খোকা ও নীরা
রুগ্ন অসুস্থ বাচ্চারা কোথায় যায়? অসুস্থ অসম্পূর্ণ মানুষ
কোথায় যায়? ছেলেবেলার কালবোশ তক্তাপোষ কোথায় গেল? ইদানীং রাত হলে ব্যাটারি চালিত
ট্রানজিস্টার খুঁজি, যার ব্যাটারি কিনতে গিয়ে খোকা হারিয়ে গেল। অহরহ ঘ্যার্ঘ্যারে
গান শুনত সে। তার হেডফোন ছিল না। ট্যাব্ ফ্যাব্ তখনও ওঠেনি। রাতের বেলা খুব বেশি
হলে ফিলিপ্স্-এর ট্র্যানজিস্টার। মহঃ রফি, কিশোরকুমার, মান্না দে। খোকার একটা
ঘর ছিল। নিজস্ব। লম্বা মতোন। অনেকটা করিডোর করিডোর। তাতে একটাই জানালা ছিল। খোকার একটা শক্ত মতোন হারমোনিয়ম ছিল। দড়িতে
নোংরা জামা ঝুলত। কেউ কেচে দিত না বলে খুব
নোংরা একটা লুঙ্গি পরেই সে জীবন কাটিয়ে দেয়। সেই খোকা গান গাইত। হারমোনিয়ম বাজিয়ে
বাজিয়ে। আমি শুনতাম। একটা চোখ খারাপ ছিল বলে সে চশমা পড়ত। সেটা কালোচশমা কি না, আজ
আর মনে নেই। তারপর কী হলো? এত বছর বাদে, তারা সব কোথায় গেল? বালিগঞ্জে এখন
কারা কারা থাকে? তারা কী খায়? চাকরিবাকরি
কী করে? কিছুই জানা যায় না। শুধু, ছুটির দিনে সেই রাস্তার ওপর থেকে দুটো কুকুর
ছুটে যায়। রাস্তাঘাটে কুকুরের অসম্ভব সুন্দর বাচ্চা। কে 'কুত্তার বাচ্চা'
বলে গাল দিলে? রাস্তায় ঠ্যাং উলটে পড়ে থাকতে
থাকতে খোকার মতোই নীরাকেও দেখছি। সেই কবিতার
বইটা ছাতের তুলসীমঞ্চে ফেলে এসেছিলাম। এতদিন বাদেও সেটা ঠিক সেরকমই আছে। হাতে
ধরতেই পাতাগুলো ভেঙে গেল। একটা কবিতাও পড়া গেল না গো, সুনীলবাবু! খোকার
হারমোনিয়মের রিড্ টিপে ধরলেও সরগম বের হয় না আজকাল। সেই করিডোরের মতো ঘরটায় এখন
কারা থাকে? তারাও কি ট্রানজিস্টার শোনে? কী খায়-দায়? ক’বার লাগায়? এই বাস্তব
সত্যগুলো ফেস্ করতে ভয় করে। ভয় করে রাত হলে। কেন না এখন যৌবন কথা শোনে না। নিজের
ইচ্ছেতেও সব কিছু হয় না। তার সঙ্গে আরও অনেক রকম ফ্যাক্টর জুড়ে যায়। উঠতে নামতে
ভয়ে ভয়ে থাকি। কেউ বুঝি দুর্বলতা ধরে ফেলে! আমি খোকার হারমোনিয়ম খুঁজি। অথবা,
নীরার মতো প্রেমিকের চওড়া বুক?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন