একটি
চপারের দিন ও রাত
হত্যা কি উপায়ে শিল্প হয়ে ওঠে, তা
চৈতন্যর থেকে শেখা যায়। কাঠের গোল গুঁড়িটার ওপর রেখে সে যখন গরম মাংসের মধ্যে দিয়ে
চপারের এলোপাথাড়ি আদর চালাতে থাকে, চপারের মসৃণ নৃশংসতায় খদ্দেরের চোখ আঠার মতো আটকে
যায়। বাবু বসাক, দিলীপ পাঁজারা অথবা বাবু পাঁজা, দিলীপ বসাকরা তখন যেন নিজেদের
দেখতে পান ওই চপারে। চৈতন্যর চপার তার খদ্দেরদের ঈর্ষায় চকচকে হয়ে ওঠে আরো।
অবসর সময়ে চপারটা মা কালী ভান্ডারের
ক্যালেন্ডারের বামদিক ঘেঁষে রাখা পেরেকে ঝুলতে থাকে। যত্ন করে ধুয়ে রাখা চপারটায়
তখন রাস্তায় বসে থাকা আগ্রহী কুকুরের ছায়া। কুকুরেরা খাঁচার মুরগীগুলোকে দেখে,
মুরগীরা দেখে কুকুরদের, একটা মৃত্যুর অপেক্ষা ছাড়া আর কোনো মিল নেই দু’তরফের এই চেয়ে থাকায়। চৈতন্য
তিন চারটে কুকুরের মধ্যে ভুলুকে পক্ষপাতিত্ব করে বড় হাড়ের টুকরোগুলো ছুঁড়ে দেয়।
হাড়ের ছায়া পড়ে চপারটা আরো উজ্জ্বল দেখায়। এছাড়াও রাস্তা পার হয়ে যাওয়া রিক্সা,
অটো, ভ্যানদের ছায়া পড়ে চপারে, হাওয়ায় প্রবল দুলতে থাকা শিরীষ গাছের ছায়াও পড়ে।
মাঝে মাঝে বেড়ার ফাঁক দিয়ে রোদও পড়ে চপারের গায়ে। তখন তাকে বড়ই নিরীহ দেখায়। চৈতন্য
রেডিওর আওয়াজ কম করে বেঞ্চে শুয়ে ঘুমিয়ে নেয় খানিক।
চৈতন্য জেগে উঠলে চপারও জেগে ওঠে। খাঁচায়
মোরগ মুরগীরা অবশ্য ঘুমোয় সারাক্ষণই। ঘুমিয়ে
ঘুমিয়ে ক্ষুধা অগ্রাহ্য করা যায় জানে বলে ওরা ভেবেছে ওভাবে মৃত্যুকেও অগ্রাহ্য করা
সম্ভব। মাংসের দোকানে তাই ভোর হলে মোরগ ডেকে ওঠে না, চপারের আঘাতে বাধ্য হয়ে ডেকে
ওঠার অভ্যেস তৈরি হয়ে গেছে ওদের। আর ডেকে উঠতেই রেডিওর আওয়াজ বাড়িয়ে দেয় চৈতন্য,
-“আহ্, ঘ্যামা গান দিয়েছে!”
বাবু বসাক, দিলীপ পাঁজারা অথবা বাবু পাঁজা, দিলীপ বসাকরা কালো প্লাস্টিকের প্যাকেটে গরম মাংসদের ঘরে নিয়ে গেলে চৈতন্যও ফেরে। চপার ঘুমোতে যায়। খাঁচাগুলো ফাঁকা পড়ে থাকে ফুটপাথে। ফাঁকা নয়, মুরগীদের মরা স্বপ্নের পালকগুলো ওড়াউড়ি করে সেখানে।
-“আহ্, ঘ্যামা গান দিয়েছে!”
বাবু বসাক, দিলীপ পাঁজারা অথবা বাবু পাঁজা, দিলীপ বসাকরা কালো প্লাস্টিকের প্যাকেটে গরম মাংসদের ঘরে নিয়ে গেলে চৈতন্যও ফেরে। চপার ঘুমোতে যায়। খাঁচাগুলো ফাঁকা পড়ে থাকে ফুটপাথে। ফাঁকা নয়, মুরগীদের মরা স্বপ্নের পালকগুলো ওড়াউড়ি করে সেখানে।
গভীর রাতে, বউটা পাশে শুতে এলে চপার জেগে
ওঠে হঠাৎ। চৈতন্য গরম মাংসের মধ্যে দিয়ে এলোপাথাড়ি চপার চালিয়ে দেয় অভ্যাস মতো। চপারের আঘাতে বউটা বাধ্য হয়ে
ডেকে ওঠে। চপারের মধ্যে চৈতন্য তখন নিজেকে দেখতে পায়। চৈতন্য রাত বিরেতে চপার হয়ে
যায়। বউটা কঁকিয়ে চলে সমস্ত রাত, তার চোখ
গোল গোল হয়ে যায় যন্ত্রণায়। গরম মাংসের মধ্যে থেকে চপার বের করে আনতে আনতে চৈতন্য
দেখে চপারের গায়ে দু’ একটা আলগা হাল্কা পালক লেগে
আছে। হত্যা তখন শিল্প হয়ে যায় আর চৈতন্য - চপার
শিল্পী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন