রবিবার, ২৯ জুন, ২০১৪

০১) অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়


মহ্‌সিন ওস্তাদ আলি মখমলবাফ-এর একটি নাটক

অনুবাদ : অর্জুন  বন্দ্যোপাধ্যায়

(মহ্‌সিন ওস্তাদ আলি মখমলবাফ (জ.১৯৫৭)ইরানের এই বিখ্যাত ফিল্ম   নির্মাতা ফিল্ম বানানোর ও চিত্রনাট্য লেখার পাশাপাশি বেশ কিছু নাটকও  লিখেছিলেন একসময়বেশ কিছু ছোটগল্পকয়েকটা উপন্যাসও১৯৮০-৮২  এই সময় পর্বে পরপর ন'খানা নাটক লিখে ফেলেছিলেন তিনি, যেটা ইরানের  ইসমালিক রেভোলিউশন ঘটার (১৯৭৯) পরমুহূর্তযখন শাহ্‌কে সরিয়ে  ক্ষমতায় এসেছেন ইমাম খোমেইনিবামপন্থী গ্রুপগুলো এক এক ক'রে খোমেইনির ইসলামিক আইনে পিছু হটছেহয় তারা জেলে, নয়তো নির্বাসনে নইলে রাষ্ট্রের সাথে হাত মেলাতে হচ্ছেবামপন্থী গ্রুপগুলো থেকে যাতে কোনোরকম বিদ্রোহ-বিপ্লব দানা না-বাঁধতে পারে, তাদের ঠেকাতে নিয়মিত সামরিক বাহিনীর সাথে আরো একটা আলাদা সামরিক বাহিনীই তৈরি করে ফেলেছিলেনন খোমেইনি, ১৯৭৯ সালেইথিয়েটারে আইন চালু হয়েছে--   মেয়েরা মঞ্চে অভিনয় করলে তাদের হিজাব'রে আসতে হবে মঞ্চে, পুরুষ অভিনেতাদের সাথে মঞ্চে কোনো রকম শারীরিক সংযোগ বা সংস্পর্শ দেখানো যাবে না, নাটকে নাচ থাকবে না, পপ গান থাকবে না, কমিউনিজম কিম্বা ক্যাপিটালিজম-এর কোনো বিষয় বা ঐ ভাবধারা নিয়ে নাটক করা যাবে না, ইসলাম বিরোধী কোনো কথা থাকবে না, কোনো স্ল্যাং ওয়ার্ড তো নৈব নৈব চএগুলো থাকলে সেন্সর বোর্ড সে নাটক ব্যান ক'রে দেবেএবং দিয়েওছে ব্যান ক'রে বহু বহু এর'ম দুষ্টু নাটকসেই ১৯৮১ সালে, মাত্র চব্বিশ বছর  বয়েসে লেখা, মখমলবাফের একটি নাটক, লেফটিস্ট গ্রুপগুলোর লিমিটেশনসগুলো নিয়ে লেখা একটি নাটক, ইরানে মঞ্চস্থও হয়েছিল কী সৌভাগ্যক্রমে সে  নাটক...  দ্য ফেন্স উইদিন দ্য ফেন্স, অথবা দ্য ইনভিজিব্‌ল্‌ ফেন্স যেখানে স্বনির্মিত আত্মকারাগারে একজন বামপন্থী চোখ বুঁজে থাকছেন কীভাবে,  খাঁচার গরাদে হাত না-রেখে তিনি কিছু চিন্তা করতে পারছেন না, সহবন্দীর পায়ের শেকল জং ধ'রে আলগা হয়ে গেলে তিনি বলছেন, আমার শেকলটা নাও, ফুটতে থাকা সময়কে কাজে না-লাগিয়ে তাঁরা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছেন  কীভাবে.. মখমলবাফ দেখিয়েছেন নাটকে 
নাটকটি প্রচণ্ডভাবে একটি রাজনৈতিক নাটক। আমি ঋণী ও কৃতজ্ঞ শ্রীযুক্ত সৈয়দ হবিবল্লাহ্‌ লজগী (লীড্‌স্‌ বিশ্ববিদ্যালয়), শ্রীমতি শ্যামশ্রী দাস এবং শ্রীযুক্ত অরুণ ঘোষ-এর কাছে। সৈয়দ হবিবল্লাহ্‌ লজগী  মহাশয়ের গবেষণাপত্র এবং ফারসি থেকে তাঁর ইংরেজি অনুবাদ ব্যতীত   কাজে আমি এক পা-ও এগোতে পারতাম না। শ্রীমতি শ্যামশ্রী দাস মহোদয়া আমাকে সুযোগ করে দিয়েছেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (C.P.I.) ভূপেশ ভবনের বিরাট গ্রন্থাগারে প্রবেশের। এবং ঐ গ্রন্থাগারের প্রবীণ গ্রন্থাগারিক শ্রীযুক্ত অরুণ ঘোষ মহাশয়, যিনি সেই ৫২ সাল থেকে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির বাষট্টি বছরের সক্রিয় সদস্য, বামপন্থী আন্দোলনকে দেখেছেন, অংশ নিয়েছেন এত দীর্ঘ বছর ধরে, তাঁর সাথে আলোচনা, তর্ক এবং তাঁর সহায়তা এই নাটকের অনুবাদে   আমাকে বিপুল সাহায্য করেছে। এই নাটকের কয়েকটা সংলাপ মূলতঃ তাঁর কাছেই আলোচনা প্রসঙ্গে শোনা কথা থেকে নেওয়া। মখমলবাফের  নাটকটির হুবহু অনুবাদ আমি করিনি। অনেক জায়গায়, বিশেষ করে মার্ক্সীয় মতাদর্শের অনুশীলন নিয়ে আত্মসমালোচনামূলক বিতর্কগুলি, শোধনবাদী ও অর্থোডক্সের ডিবেট, এগুলি মূল নাটকে বিস্তৃতভাবে ছিল না। সাংকেতিক ভাবে ও সংক্ষেপে ছিল। আমি সেটাকে বিস্তৃতি দিয়ে যোগ করেছি। নাটকটিকে ইরানের প্রেক্ষাপটে রেখেও যাতে পৃথিবীর অন্য দেশে বসে এর সাথে রিলেট করা যায়, সে জন্যই। পাঁচটি দৃশ্য ছিল  মূল নাটকে। শেষ দৃশ্যটি আমি বাদ দিয়েছি। নাটকের প্রয়োজনেই, ওই দৃশ্যটি এখানে জরুরি মনে হয়নি। একে ভাবানুবাদ বলা যেতে পারে। বা  রূপান্তর।)



কালিমাটি অনলাইন ব্লগজিনে  নাটকটি ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করা  শুরু হলো এই সংখ্যা থেকে।

মহ্‌সিন ওস্তাদ আলি মখমলবাফ
 (জন্ম ২৯ মে, ১৯৫৭)   

দ্য ফেন্স উইদিন দ্য ফেন্স, তেহরান ১৯৮২

খাঁচার ভেতর খাঁচা

মহ্‌সিন মখমলবাফ


রচনা মহ্‌সিন ওস্তাদ আলি মখমলবাফ
রচনাকাল ১৯৮১
পরিচালক মহম্মদ রেজা হনারমন্দ
ভাবানুবাদ ও রূপান্তর অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়


চরিত্র
বৃদ্ধ জেলবন্দী (মার্ক্সবাদী), যুবক জেলবন্দী (মার্ক্সবাদী), রাষ্ট্রের গুপ্তচর বাহিনীর সদস্য, ফিউডালিস্ট, ক্যাপিটালিস্ট, অ্যামেরিকান, দুজন কারারক্ষী,
একদল মানুষ (৪ থেকে ৬জন)


দৃশ্য ১

(মঞ্চের পেছন দিকে জেলখানার দুটো ছোট সেল, পাশাপাশি। দুটোতেই একজন করে বন্দী। দুজনের গায়ে চেক চেক জেলপোশাক। পায়ে-গোড়ালিতে মোটা শেকল বাঁধা। দুজনেই দাঁড়িয়ে আছে। জেলের গরাদের বাইরে দুজন কারারক্ষী। তাদের একজনের হাতে একটা চাবির গোছা, চওড়া লম্বা পাকানো গোঁফ, সোজা দাঁড়িয়ে আছে সে। দ্বিতীয় কারারক্ষী চাবুক হাতে সেলের একপাশে দাঁড়িয়ে। দুজন বন্দী এবং দুজন কারারক্ষীই বয়স্ক। কিন্তু একজন বন্দীকে দেখে একটু কম বয়স্ক মনে হয়। দুই বন্দীরই চুল, দাড়ি গোঁফ বড়। দেখে মনে হয় অনেকবছর চুলে চিরুনি পড়েনি। গায়ের জামা পুরনো, নোংরা। জেলের গরাদে মরচে ধরে গেছে, বেশ কয়েকটা শিক ভেঙেও গেছে তার মধ্যে।)
    
কারারক্ষী ১ (যার হাতে চাবুক) : কি? আজকে কে আগে চাবুক খাবে? (দুই বন্দী চুপ) হুম্‌? কি হল?
বৃদ্ধ বন্দী : তাতে কি কিছু এসে যায়? কে প্রথমে খেল আর কে পরে... কিইবা আসে যায় তাতে?             
কারারক্ষী ১ : তা বললে তো আর হবে না। কাউকে না কাউকে তো প্রথমে আসতেই হবে। তাই না? কিন্তু কথাটা হল আজকে কে আসবে?
যুবক বন্দী : উনি তো ঠিকই বলেছেন। সত্যিই এতে কিছুই যায় আসে না। আপনার যাকে ইচ্ছে হয় ডেকে নিন। শুয়ে পড়ব।
কারারক্ষী ২ : জলদি জলদি। লাঞ্চ টাইম হয়ে গেছে। (পা দিয়ে খাবারের থালাটা সেলের দরজার দিকে ঠেলে দেয়)
বৃদ্ধ : প্রথম বছরটা একটু কঠিন ছিল। কিন্তু বাইশ বছর বাদে আমি এখন এসবের সাথে অভ্যস্থ হয়ে গেছি। অনেক চাবুক খেয়েছি। রোজই একটু একটু করে। তবে খুব বেশি চাবুক খেলে এখন পায়ে একটা ব্যথা হয়। জোরালো একটা ব্যথা।
কারারক্ষী ১ : (যুবককে দেখিয়ে) আজকে আমরা একে দিয়ে শুরু করব। (দ্বিতীয় কারারক্ষী সোজা এগিয়ে এসে যুবকের সেলের তালা খুলে দেয়। যুবক বেরিয়ে আসে, শুয়ে পড়ে। যুবকের পায়ের চেটোয় দশবার চাবুক মারে প্রথম কারারক্ষী। এরপর যুবক উঠে দাঁড়ায়, অল্প খুঁড়িয়ে ঢুকে যায় নিজের সেলে। দ্বিতীয় কারারক্ষী এবারে বৃদ্ধের সেলের তালা খুলে দেয়। বৃদ্ধ বেরিয়ে এসে শুয়ে পড়ে। প্রথম কারারক্ষী বৃদ্ধের পায়ের চেটোয় চাবুক মারতে থাকে। বাইরে এইসময় একটা হৈ-হট্টগোল শোনা যায়। দরজায় কারা ভীষণ ধাক্কা মারছে।)
নেপথ্য কন্ঠ (অনেকের গলা) : দরজা খোল... কে আছে ভেতরে...? দরজা খোল.. (সাথে দরজায় ধাক্কা দেওয়ার আওয়াজ)
কারারক্ষী ১ : আমার মনে হয় মন্ত্রী-টন্ত্রী কেউ এসছে বোধয় ইন্সপেক্‌শনে
কারারক্ষী ২ : মন্ত্রী? মন্ত্রী এলে তো আগে আমাদের জানানো হত।
বৃদ্ধ : দ্যাখো গিয়ে কাউকে হয়ত হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে
যুবক : আচ্ছা, এটা কি স্নানের সময়? তিন মাস হয়ে গেল, না? গত বছর শরৎকালে আমরা বোধয় শেষবার স্নান করেছিলাম। হ্যাঁ, ঠিক শরৎ। (বৃদ্ধের দিকে তাকিয়ে) মনে পড়ছে আপনার? গাছের পাতাগুলো হলুদ হয়ে যাচ্ছিল...
বৃদ্ধ :  এঃ! মনে পড়বে না! পায়ের তলায় পড়ে পাতাগুলো কিরম মশ্‌মশ্‌ মশ্‌মশ্‌ করে ভেঙে যাচ্ছিল... আমি তো সেই শব্দটাও শুনতে পাচ্ছি কানে। আআহহঃ!... কি ভালোই না লাগছিল। জানো কমরেড, শরৎ আমার সবসময় প্রিয়। বসন্ত বলো কি গ্রীষ্ম, শরতের জুড়ি নেই।
নেপথ্য কন্ঠ (অনেকের গলা) : দরজা খোল শিগগিরি... সারেণ্ডার করতে বলছি তোমাদের.. নইলে আমরা ভেঙে ফেলব দরজা...
কারারক্ষী ১ : কারা এরকম গোলমাল করছে বাইরে?
নেপথ্য কন্ঠ (অনেকের গলা) : দেশে বিপ্লব হয়ে গেছে... দরজা খোল শিগগিরি... নইলে আমরা ভেঙে ফেলব...
বৃদ্ধ : (জোরে হাসি) আমার মনে হয় কয়েদীগুলো মজা করছে... শালা, পাগল সব... বলে কিনা দেশে বিপ্লব হয়ে গেছে... হেঃ!
নেপথ্য কন্ঠ (অনেকের গলা) : দরজা খোল বলছি... দরজা খোল
কারারক্ষী ২ : কে তোমরা? পারমিশন ছাড়া আমি দরজা খুলতে পারব না... সুপারের পারমিশন নিয়ে তারপরে এসো
নেপথ্য কন্ঠ (অনেকের গলা) : আমরা সুপারকে মেরে ফেলেছি। এক্ষুনি দরজা খোল। নইলে তোমাদেরকেও মরতে হবে। সবাই সারেণ্ডার করেছে, শুধু তোমরাই বাকি। তোমাদের জন্যে এটাই মঙ্গল, সারেণ্ডার করো... দরজা খোল বলছি
কারারক্ষী ১ : এরা কারা? এরকম চেঁচামেচি করছে কেন?
কারারক্ষী ২ : কুড়ি বছরে আমি এখানে কাউকে এরকমভাবে চেঁচাতে শুনিনি
বৃদ্ধ : আমি বাইশ বছরে কাউকে এরকম চেঁচাতে শুনিনি। অবশ্যই গার্ডরা বাদে। (দরজায় প্রবল ধাক্কা)
নেপথ্য কন্ঠ (অনেকের গলা) : দরজা ভাঙলেই আমরা কিন্তু তোমাদের মেরে ফেলব... এখনও বলছি দরজা খোল। বন্দীদের মুক্ত করে দাও
বৃদ্ধ : আমার ক্লান্ত লাগছে। আর পারছি না এভাবে শুয়ে থাকতে। (প্রথম কারারক্ষীকে) শুনছেন? আমি কি আমার সেলের ভেতরে যেতে পারি?
(দরজায় আওয়াজ হতে থাকে, সাথে বাইরের হৈ হৈ)
কারারক্ষী ১ : (হাতের চাবুকটা শক্ত করে ধরে, দরজার দিকে তাকিয়ে) এরা কারা? কি চায়? কোনো গুণ্ডা-বদমাশ নাকি? টেররিস্ট?
কারারক্ষী ২ : বুঝতেই তো পারছি না ! আমি যদ্দিন আছি কোনোদিনও এরকম শুনিনি।
(দরজায় আওয়াজ চলতেই থাকে। সাথে চিৎকার)
যুবক : (চেঁচিয়ে) এ্যাই কি বলছো তোমরা? মানেটা কি এসবের?
কারারক্ষী ১ : কুড়ি বছর আমি এখানে চাকরি করছি, কেউ এভাবে দরজা ধাক্কা দেয়নি। এমন কি সুপার কি গভর্ণর এলেও আস্তে টোকা দেয়।
যুবক : আমার মনে হয় না কোনো কয়েদী এরকম করার সাহস পাবে। এরা নিশ্চই জেলখানার গার্ড
কারারক্ষী ২ : গতবার আমার ছেলে যখন এসছিল আমার সাথে দেখা করতে, তখন ও বলছিল, চারদিকে নাকি অদ্ভুত কি সব গণ্ডগোল হচ্ছে। হয়ত ঠিকই বলছিল ও।
নেপথ্য কন্ঠ (অনেকের গলা) : আমরা দরজা ভেঙে ফেলছি... সব সেল খুলে দিয়েছি আমরা... সব কয়েদী বেরিয়ে গেছে... শুধু এই সেলটাই বাকি... দরজা খোল বলছি এখনও... সব কয়েদীরা বলেছে এখানে আণ্ডারগ্রাউণ্ডে সেল আছে...
বৃদ্ধ : মিথ্যে কথা। বাজে কথা যত। আমরা কোনো আণ্ডারগ্রাউণ্ডে নেই
নেপথ্য কন্ঠ (অনেকের গলা) : চুপ কর! শালা, সরকারের দালাল... সি.এই.এ.-র চর... এক্ষুনি আমরা দরজা ভেঙে ফেলব। একটাকেও ছাড়ব না.. সবকটা মরবি... (দরজা ভেঙে যায়। মঞ্চে ঢুকে পড়ে একদল লোক। ওদের হাতে বন্দুক। রক্ষীরা ওদের আটকাতে যায়। লোকগুলো গুলি করে মেরে ফেলে দুজন রক্ষীকেই।)
লোকেরা :  আল্লা হো আকবর! আল্লা হো আকবর! (নিজের সঙ্গীদের) চলে এসো চলে এসো, সবকটা মরে গেছে। (স্লোগান দিতে থাকে আমাদের নেতা খোমেইনি... আমাদের নেতা খোমেইনি... খোমেইনি  জিন্দাবাদ!) [কিছুক্ষণের জন্যে বাইরে থেকে আসা লোকেরা ভেতরের আলো-আঁধারির জন্যে ভালো করে দেখতে পায় না। একটু পরে চোখ ধাতস্থ হলে, বৃদ্ধকে দেখিয়ে]
ইশশ ! এই বুড়ো লোকটাকে চাবুক মারছিল ওরা!
২য় লোক : বাকি কয়েদীরা কোথায়? (দুই বন্দী ভীত। শান্ত। বৃদ্ধ উঠে দাঁড়ায়, দৌড়ে ঢুকে যায় নিজের সেলে)
৩য় লোক : মনে হচ্ছে এরা ছাড়া এখানে আর কোনো কয়েদী নেই। (দুই  বন্দীকে) চলো চলো বাইরে এসো... (দুই বন্দী সেলের একদম কোণে দেওয়ালে সেঁটে রয়েছে ভয়ে, বাইরে বেরোয় না)
৪র্থ লোক : (৩য় লোকটিকে উদ্দেশ্য করে) দেরি করা যাবে না, দাঁড়িও না এখানে বেশিক্ষণ। আমাদের সবকটা জায়গা খুঁজে দেখতে হবে, সব কয়েদীর কাছে যেতে হবে। (একজন লোক, যার হাতে অনেকগুলো বন্দুক, সেলদুটোর দরজা খুলে দেয়। সেলের সামনে বন্দুক রেখে দেয় দুই বন্দীর জন্য)
২য় লোক : (দুই বন্দীকে) চলো চলো বেরিয়ে এসো তোমরা। বন্দুকগুলো আমরা গার্ডদের থেকে পেয়েছি। সবকটা গার্ড মরে গেছে। ভয় নেই, শিগগিরি বেরিয়ে এসো... কেউ নেই, সবাই মরে গেছে। বেরিয়ে এসো.. চলো চলো.. (সব লোক বেরিয়ে যায়। দুই বন্দী অবাক হয়ে বন্দুক দুটো দেখতে থাকে। যুবকটি বন্দুকের কাছে যায়, ধরতে যায় ওটা)
বৃদ্ধ : খবরদার! ধরবে না ওটা। ফেলে দাও। ফেলে দাও বলছি! (বৃদ্ধ  তার নিজের সেলের সামনে পড়ে থাকা বন্দুকটা তুলে ছুঁড়ে দেয় দূরে, যুবক তাকে নকল করে। এবারে বৃদ্ধ নিজের সেল থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে মরে পড়ে থাকা দ্বিতীয় কারারক্ষীর হাত থেকে চাবিটা নিয়ে আবার নিজের সেলে ঢুকে যায়। তালা দেয় সেলে। চাবিটা ছুঁড়ে দেয় দ্বিতীয় কারারক্ষীর মৃতদেহের দিকে। আলো নেভে।)

(ক্রমশ)







কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন