বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৪

১৮) অলোকপর্ণা


ডিয়ার স্যান্টা

গাছের ডালে পাখি এসে বসার মতো আঁখিকে ছাড়াই সুমন পার্কের বেঞ্চে এসে বসে,  যে বসা বেশিক্ষণের নয়। সুমনের হাতে একটা ফিকে হয়ে আসা লালচে রঙের মোজা, একটু আগেই যেটা রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পেয়েছে সে।

ফিকে হওয়া লালচে প্রমাণ সাইজের মোজা... কে যে এমন করে ফেলে গেল রাস্তায়!... এভাবে মানুষ মোজা ফেলে যায় কী করে, একা মোজাটার জন্য সুমনের  কষ্ট হয়। সে বরাবর মোজাদের পছন্দ করে এসেছে।

সুমন মনে করে মোজারা মানুষের জীবনে উপহার নিয়ে আসে, যেমন সান্তাক্লজ, তাই ট্রেনে মোজাবিক্রেতা দেখলে সুমন তাকে কখনও ফেরায় না। শুধু মোজাদের জন্য সুমনের ঘরে আলাদা তাক রাখা, যেখানে নানা রঙের মোজা নানা উপহার গিলে নিয়ে  শুয়ে থাকে। ঘর ফাঁকা। আঁখি আজ চলে গেছে নদিন হলো 

সুমন মোজাটার দিকে তাকিয়ে থাকে, ভাবে এর থেকে কী চাওয়া যায়... দাড়ি  কাটার ছোট আয়নাটা কাল হাওয়া লেগে ভেঙে গেল, একটা বড় আয়না যদি চাই? চাইতে গিয়ে থেমে যায় সুমন, নিজের মনেই বলে, কি লাভ? আঁখি না থাকলে নিজেকে দেখি না আয়নায়, দেখতেই পাই না। তবে? আর কী চাওয়া যেতে  পারে?

গাছের ডাল থেকে পাখির উড়ানের হঠাৎ মতো, বেঞ্চ ছেড়ে উঠে পড়ে সুমন। একা  মোজা হাতে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে থাকে। বিকেলের অন্ধকারে দূর থেকে, ছায়া সমেত গোটা সুমনকেই একা ফিকে মোজার মতো দেখায়।

ফাঁকা ঘরে ঢুকে আলো জ্বালায় সুমন কোণার তাকে রাখা মোজাগুলো ভরপেট  উপহারের ইচ্ছে নিয়ে নড়েচড়ে ওঠে। নতুন মোজাকে সুমন তাদের গায়ে ছুঁড়ে দিয়ে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে।

আঁখিকে পাওয়ার ইচ্ছেটা নিয়ে লালচে মোজা বাকি মোজাদের ভিড়ে মিশে যায়।
বিদ্যে নয়, বুদ্ধি নয়, জ্ঞান-আলো-বিবেকও নয়, সুমনের মোজারা নিজেদের পেটের মধ্যে স্যালারি ইনক্রিমেন্ট, লটারির নাম্বার, মায়ের অপারেশনের টাকা, ফ্ল্যাটের ই এম আই ইত্যাদি শুভেচ্ছা নিয়ে মিলেমিশে শুয়ে থাকে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন