বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১৪

১৭) চৈতী আহমেদ

কৈতব

কালরাতে দৈবাগ্নিতে পুড়ে গেছে সব
বিছানা, বালিশ, শরীরের তৈজস,
তোমার স্পর্শের আঙুল বেয়ে ‍উঠা
নাভিমূলের গহীন-গভীরে কোমল কামনালতা
তাও, সারারাত পুড়ে পুড়ে ক্লান্তিতে
নুয়ে পড়া যেন সাদা সাদা ছাই শুধু
অবশেষ; ধ্বসে গেছে সুরক্ষা প্রাচীর, শেষ রাতে
বেজে বেজে থেমে গেছে তৃষ্ণার তেহাই!
যাতনারা সব ছেড়ে গেছে, দগ্ধ-বিজনে
নাছোড় যে জেগে আছে সে আমার
আত্মাশ্রয়ী তোমাকে পাবার মোহ!
এখানে আমার মুক্তি নেই, ধ্রুব নক্ষত্র!
যদি না তুমি কোনো এক জন্মে আমাকে
তোমার নিয়তি বলে মানো।



লুব্ধকের রাতজাগা সখি!

অভিমানে বাইরে একা দাঁড়িয়ে রইলো পূর্ণ তিথির চাঁদ।

দু’জন মিলে বোনা হলো এক অনিত্য ভালোবাসাবাসির ঠুনকো
কথার জাল, একবার ভাবি জিজ্ঞেস করি - অনুভবের ভুঁইয়ে সত্যি
অংকুরিত হলো কি উন্মাতাল সেই স্বপ্নের বীজ? আকাশ জুড়ে
সিঁদুরে মেঘ দেখে, গায়ে জড়ালাম শামুকের পোক্ত খোল; তাই
জানা হলো না, সত্যি ভালোবেসেছিলে কি? নাকি শুধু কথারা

মাঝে মাঝে ডিঙিয়ে সময়ের দেওয়াল লুব্ধকের রাতজাগা সখি হয়ে উঠে!



যাতনা


তোমার জন্য, শুধু তোমার জন্যই
সেদিন দেখা হলো না জীবনের উল্টো পীঠ!

তা না হলে কবেই আমি জন্মভিটার লাগোয়া পুকুরে,
দীর্ঘ সাঁতার সেরে পাড়ে উঠে জাতিস্মর যাতনার জল-
ঝাড়া রাজহংসী হতাম! সুখী, খুব সুখী ডানার পালক থেকে
ঠিকরে পড়তো অন্য কোনো রাজহংসের আদুরে ভালোবাসা-
মাখো মাখো মুগ্ধতা, আর হৃদয়ে ঠিক মানবীসুলভ অনন্ত বিরহ
নিয়ে তোমাকে ভেবে ভেবে সেদিন দ্বিচারিণী আমিও কি তবে...

আচ্ছা বলো তো রাজহংসীরাও কি কখনো কখনো
অনিদ্রায় ভোগে মানুষের মতো সিডাক্টিভ রাতে!



সর্ম্পক

আজ জানালা খুলে দিতেই হুমড়ি খেলো হিম হাওয়া
পশমিনা চাদরের মতো জড়িয়ে ধরে বললো:
আজকের দিনটি শুধুই তোমার;
মুখোমুখি বসো তার!

অনন্ত জীবন পালিয়ে বেড়ানো যায় না!
কোনো আয়োজন নেই, নেই কোনো বিয়োজনও;
আবছায়া আলস্য আড়মোড়া ভেঙে বলে - ঐ দেখো
অদৃশ্য হ্যাঙ্গারে ধুলিমাখা অঙ্গীকারগুলো সব,
কী রকম ঝুলে আছে, ভাজ না খোলা শাড়ির
মতো, ওদেরও তো অনেক কথা জমে আছে!

পুরনো বইয়ের তাকে খোঁজা হলো কিছু সময়,
ময়ূরের দুর্লভ বর্ণিল পাখনার সাথে জড়িয়ে
যাদের সুবাস; বুকমার্কের মতো রেখেছিলাম
জীবনের পরতে পরতে, সেই সব বিবর্ণ
সুখের ভেতর শুধুই সময়ের জং;
সুবাস হারিয়ে এখন তারা
শুধুই নয়নতারা, শিউলি,
গোলাপের পাপড়ি
আর প্রজাপতিগুলো
কিশোরীর আনমনা দিন;
নিছক কালের ফসিল।

যারা যারা একদিন ঘেষাঘেষি করে
আমাদের হৃদয়ের খুব কাছে ছিলো,
তারা তারা সব - ক্রীতদাস হয়ে
মেটাচ্ছে হাঙর-পৃথিবীর
কর্পোরেট ক্ষুধা!

বন্ধুরা জান কি তোমরা;
আজ সারা দিন শুধুই
তোমাদের দিন!

নীল বিষাদ পালঙ্কে নৈমিত্যিক নি:সঙ্গতা
ককিয়ে কাঁদে ঘুমের ভেতর।
শিশুর সারল্য মাখা তার মুখ,
দেখে মায়া লাগে,
দুরবগাহ সর্ম্পকের মাঝে
ডুব দিয়ে মুঠো ভরা
নীল নীল ক্লান্তি জিতে
কেমন সুখে আছে সে!
আমার কেন তবু
একা-একা লাগে!

টেমস পারে সন্ধ্যার
জনাকীর্ণ অন্ধকারে
অনতিক্রম্য সুদূর;
তোমারও কি
একলা লাগে?



বায়োগ্রাফি


এ কিছু নয় - বলে কেটে দিলে সহজ সম্পর্কের অনাবিল গ্রন্থি! কাঁপেনি একটুও তোমার কণ্ঠ কিংবা হাত, সহজাত শুদ্ধির সুশৃংখল ফুলগুলো এলোমেলো ঝরে গেল, এখন কিছুর সঙ্গে আর মেলে না কিছুই, কেবলই ভুল হয়ে যায়, নিজস্ব রঙ ভুলে ফুলগুলো হৃদয়ে জড়ায় ক্ষরণের লাল! রূপান্তরের আগে যদি একবারও রাখতে এই চোখে চোখ, ফুলগুলো বেঁচে যেত! তোমাকে স্থির চিত্র বলেনি সব সত্য কথা, এই চোখে ছিল সুস্পষ্ট আঁকা চিত্রনাট্যের প্রতিটি রেখা - নীলগিরিমেঘ ছোঁয়ার মুহূর্তে নায়িকার তৃষিত হাতে ছিল প্রেমিকের নয়, বন্ধুর স্পর্শের সাবলীলতা। ভালোবাসি! তোমাকে ভালোবাসি - বলে আওড়ালে ভুল সংলাপ অথবা শুধুই সমর্পণ ইন্দ্রজাল! এখন বলো তো প্রেমিক, আমার এলোমেলো রাতদিন, আগোছালো জীবনের কোন্‌ ফোকরে তুমি এঁকে দেবে দিন-রাত্রির ভেদ রেখা, আমি তো বুঝি, ডিজলভ মানেই গোজামিল! নতুন চিত্রায়ণের দায়িত্ব এখন পুরোটাই তোমার, প্লিজ ফটোগ্রাফ রাখো, আমার চোখে তাকাও, এখানেই লেখা আছে আমার বায়োগ্রাফি।

৩টি মন্তব্য:

  1. কি বলব চৈতী, আমি বাক্যহারা। কে যে কার চেয়ে সেরা... খুঁজছি।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. ধন্যবাদ বন্ধু Manjusree Roychoudhury, আমার জন্য তোমার কাছে সবসময় কিছু প্রশ্রয় তোলা থাকে সে আমি জানি। খুব খুশি হলেম নিজে এসে তা দিয়ে গেলে। এমনি করে ভালোবাসায় থেকো বন্ধু। এই রকম প্রশ্রয়ে মাঝে মাঝেই লিখে ফেলি এই রকম কিছু আবোল তাবোল।

      মুছুন
  2. এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।

    উত্তরমুছুন