সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

০৭) সৈয়দ মাজহারুল পারভেজ


মুরগী শাহর মাজার


মসজিদ আর মাজারের শহর হিসেবে ঢাকার নাম সবর্জনবিদিত। বিশেষ করে পুরনো ঢাকার অলিতে গলিতে মসজিদ আর মাজারের ছড়াছড়ি। কিছু কিছু গলির নামগুলোও  ভারী অদ্ভুত পাতলা খান লেন, গরম পানির গলি, চিকন  মিয়ার গলি, ভূতের গলি -- এ রকম সব অদ্ভুত অদ্ভুত নাম। আর ঢাকার  অলিতে গলিতে মাজারে মাজারে ভরপুর। গোলাপ শাহর মাজার, বাক্কু শাহর মাজার, মাক্কু শাহর মাজার, কাল্লু শাহর মাজার, এমনি অসংখ্য পীর-আওলিয়ার  মাজারে ভরে আছে ঢাকা শহর পুরনো ঢাকার চিকন মিয়ার গলির মুরগী শাহর মাজার’এ সব সময় ভক্ত-আশেকানদের ভিড় লেগেই থাকে। ভক্তরা রাতে মাজারে পানির বোতল, তেলের বোতল রেখে যায়। পরদিন সকালে নিয়ে যায়। তাদের ধারণা, রাতে মুরগী শাহ বাবা এ সব পানি, তেল পড়ে রাখে। আর সেই পানি পড়া খেয়ে, তেল গায়ে-মুখে মেখে অনেকের অনেক কঠিন অসুখও নাকি ভালো হয়ে যায় কেউ চাকরি পাচ্ছে না, কারো ছেলে বারবার পরীক্ষায়  ফেল করছে, কারো মেয়ে কালো বলে বিয়ে হচ্ছে না! কোনো চিন্তা নেই। মুশকিল আছান মুরগী শাহ বাবা তো আছেই সব মুশকিল আছান হয়ে যাবে

মুরগী শাহর মাজারটা গড়ে ওঠার পেছনে নাকি এক চটকদার গল্প আছে মুখরোচক সে গল্প এখনও সবার মুখে মুখে ফেরে। সে অনেকদিন আগের কথা।  একদিন একটা চিল একটা মুরগীর বাচ্চা ধরে নিয়ে উড়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ করে চিলের ঠোঁট ফসকে মুরগীছানা চিকন মিয়ার গলির একটা একতলা বাড়ির ছাদে গিয়ে পড়ল। চিল আবার ধরার আগে সে বাড়িরই ছেলে অর্ণব আরেক  চিলের মতো দৌঁড়ে গিয়ে ছোঁ মেরে মুরগীছানাটি ধরে কোলে তুলে নিলো। চিলটা মাথার ওপরে অনেকক্ষণ ওড়াউড়ি করে নিরাশ হয়ে চলে গেল। এরপর অর্ণব অনেক সেবা-শুশ্রূষা করে মুরগীছানাটিকে সুস্থ করে তুল। সবার আপত্তি সত্ত্বেও সে মুরগীছানাটি পোষার সিদ্ধান্ত নিলো


দিন যায়, মাস যায়। মুরগীছানাটি ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। শৈশব কৈশোর পেরিয়ে একসময় ভরা যৌবনে উপনীত হয়। মুরগীছানাটি পরিণত হয় মুরগীতে। পেটে ডিম আসে। ডিম পাড়ে, ডিমে তা দেয়, বাচ্চা ফোটায়। বছর ঘুরতে থাকে। একটি দু’টি করে সেই কুড়িয়ে পাওয়া মুরগীছানার বাচ্চার সংখ্যাও বাড়তে থাকে। এক সময় সে সংখ্যা সত্তর ছাড়িয়ে যায়। সেদিনের সেই মুরগীছানাও পরিণত হয় বুড়ো মুরগীতে। তবে তাতে সে মুরগীর প্রতি অর্ণবের ভালোবাসা এতটুকু কমেনি।

ঘটনাটি যখন ঘটে তখন অর্ণব বাড়িতে ছিল ন। কলেজে গিয়েছিল। কলেজ থেকে ফিরে দেখল, তার প্রিয় মুরগীটা মরে পড়ে আছে। মুরগীটার যে অসুখ হয়েছিল, বুঝতে পারেনি ক’দিন আগেও ভ্যাকসিন দিয়েছিল তারপরও মরে গেল

মুরগীর শোকে অনেক কাঁদল অর্ণব। মরা মুরগীটাকে ফেললো না বাড়ির সামনে রাস্তার পাশে মাটি খুঁড়ে কবর দিয়ে রাখলো এরপর কিছুই মনে না  করে দুষ্টুমি করে কবরের ওপর একটা লাল সালু বিছিয়ে দিল পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মুরগীর কবর দেখতে গিয়ে অর্ণব অবাক চোখে দেখলো,  মুরগীর কবরের ওপর লাল সালুতে সিকি আধুলি কয়েন নোট মিলিয়ে অনেকগুলো টাকা পড়ে আছে বিষয়টা বুঝতে অর্ণবের সময় লাগলো না।  মানুষ মাজার মনে করে টাকা ফেলে গেছের্ণবও সাত পাঁচ না ভেবে  টাকাগুলো কুড়িয়ে ট্যাঁকে গুঁজলো এভাবে রোজ রোজ টাকা পড়তে থাকলো  আর সে টাকায় অর্ণবের পকেট ভরতে থাকলো র্ণব সে টাকায় সেখানে  একটা মাজারের মতো ঘর তুললো ঘরের মধ্যে মুরগীর কবর করল লাল সালু দিয়ে কবর ঢেকে দিল সামনে একটা সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দিল, মুরগী শাহর মাজার’।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন