নেতা সঙ্গত কারণেই তাকে জাতীয় গ্রন্থ করা নিয়ে আপত্তি করছিলেন। তাতে অ্যাংকর একটু
অসহিষ্ণু হয়েই তাঁকে প্রশ্ন করলেন, গীতার
কোথায় ‘হিন্দু’ কথাটি আছে। মুসলিম রাজনৈতিক নেতা
প্রত্যাশা মতোই উত্তর দিতে পারেননি। জাতীয় গ্রন্থ না হওয়ায় এখনো তাঁকে গীতা পড়ানো যায়নি হয়তো। যেমন কোরানে ‘কাইয়ুম’ কথাটি আছে কিনা,
থাকলে ক’বার, অ্যাংকর তিনিও
বলতে নাও পারেন। যেমন ইয়ার্গে লুইস বোর্হেসের এই বক্তব্য যে গিবনের Decline and Fall of the Roman Empire
বইয়ের কথামতো যে কোরান আরবী বইয়ের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ তাতে উটের উল্লেখ নেই,১১ এই কথাটুকু কতটা সত্যি বা মিথ্যা, আর উটের বা
প্রজাপতির উল্লেখ থাকলে, কতবার আছে সেটাও হয়তো ওই অ্যাংকর বলতে পারবেন না। বোর্হেস তাঁর স্বভাবসিদ্ধ
ঢঙে একটা ভুল কথাকে সম্পূর্ণ অসম্পর্কিত বিষয়ের যুক্তি হিসেবে চালালেন কিনা,১২ তাও হয়তো বলতে পারবেন না।
নাই পারেন। কিন্তু ওই বিজয়গর্বী
অ্যাংকরকে আমার প্রশ্ন, (১) গীতার (শ্রীমদ্ভগবদ্)
বিশেষণটাও খেয়াল করলেন না? (২)গীতার নায়কদের (কৃষ্ণার্জুন) কথা ভাবলেন না? (৩)
নিজেকে প্রশ্ন করলেন না, কোন হিন্দু ধর্মগ্রন্থে ‘হিন্দু’ কথাটি আছে? বঙ্কিমচন্দ্র
তাঁর ‘Letters on Hinduism’ নামের এক অসমাপ্ত ইংরিজি পাণ্ডুলিপিতে কিছু কথা লিখেছিলেন।
ওই অ্যাংকর ও অন্যান্য সুধীজনের জ্ঞাতার্থে তার অক্ষম অনুবাদ করে
দিলাম:
“ভারতবর্ষের বিশাল লিখিত সাহিত্যের সমগ্রটায় অনুসন্ধান করো,
এবং কিছু আধুনিক লেখায়,
যেখানে কোনো হিন্দু মোসাহেবি ন্যাকামিতে নিজেদের বিজেতাদের শব্দ-ভাষাকে অনুবাদ
করতে চেয়েছেন সেখানে ছাড়া, হিন্দুধর্ম নামক কোনো বস্তুর উল্লেখমাত্র পাবে না।
মহম্মদীয় ভারতবর্ষের বিশাল নথিভাণ্ডারে অনুসন্ধান চালাও, কোথাও তুমি হিন্দু
শব্দটাও পাবে না, হিন্দু ধর্মের কথা বাদই দাও। ... হিন্দুত্ব (Hinduism)-
ধারণাটির আলোচনা করে এমন কোনো হিন্দু ধারণাই নেই (“There is no Hindu conception answering to the term ‘Hinduism’...”), যে প্রশ্ন নিয়ে
আমি এই পত্র শুরু করেছিলাম হিন্দুত্ব কী, তার উত্তর দেওয়া যায় কেবল যে বিদেশীয়রা
এই শব্দটি ব্যবহার করেন তাঁরা এর দ্বারা কী বোঝান তাকে দিয়ে”।১৩
আসলে গীতাকে নিয়ে প্রশ্ন, এই অহিন্দুদের আপত্তি নিয়ে নয় কেবল। প্রশ্ন, হিন্দুদের মধ্যেও গীতার যথার্থ স্থান কী?
একটা আপত্তি উঠছে গীতার ‘গ্রন্থত্ব’ নিয়ে, যাকে আমি প্রথমেই
পরিহার করছি। এক বিখ্যাত সংবাদপত্রে
জনৈক ঐতিহাসিক দেখিয়েছেন যে, গীতার গ্রন্থত্বের জন্য আমরা ঋণী ওয়ারেন হেস্টিংসের কাছে, যিনি কিনা চার্লস উইলকিন্স কর্তৃক
অনূদিত মহাভারত থেকে কৃষ্ণার্জুনের কথোপকথনটুকু আলাদা করে নিয়ে ১৮৭৫ সালে একে
ছাপালেন।১৪ কারণ এই কথা ধরলে অধিকাংশ হিন্দু পুরাণের গ্রন্থত্বের ইতিহাস শুরু করতে হয়
গুপ্তযুগ থেকে, যখন এগুলির ‘redaction’ হয়েছিল। আর ওই একই কাগজে একই দিনে আরেক বিখ্যাত দার্শনিক জানালেন, “বিগত
তিন হাজার বছরে ভারতীয়
ভাষাগুলিতে যত বই রচিত হয়েছে, তাদের মধ্যে সব থেকে প্রভাবশালী শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা”।১৫ গ্রন্থত্বের এরকম বিচার করলে প্রায় অধিকাংশ
ধর্মীয়-ঐতিহাসিক বইই গ্রন্থ হিসেবে
সমস্যায় পড়বে। আমরা ভারতীয় ধর্মগ্রন্থের ক্রমস্তরবিন্যাসে গীতার উঁচু/নিচু স্থান
নিয়েও ব্যস্ত নই। ঐতিহাসিক জানিয়েছেন, “মধ্যযুগে শঙ্কর,
রামানুজ দুজনেই গীতাকে
স্মৃতিশাস্ত্রের বর্গে ফেলেছেন”, নামে “পুরাণের চেয়ে ওপরে
কিন্তু শ্রুতির (বেদ) নিচে।
... বেঁচে থাকলে শঙ্কর, রামানুজ কেউই গীতাকে ‘জাতীয় গ্রন্থ’ বলতেন না”।১৬ আমার একটি ফেসবুকের
পোস্টে এক রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজও গীতার জাতীয় গ্রন্থত্বের বিরুদ্ধে এমন কথাই বলেছেন। যেন গীতা স্মৃতি, না
শ্রুতি, শঙ্কর ও রামানুজ তাকে নিয়ে কি বলতেন, এই
‘কাউণ্টারফ্যাচুয়াল’ প্রশ্ন নিয়ে ভারতরাষ্ট্রের ভাবার
কথা। যেন কবি সম্পর্কে প্লেটোর কথা অনুসরণ করে’ আমরা
এঁদের বলতে পারি না যে, আপনারা স্বধামে থাকুন। এই রিপাবলিকে আপনাদের স্থান নেই।
আসলে প্রশ্নটা বই হিসেবে গীতার উৎকর্ষ, তার অসাধারণ
সুললিত সংস্কৃত ও উচ্চ আধ্যাত্মিকতা নিয়েও নয়। শৈশবে পারিবারিক এবং বিদ্যায়তনিক অনুশাসনের ফলে গীতার সঙ্গে আমাদের পারিবারিক
পরিচিতি ও ভালোবাসা নিয়েও নয়। প্রশ্নটা হিন্দুধর্মের ও সংস্কৃতির চরিত্র নিয়ে। হিন্দুধর্ম কেবল যে একটি
অপ্রাতিষ্ঠানিক, প্রায় নৈরাজ্যিক ধর্ম তাই নয়, সেটি ‘নন-টেক্সটুয়াল’, অর্থাৎ সেখানে কোনো একমাত্র
ব্যবস্থাপ্রদত্ত (prescribed) ধর্মগ্রন্থও নেই।
হিন্দুধর্মের কোনো একক বাইবেল, কোরান, গ্রন্থসাহেব, ত্রিপিটক, ভেন্দিদাদ বা
জেন্দ-আভেস্তা নেই। হিন্দুধর্মের সৌন্দর্য ও অপূর্বত্ব এখানেই। ইউরোপীয়-ইংরাজি–পাশ্চাত্য
সমাজের অভিঘাতে, হিন্দুদের হীনমন্যতা দূর করার জন্য উনিশ-বিশ শতকেও একটি ‘textual
Brahmanism’ খাড়া করার চেষ্টা হয়েছে। রামমোহন আনতে
চেয়েছেন উপনিষদ; বঙ্কিম চেয়েছেন গীতা। দয়ানন্দ সরস্বতী প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন
বেদকে। বিবেকানন্দ চেয়েছেন গীতার একটি অংশ, কর্মযোগ। গান্ধির কিন্তু পছন্দ ছিল
রামচরিত মানস।১৭ জানা নেই দক্ষিণ
ভারতের, বিশেষতঃ তামিলনাডুর মানুষ থিরুভাল্লুভার-এর থিরুক্কুরালকে বাদ দেওয়া কী
চোখে দেখবেন। হিন্দুধর্মেও কি তাই ঐক্যমত্য আছে? গ্রন্থ হিসেবে রামায়ণ ও মহাভারতের দাবিই কি কম? রবীন্দ্রনাথ উভয়কেই বলেছিলেন “ভারতবর্ষের চিরকালের
ইতিহাস।... ভারতবর্ষের যাহা সাধনা, যাহা আরাধনা, যাহা সংকল্প, তাহারই
ইতিহাস এই দুই বিপুল কাব্যহর্ম্যের মধ্যে চিরকালের সিংহাসনে বিরাজমান”।১৮ এস. ওয়াজেদ. আলি তো তাঁর ‘ভারতবর্ষ’ প্রবন্ধে নিজের গ্রামে দীর্ঘকালব্যাপী
রামায়ণপাঠ দেখেই লিখলেন, “সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে”। কিন্তু কোন রামায়ণ? বাংলার ঘরে ঘরে তো
রামচরিত মানস পড়া হয় না, রাজনৈতিক উপদ্রবের
ফাঁকে সময় জুটলে তো কৃত্তিবাসই চলে! তবে গীতার মূলাধার মহাভারতই বা নয় কেন? যে কালে ‘যাহা নাই ভারতে, তাহা নাই (মহা)ভারতে’ একটি সুভাষিত
হয়ে গেছে! তাই সাধু সাবধান। ভারতবর্ষের ধার্মিকতা/
ধর্মনিরপেক্ষতা সবই ‘discursive’ বা বাচনমূলক,
সেখানে আমার কাছে গীতার স্থান আছে, সবার কাছে সংঘের চাপিয়ে দেওয়া গীতার নয়। হয়তো সংগঠিত রাষ্ট্রক্ষমতার সামনে আমরা
মশা, কিন্তু “মশা তার সংঘারামে বেঁচে থেকে জীবনের স্রোত ভালোবাসে”। এই সিদ্ধান্ত হঠকারী।
উচ্চ আধ্যাত্মিকতার, ত্যাগ-ট্যাগের কথাও গীতার প্রসঙ্গে
অনেকে বলে থাকেন। আসলে অনেক বইই অপঠিত থেকেই প্রভাব রাখে। কাঠামোবাদীদের ভাষায়, ‘Texts have effects
without being read’।১৯ গীতা অসাধারণ বই, কিন্তু কোনো নির্বিষ বই নয়।
বইটি শুরু হচ্ছে নিজের ভ্রাতা, আত্মীয়দের সামনের শত্রুশিবিরে দেখে এক সংশয়দীর্ণ,
ক্লৈব্যপ্রাপ্ত অর্জুনকে কৃষ্ণ কীভাবে যুদ্ধে প্রণোদিত করছেন
তা নিয়ে। কতকটা যেরকম
ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিন সৈনিকরা কোটার ২৫ শতাংশ কম গুলি ছুঁড়লে মার্কিন
চ্যাপলেনরা বাইবেল আউড়িয়ে সৈনিকদের উদ্বুদ্ধ করতেন, সেরকম। গীতার এরকম একটি ব্যাখ্যার সম্ভাবনা
বঙ্কিমচন্দ্র নিজেই তুলেছেন তাঁর ‘ধর্মতত্ত্ব’ গ্রন্থে, যদিও পরে তার দুর্বল
খণ্ডনও করেছেন। সেটি আগে একটু দেখিঃ
“গুরু। ... এই জন্য গীতা প্রকৃতপক্ষে ভক্তিশাশ্ত্র।
শিষ্য। কথাগুলি একটু অসঙ্গত লাগিতেছে। আত্মীয় অন্তরঙ্গ বধ
করিয়া রাজ্যলাভ করিতে অনিচ্ছুক হইয়া অর্জ্জুন যুদ্ধ হইতে নিবৃত্ত হইতেছিলেন, কৃষ্ণ তাঁহাকে প্রবৃত্তি দিয়া যুদ্ধে প্রবৃত্ত করিয়াছিলেন — ইহাই গীতার বিষয়। অতএব ইহাকে ঘাতকশাস্ত্র বলাই বিধেয়; উহাকে ভক্তিশাশ্ত্র বলিব কি জন্য?”
‘ধর্মতত্ত্ব’-এ
শিষ্যের এবম্বিধ উক্তি শুনে’ গুরু বঙ্কিম অনেক প্রসঙ্গ এনেছেন — যথা গীতার আংশিক
পাঠের দোষ, ‘অর্জ্জুনকে যুদ্ধে প্রবৃত্ত করাই যে এই গ্রন্থের [একমাত্র] উদ্দেশ্য
নয়’ সেটি, ‘যুদ্ধ মাত্র যে পাপ নয়’ সে প্রসঙ্গ, ‘আত্মরক্ষার্থে এবং স্বদেশরক্ষার্থ
যুদ্ধ যে ধর্ম্মমধ্যে গণ্য’ সেই প্রসঙ্গ। তারপর এনেছেন পুণ্যযুদ্ধতত্ত্ব,
মানে কী করে’ যুদ্ধও পুণ্যকর্ম হয়ে ওঠে তার ব্যাখ্যানে ‘ইউরোপীয় হিতবাদীর
উত্তর’-এর সীমাবদ্ধতা, এবং দ্বিতীয় ‘ভারতবর্ষীয়’ আধ্যাত্মিক উত্তর, যার জন্য কৃষ্ণ
‘আধ্যাত্মিকতা, অর্থাৎ আত্মার অনশ্বরতা প্রভৃতি, যাহা জ্ঞানের বিষয়’ যা ‘জ্ঞানযোগ
বা সাংখ্যযোগ নামে অভিহিত’ তা ছাড়াও ‘কর্ম্মযোগ’ ইত্যাদি।২০
বঙ্কিমকে এখানেই ছেড়ে গীতার মধ্যে একটু নিজের মতো ঘুরে
আমরা দেখি প্রভু কেবল অর্জুনকে এই
দেখালেন না যে তিনি জগৎ সৃষ্টি করার পর
থেকে শুরু হওয়া অনন্ত জন্মমৃত্যু চক্রে,
অবিনাশী আত্মার মধ্যে, অর্জুনের গুরু-আত্মীয়-বন্ধুরা যে কেবল ইতিমধ্যেই মৃত তাই
নয়, এইরকম ন্যায়যুদ্ধে মরলে অক্ষয় স্বর্গ আর জিতলে অক্ষয় যশ। দ্বিতীয় অধ্যায়ের
বাকিটুকু থেকে আটটি অন্যান্য অধ্যায়ে বিভিন্ন কর্মের ও ধ্যানের যোগ ছাড়াও
একাদশ অধ্যায়ে বিভিন্ন দিব্যদর্শনের
প্রকৌশলের সাহায্যে — মহাকাল, যোগমায়া – ইত্যাদির মাধমে
চতুর্দিকে শত্রুসৈন্যদের ইতিমধ্যেই ভবিষ্যতের দিকে উদ্দিষ্ট অতীতে মৃত, শায়িত ও
লম্বমান দেখিয়ে, কৃষ্ণ অর্জুনকে বোঝলেন যে, এই বিশাল যুদ্ধক্রীড়ায় তিনি ‘নিমিত্তমাত্রম্’। এতেও দোদুল্যমান অর্জুনকে ভোলাতে আনতে হলো
অতার্কিক নিবেদনের ভক্তিযোগ, যতক্ষণ না অর্জুনের মধ্যে অবিশ্বাসের লেশমাত্র না
দেখে, দয়ালু প্রভু তাঁকে জানালেন সব গোপন কথার শেষটি:
“সর্বগুহ্যতমং ভূয়ঃ শৃণু মে পরমং বচঃ।/ ইষ্টোহসি
মে দৃঢ়মিতি ততো বক্ষ্যামি তে হিতম্।। / মন্মনা ভব
মদ্ভক্তো মদ্যাজী মাং নমস্কুরু।/ মামেবৈষ্যসি সত্যং তে প্রতিজানে প্রিয়োহসি মে।।/ সর্বধরমাণ্পরিত্যজ্য
মামেকং শরণং ব্রজ।/ অহং ত্বা সর্ব পাপেভ্যো মোক্ষয়িষ্যামি ম্যা শুচঃ//”
সরলার্থ এই যে, অর্জুন এবার সব গুহ্যতত্ত্বের সবচেয়ে গুহ্যটি শোনো। তুমি আমার সবচেয়ে প্রিয় বলে আমি একমাত্র তোমার হিতের জন্য বলছি।
আমাতেই মনস্ক হও আমার ভক্ত, আমারি যাজক হও। এরকম করলে আমি সত্যি কথা দিচ্ছি, তোমাতেই থাকব,
তুমিও আমাকে পাবে প্রিয়তম হিসেবে। সব ধর্ম পরিত্যাগ করে’ আমারই শরণ নাও। আমিই তোমায়
সব পাপ থেকে মুক্তি দেব। ভেবো না।
এরকম পাপহীন হত্যার কথা অন্য প্রধান অহিন্দু ধর্মগ্রন্থেও
বলা আছে। বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেণ্টের ডিউটেরেনমি অধ্যায়ে ১৭:১২-১৩ স্তবকে বলা
হয়েছে ‘হেরেটিক’-দের ধর্মীয় হত্যায় যে কেউ অংশ নিতে দ্বিধান্বিত, তাকেও হত্যা করতে
হবে। গোটা উদ্ধৃতিটি কেউ চাইতে পারেন:
“When the issue in any lawsuit is beyond your competence, whether it be a case of blood against
blood, plea against plea, or blow against blow, that is disputed in your courts, then go up without delay to the
place which the Lord your god will choose. There go up to the Levitical priests or to the judge then in office; seek
their guidance, and they will pronounce the sentence. You shall act on the pronouncement which they make from the place
which the Lord will choose. See that you carry all their instructions. Act on
the instruction which they give you, or on the precedent that they cite; do not
swerve from what they tell you, wither to the right or to the left. Anyone who presumes to reject the decision
either of the priest who ministers there to the Lord your God, or the judge
shall die; thus you will rid Israel of wickedness. Then all the people
shall hear of it and be afraid, and will never again so such presumption.”২১
অথবা ১৭:২-৭ স্তবকে বলা হয়েছে, পাথর
ছুঁড়ে হত্যা করতে হবে সেই লোকটিকে, “who does what is wrong in the eyes of
the Lord your god, by breaking his covenant and going to worship and
prostrate other gods and prostrating himself before the sun and moon and all
host of heaven’, after
‘thorough inquiry’ and ‘on the testimony of two or three witnesses”। এই রকম অধ্যাদেশ আছে ওল্ড টেস্টামেণ্টের অন্যত্রও।২২ এর সঙ্গে তুলনা করা যায় পবিত্র কোরানের, যার ৯.৭৩ এর প্রথম সুরাতে বলা হচ্ছে, সকল
অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামতে, তাদের নরকে পাঠাতে, এক দুরদৃষ্টের দিকে; অথবা
কোরানের ৯.১২৩ সুরা, যেখানে নবী বলছেন, “বিশ্বাসীরা, তোমাদের
চারধারের অবিশ্বাসীদের সঙ্গে যুদ্ধ কর; তাদের দৃঢ়ভাবে মোকাবিলা কর; জেনো ঈশ্বর
ন্যায়পরায়ণদের সঙ্গেই আছেন”।
ধর্মে বড় গণ্ডগোল। যে গীতাকে নিয়ে এত উদ্দীপনা, তার রচনাস্থল কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ, যা কিনা হিন্দু
আদর্শতত্ত্বের অনেক প্রাক-পুরুষের মতেই প্রাচীন ভারতবর্ষের পৃথিবীব্যাপী আর্য
প্রভুত্বের স্বর্ণযুগের শেষ জলবিভাজক অধ্যায়। দয়ানন্দ
সরস্বতী তাঁর ‘সত্যার্থ প্রকাশ’ গ্রন্থে বলেছেন, কুরুক্ষেত্র
যুদ্ধের পর থেকেই শুরু হয় অবক্ষয়। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের
প্রাণপুরুষ কৃষ্ণ। তাঁর বাণী গীতাকে নিয়ে আবার কুরুক্ষেত্র কেন?
১৯২৭ সালে নোবেলজয়ী উপন্যাস Great Hunger-এ ইয়োহান বয়ার লিখেছিলেন যে, এই যুগের
ট্র্যাজেডি হলো এই যে, আমরা নিজেদের দৈবত্বের
ধারণাকে কাটিয়ে, এগিয়ে গেছি। কোনো
রক্ততৃষু জিহোভা, বা কোনো জিভ লকলকানো কালী আর আমাদের সন্তুষ্ট করতে পারেন না।
তিনি বলছেন, “God? They find a bloodthirsty Jehovah and an ascetic on
the cross. What gods are these for modern men? Religious history, not religion”।২৩
ভারতবর্ষের সাংস্কৃতিক মোজেইকের উপযোগী কোনো জাতীয় গ্রন্থের
খোঁজ যদি করতেই হয়, (না করলেই ভালো, কোন দেশে
বা আছে?) ‘গীতাঞ্জলি’ কী দোষ করলো? তার ভিতরকার যে ধর্ম, তা সব আনুষ্ঠানিক
ধর্মের উপরে যায়? অথবা ‘পত্রপুটে’র ১৫নং কবিতা? বিভিন্ন
রঙের নেতারা মানবেন?
১) McKim Mariott, ‘Cultural Policy in the
New States’, in Clifford Geertz (ed.), Old Societies and New States: The
Quest for Modernity (New Delhi: Amerind, 1971), pp. 27-56.
২) Sri Aurobindo, Spirit and The Form of
Indian Polity (New Delhi: Arya publishing House, 1947), pp. 86-89.
৩) Mariott, ‘Cultural Policy’, pp. 34-36.
৪) Sudipta Kaviraj,’ ‘Religion, Politics and Modernity’, in
Upendra Baxi and Bhiku Parekh (eds.), Crisis and Change in Contemporary
India (New Delhi: Sage, 1995), pp. 306-12.
৫) অমর্ত্য সেন.
‘সংকটের মুখে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতা’ (কলকাতা: নোডাল রিসার্চ সেণ্টার, ১৯৯৩), পৃ: ২৫।
৬) Kaviraj, ‘Religion’, p. 309.
৭) Richard Devetak, ‘Postmodernism’, in
Scott Burchill et al, Theories of
International Relations (Hampshire and New York: Palgrave, 2001), p.187;
Jacques Derrida, Voice and Phenomenon:
Introduction to the Problem of Sign in Husserl’s Phenomenology, tr. from
the French by Leonard Lawlor (Evanston, Illinois: Northwestern University
Press, 2011), p.17-19; Leonard Lawlor, Derrida
and Husserl: The Problem of Phenomenology (Bloomington: Indiana University
Press, 2002), pp. 186, 155.
৮) Benedict Anderson, ‘Introduction’, in G. Balakrishnan (ed.) Mapping
the Nation (New York: Verso, 1996), p.8.
৯) Mariott, ‘Cultural Policy’, pp. 34-36.
১০) অরিন্দম চক্রবর্তী,
‘গীতা নামক গ্রন্থ কথাটাই অর্থহীন’, যত্র, আনন্দবাজার পত্রিকা, ১০
ডিসেম্বর ২০১৪, পৃ: ১৬।
১১)
Jorge Luis Borges,
‘The Argentine Writer and Tradition’, Labyrinths:
Selected Stories and Other Writings, tr. James E. Erby (New York: New Directions, 1964), pp. 177-85,
esp. 181।
১২) Alonso-র নিজের কথায়, ‘this is another example of the typically
Borgesian maneuver of manufacturing sources in order to advance an argument
based on their authority.’ দ্রঃ Carlos J Alonso, The Spanish American Regional Novel:
Modernity and Autochthony (Cambridge; New York: Cambridge University Press, 1990), p. 167.
১৩) ‘Letters on Hinduism’, Bankim Racanbali
(English Works), Volume III, সঃ যোগেশচন্দ্র বাগল (কলকাতাঃ সাহিত্য সংসদ, 1969),
পৃ: 230-31.
১৪)
গৌতম চক্রবর্তী, ‘”জাতীয় গ্রন্থ” ঘোষণার আগে গীতার রহস্য একটু
জেনে নিলে ভাল হয়’, যত্র, আনন্দবাজার পত্রিকা, ১০
ডিসেম্বর ২০১৪, পৃ: ১৬।
১৫) চক্রবর্তী, ‘গীতা’।
১৬) চক্রবর্তী, ‘”জাতীয় গ্রন্থ”’।
১৭)
Ashis Nandy, At the Edge of
Psychology (Delhi: Oxford University Press, 1993), pp. 57-62.
১৮)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,
‘রামায়ণ’, যত্র প্রাচীন সাহিত্য, রবীন্দ্ররচনাবলী, ১২৫তম রবীন্দ্রজন্মজয়ন্তী সুলভ
সংস্করণ, তৃতীয় খণ্ড, পৃ: ৭১২।
১৯) Nicholas Royle, After Derrida (Manchester: Manchester
University Press, 1995), pp. 2-7, 160.
২০)
বঙ্কিমচন্দ্র
চট্টোপাধ্যায়, ‘শ্রীমদ্ভগগবদগীতা’’ বঙ্কিম রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড,
সঃ যোগেশচন্দ্র বাগল (কলকাতাঃ সাহিত্য সংসদ, ২০০৪), পৃ: ৫৬৪-৬৫।
২১) ‘Deuteronomy’, The New English Bible: The Old Testament (Cambridge: Cambridge University Press,
1970), p. 257.
২২) Ibid, p. 253, 233-38
২৩) Johan Bojer, The Great Hunger, translated
by W.J. Alexander Worster and C Archer (Calcutta: Rupa Paperback, 1962), pp.157-58.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন