র-হসৌ
“মিথ্যা বলছি না। বিশ্বাস করুন! আমি উড়ো জাহাজে করেই
এসেছি...” – শুধু
এটুকুই কানে এলো মোড়ের লাল বাড়িটার তিন নম্বর জানালা থেকে। শীতের দুপুর, তাই বেশ মৌজ করেই সাইকেল রিক্সায় প্যাডেল ঘুরিয়ে
চলেছে রিক্সাওয়ালা। অগত্যা পরের বাক্যাবাক্যি কিছু ঠাহর করতে না পেরে
রিক্সা থেকে খানিক ঝুঁকেই পড়লাম। জানালা ছাড়িয়ে রিক্সা মাঝারি রাস্তা ধরে ছুটে চলেছে ঘট ঘট শব্দ করে। জানালার ভেতরের শব্দ আগেই নিভে গেছিল, এবার জানালাটাও কোথায় চম্পট দিল। ছোটবেলা থেকেই জানালার সাথে এক অদ্ভুত সম্পর্ক আমার। দুঃসম্পর্কই বলা চলে। যে জানালায় রহস্য বোঝাই থাকে, সেই জানালাই হুট করে ভ্যানিশ হয়ে যায়। চাইলেও ফেরা যায় না, আর ফিরলেও আর সেই রহস্য থাকে না। এসব নিয়ে মাথা
ঘামাই বটে মাঝে মধ্যে, কিন্তু
শীতকালে মাথা ঘামানো একটু কঠিনই হয়ে দাঁড়ায়। ছোটবেলায় অঙ্ক স্যার বলতেন, মাথা ঘামাও। ঘেমেও যেত। বেশি ঘামতো পরীক্ষার হলে। প্রশ্ন আসত, বাসের চাকার অঙ্ক, কত পাক ঘুরবে, কত কিলোমিটার
যাবে। জ্যামে আটকালে, পুলিশে ফাইন নিলে, অ্যাকসিডেন্ট করলে কত সময় লাগবে, এসব ভাগ্যিস জানতে চাইত না! এর থেকে উড়ো জাহাজই তো ভালো! অঙ্ক আসে না। মাথাও ঘামাতে হয় না। লোকটা যদি
এসেই থাকে উড়ো জাহাজে, তাতে
ঝামেলা কোথায়? আর কেউ না বিশ্বাস করুক আমি ঠিক করছি। উড়োজাহাজ বলতে মনে পড়ল, সেটাতেও অনেক জানালা থাকে। হাজার চেষ্টা করেও সেখানে উঁকি দেওয়া
যায় না। রিক্সার কোনো জানালা নেই। শান্ত হয়ে বসতে হয়, তারপর নিয়ে চলে, চলতে থাকে।
একটু আগেই একটা বাঁক নিয়েছে
রিক্সাটা। সবুজ শাড়ি পড়া মেয়েটা এইসময় পাঁচিলের কাছটাতেই আসে। ওর মধ্যে কোনো রহস্য নেই। রিক্সাওয়ালা ঘুরে তাকায় আর হর্ন বাজিয়ে হাসে। এর পরেই আমি দেখতে
পাই স্ট্যাচু অফ লিবার্টি। ‘আমেরিকা এসে গেছে...’ – আমাকে নামিয়ে
রিক্সাওয়ালা রোমিও সাজে। আর আমার সাজ ঘেঁটে যায়। তিন নম্বর জানালাটার ভেতর থেকে
একটা কথা বলা চড়ুই উড়ে পালায়। দরজায় দাঁড়িয়ে আমি শুনতে পাই,
‘ইলেকট্রোকনভালসিভ থেরাপি’ ...সিস্টার!’
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন