ঘাসবনের কবিতা-৫
আর আমাদের ঘর খুঁজে
পাব না কখনও
একটা বাঘের মতো ঝোড়ো
হাওয়ায়
উড়ে গেছে তার ডানা
পালকের ওম
আমার সন্তান শুয়েছিল
পুব ঘরে
মুখে তার নতুন বৃন্ত
অনন্ত সুখে শুনছিল
বর্গির ছড়া
ঝরের পর
তাদের আমি আর খুঁজে
পাচ্ছি না কেন?
অথচ গত তিরিশ বছর
ধরে তাদেরই খুঁজে চলেছি
ফকিরের মতো
হাতে লালনের প্রাণ
কণ্ঠে যাবতীয়
নীড়ের কৌশল
পথ মিশে গেছে
বিকেলের পথে
গোধূলির ছড়ায় থমকে
দাঁড়িয়ে
ভেবেছি পাখি আর
মৌ-কথার সেতুপথ নির্মাণ
তবু ফিরেছি
অরণ্যের ছায়াপথে
সেথা
মেঘের যত ফ্ল্যাটবাড়ি
আছে
জলের যত কুঁড়ে আছে
ঘাসের যত পাখনা আছে
সব আমি সব দেখেছি
হরিণের নীল চোখ দেখে
ভেবেছি
আমাদের চৌকাঠের
স্বপ্নকথা
কালো চামড়ার নিচে
শুকিয়ে আশা এক শরীর দেখে
মাথা ঘুরে পড়ে গেছি
অজান্তে
বেশ্যার কোলে আদর
খেতে খেতে ঘুমিয়ে পড়া সকাল দেখে
নিজের লিঙ্গের কথা
ভুলে
লিখে নিয়েছি বৃক্ষের
নিখুঁত সংজ্ঞা
তবু গামবুট পড়ে
এগিয়ে যাওয়া টায়ারের নিচে
চাপা পড়ে বর্ণপরিচয়
কথামালা
আর আমরাই আমাদের
মৃতদেহ ঘাসে শুইয়ে রেখে
হাওয়া করে চলেছি
অনন্ত বিকেল ধরে
যেন সুতীব্র
হস্তমৈথুনের উল্লাসে
ভুলে গেলাম যে যার
মুখ
ভুলে গেলাম
আত্মপরিচয়
আমাদের ঘর আর পাব না
ফিরে কখনও
আমাদের সব কিছু ভেসে
গেছে হাওয়ায়
বাতাসে নিষিদ্ধ
মশারি টাঙিয়ে
শুয়ে থাকব আরো তিরিশ
বছর
নিজের নিরুদ্দেশ
হবার খবর গাছে গাছে বিছিয়ে রেখে
অনন্ত বিষণ্ণ ছায়ায়
হেঁটে যাব
পগার মুক্ত এক
শান্তির দেশে
যেথা গুরু নেই লঘু নেই
যেথা পাখি আছে
যেথা মৃদু হাওয়া আছে
অনন্ত ঘুমের শব্দের
মতো
একা একা একাকী
ঘুমিয়ে।
চন্দ্রবোড়া ও
একজিমা
একটা চলন্ত ট্রেনের পেছনে ছুটছে এক ঝাঁক মানুষ
আর আমিও ঢুকে পড়েছি এই মাত্র ঝোলায় চন্দ্রবোড়া আর এক প্যাকেট ডগবাইটস্ নিয়ে শহরের
পেট ফেঁপে ঢেকুর তুলছে অকারণে শেয়ালদহের
সামনে তিনজন দাঁড়িয়ে এখনও ঘষে যাচ্ছে লিপস্টিক
আর তাদের পঙ্গু স্বামীদের সতেজ লিঙ্গ কাঁদছে বৃষ্টির মতো বেঘোরে আমিও টপাটপ ছবি
তুলে নিলাম কলেজে যাওয়া এক দল মেয়েদের ব্যাক্ ক্লিভেজ কিংবা ফুলওয়ালীর ঢুলুঢুলু চোখ আর রামের গন্ধে সতেজ
যুবকের লম্বা চওড়া ভাষণ চাঁদের মুখে পেচ্ছাপ করে মহাদেব পাগল বিড়ি ধরানো মাত্রই বৃষ্টি
এসে নিভিয়ে দিল আর অমনি একখানা আস্ত থুতু নিয়ে তেড়ে গেল সে আমি অন্ধ হতে
চেয়েছিলাম ভেবেছিলাম মহাবিচ্ছেদের পর
অয়দিপৌসের মতো সাহস আর বেদনা নিয়ে কাটিয়ে দেব বাকি জীবন কিন্তু আমাদের ট্রামগুলো নিয়ে যে টালবাহানা
তাতে ভয় পেয়ে সিঁটিয়ে আছি কেন্নোর মতো প্রতিশ্রুতির
নীল ছাতার নিচে বিকলাঙ্গ ভিখারির কৌটো দেখে মানিব্যাগে হাত রেখে দেখি কে যেন ঝোলার
চন্দ্রবোড়া সমেত পালিয়েছে লালবাজেরে ছুটে
গেলাম বড়োবাবু ঝিমোচ্ছেন মেঝোবাবুর ইঁয়া গোঁফে ঝালমুড়ির তেল সেজো নোয়া বা
গোটা পাণ্ডব-কৌরব মিলে হা হা হি হি আর
লুডো খেলায় ব্যস্ত আমিও দাবা না জানায় খেলেছিলেম একদান সাপলুডো আর প্রথম চালেই
চন্দ্রবোড়ার লকলকে জিভের সামনে নাগিন
নাগিন নাচ শুরু করে দিলাম আমার দেখাদেখি হেডমাস্টার থেকে কলেজের প্রিন্সিপাল কেউ
বাদ যায়নি এদিকে ইছামতীর মেনোপজে মন খারাপ গোটা শহরের আমার ছেলেটা তাই এখন শিখছে
রাইমস এখন সরকারি উদ্যোগে শুকিয়ে যাচ্ছে নদী নালা আদর্শলিপি চুল্লি উদ্বোধনের খবর
ফলাও করে ছাপা হচ্ছে আমি লাশ হয়ে উদ্বোধন করার জন্য বসে আছি আর শালা ছবি ছাপছে
অন্য একজনের নৌকো পুড়িয়ে কাবাব
খাচ্ছি বাটার মোড়ে দাঁড়িয়ে এভাবে
আড়ালে একজিমা চুলকে থামি আর এগিয়ে যাই
দেখি সবাই কেমন থম মেরে আছে কেবল মহাদেব পাগল আরামসে চুলকে যাচ্ছে!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন