শুক্রবার, ৩০ মে, ২০১৪

০১ অমিতাভ প্রামাণিক

চারানা আটানা


১১ রবীন্দ্রনাথ, এবং ...

হাবিজাবি কিছু লিখে এখানে ওখানে পোস্ট করলেও আজকাল দেখছি জনগণ আমার দিকে পচা টমেটো ছুঁড়ছে না। মুদ্রাস্ফীতির জন্যে সব জিনিসের আকাশছোঁয়া দাম, পচা-ধচাও আজ ছুঁড়ে মারা দুষ্কর। ‘ঠোঙাভরা বাদাম ভাজার মতো’ তাই পচা টমেটোকেও খাচ্ছে কিন্তু গিলছে না’র সম্মান জানাচ্ছে বোধহয় জনতা, সেই রোদে রাঙা ইঁটের পাঁজা’র ওপরে বসা রাজার মতো। মুদ্রাস্ফীতির সুফলের ওপর একটা রচনা লেখা যেতেই পারে এখন।

পঁচিশে বৈশাখের ঘোর কাটিয়ে উঠলাম। সর্বত্র গঙ্গাজলে গঙ্গাপুজো হচ্ছে। কিন্তু না, এই হাবিজাবির বাজারেও, খেয়াল করে দেখলাম, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কিছু বেমক্কা লিখলেই অনেকে বেজায় অখুশি। কেউ বলে ‘বুড়োদাদুকে ছেড়ে দাও’, কেউ বলে ‘আমাদের প্রাণের মানুষকে নিয়ে এটা কি না করলেই নয়’?

ব্যাপার হচ্ছে, লিখতে গেলে তো কিছু শব্দই লিখতে হয়। যে শব্দই লিখতে যাই, দাদুর লেখা মাথায় চলে আসে।

এ পর্যন্ত পড়ে আপনারা যদি ভাবেন রবীন্দ্রনাথের সম্বন্ধে আমার দারুণ জ্ঞান, তবে আপনারা একদম ঠিকই ভাবছেন। জ্ঞান রাখার জায়গা হচ্ছে না বলেই এসব লিখে পাতা ভরিয়ে দিচ্ছি।

বাঙালি বাড়িতে গেলেই দেখি সুদৃশ্য আলমারির তাকে সার সার রবীন্দ্র-রচনাবলী। কী দারুণ দেখতে! মাঝে মাঝে ন্যাকড়া দিয়ে মোছাও হয়। পাতাগুলো ফিনফিনে, অধিকাংশ পাতা একেবারে নতুনের মতো, বোঝা যায় ওদের ওপর রবির কিরণ বর্ষিত হয়নি কোনোদিন। বস্তুত রঃ রঃ ছাড়া বাঙালি-বাড়ি বাড়ি বলেই মনে হয় না!

আমারও মাতৃভাষা বাংলাই। কিন্তু বাসায় বইয়ের আলমারি বা বই, দুটোরই অস্তিত্ব নেই, রবীন্দ্র-রচনাবলী তো দূরের কথা। অন্যের বাড়ি গিয়ে পড়ারও মতি হয়নি কোনোদিন। অতগুলো ভল্যুম, কোন্‌টা ছেড়ে কোন্‌টা পড়ব? আর ঐ বইগুলো, আপামর জনতা স্বীকার করবেন, পড়ার জন্যে নয়, সাজিয়ে রাখার জন্যেই।

কপিরাইটের দরকার নেই আর, ও তো উঠেই গেছে, তাও একশো টাকায় পুরো রবীন্দ্র-রচনাবলী বলে কেউ যদি শুধু ওর খোলসটা বাজারে ছাড়ে, যাতে কোনো পাতা নেই, শুধু মলাটওয়ালা খাপ, হু হু করে বিক্রী হবে, যাদের বইয়ের আলমারিতে এগুলো নেই, তাদের কাছে।

ছোটবেলায় বাড়িতে একটা ‘সঞ্চয়িতা’ ছিল, তার আধখানা আমার মুখস্ত ছিল, কেননা ঐটা থেকে বাবা কবিতা সিলেক্ট করে আবৃত্তি কম্পিটিশনে দিত। ‘লুকোচুরি- বীরপুরুষ-সোনার তরী-ব্রাহ্মণ-আফ্রিকা-এবার ফিরাও মোরে’ -- এই রকম একটা সিক্যুয়েন্স ছিল আবৃত্তির উত্তরণের, বয়সের সাথে সাথে। খুঁজে খুঁজে বের করতাম সবচেয়ে বড় কবিতা কোন্‌টা। ‘মানসসুন্দরী’ বলে একটা বিশাল সাইজের কবিতা আছে। ‘পুরস্কার’ আর ‘জুতা আবিষ্কার’ তো পদ্যগল্প। এ সবের সাথে বাজার চলতি ‘আকাশভরা সূর্যতারা’ বা ‘আলোকের এই ঝর্ণাধারায়’ - এই অবধিই আমার জ্ঞান রবি ঠাকুরের ওপর। তাতেই যা লিখতে যাই, দাদুর শব্দ, দাদুর বাক্য, দাদুর ছন্দ মাথায় চলে আসে।


দাঁড়ান, দাঁড়ান, আর একটু আছে। ‘সহজ পাঠ’ ছোটবেলায় যখন পড়ার কথা, পড়িনি; কিন্তু ক্লাশ থ্রি থেকে টুয়েল্ভ অবধি বাংলা বইতে রবীন্দ্রনাথের লেখা তো পড়তেই হতো! ‘কুমোর পাড়ার গরুর গাড়ি’ বা ‘ফাল্গুনে বিকশিত কাঞ্চন ফুল’ বোধহয় দাদুরই লেখা, না? পাড়াগাঁয়ে বড় হয়েছি, ‘কলিকাতা চলিয়াছে নড়িতে নড়িতে’ টের পেয়েছি অনেক পরে। ‘জাপান যাত্রী’ পড়ে জানলাম, রবীন্দ্রনাথ জাপানেও গেছেন। ‘আশ্রমের রূপ ও বিকাশ’ বলে একটা পিস ছিল সিলেবাসে, ওটা পড়ার পর ‘জীবনস্মৃতি’ তো পড়তেই হয়! আর ‘মানুষের ধর্ম’, ‘সভ্যতার সংকট’ – এগুলো না পড়লে সবাই ছাগল বলবে না?

আর ঐ যে আবৃত্তির কথা বলছিলাম। হাইস্কুলে প্রতি বছর আবৃত্তির প্রাইজ ছিল রবীন্দ্রনাথের লেখা চটি বই। ‘পুনশ্চ-খেয়া-সোনার তরী-শিশু ভোলানাথ’ টাইপের পনের কুড়িটা বই তো ওইভাবেই পেলাম, আর চটি বই তো হাতে এলেই পড়ে ফেলা হয়ে যায়, তাই না?

ও হরি! ক্লাশ সেভেনে পড়ার সময় বাবা যে ‘গল্পগুচ্ছ’ কিনে আনলো! ‘ক্ষুধিত পাষাণ’ পড়ে চমৎকৃত হয়ে গেলাম, ‘কাবুলিওয়ালা’ পড়ে চোখের জল সামলানো গেল না, ‘নষ্টনীড়’ পড়ে তখন বুঝিনি, কেন এমন হলো!

আর সেই যে ক্ষুদে মারফি রেডিওটা, স্যরি, ট্র্যাঞ্জিস্টারটা! কলকাতা ক-এ ভোর পাঁচটা পঞ্চান্নয় প্যাঁ-পোঁ, ছটায় সুভাষিত, ছটা পাঁচে সঙ্গীতাঞ্জলি, তাতে দুটো কি তিনটে গান হতো, ছটা কুড়িতে খবর, সাড়ে ছটায় চাষিভাইদের বলছি। আমার অবশ্য সে সবে মন থাকত না, ছটা কুড়িতে কলকাতা খ-এ দুটো রবীন্দ্রসঙ্গীত হতো, তাই নব ঘুরিয়ে ক থেকে খ-এ চলে আসতাম। সাড়ে ছটায় বিবিধ ভারতীতে শুরু হতো বিজ্ঞাপনদাতা আয়োজিত অনুষ্ঠান, শুরু হতো রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে। তারপর কখন কোথায় রবি ঠাকুরের গান হবে, সে সব আমার মুখস্ত ছিল। বিবিসি বা ভয়েস অফ আমেরিকা থেকেও ভেসে আসত রবিবাবুর গান। আমি বইপত্রের মাঝে ট্র্যাঞ্জিস্টারটা লুকিয়ে মায়ের কান আড়াল করে বসতাম। মা ঘ্যান ঘ্যান করত, বাবা কিছু বলত না।

ইলেভেন টুয়েল্ভে যে স্যারের কাছে ফিজিক্স-কেমিস্ট্রি পড়তে যেতাম, সে বাড়িতে সবসময় রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজত। রেডিওতে, টেপ রেকর্ডারে, পরে টিভিতেও। বস্তুতঃ আমার ধারণাই ছিল, গান মানেই রবীন্দ্রসঙ্গীত। আধুনিক বাংলা গান শোনাটা দোষের নয় হয়তো, তবে হিন্দী গান মানেই অপসংস্কৃতি। আমাদের ছোটবেলার সিলেবাসের বাইরে।

এই প্রচন্ড রবিপ্রভাবে আমি যে বিদগ্ধ হব, তাতে আর আশ্চর্য কী! এখনো চুটকি লিখতে গেলে তাই রবিই চলে আসে অন্য সব ফেলে। দু-তিনটে উদাহরণ দিলেই স্পষ্ট হবে, কী বলতে চাইছি।

(১)

গিন্নী রান্না করেছেন। ছেলেকে খেতে দিলেন। ছেলে মুখ বেঁকিয়ে উঠে গেল।

- কী রে, খাবি না?

- কী সব রান্না করেছ, এসব আমি খাই?

- রোজ রোজ কি আমি রাজভোগ খাওয়াব নাকি?

- আমার খিদে নেই।

- এই তো খেতে বসলি। খিদে নেই মানে?

- মানে না খেলেই ভালো হয়।

- রাত্রে না খেলে ঘুম আসবে নাকি! কী খাবি?

- খাব না বললাম তো!

- আর জ্বালাস নে! কী খাবি বল।

- সেদিন মাশরুম আর বেবিকর্ণ দিয়ে যেটা বানিয়েছিলে –

- ভালো লেগেছিল?

- হুঁ।

- কিন্তু ঘরে যে মাশরুম নেই! এখন যা আছে, খেয়ে নে বাবা, কাল দুপুরে –

- মাশরুম নেই তো শুধু corn দিয়ে বানাও।

- শুধু corn দিয়ে ওটা ভালো হয় না।

- করে তো দেখো!

নাছোড়বান্দা পুত্রকে তোয়াজ করতে গিন্নীকে রান্নাঘরে কড়াই চড়াতেই হয়। পাশের ঘর থেকে আমি শুনতে পাই corn ও খুন্তি-সংবাদ।



(২)

- আচ্ছা বল তো, মহাভারতে দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনাটি কবে ঘটেছিল?

- কবে?

- হোলি-র দিন।

- কী করে জানলি?

- ও মা! পড়িসনি, বিশ্বকবি কী লিখে গেছেন? দুঃশাসন সভার মধ্যে দ্রৌপদীর শাড়ি ধরে টানছে আর কাজী সব্যসাচীর মতো কবিতা আবৃত্তি করছে –

“...পরাণবঁধূর

আবরণরাশি করিয়া দে দূর

করি লুণ্ঠন

অবগুণ্ঠন

বসন খোল...”

- এর মধ্যে হোলি কোত্থেকে এলো?

- পরের লাইনেই। “দে দোল দোল” আছে না! নে, এবার আমার ছেঁড়া জামায় যতখুশি রং লাগা!



(৩)



শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে এক জমজমাট দুপুর। বাড়িতে অতিথি হয়ে এসেছেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিজেন্দ্রলাল। উনি জমিদারের বন্ধু, ওঁর তদারকিতে ব্যস্ত সব মানুষজন।

এসব আতিথ্যে গানবাজনা তো আছেই। দ্বিজুবাবুকে দু’বার অনুরোধ করতে হয় না। হাসির ছড়া, নাটক আর গান তাঁর কলমের নিবেই বাস করে, কাগজ পেতে বসলেই হয়। হারমোনিয়াম বাজিয়ে তিনি বেশ রসিয়ে রসিয়ে পরিবেশন করলেন – “বাহবা, বাহবা নন্দলাল”। সকলেই বাহবা, বাহবা করতে লাগল।

জমিদারমশাইয়ের গলায় আজ অল্প ব্যথা। তিনি বন্ধুবরকে বললেন, আমার গান তো শুনেছেন অনেক, আজ এর গান শুনুন। ফরাসের ওপর সঙ্কুচিত হয়ে বসে থাকা এক রোগা-প্যাংলা মানুষের দিকে নির্দেশ করতে সে আরও কাঁচুমাচু হয়ে গেল। ভাবটা যেন, সত্যি আমাকে ডাকছেন?

একে এলাকার সবাই চেনে। দ্বিজুবাবুকে এর পরিচয় দেওয়া হলো, এখানকার ডাকঘরের ডাক হরকরা, নাম গগন। আপনারা লালন ফকিরের গান তো শুনেছেন নিশ্চয়ই, এবার এর গান শুনুন।

গগনের দিকে একবার তাকিয়ে কার উদ্দেশে নমস্কার ঠুকে গগন গান ধরল, “আমি কোথায় পাব তারে, আমার মনের মানুষ যে রে...”

উদাত্ত কণ্ঠের গান, প্রাণের গান, এই মাটির গান। শেষ হলে অনেকক্ষণ কারও মুখ দিয়েই কথা বেরোলো না।

অনুষ্ঠান ও খাওয়াদাওয়া শেষে দ্বিজুবাবুকে নিয়ে চারপাশটা একটু ঘুরতে যাওয়া হলো। দ্বিজুবাবু পন্ডিত মানুষ, বিদেশ থেকে চাষবাস নিয়ে পড়াশোনা করে এসেছেন। বন্ধুকে বললেন, নদীর চরে এখানে এত উর্বর পলির জমি, কচু-ঘেঁচু হয়ে জঙ্গল হয়ে আছে। এসব পরিষ্কার করে এখানে আলুর চাষ করুন। আমি ভালো আলুর বীজ পাঠিয়ে দেব, দেখবেন খুব সুন্দর আলু হবে এখানে।

জমিদারমশাই ঘাড় নেড়ে তাকে সমর্থন জানাতেই কোত্থেকে একপাল লোক এসে সেই মানকচুর জঙ্গল সাফ করতে লেগে গেল।

বিদায় নেবার সময় অন্যান্য কিছু স্মারক উপহারের সঙ্গে প্রত্যেক অতিথিদের দেওয়া হলো সেই মানকচু। জমিদারমশাই বললেন, এ আমাদের অতি প্রাচীন খাদ্য। আলু অবশ্য চাষ করব এখানে, তবে একে অবহেলা করা অন্যায় হবে। কত রকম যে সুখাদ্য এ থেকে প্রস্তুত করা যায়, আপনারা চেষ্টা করে দেখুন।

জমিদারপত্নী আড়াল থেকে শুনে মৃদু হাস্য করলেন। কিছুদিন আগেই নাছোড়বান্দা পতির নির্দেশে তাঁকে মানকচুর জিলিপি বানাতে হয়েছিল। সে পরীক্ষায় তিনি সসম্মানে উত্তীর্ণও হয়েছিলেন।

কয়েক সপ্তাহ পরে আবার সেই গৃহে জলসা। দ্বিজেন্দ্রলাল-গগন-পাড়ার মোড়ল-পোস্টমাস্টার সবাই এসেছেন। দ্বিজেন্দ্রলালের স্ত্রী রান্না করে এনেছেন মানকচুর কালিয়া। মানকচুর কোপ্তা বানিয়ে এনেছেন মোড়লগিন্নী।

আজ আর রবীন্দ্রনাথকে অনুরোধ করতে হলো না। কেউ কিছু বলার আগেই তিনি গান ধরলেন, “রাজা সবারে দেন মান, সে মান আপনি ফিরে পান...”


* * *


এভাবে অনেক পাতা আমি ভরিয়ে দিতে পারি হাবিজাবি লিখে, রবীন্দ্রনাথের লাইন এনে। কিন্তু সময়টা এমন, শুধু রবীন্দ্রনাথে পড়ে থাকা যাচ্ছে না। পঁচিশে বৈশাখ আবার আসবে, বছর বছর যেমন আসে। বাইশে শ্রাবণেরও বেশি দেরি নেই। কিন্তু এদিকে ভোট এলো, ভোট গেল, চারিদিকে মোদির জয়জয়কার শোনা যাচ্ছে। দেশে কংগ্রেস এবং পশ্চিমবঙ্গে বাম একেবারে ধরাশায়ী। যে সময় যে কাজ করা দরকার, তা না করলে এই রকম ফল তো হবেই! মানুষকে বোকা বানিয়ে কতদিন টানা যায়?


এই লেখা যখন জমা দিচ্ছি, তখনও নরেন্দ্র মোদি শপথ নেননি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে। মনমোহন সিং পদত্যাগ করেছেন এবং রাষ্ট্রপতি তাঁকে অনুরোধ করেছেন পরবর্তী মন্ত্রীসভা গঠনের আগে অবধি কাজ চালিয়ে যেতে। সুতরাং কাগজে কলমে এখনও মনমোহন সিংই এই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী। যদিও আর কয়েক ঘন্টা মাত্র।

বয়স একাশি। রাজনীতিবিদ নন। পন্ডিত জওহরলাল নেহরুর পর সবচেয়ে বেশি, টানা দশ বছর প্রধানমন্ত্রীত্ব করেছেন। সবাই জানে, কলকাঠি নাড়তেন অন্য কেউ, পার্টির ব্যাপারে। দলের ওপর তাঁর নাকি কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। তাঁকে নিয়ে অনেক হাসাহাসি হয়েছে – মূক ও বধির ক্লাবের মেম্বার হিসাবে। বস্তুতঃ গত দশ বছরে তাঁর রাজত্বে বলবার মতো সে রকম কিছুই হয়নি দেশে।

তবুও আমাদের এই দুর্নীতিগ্রস্ত পোড়া দেশে ডক্টর মনমোহন সিং এক অত্যুজ্জ্বল ব্যতিক্রম। তাঁর মতো বিদ্বান ও সংযমী পুরুষ এখানে বিরল। তাঁর দলের বিরুদ্ধে যে কথাই হোক, তাঁর নিজের ব্যক্তিগত জীবনে দুর্নীতির কোনো স্পর্শ নেই। বহু সমালোচনার মুখেও কাজ ছেড়ে পালিয়ে যাননি, সমস্ত গ্লানি নিজের ওপর নিয়েছেন। দেশবাসীর প্রতি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তাঁর শেষ ভাষণে নিজেকে বর্ণনা করেছেন আন্ডারপ্রিভিলেজ্‌ড্‌ চাইল্ড অফ দ্য পার্টিশন হিসাবে। দেশকে এত বছর ধরে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্যে দেশবাসীকে অজস্র ধন্যবাদ দিয়েছেন।

এসব কিছুর জন্যে নয়, মনমোহন সিংকে আমরা মনে রাখব শুধুমাত্র তাঁর সেই মাষ্টার স্ট্রোকটির জন্যে, নব্বইয়ের দশকের শুরুতে যা দিয়ে তিনি দেশকে টেনে তুলেছিলেন অর্থনীতির কঠোর পঙ্কিলতা থেকে। আজ জগতসভায় দেশের যতটুকু রমরমা, তা সেই সময়েরই অবদান, তার রচয়িতা মনমোহন সিং।

প্রিয় সিংজী, আপনি জানেন, আপনার সমস্ত বিরোধীরা একত্রে এমন একটাও মাইলস্টোন স্পর্শ করেননি, যা আপনার সেই মহান কীর্তির ধারে কাছে আসে। জীবন সায়াহ্নে আপনার অবসর কাম্য। আমার এটুকুই বলার, স্বাধীনতা-উত্তর ভারতের আপনার মতো আরও কিছু কারিগর প্রয়োজন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন