রবিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৩

বারীন ঘোষাল

যাহার নাম সুমনা
বারীন ঘোষাল



কিছুতেই পেরে উঠছি না। কাজে এমন জড়িয়ে আছি যে, কিছুতেই। যেন কাজ নয়। কাজ নেই যেয়ে। চিঠি। ফোন। সুমনা বাসস্ট্যান্ডে দুপুর গড়িয়ে। মেয়ে স্কুল থেকে ফিরবে। বাস থেকে নামলাম হাসতে হাসতে। কাঁধের ঝোলাটা স্কুল ব্যাগের মতো। তা হোক। আমার কদ, আমার পোশাক, মায় গজদন্তিল হাসিটি তার মেয়ের মতো নয়। তবু সুমনা আমার প্রেমিকা। হাত ধরে জিজ্ঞেস করে

--আজ দেরি হয়নি তো!

--না।

--আরও আগে আসতে পারতে?

--পারতাম হয়তো।

--তাহলে আসবে। আমি পারি না। এই অপেক্ষা। দিদিমণি বকবে না হয়।

--ম্যানেজার বকবে না। তোমার কথা বললে।

--বোলো তা’লে।

--তোমাকে একটু ছোঁব। ছুঁয়ে দেখব।

--ছুঁয়েছ তো!

টেলিফোন নামিয়ে রাখি। চিঠি ছিঁড়ে ফেলি। প্রেমিকার কবিতা, প্রেমিকের গল্প আজ লেখা হয় না। প্রেম করা হয়ে ওঠে না। যেখানেই যাই, সাহিত্য আড্ডায়, ক্লাবে পানাসরে, ইউনিয়ন অফিসে, রেশনের লাইনে, সুমনার কাছে –- সুমনা আমার সূঁচসুতো নামিয়ে সরিয়ে রাখবে। ফেরার সময় সঙ্গে দিয়ে দেবে। রিপুকারের ভূমিকা –- ভূমিরই বা প্রয়োজন কী? সূঁচ ফেলে দিলাম।

ছোঁয়া থেকে ধরা, ধরা থেকে পীড়ন, স্বেদ, কাদা, কর্দম, শ্বেত কর্দম, সমসঙ্গতে উত্থান শ্বাস, সমস্তই চাই। সুমনা আদর করে, মুখ লুকায়, মুখ তোলে শুয়ে।

--চুমু খাবো?

--খেয়েছো তো!

--করব?

--করেছো তো!

--উপড়ে নিয়ে যাব?

--ছিঁড়েছো তো! নাও!

চিঠি ছিঁড়ে ফেলি। বুঝতে পারি না, সুমনার স্বামী কেন লুকোয়! অথবা আমিই লুকিয়ে চলি। পালিয়ে বেড়াই। আজ পর্যন্ত দেখা হয়নি। কিংবা সে দেখা নয়। একসাথে বসা। বোতল, সিনেমা, খেলাধুলো, পরনিন্দা। সে দেখা নয়। যে আমি এবং সুমনা এবং এই বিচরণ।

ওঃ সুমনা

সে জানে না কিংবা জেনেও –- অর্থাৎ জানে না।

ওঃ সুমনা

ম্যানেজার জানে কিংবা জেনেও -- অর্থাৎ জানে না।

ওঃ সুমনা

বন্ধুরা জানে না কিংবা জেনেও -- অর্থাৎ জানে না।

--চলে আসবে?

--কীভাবে?

--সব ছেড়ে। লোকলজ্জা। আইন আদালত।

--কীভাবে?

--দরজা খুলে, দরজা খুলে, দরজা খুলে।

ঘেমে উঠি। ঘুম ভাঙে, ভয় লাগে। হারাবো কি? ব্যাগ গোছাই। জল খাই। ব্যাগ আগোছাই। বসে ভাবি। সুমনা? কীভাবে? সুমনা! যাবার কথা আসার কথা শুধু কথা কী হবে আমাদের, কিছুতেই পেরে উঠছি না।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন