বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১৪

২০) অথির শেরপা

শুভেচ্ছাবন

লগ্নভ্রষ্টা বিবাহকন্যার মতো একদিকে পড়ে আছে গীতবিতান। সময় কবে খুবলে খেয়েছে রঙিন মলাট। অন্যত্র আয়না তাকিয়ে আছে দেয়ালের দিকে। প্রতিবেশী ঘড়ি অসময়ে ঘুম ভেঙে যাওয়াতে লজ্জিত! শুধু ফ্যানের বাতাস আর ডিসেম্বরের
শীত আত্মার আত্মীয়। ডিসেম্বরের শীতকে অস্বীকার করে আমি জেগে আছি। আমার সমান এক নিঃসঙ্গতাও আছে জেগে! পর্ণোছবি জেগে জেগে ঘুমিয়ে গেছে। আমি ঘুমোতে ঘুমোতে জেগে আছি। চন্দ্রাবতী চলে গেছে অভিমানে, রূপবতী আছে এপাশে মুঠোফোনে। সন্ধ্যাবেলা বেলফুলের মালা গলে; কপালে পরেছে সে জোনাকপোকার টিপ। গাঢ় চুম্বনের প্রত্যাশায় ঠোঁট করেছে বেদানার দানার মতো রক্তিম! কিন্তু এখন রাত তিনটে। সন্ধ্যাবেলার সঙ্গে এর কোনো যোগাযোগ নেই। এখনকার হিসেব আলাদা। কালকের কাগজের শিরোনাম এখন ঠিক হয়ে যাবে। কতকগুলো আহত হাসপাতাল, কতকগুলো দুঃখী গুলি, কতকগুলো নিয়তি তাড়িত পেট্রোলবোমা। কাদামাখা ছুরি, ঘুমোতে যাও, সিগারেটের প্যাকেটে ওষুধ ভরে রাখার জন্য এ রাত! আছে জীবনভর্তি কলম; সাদা কালিতে অবৈবাহিক থাকার এ রাত... একদল রক্তছিনতাইকারী মশা আর একদল বুভুক্ষু মানুষের মাঝে কোনো তফাত্ নেই জেনে এ রাত আসে। পৃথিবী ক্রমশ লাশের মতো ভারী হয়ে আসছে। আমি জেগে জেগে কচ্ছপের পিঠে তা পাচ্ছি টের। তবু প্রত্যেকে সকালের জন্য ঘুমিয়ে আছে, বড় সুন্দর!

রডোড্রেনড্রনের মতো প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে যদি চলে যাওয়া যেত প্রত্যেকের ঘুমের ভেতর!

এই রডোড্রেনড্রনে আমার নিঃশ্বাস খোয়ানো ভালোবাসার শুভেচ্ছাবন।



আত্মঘাতী

তোমাদের প্রেম আর অনুতাপের গ্লানির ভেতর, হাসি আর অশ্রুর গুপ্ত সংজ্ঞার ভেতর আত্মঘাতী এক এক কবির প্রবেশ। নারী আর বেড়ালের ওম দিয়ে যে লেখে কবিতা! বেশ্যার ভেতর জাগিয়ে যায় মাতৃমূর্তি, অপবাদের মালা গলায় আগুনে সেঁকে হাত, পা...
বৈরাগ্যের ধুলো পড়া একতারায় যে সযত্নে তুলে রাখে স্মৃতির বেহাগ। পাখিচুম্বনকে বলে হৃদয়ের শুশ্রুষা। একশ বছর আগেকার বটগাছের সমবয়সী হয়ে যে শুধু ঝুরি নামায়। প্রত্যেক ঝুরি মাটি পেলে জন্ম হবে একেকটি নতুন বটগাছের!

তোমাদের মান, অভিমান, ঠাট্টা, ভুল, রক্তপাতের উপর দাঁড়িয়ে এক কবি; ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করে যে কিনা স্বেচ্ছা দণ্ডপ্রাপ্ত। নির্ভীক। আকাশ হয়ে বুকের ভেতর জড়ো করছে অজস্র দুঃখীমের...



ভগবানের ডাকনাম

শৈশবে ভগবানের ডাকনাম ছিলো অথির! ছিলো শিমুলতুলো উড়ে যাওয়ার সরল আনন্দ, যেন পাখির হালকা পালক। চকমকি মার্বেলগুলো ঘোরলাগা মাতাল হাওয়ায় বলতো, পাখা দাও উড়ি...!

আজ কত তারিখ? জানা নেই। না জানা তারিখেই লেখা হয় কবিতা।
হে শৈশব তোমাকে না জেনেই পেরিয়ে এলাম এতদূর... তোমার বয়সী লেখার
সাথে আমার বয়সী লেখার কোনো মিল নেই আজ! আশ্চর্য!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন