সুমন্ত
চট্টোপাধ্যায়
দিয়েত্রিচ (তিন)
আত্মান্বেষী সত্তার সব শিকড় এসে মিশেছে
প্রাচ্যের মশাল হাতে দাঁড়ানো ভারতবর্ষে
শীতল প্রতীচী থেকে বহু বহু দূরে
বণিকের সুদীর্ঘ জলযাত্রা এসে ফুরিয়েছিল
লেফাফাদুরস্ত কলকাতার কোলাহল বন্দরে,
পরিচয় ফাঁস হওয়া দুটো নীল চোখ
পাশ কাটিয়ে গেছিল কিছু ইংরেজ চাহনি
কৌশলে পর্যটকের উদাস ভঙ্গিমায়
গ্যাসবাতির আলো-হাতেটানা রিক্সা-মানুষের ভিড়ে
দিয়েত্রিচ ঘুরে বেড়িয়েছিল রাস্তার পর রাস্তায়,
হয়তো সাদা চামড়ার অজানা আকর্ষণে
এক বাঙালি ভদ্রলোক আলাপ জমিয়েছিল
হাওড়া ব্রিজে দাঁড়িয়ে থাকা এককোণে
বেশ কয়েকবার তার সাথে একাকী দিয়েত্রিচ
মনের কথা খুলে বলা সুন্দরী বিকেলে
জেনেছিল সে গোপনে যুক্ত বিপ্লবী দলে,
সেই দলের পরিকল্পনা-আয়োজন দেখে
আগ্রহী হাত বিলিয়ে দিয়েছিল পৈতৃক
সম্পত্তির সব অর্থ স্বাধীনতার লক্ষ্যে,
বিনিময়ে বাঙালি ভদ্রলোক ব্যবস্থা করে
দিলেন সদয় জার্মানের ঈপ্সিত কুম্ভযাত্রার।
প্রয়াগতীর্থের পথে লাখ লাখ পুণ্যার্থীর
পায়ের সাথে ভিড়লো দিয়েত্রিচের পা
গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতীর ত্রিবেণী সঙ্গমে
ডুব দিয়ে শুরু মুক্তির পথ খোঁজার পালা
সন্ন্যাসী-নিঃস্ব-নাগাসাধুদের দলে
যোগ দিয়ে বদলে যায় বেশভূষা
সাদা ধুতি-একমুখ দাড়ি-শরীর দেউলিয়া
ধীরে ধীরে যেন বহুযুগ সময়ের নখরে
কল্কের ধোঁয়ায় সব নীল হয়ে যায়
মকর সংক্রান্তিতে গঙ্গাসাগরের পবিত্র স্নানে
মোক্ষলাভের আলো মরীচিকার মতো
দূর থেকে দূরে ভেসে যেতে থাকে
বেনারসের বইতে থাকা প্রদীপের শিখরে
মেরীর হাসিমুখ-সন্তানের স্পর্শসুখ
হারিয়ে যায় সুদূর কৃষ্ণের গভীরে
একবিশ্ব প্রশান্তির ভেতর
এগিয়ে চলা পরমাত্মার পথ ত্যাগের
ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তুর মায়া ছাড়িয়ে একবার
আবার শেষবার তাঁর মুখোমুখি হবার
সব শিল্পের ওপরে যে শিল্প
সেই শিল্পের মাধুর্য উপলব্ধি করার
ঘনঘোর ছেঁড়া বুনো চোর সন্দেহে
জেলের শক্ত লোহার পিছনে কেন
ব্রিটিশ বেত্রাঘাতের জটিল ক্ষত!
সেই বিপ্লবী দলের এক সদস্যের দয়ায়
শেষমেষ মুক্ত হওয়া-মুক্তি পাওয়া
আবার পুরনো ভবঘুরে জীবনে,
ঈশ্বর তার জন্য কী সাজিয়ে রেখেছেন
অকাল চেতনার ঝলসানো গহীনে!
আবার কলকাতায় ফিরে আসা বহুবছর
পর বিশ্বযুদ্ধে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে
হাতছানি দেওয়া প্রাণের জার্মান ঘর,
দিয়েত্রিচের নীল চোখে জল আসে না
কিছু খাপছাড়া স্মৃতি ভাসে বার্লিনের দিকে
পাড়ি দেওয়া অনন্ত জলরাশিতে ...
আত্মান্বেষী সত্তার সব শিকড় এসে মিশেছে
প্রাচ্যের মশাল হাতে দাঁড়ানো ভারতবর্ষে
শীতল প্রতীচী থেকে বহু বহু দূরে
বণিকের সুদীর্ঘ জলযাত্রা এসে ফুরিয়েছিল
লেফাফাদুরস্ত কলকাতার কোলাহল বন্দরে,
পরিচয় ফাঁস হওয়া দুটো নীল চোখ
পাশ কাটিয়ে গেছিল কিছু ইংরেজ চাহনি
কৌশলে পর্যটকের উদাস ভঙ্গিমায়
গ্যাসবাতির আলো-হাতেটানা রিক্সা-মানুষের ভিড়ে
দিয়েত্রিচ ঘুরে বেড়িয়েছিল রাস্তার পর রাস্তায়,
হয়তো সাদা চামড়ার অজানা আকর্ষণে
এক বাঙালি ভদ্রলোক আলাপ জমিয়েছিল
হাওড়া ব্রিজে দাঁড়িয়ে থাকা এককোণে
বেশ কয়েকবার তার সাথে একাকী দিয়েত্রিচ
মনের কথা খুলে বলা সুন্দরী বিকেলে
জেনেছিল সে গোপনে যুক্ত বিপ্লবী দলে,
সেই দলের পরিকল্পনা-আয়োজন দেখে
আগ্রহী হাত বিলিয়ে দিয়েছিল পৈতৃক
সম্পত্তির সব অর্থ স্বাধীনতার লক্ষ্যে,
বিনিময়ে বাঙালি ভদ্রলোক ব্যবস্থা করে
দিলেন সদয় জার্মানের ঈপ্সিত কুম্ভযাত্রার।
প্রয়াগতীর্থের পথে লাখ লাখ পুণ্যার্থীর
পায়ের সাথে ভিড়লো দিয়েত্রিচের পা
গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতীর ত্রিবেণী সঙ্গমে
ডুব দিয়ে শুরু মুক্তির পথ খোঁজার পালা
সন্ন্যাসী-নিঃস্ব-নাগাসাধুদের দলে
যোগ দিয়ে বদলে যায় বেশভূষা
সাদা ধুতি-একমুখ দাড়ি-শরীর দেউলিয়া
ধীরে ধীরে যেন বহুযুগ সময়ের নখরে
কল্কের ধোঁয়ায় সব নীল হয়ে যায়
মকর সংক্রান্তিতে গঙ্গাসাগরের পবিত্র স্নানে
মোক্ষলাভের আলো মরীচিকার মতো
দূর থেকে দূরে ভেসে যেতে থাকে
বেনারসের বইতে থাকা প্রদীপের শিখরে
মেরীর হাসিমুখ-সন্তানের স্পর্শসুখ
হারিয়ে যায় সুদূর কৃষ্ণের গভীরে
একবিশ্ব প্রশান্তির ভেতর
এগিয়ে চলা পরমাত্মার পথ ত্যাগের
ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তুর মায়া ছাড়িয়ে একবার
আবার শেষবার তাঁর মুখোমুখি হবার
সব শিল্পের ওপরে যে শিল্প
সেই শিল্পের মাধুর্য উপলব্ধি করার
ঘনঘোর ছেঁড়া বুনো চোর সন্দেহে
জেলের শক্ত লোহার পিছনে কেন
ব্রিটিশ বেত্রাঘাতের জটিল ক্ষত!
সেই বিপ্লবী দলের এক সদস্যের দয়ায়
শেষমেষ মুক্ত হওয়া-মুক্তি পাওয়া
আবার পুরনো ভবঘুরে জীবনে,
ঈশ্বর তার জন্য কী সাজিয়ে রেখেছেন
অকাল চেতনার ঝলসানো গহীনে!
আবার কলকাতায় ফিরে আসা বহুবছর
পর বিশ্বযুদ্ধে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে
হাতছানি দেওয়া প্রাণের জার্মান ঘর,
দিয়েত্রিচের নীল চোখে জল আসে না
কিছু খাপছাড়া স্মৃতি ভাসে বার্লিনের দিকে
পাড়ি দেওয়া অনন্ত জলরাশিতে ...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন