সুমন্ত চট্টোপাধ্যায়
দিয়েত্রিচ (এক)
নাইটিঙ্গেল, গোলাপ, তরুণ চোখ আর মৃদু হাসি
ছাড়াও এক উষ্ণ অনুভূতির স্মৃতি
রয়ে গেছে হৃদয়ের গোপনে,
সেই মলিন বিস্ময়ের আভা নিয়েই
জীবনের বাকি দিনগুলো অনায়াসে
পেরিয়ে যায় অজানা সঙ্গোপনে;
দিনের বেলা পাইন গাছগুলো নীলচে
রঙ ধরলেও সূর্যাস্তের সময় চমৎকার সবুজ,
খোলা জানালার সামনেই বড়ো বড়ো
ডালপালাওয়ালা বার্চের পাতাগুলো আজও অবুঝ
হয়ে কাঁপতে থাকে মন উষ্ণ বাতাসের দোলায়,
লম্বা সতেরো বছর পর কিসের টানে আবার
মস্কোর গ্রীষ্মে ফিরে আসা ভয়ঙ্কর মধুর ভয়!
বিছানা ছেড়ে জানালার সামনে এসে দাঁড়ানো
ইউরোপসেরা কবির দুটো নির্বিকার চোখ
অতীত হাতড়ে বেড়ায় - গোলাপী অতীত
যখন দিয়েত্রিচ অ্যাবেনড্রথ এক তরতাজা যুবক,
বুকে একরাশ ফুটন্ত আবেগ নিয়ে
জার্মানী ছেড়েছে রাশিয়ান সৌন্দর্যের তাড়নায়;
মস্কোর আশেপাশে গ্রামে গ্রামে ঘুরতো,
মেয়েদের স্কেচ বানাতো - কবিতা লিখতো
আর ভবঘুরে রাত কাটাতো ভল্গার কিনারায়-
ধনী বাবার বিগড়ানো ছেলে হিসেবে
বেশ সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল,
তবে ইতালীয় ঢালাইকর আর রুশি শিল্পীরা
তার সৃষ্টির কদর করত বলেই
তার উৎসাহ দিনের পর দিন বেড়ে চলেছিল;
নানা প্রাণোচ্ছ্বল আলাপের খাতিরেই
পরিচয় হয়েছিল সহজ-সরল অ্যান্টোনিনার সাথে,
সেই সোনালী গ্রীষ্মের সকালে
অ্যান্টোনিনা বেরিয়ে এসেছিল দরজা খুলে,
পরনে ল্যাভেন্ডার রঙের সিল্কের পোশাক,
কপালে রোদ আড়াল করার জন্য
ক্যামব্রিকের এমব্রয়ডারি করা রুমাল
আর পুশকিনের কবিতার বই হাতে।
অ্যান্টোনিনার বাবা চাননি
তাঁর মেয়ে কোনো জার্মানের শিল্পে
বিন্দুমাত্রও অনুপ্রেরণা যোগাক,
অথচ দিয়েত্রিচ নাছোড়বান্দা পাহাড়-
শেষমেষ কাছাকাছি কোথাও যাওয়ার সম্মতি
মিললেও চিত্রকরের মন ভরতো না,
অনুমতি না নিয়ে প্রায়ই এখানে-সেখানে
পালিয়ে যাওয়ার রঙবেরঙ বাহানা
অ্যান্টোনিনা বেশ ভালোভাবেই সামাল দিত,
কেননা দিয়েত্রিচের তুলি-ক্যানভাসের থেকে
তার দিয়েত্রিচকেই বেশি ভালো লাগতো।
আজও ভোলার নয় সেই গোলাপী দিন,
ভল্গার মায়াবী বিকেলের তীর ধরে
ষাট ভার্স্ট দূর অবধি পায়ে হাঁটা পথ
অ্যান্টোনিনার চঞ্চল পদচারণার পরে
দিয়েত্রিচ হাঁটুমুড়ে বসে প্রেম নিবেদন
করেছিল অনেক অস্বস্তির আকর সরিয়ে,
কুন্ৎসভোতে অ্যান্টোনিনার রাজী হওয়া
আর লাইলাক ঝোপের পাশে প্রথম চুম্বন!
দিয়েত্রিচ যেন উষ্ণতায় চুর হয়ে গেছিল
নীলচে রাইয়ের পাশ দিয়ে গোলাপী
বারেজের পোশাক পরা অ্যান্টোনিনার
হেঁটে আসা নিয়ে দিয়েত্রিচের কবিতা
ঝড় তুলেছিল মস্কোর পাঠকমহলে।
অ্যান্টোনিনার স্ট্র’বেরী ঠোঁটের
ঘোর কেটেছিল তুমুল জনপ্রিয়তার কলরবে,
দিয়েত্রিচ বয়ে গেল - তার কবিতা পুরস্কার জিতলো,
অ্যান্টোনিনার অনিচ্ছা সত্ত্বেও সে রাশিয়া ছাড়লো,
তবে যাওয়ার আগে কথা দিয়ে গেল
পুরস্কার নিয়েই সে ফিরে আসবে লন্ডন থেকে।
হায়... দিয়েত্রিচ ফিরে এসেছে,
আবার... দীর্ঘ সতেরো বছর পর!
এর মাঝে সে এদেশ-ওদেশ ঘুরে
তার প্রিয় অ্যান্টোনিনাকে প্রায় ভুলতে বসেছিল,
সম্মান-পুরস্কার জুটেছে হাজারো,
মিলেছে অসংখ্য সুন্দর নারীসঙ্গ,
তার পাঠক-পাঠিকারা যখন তাতে বিভোর,
তার লেখনী যখন ইউরোপের শীর্ষে,
সে অবসর নিল নীরবে;
লাখ লাখ অপেক্ষার পরোয়া না করে
সে যখন আবার মস্কোর গ্রীষ্মে ফিরেছে,
কেউ অ্যান্টোনিনা লিওনিদোভনার নাম শোনেনি।
ঠান্ডা শার্সির ওপর গরম কপাল রেখে,
নির্বিকার চোখদুটো বোঝার চেষ্টা করে,
কোনটা বাস্তব আর কোনটা স্বপ্ন!
লাইলাক ঝোপের পাশ থেকে চুম্বনের
আওয়াজ এসে পাগল করে দিয়ে যায়,
কে প্রেমিক এখানে আর কে সঙ!
দিগন্তের কাছে আকাশ ধূমায়িত,
অবশেষে একফালি চাঁদ ভেসে উঠলো,
অসাড় ফ্যাকাসে লাল রঙ...
নাইটিঙ্গেল, গোলাপ, তরুণ চোখ আর মৃদু হাসি
ছাড়াও এক উষ্ণ অনুভূতির স্মৃতি
রয়ে গেছে হৃদয়ের গোপনে,
সেই মলিন বিস্ময়ের আভা নিয়েই
জীবনের বাকি দিনগুলো অনায়াসে
পেরিয়ে যায় অজানা সঙ্গোপনে;
দিনের বেলা পাইন গাছগুলো নীলচে
রঙ ধরলেও সূর্যাস্তের সময় চমৎকার সবুজ,
খোলা জানালার সামনেই বড়ো বড়ো
ডালপালাওয়ালা বার্চের পাতাগুলো আজও অবুঝ
হয়ে কাঁপতে থাকে মন উষ্ণ বাতাসের দোলায়,
লম্বা সতেরো বছর পর কিসের টানে আবার
মস্কোর গ্রীষ্মে ফিরে আসা ভয়ঙ্কর মধুর ভয়!
বিছানা ছেড়ে জানালার সামনে এসে দাঁড়ানো
ইউরোপসেরা কবির দুটো নির্বিকার চোখ
অতীত হাতড়ে বেড়ায় - গোলাপী অতীত
যখন দিয়েত্রিচ অ্যাবেনড্রথ এক তরতাজা যুবক,
বুকে একরাশ ফুটন্ত আবেগ নিয়ে
জার্মানী ছেড়েছে রাশিয়ান সৌন্দর্যের তাড়নায়;
মস্কোর আশেপাশে গ্রামে গ্রামে ঘুরতো,
মেয়েদের স্কেচ বানাতো - কবিতা লিখতো
আর ভবঘুরে রাত কাটাতো ভল্গার কিনারায়-
ধনী বাবার বিগড়ানো ছেলে হিসেবে
বেশ সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল,
তবে ইতালীয় ঢালাইকর আর রুশি শিল্পীরা
তার সৃষ্টির কদর করত বলেই
তার উৎসাহ দিনের পর দিন বেড়ে চলেছিল;
নানা প্রাণোচ্ছ্বল আলাপের খাতিরেই
পরিচয় হয়েছিল সহজ-সরল অ্যান্টোনিনার সাথে,
সেই সোনালী গ্রীষ্মের সকালে
অ্যান্টোনিনা বেরিয়ে এসেছিল দরজা খুলে,
পরনে ল্যাভেন্ডার রঙের সিল্কের পোশাক,
কপালে রোদ আড়াল করার জন্য
ক্যামব্রিকের এমব্রয়ডারি করা রুমাল
আর পুশকিনের কবিতার বই হাতে।
অ্যান্টোনিনার বাবা চাননি
তাঁর মেয়ে কোনো জার্মানের শিল্পে
বিন্দুমাত্রও অনুপ্রেরণা যোগাক,
অথচ দিয়েত্রিচ নাছোড়বান্দা পাহাড়-
শেষমেষ কাছাকাছি কোথাও যাওয়ার সম্মতি
মিললেও চিত্রকরের মন ভরতো না,
অনুমতি না নিয়ে প্রায়ই এখানে-সেখানে
পালিয়ে যাওয়ার রঙবেরঙ বাহানা
অ্যান্টোনিনা বেশ ভালোভাবেই সামাল দিত,
কেননা দিয়েত্রিচের তুলি-ক্যানভাসের থেকে
তার দিয়েত্রিচকেই বেশি ভালো লাগতো।
আজও ভোলার নয় সেই গোলাপী দিন,
ভল্গার মায়াবী বিকেলের তীর ধরে
ষাট ভার্স্ট দূর অবধি পায়ে হাঁটা পথ
অ্যান্টোনিনার চঞ্চল পদচারণার পরে
দিয়েত্রিচ হাঁটুমুড়ে বসে প্রেম নিবেদন
করেছিল অনেক অস্বস্তির আকর সরিয়ে,
কুন্ৎসভোতে অ্যান্টোনিনার রাজী হওয়া
আর লাইলাক ঝোপের পাশে প্রথম চুম্বন!
দিয়েত্রিচ যেন উষ্ণতায় চুর হয়ে গেছিল
নীলচে রাইয়ের পাশ দিয়ে গোলাপী
বারেজের পোশাক পরা অ্যান্টোনিনার
হেঁটে আসা নিয়ে দিয়েত্রিচের কবিতা
ঝড় তুলেছিল মস্কোর পাঠকমহলে।
অ্যান্টোনিনার স্ট্র’বেরী ঠোঁটের
ঘোর কেটেছিল তুমুল জনপ্রিয়তার কলরবে,
দিয়েত্রিচ বয়ে গেল - তার কবিতা পুরস্কার জিতলো,
অ্যান্টোনিনার অনিচ্ছা সত্ত্বেও সে রাশিয়া ছাড়লো,
তবে যাওয়ার আগে কথা দিয়ে গেল
পুরস্কার নিয়েই সে ফিরে আসবে লন্ডন থেকে।
হায়... দিয়েত্রিচ ফিরে এসেছে,
আবার... দীর্ঘ সতেরো বছর পর!
এর মাঝে সে এদেশ-ওদেশ ঘুরে
তার প্রিয় অ্যান্টোনিনাকে প্রায় ভুলতে বসেছিল,
সম্মান-পুরস্কার জুটেছে হাজারো,
মিলেছে অসংখ্য সুন্দর নারীসঙ্গ,
তার পাঠক-পাঠিকারা যখন তাতে বিভোর,
তার লেখনী যখন ইউরোপের শীর্ষে,
সে অবসর নিল নীরবে;
লাখ লাখ অপেক্ষার পরোয়া না করে
সে যখন আবার মস্কোর গ্রীষ্মে ফিরেছে,
কেউ অ্যান্টোনিনা লিওনিদোভনার নাম শোনেনি।
ঠান্ডা শার্সির ওপর গরম কপাল রেখে,
নির্বিকার চোখদুটো বোঝার চেষ্টা করে,
কোনটা বাস্তব আর কোনটা স্বপ্ন!
লাইলাক ঝোপের পাশ থেকে চুম্বনের
আওয়াজ এসে পাগল করে দিয়ে যায়,
কে প্রেমিক এখানে আর কে সঙ!
দিগন্তের কাছে আকাশ ধূমায়িত,
অবশেষে একফালি চাঁদ ভেসে উঠলো,
অসাড় ফ্যাকাসে লাল রঙ...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন