পাহাড় টাহাড়
যেমন হয় কয়েকটা বাঁক, তারপর!
তারপর আমি ওদের দেখি! ওদের বাইফোকাল চশমা, প্রত্যেকের। যখন হাসে, এত লম্বা হাসি যে মন্নারুগুড়ি মুথথুকৃষ্ণন মনোহরণ আইয়ার মনে হয়। ওরা আমায় ধরে এনেছে, আমি জানি না কেন...
ওরা-১
আমি ছোট থেকেই হারামী!
ওরা-২
আমি বাঁয়া... একটু ইয়ে ছিলাম... গোতাখোর টাইপ... কী যেন বলে বাংলায়?... দূর বাঁয়া...
আমি বললাম, ডুবুরি?
-হ্যাঁ ওই... মেয়ে দেখলেই বাঁয়া...
-আচ্ছা বাঁয়া বাঁয়া করছেন কেন... বাঁয়াটা কী?
ওরা-৩
-ওটা ওর মুদ্রাদোষ... ভদ্রসমাজে বলার জন্য ড় টা চেঞ্জ করে য় করে দিয়েছি... এর জন্য ওকে খাটতে হয়ে খুব।
আমি চুপ করে যাই। পাহাড়ে এসে এ সব কী হচ্ছে আমার সঙ্গে?
-আমরা তো ভটকে হুয়ে লোগ, আর তুমি?
-বেড়াতে এসেছি
-কেন, হিমালয় কি তোমার জন্য দাঁড়িয়ে আছে? এটা মজা মারার জায়গা? শ্লা যে আসবে ইয়ে করে চলে যাবে... পুরো ব্যবস্থাটা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, নোংরা নোংরা সব লোকজন... কী করা হয়?
- কেরানি
-আর?
-আর মানে?
-বাঙালি তো রাজনীতি টিতি... কবিতা?
চুপ করে থাকি।
ওরা নাম্বার তিন হাসে। এবার জোনাকি টাইপ, টিপ টিপ।
ওরা-১
-যা বলছিলাম, আমি কিন্তু হারামি... হারামির বাচ্চা নই... আমার বাবা খাদ্য আন্দোলনে... আমার মা স্ট্রোকে... আমার এক কাকা যে ওই সময়ের বাইক ইয়েজদি চালিয়ে ঠিকেদারি করতো... দাপুটে ম্যাচো টাইপ... আমায় দার্জিলিং পাঠিয়ে দিলো... মিশনারি স্কুল... পেকে গেলাম... স্কুল কেটে ‘মেরা নাম জোকার’ দেখার পরে স্কুলের এক টিচারের... রুবি ম্যাম... তখন খুব চলছে ‘মনে পড়ে রুবি রায়...’, রুবি ম্যাম হেবি ছিল... সেক্সি আর কী... তো একদিন লেডিজ টয়লেটের ফুটো দিয়ে রুবি ম্যাম’কে দেখার সময় ধরা পড়ে গেলাম... যা হয়... তাড়িয়ে দিলো... কাকা এসে বলল, কি রে তোর এখনই এত... ভালো স্কুল সইলো না তো? চল বাংলা স্কুলে পড়বি চল!
ওরা-২
-কী বাঁয়া কেমন লাগছে?
-ঠিক কী চান বলুন তো আমার কাছে, আপনারা আমায় ধরে এনেছেন কেন?
-কেন বে, তুই কোন্ লাটসাহেব যে ধরা যাবে না? আমরা তো সকাল থেকেই ঢালছি... তোর চলবে?
-না চলবে না...
-এই বাঁয়া মেজাজ দেখাবি না... এটা দেখেছিস?
আমি দেখি, রিভলবার। যা শ্লা, মারবে নাকি?
-আমি ভয় পাই না... মারবেন তো মারুন!
-দূর বায়াঁ... তুই আমাদের ইন্টারভিউ নিবি... আমাদের প্রথম আর শেষ ইন্টারভিউ।
-মানে?
-মানে কী বে? আমরা তোকে ইন্টারভিউ দেব... আর তোকে এটা নিতে হবে।
ওরা-২ আমার রগে রিভলবার চেপে ধরে।
ওরা-১
-তুই কেরানি কেন বললি নিজেকে? আর সঙ্গের মেয়েটাও কি তোর সঙ্গে খবরের কাগজে কাজ করে? কে ও? গার্লফ্রেন্ড, বৌ, নাকি সেটিং-এর মাল?
আমার কান মাথা ঝাঁ ঝাঁ করছে। আমি সাংবাদিক, আমার সঙ্গে শ্রুতিমা... সব জানে ওরা... কী চায় ওরা... কিসের ইন্টারভিউ... এরা কি সন্ত্রাসবাদী? খুনী? স্মাগলার?
ওরা-১, ২ আর ৩ হাসছে। ওদের একরকম পোশাক, গোঁফ পি.সি.সরকার টাইপ, কালো প্যান্ট, শাদা শার্ট, কালো ব্লেজার, ক্লিন শেভড... ওরা কি অ্যাময় করে... আমার দুই বন্ধুকে দেখেছিলাম এভাবে, অ্যাময় করত আর পোশাক থেকে গোঁফ সব এক রকমের।
ওরা একসঙ্গে মদ খাচ্ছে, হাসছে, ভয় দেখাচ্ছে। কি যে করি... আমার মোবাইল ওদের হাতে... মাঝে মাঝে দেখাচ্ছে। শ্রুতিমা’র ছবি প্রোফাইলে।
১ নম্বর বলল, ভগবান আমায় বলেছে তুই নাকি পারবি।
-আমি? কি পারব আর ভগবানটাই বা কে?
২ নম্বর— ও তো ভগবানের ইয়ে... মানে ভগবান আর ও রোজই আড্ডা মারে।
-কিন্তু ভগবান কে?
ওরা হাসে। মদ ছলকে ওঠে। পাহাড়ের এই আলোমিহিন পরবাসে আমার ঘাম হচ্ছে কেন? শ্রুতিমাই বলেছিল, চলো আলোমিহিন পরবাসে যাই...পাহাড়ে। ও কবিতা লেখে... ওর ওই পরবাস এখন আমার বাঁশ হয়ে দাঁড়িয়েছে...
আমার সেই ম্যাচো কাকা তো আমায় দার্জিলিং থেকে নিয়ে এসে শিলিগুড়ির বাংলা স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলো। আমার বাবা খাদ্য আন্দোলনে, আমার মা স্ট্রোকে... তো আমি খুব একা ছিলাম... একটু দাড়ি গোঁফ বেরোতেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ হয়ে গেল গাঁজা, পাতা, ট্যাবলেট খাওয়া ছেলেদের... সবাই একা... কারো বাপ লম্পট... কারো মা অন্য লোকের সঙ্গে কেটে পড়েছে... কেউ বা ব্যবসায়ী বাবা’র দু’নম্বরি কারবারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে... যাইহোক এদের পাল্লায় পড়ে আমি আমার ভার্জিনিটি লস করি ষোলো বছর বয়সে। শিলিগুড়ির রেডলাইট এরিয়ায় তমান্নাকে পেলাম এভাবেই... তমান্না লাইনের মেয়ে হলেও আমায় খুব ইয়ে করত... আমি ওর ঘরেই যেতাম... কাজ টাজ করার পরে আমরা ডুয়েট গান গাইতাম... ভিগি ভিগি রাত মে/মিঠি মিঠি বাত মে/এইসি বরষাত মে/ক্যাসা লগতা হ্যায়...।এ রকমই এক বৃষ্টি’র রাতে তমান্না আমায় অম্বরবাবুর কথা বলে, নেতা কাম ঠিকাদার... অম্বর দত্ত... তমান্না’র কাস্টমার... তমান্না অম্বর দত্ত’কেও বলে আমার কথা... আমি সাপ্লায়ার হতে থাকি এরপর... সব ওই অম্বর দত্তের কেরামতি... ব্যবসা আর নেতাগিরি চুটিয়ে করত... অনেকটা রবিনহুড টাইপের... দান খয়রাতি করত খুব... মাল টাল খাওয়ার পরে গরীবের দুঃখে কেঁদে ফেলতো... আমায় একটা অদ্ভুত কাজ দিয়েছিল অম্বরদা... শিলিগুড়ির সবচেয়ে গরীব মানুষদের লিস্ট বানাবার... আমি দিনের বেলায় গরীবদের লিস্ট বানাতাম... এই দেশে এর চেয়ে সহজ কাজ আর কী আছে? আর রাতে অম্বরদা সেই সব গরীব মানুষের বাড়িতে গিয়ে পাঁচশো হাজার দিয়ে আসত... সঙ্গে আমি থাকতাম... ওই তমান্না’র ওখান থেকে ফেরার পথে আমি আর অম্বরবাবু... তমান্নাকে উনি আমার জন্য ছেড়ে দিয়ে তখন টিনা’র ঘরে যাচ্ছেন... এত কনসিডারেট, ভাবা যায়?
এক নম্বর আরেকটা পেগ নিতে গিয়ে থামল। ৩ নম্বর বলল, ও শালা এম্নি এম্নি দান খয়রাত করত নাকি! আমি ডাক্তার, এম.ডি। ওর দাঁড়াতো না। ওসব যায়গায় গেলে কী হবে... মাল ফাল খেয়ে চলে আসত... ওকে কোনো এক বাবা বলেছিল গরীবদের উদ্ধার করলে ওর ইয়ে হতে পারে, মানে ইউ নো হোয়াট আই মিন?... এর মধ্যে হাসির কিছু নেই, যার এটা হয় সেই বোঝে এটা... আমি চেষ্টা করেছিলাম... ১ নম্বর ওকে আমার কাছে নিয়ে আসত... এ ভাবেই তো ওর সঙ্গে আমার আলাপ...
২ নম্বর হঠাৎ ক্ষেপে গেল, মনে হয় নেশা চড়ে গেছে... বলল, আমি বাঁয়া জনগণ সাপ্লাই দিতাম ওই ১ নম্বর’কে... মিছিলের জন্য... মিটিং ফিটিং-এর জন্য... এ ছাড়া পরোটা ঘুঘনি... রুটি, সব্জি.... আর ডেকোরেশনের জিনিস... আমি ১ নম্বরকে দিতাম আর বাঞ্চোত এক নম্বর ওই বাঁয়া অম্বর দত্তের সঙ্গে মাল কামাতো... ওই যে বলছে না গরীবদের সাহায্য করত অম্বর, এ বাঁয়া সেখান থেকেও কমিশন পেত... গরীব প্রতি ১০০ টাকা। তবে এ কথাও ঠিক যে, অম্বর দত্ত আমায় আর ওকে অনেক দিয়েছে... অনেক...
১ নম্বর ২ আর ৩ নম্বরের দিকে তাকিয়ে হাসল। ৩ নম্বর গলা খাঁকারি দিয়ে বলল, এরপরেই ভগবান এলো ওর লাইফে... আমি ডাক্তার, আমিও বিশ্বাস করিনি প্রথমে... ১ নম্বর বলে, আমার বাড়ির পেছনে রান্নাঘরের পাশে বাঁশঝাড় আছে, সেখানে ওকে প্রথম দেখি, আমি অবাক হয়ে দেখেছিলাম একটা ছায়াশরীর নড়ছে... আমি কথা বলার চেষ্টা করলাম... হাসির শব্দ শুনলাম... তারপর দেখলাম পুরো জ্যোতি!
আমি বল্লাম, জ্যোতি বসু? ভগবান হয়ে গেছে?
--আরে দূর জ্যোতি বসু নয়, জ্যোতি দেখলাম মাথার পিছনে... আমি দেখলাম ভগবানকে...
--কেমন দেখতে ভগবান? শাদা না কালো?
--আবছায়া... সবই তাঁর লীলা!
--লীলা? লীলা আবার কে?
--ভগবানের লীলা... ভগবান আমায় কত কথা যে বলল... যেন আমার বাবা... বলল, আমি যেন তমান্নাকে ছেড়ে দিয়ে বিয়ে করি, ঘর সংসার করি... বলল, অম্বর দত্ত শয়তান হ্যায়।
--ভগবান হিন্দিতে বলল?
--হ্যাঁ... রেগে গেলে ভগবান... আসলে সংস্কৃত বলত প্রথম দিকে, আমি বুঝতাম না। তো হিন্দিতে শিফট করে গেল... বাংলাভাষায় নাকি রাগ নেই...
--ভগবান রোজ আসত?
--না না রোজ নয়... অফ ডে’তে
--মানে?
--শনি, রবি
--ওখানেও ছুটি?
২ নম্বর আর ৩ নম্বর এবার আমার দিকে এগিয়ে আসে। ৩ নম্বর বলে, বেশ হচ্ছে ইন্টারভিউ... চালিয়ে যাও... আমরা এমনটাই চেয়েছিলাম। এই আমাদের প্রথম আর শেষ ইন্টারভিউ তো... ১ নম্বর ভগবানের নামগান শুরু করে দে!
১ নম্বর--ভগবানের কথা এদের বলায় এরা বিশ্বাস করেনি... তো এক রোব্বারে নিয়ে এলাম আমার বাড়িতে। ভগবান ঠিক সময়েই এলো... আমরা প্রণাম করলাম... আবছা ভগবান বলল, তোর ডাক্তারি কেমন চলছে ৩ নম্বর?
--ভালোই চলছে বাবা!
--বাবা? আমি কি রামদেব নাকি? বাবা টাবা বলবি না... হয় ভগা’দা বল, নয়তো প্রভু।
--প্রভু! প্রভুই বলি... প্রভু আপনি বলুন আমরা সুখি হতে চাই... ভালোভাবে বাঁচতে চাই... ১ আর ২ নম্বর আরো টাকা পয়সা চায়... প্রভু আপনি উপায় বাতলে দিন!
ভগবান বাঁয়া বহুত রেগে গেল, বলল, ২ নম্বর!
--কী রকম?
--চেঁচিয়ে বলল, তুমলোগ গান্ডু হ্যায়... এক নম্বর কা গান্ডু হ্যায়... ডাক্তার তেরা বেটি শিলিগুড়ি ডি.পি.এস মে পড়তি হ্যায়?
--হাঁ স্যরজী
--তেরা বেটি কো কাল শাম কো স্কুল গেট সে অম্বর দত্ত উঠায় গা... তোর বাড়িতেই ও দেখেছে তোর মেয়েকে।
--কেন উঠায় গা ভগবান?
--আরে এহি তো উসকা আসলি বেওসা হ্যায়... লেড়কি উঠাকে কলকাত্তা, দিল্লি, মুম্বই ভেজনা... আজ রাতেই ওকে আটকা... তোর মেয়ের খুব বিপদ ডাক্তার! আর ওই ১ নম্বর, ও শালা ফালতু চামচা ছাড়া কিছু নয়... ও এ সবের কিস্যু জানে না...
সেই পাহাড়ি সন্ধ্যায় আমি একই রকম পোশাক পরা তিনজনের দিকে তাকিয়ে থাকি... ওরা আমায় ঘিরে রয়েছে... আমাদের ওপর মেঘকুয়াশার চাদর... আমি কিছু বলতে না পেরে কোনো মতে বললাম, ভগবান গান্ডু বলল?
ওদের মধ্যে যে ডাক্তার অর্থাৎ তিন নম্বর, আমার কাছে এসে বলল, গান্ডু কোনো খিস্তিফিস্তি নয়... আর ভগবান খিস্তি করবে না, এ রকম কোনো আইন আছে নাকি...
১ নম্বর বলল, ওটা তো ভগবানের মুদ্রাদোষ, ২ নম্বরের যেমন বাঁয়া... ভগবান তো ওবামাকেও গান্ডু বলত।
--ওবামা? প্রেসিডেন্ট ওবামা?
--হ্যাঁ... ওবামা তো মানুষই... ভগবান বলত, ওবামাটা গান্ডু... শেষ পর্যন্ত নাস্তিক চীনের থেকে ৮০০ বিলিয়ন ডলার ধার করে নিজেদের বাঁচালো?
আমি স্তব্ধ। আমার গুলিয়ে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে ওরা খুব হাসছে। হাসতে হাসতেই ৩ নম্বর বলল, সেদিন রাতেই আমরা অম্বর দত্তকে নিয়ে তিস্তা’র এক নির্জন বাঁকে চলে যাই... প্রচুর মাল ফাল খাওয়া হয়... অম্বর দত্ত একসময় আমার মেয়েকে নিয়ে ওর প্ল্যান ১ নম্বর’কে বলে দেয়... আমরাই এটা ১ নম্বর’কে করতে বলেছিলাম... এরপর আমরা ওকে খুন করি... তিস্তায় ওর লাশ ছুঁড়ে ফেলে দিই... এই আমাদের গল্প... এবার আমরাও যাব... নে তোর মোবাইল নে... ফিরে যা তোর ইয়ের কাছে...
১ নম্বর বলে, এক মিনিট, যাওয়ার আগে আমার কিছু বলার আছে ওকে... ১ নম্বর এগিয়ে আসে... আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে, আসলে ওই ডাক্তারের মেয়েটাকে আমার জন্যই অম্বর দত্ত তুলতে যাচ্ছিল... মেয়েটা আমার চেয়ে অনেক ছোট... কিন্তু তাতে কী... আমি এক-দু’রাত চেখে ওকে পাচার করে দিতাম... আমি কিন্তু অম্বর দত্ত’র সব কিছু জানতাম... ভগবান বুঝতে পারল না কেন কে জানে... নাকি সবই তাঁর লীলা? ১ নম্বর চলে যায়, ৩ নম্বরের পাশে দাঁড়ায় মাথা নিচু করে, আর তখনই ২ নম্বর এগিয়ে আসে আমার দিকে, খুব আস্তে বলে, এরপর এ সব বলার সুযোগ হবে না... শেষ ইন্টারভিউ যখন, বলেই ফেলি... আমি না ওই ডাক্তারের বৌয়ের সঙ্গে... ইয়ে... মানে ইন্টুবিন্টু হয়ে যায় আমার... ডাক্তার সময় দিত না ওর বৌ’কে... তো আমি ওদের বাড়িতে প্রায় সবকিছু সাপ্লাই দিতে দিতে জড়িয়ে পড়ি... মাইরি বলছি, ওর বৌই আমায় একদিন বলে, এই যে সাপ্লায়ার আমায় কিছু সাপ্লাই দেবে না?... ব্যাস শুরু হয়ে গেল... লীলা... এবার ৩ নম্বর মানে ডাক্তার কিছুটা এগিয়ে এসে চেঁচিয়েই বলল, ওই ২ নম্বরের সঙ্গে আমার বৌ-এর ফষ্টিনষ্টির কথা আমি জানতে পেরেছিলাম... আমার বৌ এসব করে বেড়াচ্ছে... অথচ আমি... আমার কিছু করার ছিল না... আমি ওকে ভালোবাসতাম... আই স্টিল লভ হার... এন্ড সি মাই হেল্পলেসনেস, আই এম স্টিল ইন লভ উইথ দ্যাট বিচ... হয়তো তাই ওই খুনটা করার সময় আমি আমার যাবতীয় রাগ রিলিজ করে দিচ্ছিলাম... ইনফ্যাক্ট আমিই সিজারিয়ান নাইফ দিয়ে অম্বর দত্ত’র গলার নলিটা কেটে দিই... ওরা নয়... ইটস মি...
এখন তিনজন খাদের দিকে পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এবার মুখ ঘোরালো একসঙ্গে। বলল, বাই... তারপর ঝাঁপ দিলো।
আমি ছুটে গেলাম, তাকালাম তল দেখতে না পাওয়া খাদের দিকে... থরে থরে মেঘ আর কুয়াশা উঠে আসছে... ওরা কোথায়? ওরা কি সত্যিই আমার সঙ্গে ছিল... তাহলে কোনো আর্তনাদ নেই কেন? পাহাড় কি শুষে নেয় সব কিছু?
যেমন হয় কয়েকটা বাঁক, তারপর!
তারপর আমি ওদের দেখি! ওদের বাইফোকাল চশমা, প্রত্যেকের। যখন হাসে, এত লম্বা হাসি যে মন্নারুগুড়ি মুথথুকৃষ্ণন মনোহরণ আইয়ার মনে হয়। ওরা আমায় ধরে এনেছে, আমি জানি না কেন...
ওরা-১
আমি ছোট থেকেই হারামী!
ওরা-২
আমি বাঁয়া... একটু ইয়ে ছিলাম... গোতাখোর টাইপ... কী যেন বলে বাংলায়?... দূর বাঁয়া...
আমি বললাম, ডুবুরি?
-হ্যাঁ ওই... মেয়ে দেখলেই বাঁয়া...
-আচ্ছা বাঁয়া বাঁয়া করছেন কেন... বাঁয়াটা কী?
ওরা-৩
-ওটা ওর মুদ্রাদোষ... ভদ্রসমাজে বলার জন্য ড় টা চেঞ্জ করে য় করে দিয়েছি... এর জন্য ওকে খাটতে হয়ে খুব।
আমি চুপ করে যাই। পাহাড়ে এসে এ সব কী হচ্ছে আমার সঙ্গে?
-আমরা তো ভটকে হুয়ে লোগ, আর তুমি?
-বেড়াতে এসেছি
-কেন, হিমালয় কি তোমার জন্য দাঁড়িয়ে আছে? এটা মজা মারার জায়গা? শ্লা যে আসবে ইয়ে করে চলে যাবে... পুরো ব্যবস্থাটা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, নোংরা নোংরা সব লোকজন... কী করা হয়?
- কেরানি
-আর?
-আর মানে?
-বাঙালি তো রাজনীতি টিতি... কবিতা?
চুপ করে থাকি।
ওরা নাম্বার তিন হাসে। এবার জোনাকি টাইপ, টিপ টিপ।
ওরা-১
-যা বলছিলাম, আমি কিন্তু হারামি... হারামির বাচ্চা নই... আমার বাবা খাদ্য আন্দোলনে... আমার মা স্ট্রোকে... আমার এক কাকা যে ওই সময়ের বাইক ইয়েজদি চালিয়ে ঠিকেদারি করতো... দাপুটে ম্যাচো টাইপ... আমায় দার্জিলিং পাঠিয়ে দিলো... মিশনারি স্কুল... পেকে গেলাম... স্কুল কেটে ‘মেরা নাম জোকার’ দেখার পরে স্কুলের এক টিচারের... রুবি ম্যাম... তখন খুব চলছে ‘মনে পড়ে রুবি রায়...’, রুবি ম্যাম হেবি ছিল... সেক্সি আর কী... তো একদিন লেডিজ টয়লেটের ফুটো দিয়ে রুবি ম্যাম’কে দেখার সময় ধরা পড়ে গেলাম... যা হয়... তাড়িয়ে দিলো... কাকা এসে বলল, কি রে তোর এখনই এত... ভালো স্কুল সইলো না তো? চল বাংলা স্কুলে পড়বি চল!
ওরা-২
-কী বাঁয়া কেমন লাগছে?
-ঠিক কী চান বলুন তো আমার কাছে, আপনারা আমায় ধরে এনেছেন কেন?
-কেন বে, তুই কোন্ লাটসাহেব যে ধরা যাবে না? আমরা তো সকাল থেকেই ঢালছি... তোর চলবে?
-না চলবে না...
-এই বাঁয়া মেজাজ দেখাবি না... এটা দেখেছিস?
আমি দেখি, রিভলবার। যা শ্লা, মারবে নাকি?
-আমি ভয় পাই না... মারবেন তো মারুন!
-দূর বায়াঁ... তুই আমাদের ইন্টারভিউ নিবি... আমাদের প্রথম আর শেষ ইন্টারভিউ।
-মানে?
-মানে কী বে? আমরা তোকে ইন্টারভিউ দেব... আর তোকে এটা নিতে হবে।
ওরা-২ আমার রগে রিভলবার চেপে ধরে।
ওরা-১
-তুই কেরানি কেন বললি নিজেকে? আর সঙ্গের মেয়েটাও কি তোর সঙ্গে খবরের কাগজে কাজ করে? কে ও? গার্লফ্রেন্ড, বৌ, নাকি সেটিং-এর মাল?
আমার কান মাথা ঝাঁ ঝাঁ করছে। আমি সাংবাদিক, আমার সঙ্গে শ্রুতিমা... সব জানে ওরা... কী চায় ওরা... কিসের ইন্টারভিউ... এরা কি সন্ত্রাসবাদী? খুনী? স্মাগলার?
ওরা-১, ২ আর ৩ হাসছে। ওদের একরকম পোশাক, গোঁফ পি.সি.সরকার টাইপ, কালো প্যান্ট, শাদা শার্ট, কালো ব্লেজার, ক্লিন শেভড... ওরা কি অ্যাময় করে... আমার দুই বন্ধুকে দেখেছিলাম এভাবে, অ্যাময় করত আর পোশাক থেকে গোঁফ সব এক রকমের।
ওরা একসঙ্গে মদ খাচ্ছে, হাসছে, ভয় দেখাচ্ছে। কি যে করি... আমার মোবাইল ওদের হাতে... মাঝে মাঝে দেখাচ্ছে। শ্রুতিমা’র ছবি প্রোফাইলে।
১ নম্বর বলল, ভগবান আমায় বলেছে তুই নাকি পারবি।
-আমি? কি পারব আর ভগবানটাই বা কে?
২ নম্বর— ও তো ভগবানের ইয়ে... মানে ভগবান আর ও রোজই আড্ডা মারে।
-কিন্তু ভগবান কে?
ওরা হাসে। মদ ছলকে ওঠে। পাহাড়ের এই আলোমিহিন পরবাসে আমার ঘাম হচ্ছে কেন? শ্রুতিমাই বলেছিল, চলো আলোমিহিন পরবাসে যাই...পাহাড়ে। ও কবিতা লেখে... ওর ওই পরবাস এখন আমার বাঁশ হয়ে দাঁড়িয়েছে...
আমার সেই ম্যাচো কাকা তো আমায় দার্জিলিং থেকে নিয়ে এসে শিলিগুড়ির বাংলা স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলো। আমার বাবা খাদ্য আন্দোলনে, আমার মা স্ট্রোকে... তো আমি খুব একা ছিলাম... একটু দাড়ি গোঁফ বেরোতেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ হয়ে গেল গাঁজা, পাতা, ট্যাবলেট খাওয়া ছেলেদের... সবাই একা... কারো বাপ লম্পট... কারো মা অন্য লোকের সঙ্গে কেটে পড়েছে... কেউ বা ব্যবসায়ী বাবা’র দু’নম্বরি কারবারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে... যাইহোক এদের পাল্লায় পড়ে আমি আমার ভার্জিনিটি লস করি ষোলো বছর বয়সে। শিলিগুড়ির রেডলাইট এরিয়ায় তমান্নাকে পেলাম এভাবেই... তমান্না লাইনের মেয়ে হলেও আমায় খুব ইয়ে করত... আমি ওর ঘরেই যেতাম... কাজ টাজ করার পরে আমরা ডুয়েট গান গাইতাম... ভিগি ভিগি রাত মে/মিঠি মিঠি বাত মে/এইসি বরষাত মে/ক্যাসা লগতা হ্যায়...।এ রকমই এক বৃষ্টি’র রাতে তমান্না আমায় অম্বরবাবুর কথা বলে, নেতা কাম ঠিকাদার... অম্বর দত্ত... তমান্না’র কাস্টমার... তমান্না অম্বর দত্ত’কেও বলে আমার কথা... আমি সাপ্লায়ার হতে থাকি এরপর... সব ওই অম্বর দত্তের কেরামতি... ব্যবসা আর নেতাগিরি চুটিয়ে করত... অনেকটা রবিনহুড টাইপের... দান খয়রাতি করত খুব... মাল টাল খাওয়ার পরে গরীবের দুঃখে কেঁদে ফেলতো... আমায় একটা অদ্ভুত কাজ দিয়েছিল অম্বরদা... শিলিগুড়ির সবচেয়ে গরীব মানুষদের লিস্ট বানাবার... আমি দিনের বেলায় গরীবদের লিস্ট বানাতাম... এই দেশে এর চেয়ে সহজ কাজ আর কী আছে? আর রাতে অম্বরদা সেই সব গরীব মানুষের বাড়িতে গিয়ে পাঁচশো হাজার দিয়ে আসত... সঙ্গে আমি থাকতাম... ওই তমান্না’র ওখান থেকে ফেরার পথে আমি আর অম্বরবাবু... তমান্নাকে উনি আমার জন্য ছেড়ে দিয়ে তখন টিনা’র ঘরে যাচ্ছেন... এত কনসিডারেট, ভাবা যায়?
এক নম্বর আরেকটা পেগ নিতে গিয়ে থামল। ৩ নম্বর বলল, ও শালা এম্নি এম্নি দান খয়রাত করত নাকি! আমি ডাক্তার, এম.ডি। ওর দাঁড়াতো না। ওসব যায়গায় গেলে কী হবে... মাল ফাল খেয়ে চলে আসত... ওকে কোনো এক বাবা বলেছিল গরীবদের উদ্ধার করলে ওর ইয়ে হতে পারে, মানে ইউ নো হোয়াট আই মিন?... এর মধ্যে হাসির কিছু নেই, যার এটা হয় সেই বোঝে এটা... আমি চেষ্টা করেছিলাম... ১ নম্বর ওকে আমার কাছে নিয়ে আসত... এ ভাবেই তো ওর সঙ্গে আমার আলাপ...
২ নম্বর হঠাৎ ক্ষেপে গেল, মনে হয় নেশা চড়ে গেছে... বলল, আমি বাঁয়া জনগণ সাপ্লাই দিতাম ওই ১ নম্বর’কে... মিছিলের জন্য... মিটিং ফিটিং-এর জন্য... এ ছাড়া পরোটা ঘুঘনি... রুটি, সব্জি.... আর ডেকোরেশনের জিনিস... আমি ১ নম্বরকে দিতাম আর বাঞ্চোত এক নম্বর ওই বাঁয়া অম্বর দত্তের সঙ্গে মাল কামাতো... ওই যে বলছে না গরীবদের সাহায্য করত অম্বর, এ বাঁয়া সেখান থেকেও কমিশন পেত... গরীব প্রতি ১০০ টাকা। তবে এ কথাও ঠিক যে, অম্বর দত্ত আমায় আর ওকে অনেক দিয়েছে... অনেক...
১ নম্বর ২ আর ৩ নম্বরের দিকে তাকিয়ে হাসল। ৩ নম্বর গলা খাঁকারি দিয়ে বলল, এরপরেই ভগবান এলো ওর লাইফে... আমি ডাক্তার, আমিও বিশ্বাস করিনি প্রথমে... ১ নম্বর বলে, আমার বাড়ির পেছনে রান্নাঘরের পাশে বাঁশঝাড় আছে, সেখানে ওকে প্রথম দেখি, আমি অবাক হয়ে দেখেছিলাম একটা ছায়াশরীর নড়ছে... আমি কথা বলার চেষ্টা করলাম... হাসির শব্দ শুনলাম... তারপর দেখলাম পুরো জ্যোতি!
আমি বল্লাম, জ্যোতি বসু? ভগবান হয়ে গেছে?
--আরে দূর জ্যোতি বসু নয়, জ্যোতি দেখলাম মাথার পিছনে... আমি দেখলাম ভগবানকে...
--কেমন দেখতে ভগবান? শাদা না কালো?
--আবছায়া... সবই তাঁর লীলা!
--লীলা? লীলা আবার কে?
--ভগবানের লীলা... ভগবান আমায় কত কথা যে বলল... যেন আমার বাবা... বলল, আমি যেন তমান্নাকে ছেড়ে দিয়ে বিয়ে করি, ঘর সংসার করি... বলল, অম্বর দত্ত শয়তান হ্যায়।
--ভগবান হিন্দিতে বলল?
--হ্যাঁ... রেগে গেলে ভগবান... আসলে সংস্কৃত বলত প্রথম দিকে, আমি বুঝতাম না। তো হিন্দিতে শিফট করে গেল... বাংলাভাষায় নাকি রাগ নেই...
--ভগবান রোজ আসত?
--না না রোজ নয়... অফ ডে’তে
--মানে?
--শনি, রবি
--ওখানেও ছুটি?
২ নম্বর আর ৩ নম্বর এবার আমার দিকে এগিয়ে আসে। ৩ নম্বর বলে, বেশ হচ্ছে ইন্টারভিউ... চালিয়ে যাও... আমরা এমনটাই চেয়েছিলাম। এই আমাদের প্রথম আর শেষ ইন্টারভিউ তো... ১ নম্বর ভগবানের নামগান শুরু করে দে!
১ নম্বর--ভগবানের কথা এদের বলায় এরা বিশ্বাস করেনি... তো এক রোব্বারে নিয়ে এলাম আমার বাড়িতে। ভগবান ঠিক সময়েই এলো... আমরা প্রণাম করলাম... আবছা ভগবান বলল, তোর ডাক্তারি কেমন চলছে ৩ নম্বর?
--ভালোই চলছে বাবা!
--বাবা? আমি কি রামদেব নাকি? বাবা টাবা বলবি না... হয় ভগা’দা বল, নয়তো প্রভু।
--প্রভু! প্রভুই বলি... প্রভু আপনি বলুন আমরা সুখি হতে চাই... ভালোভাবে বাঁচতে চাই... ১ আর ২ নম্বর আরো টাকা পয়সা চায়... প্রভু আপনি উপায় বাতলে দিন!
ভগবান বাঁয়া বহুত রেগে গেল, বলল, ২ নম্বর!
--কী রকম?
--চেঁচিয়ে বলল, তুমলোগ গান্ডু হ্যায়... এক নম্বর কা গান্ডু হ্যায়... ডাক্তার তেরা বেটি শিলিগুড়ি ডি.পি.এস মে পড়তি হ্যায়?
--হাঁ স্যরজী
--তেরা বেটি কো কাল শাম কো স্কুল গেট সে অম্বর দত্ত উঠায় গা... তোর বাড়িতেই ও দেখেছে তোর মেয়েকে।
--কেন উঠায় গা ভগবান?
--আরে এহি তো উসকা আসলি বেওসা হ্যায়... লেড়কি উঠাকে কলকাত্তা, দিল্লি, মুম্বই ভেজনা... আজ রাতেই ওকে আটকা... তোর মেয়ের খুব বিপদ ডাক্তার! আর ওই ১ নম্বর, ও শালা ফালতু চামচা ছাড়া কিছু নয়... ও এ সবের কিস্যু জানে না...
সেই পাহাড়ি সন্ধ্যায় আমি একই রকম পোশাক পরা তিনজনের দিকে তাকিয়ে থাকি... ওরা আমায় ঘিরে রয়েছে... আমাদের ওপর মেঘকুয়াশার চাদর... আমি কিছু বলতে না পেরে কোনো মতে বললাম, ভগবান গান্ডু বলল?
ওদের মধ্যে যে ডাক্তার অর্থাৎ তিন নম্বর, আমার কাছে এসে বলল, গান্ডু কোনো খিস্তিফিস্তি নয়... আর ভগবান খিস্তি করবে না, এ রকম কোনো আইন আছে নাকি...
১ নম্বর বলল, ওটা তো ভগবানের মুদ্রাদোষ, ২ নম্বরের যেমন বাঁয়া... ভগবান তো ওবামাকেও গান্ডু বলত।
--ওবামা? প্রেসিডেন্ট ওবামা?
--হ্যাঁ... ওবামা তো মানুষই... ভগবান বলত, ওবামাটা গান্ডু... শেষ পর্যন্ত নাস্তিক চীনের থেকে ৮০০ বিলিয়ন ডলার ধার করে নিজেদের বাঁচালো?
আমি স্তব্ধ। আমার গুলিয়ে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে ওরা খুব হাসছে। হাসতে হাসতেই ৩ নম্বর বলল, সেদিন রাতেই আমরা অম্বর দত্তকে নিয়ে তিস্তা’র এক নির্জন বাঁকে চলে যাই... প্রচুর মাল ফাল খাওয়া হয়... অম্বর দত্ত একসময় আমার মেয়েকে নিয়ে ওর প্ল্যান ১ নম্বর’কে বলে দেয়... আমরাই এটা ১ নম্বর’কে করতে বলেছিলাম... এরপর আমরা ওকে খুন করি... তিস্তায় ওর লাশ ছুঁড়ে ফেলে দিই... এই আমাদের গল্প... এবার আমরাও যাব... নে তোর মোবাইল নে... ফিরে যা তোর ইয়ের কাছে...
১ নম্বর বলে, এক মিনিট, যাওয়ার আগে আমার কিছু বলার আছে ওকে... ১ নম্বর এগিয়ে আসে... আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে, আসলে ওই ডাক্তারের মেয়েটাকে আমার জন্যই অম্বর দত্ত তুলতে যাচ্ছিল... মেয়েটা আমার চেয়ে অনেক ছোট... কিন্তু তাতে কী... আমি এক-দু’রাত চেখে ওকে পাচার করে দিতাম... আমি কিন্তু অম্বর দত্ত’র সব কিছু জানতাম... ভগবান বুঝতে পারল না কেন কে জানে... নাকি সবই তাঁর লীলা? ১ নম্বর চলে যায়, ৩ নম্বরের পাশে দাঁড়ায় মাথা নিচু করে, আর তখনই ২ নম্বর এগিয়ে আসে আমার দিকে, খুব আস্তে বলে, এরপর এ সব বলার সুযোগ হবে না... শেষ ইন্টারভিউ যখন, বলেই ফেলি... আমি না ওই ডাক্তারের বৌয়ের সঙ্গে... ইয়ে... মানে ইন্টুবিন্টু হয়ে যায় আমার... ডাক্তার সময় দিত না ওর বৌ’কে... তো আমি ওদের বাড়িতে প্রায় সবকিছু সাপ্লাই দিতে দিতে জড়িয়ে পড়ি... মাইরি বলছি, ওর বৌই আমায় একদিন বলে, এই যে সাপ্লায়ার আমায় কিছু সাপ্লাই দেবে না?... ব্যাস শুরু হয়ে গেল... লীলা... এবার ৩ নম্বর মানে ডাক্তার কিছুটা এগিয়ে এসে চেঁচিয়েই বলল, ওই ২ নম্বরের সঙ্গে আমার বৌ-এর ফষ্টিনষ্টির কথা আমি জানতে পেরেছিলাম... আমার বৌ এসব করে বেড়াচ্ছে... অথচ আমি... আমার কিছু করার ছিল না... আমি ওকে ভালোবাসতাম... আই স্টিল লভ হার... এন্ড সি মাই হেল্পলেসনেস, আই এম স্টিল ইন লভ উইথ দ্যাট বিচ... হয়তো তাই ওই খুনটা করার সময় আমি আমার যাবতীয় রাগ রিলিজ করে দিচ্ছিলাম... ইনফ্যাক্ট আমিই সিজারিয়ান নাইফ দিয়ে অম্বর দত্ত’র গলার নলিটা কেটে দিই... ওরা নয়... ইটস মি...
এখন তিনজন খাদের দিকে পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এবার মুখ ঘোরালো একসঙ্গে। বলল, বাই... তারপর ঝাঁপ দিলো।
আমি ছুটে গেলাম, তাকালাম তল দেখতে না পাওয়া খাদের দিকে... থরে থরে মেঘ আর কুয়াশা উঠে আসছে... ওরা কোথায়? ওরা কি সত্যিই আমার সঙ্গে ছিল... তাহলে কোনো আর্তনাদ নেই কেন? পাহাড় কি শুষে নেয় সব কিছু?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন