ছায়াপুজো
আলোর অক্ষমতার যন্ত্রণাকে কে যেন নাম দিয়েছে ছায়া। সেই
ক্ষোভে কুলবতী ঠাণ্ডা আলো সন্ধ্যা হলেও সূর্যের ডাকে ঘরে ফেরে না। দ্বাররক্ষী ওজোনের খিল হাট হলে - ছায়াময় নিশিথে পৃথিবীর
সাথে ছদ্মবেশে বউছি খেলতে খেলতে তাপ হয়ে যায় - মেরু তুষারকে করে তোলে জ্যোৎস্নার
কান্না।
কুলবতী আলোর ক্ষোভে কুলনাশ নিয়ে বিজ্ঞানীরা যত কথাই বলুক
না কেন – কূটনীতিকগণ তা
শুনবেন না। কেননা তাঁদের হাতে এখন অনেক আলো - উত্তরাধুনিক আলো, ধার্মিক আলো, সাম্যবাদী আলো,
গণতন্ত্রী আলো। এত আলো – তবু যারা সংখ্যায় কম তাদের দিকে অন্ধকার ছুঁড়ে দিতে
নিরন্তর ছায়ার পুজোই করে চলছে লক্ষ-কোটি পেঁচা।
সবখানে আলো পৌঁছবে - এমন প্রতিশ্রুতি পেয়েই সূর্যটা
হিলিয়ামের দহন সহ্য করে পৃথিবীর বুকে দুধ যোগায় - তবুও মানবতার সামনে কেবল ছায়ারই
রাজত্ব – কেবল পেঁচাদেরই
হুলুধ্বনি।
ঘ্রাণ
ইতিমধ্যে পৃথিবী বত্রিশ বার তার পুরো পথটা হেঁটেছে করতলে
আমাকে নিয়ে -- টাট্টি ঘরের পেছনে কড়ই
গাছটার যুবতী বুকে বত্রিশটা দাগ বেড়েছে এই সময়ে। গাছটা বুকের দাগ ধুয়ে ফেলতে শেখেনি
অথচ ওর স্থূলতার আড়ালে কত যুবতীর বুকে
লালচে-কালচে দাগ হলো -- আবার ধুয়েও গেল ঋতুর আগুনে। ওই যুবতীদের কাছে কড়ইটা ডায়েট
করাও শিখতে পারল না -- নিতম্বে বাড়ছে নির্লজ্জের মতো -- গাছেদের ফ্যাশন টিভিতে মনে হয় ডায়েটের বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়ে গেছে।
ডায়েটের কথায় মনে পড়ল -- ফুল সম্প্রদায়ের মধ্যে রজনীগন্ধাই
সবচেয়ে কার্যকর ডায়েট করে। তার চিকন কোমর অনেকক্ষণ সইতে পারে গন্ধের ভার।
আমি রজনীগন্ধা নই -- এই স্থূল, মোটা আমিকে আর বেতশিদিন
বইতে পারবে না পৃথিবী। তবে পৃথিবী কথা দিয়েছে -- আমার সূক্ষ্ম গন্ধটাকে বয়ে চলবে
সূর্য নিভে যাওয়া পর্যন্ত। তাই রজনীগন্ধার ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেখ -- একটা অব্যয়
অব্যয় গন্ধ।
শিল্প
মাননীয় সংস্কৃতিমন্ত্রী কি জানেন -- নটি বিনোদিনীর অচ্ছুৎ
অশ্রু সুচিত্রা সেনে এসে পুজোর ফুল হতে কতবার ঘুরেছে সংস্কৃতির লাটিম?
শোবিজ তারকার মেকুড়-চলন – আহা সর্পনিন্দিত দোলন কোমর ভুলে গেছে সেই ঘুপচিকে — যা ছিল দোলনের কিংবা
দলনের আঁতুড়ঘর। অথচ শিল্পের এভারেস্ট আজো ছুঁয়ে আছে সেইসব নারীর পবিত্র চরণ --
যাদের ক্লেদ, ঘাম, অশ্রু চেটে চেটে সাগরে পার হয়েছে শিল্পকলার ট্রেন।
তাই টকশোজীবিদের বলছি -- রাস্তায় ক্যানভাসারদের লাইনে
দাঁড়ান।
(কবিতায় ‘ক্যাট-ওয়াক’এর বাংলা করা হয়েছে ‘মেকুড়-চলন’)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন