গণেশ পাইনের সীমাবদ্ধতা (সিমা?)
হিরণ মিত্র
উপরের এই নামকরণে আমার দ্বিধা আছে। নিজের মনের মধ্যে দ্বন্দ্ব উপস্থিত। তবুও সমস্ত তথাকথিত শিল্পীকুলের মনের ভেতরে উদ্বেগ-জারিত এই শব্দবন্ধ আমাকে প্ররোচিত করলো এমন বাক্যে। দুঃখিত এজন্য। ক্ষমাপ্রার্থী। তবুও। খুঁজে দেখা যাক আজকের শিল্পীর, শিল্পের অবস্থানের কানাগলি। কথিত আছে, চিত্র-আবেগ, দৃশ্য-আবেগ, শিল্পীর মনের মধ্যে উদিত হয়। তা ভোরের আকাশ হতে পারে, সন্ধ্যার বিদায়লগ্ন হতে পারে। ঘন কালো রাত্রির বিষাদগ্রস্ত, রাতজাগা, কর্কশ, নিঃশব্দ, চোখ থেমে যাওয়া, প্রাচীরের মতোও হতে পারে। তখন কী হয়, কে জানে? তবুও জানা নির্দেশিত হতে পারে। অলক্ষ্যে কেউ কোথা হতে ফিস ফিস করে উঁকি মেরে যেতে পারে। তার নাম ‘বাজার’। এই সম্বন্ধে যত কম বলা যায়, যত কম সেঁধানো যায়, ততই আশ্বস্ত বোধ করি। এড়িয়ে চলতে চাই। এই নয়, ‘বাজার’ আমাকে আতঙ্কিত করে রেখেছে, এই জন্য যে আমার প্রিয় শব্দ বাক্য –- ‘আঙুরফল টক’। যে আঙুরফল গাছের উপর ঝুলছে, তাকে আমাদের মতো শেয়ালরা ‘টক’ বলতেই অভ্যস্ত। তাতে কিছুক্ষণের শান্তি। শান্তি চিত্রে, শান্তি লিখে, শান্তি ভাবনায়। যদি সত্যিই কারও ভাগ্যে ওই আঙুরফল পেকে, মুখে এসে পড়ে, তখন তার পরিণতি কী হতে পারে, ভেবে আমি আতঙ্কিত হই।
মহাভারত নিয়ে গণেশ পাইনের বিখ্যাত এক সর্বশেষ চিত্র প্রদশর্নী, নামকরা বা একমাত্র শিখপীঠ বা তীর্থস্থানে হয়েছিল। ডায়েরির পাতায় দেখলাম লেখা আছে, ‘গণেশ পাইন তাঁর শবদেহ পাহারায় আছেন’। পড়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল। অনেক বছর আগের দেখা। কেন শবদেহ, কেন পাহারা দেওয়া! যে বিবরণ, যে নতুন ব্যাখ্যা, যে নতুন মহাভারত, কারণ এখানে বালী এসেছেন, একটা বিস্তৃত মৃত্যুভূমি, প্রান্তর জুড়ে পোড়া মৃতদেহের গন্ধ; রঙের তেমন পরত নেই, রেখা অন্যমনস্ক, যে অন্যমনস্কতাকে কুর্নিশ করে এসেছি, মনস্কতার সাথে, যে অন্যমনস্কতায়, আত্ম আবিষ্কারের মিথ বা গাথা রচিত হয়, অজান্তে, অজানা, অকথিত, ভিন্ন কল্পকাহিনী মাটি ফুঁড়ে, কাগজ ফুঁড়ে জেগে ওঠে, তার মনস্ক প্রয়োগ দেখলাম। আর এখানেই হয়তো সীমাবদ্ধতা বা ‘সিমাবদ্ধতা’! একটা বাধ্য বাধকতার ছাপ। সময়ের বাধ্য বাধকতা, ভাবনার বাধ্য বাধকতা, বিষয়ের বাধ্য বাধকতা। একজন গুহা আবিষ্কারে আছেন। হাতে জ্বলন্ত প্রদীপ, পথ চেনার জন্য। হঠাৎ ঝোড়ো হাওয়ায় নিভে গেল তা। অন্ধকার পথ, অজানা। কবিতার, চিত্রের জন্ম হলো তখনই। বাকি পথ এমনই আঁধারে ভরা। এই অনিশ্চিত জীবনে ‘বাজার’ আনলো নিশ্চিন্তি ও মৃত্যু, শিল্পীর ও শিল্পের। হায়! সত্যিই আঙুরফল টক কখনো কখনো! আবারও আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
“সাফল্য এলো, ততই একা হয়ে গেলেন গণেশ”। (বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত)
উপরের এই নামকরণে আমার দ্বিধা আছে। নিজের মনের মধ্যে দ্বন্দ্ব উপস্থিত। তবুও সমস্ত তথাকথিত শিল্পীকুলের মনের ভেতরে উদ্বেগ-জারিত এই শব্দবন্ধ আমাকে প্ররোচিত করলো এমন বাক্যে। দুঃখিত এজন্য। ক্ষমাপ্রার্থী। তবুও। খুঁজে দেখা যাক আজকের শিল্পীর, শিল্পের অবস্থানের কানাগলি। কথিত আছে, চিত্র-আবেগ, দৃশ্য-আবেগ, শিল্পীর মনের মধ্যে উদিত হয়। তা ভোরের আকাশ হতে পারে, সন্ধ্যার বিদায়লগ্ন হতে পারে। ঘন কালো রাত্রির বিষাদগ্রস্ত, রাতজাগা, কর্কশ, নিঃশব্দ, চোখ থেমে যাওয়া, প্রাচীরের মতোও হতে পারে। তখন কী হয়, কে জানে? তবুও জানা নির্দেশিত হতে পারে। অলক্ষ্যে কেউ কোথা হতে ফিস ফিস করে উঁকি মেরে যেতে পারে। তার নাম ‘বাজার’। এই সম্বন্ধে যত কম বলা যায়, যত কম সেঁধানো যায়, ততই আশ্বস্ত বোধ করি। এড়িয়ে চলতে চাই। এই নয়, ‘বাজার’ আমাকে আতঙ্কিত করে রেখেছে, এই জন্য যে আমার প্রিয় শব্দ বাক্য –- ‘আঙুরফল টক’। যে আঙুরফল গাছের উপর ঝুলছে, তাকে আমাদের মতো শেয়ালরা ‘টক’ বলতেই অভ্যস্ত। তাতে কিছুক্ষণের শান্তি। শান্তি চিত্রে, শান্তি লিখে, শান্তি ভাবনায়। যদি সত্যিই কারও ভাগ্যে ওই আঙুরফল পেকে, মুখে এসে পড়ে, তখন তার পরিণতি কী হতে পারে, ভেবে আমি আতঙ্কিত হই।
মহাভারত নিয়ে গণেশ পাইনের বিখ্যাত এক সর্বশেষ চিত্র প্রদশর্নী, নামকরা বা একমাত্র শিখপীঠ বা তীর্থস্থানে হয়েছিল। ডায়েরির পাতায় দেখলাম লেখা আছে, ‘গণেশ পাইন তাঁর শবদেহ পাহারায় আছেন’। পড়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল। অনেক বছর আগের দেখা। কেন শবদেহ, কেন পাহারা দেওয়া! যে বিবরণ, যে নতুন ব্যাখ্যা, যে নতুন মহাভারত, কারণ এখানে বালী এসেছেন, একটা বিস্তৃত মৃত্যুভূমি, প্রান্তর জুড়ে পোড়া মৃতদেহের গন্ধ; রঙের তেমন পরত নেই, রেখা অন্যমনস্ক, যে অন্যমনস্কতাকে কুর্নিশ করে এসেছি, মনস্কতার সাথে, যে অন্যমনস্কতায়, আত্ম আবিষ্কারের মিথ বা গাথা রচিত হয়, অজান্তে, অজানা, অকথিত, ভিন্ন কল্পকাহিনী মাটি ফুঁড়ে, কাগজ ফুঁড়ে জেগে ওঠে, তার মনস্ক প্রয়োগ দেখলাম। আর এখানেই হয়তো সীমাবদ্ধতা বা ‘সিমাবদ্ধতা’! একটা বাধ্য বাধকতার ছাপ। সময়ের বাধ্য বাধকতা, ভাবনার বাধ্য বাধকতা, বিষয়ের বাধ্য বাধকতা। একজন গুহা আবিষ্কারে আছেন। হাতে জ্বলন্ত প্রদীপ, পথ চেনার জন্য। হঠাৎ ঝোড়ো হাওয়ায় নিভে গেল তা। অন্ধকার পথ, অজানা। কবিতার, চিত্রের জন্ম হলো তখনই। বাকি পথ এমনই আঁধারে ভরা। এই অনিশ্চিত জীবনে ‘বাজার’ আনলো নিশ্চিন্তি ও মৃত্যু, শিল্পীর ও শিল্পের। হায়! সত্যিই আঙুরফল টক কখনো কখনো! আবারও আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
“সাফল্য এলো, ততই একা হয়ে গেলেন গণেশ”। (বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন