আপেক্ষিকতা সূত্র
অলোকপর্ণা
ক্রমশ ভারী হয়ে ওঠা বাবার বায়প্সি রিপোর্ট বুকে আগলে জীবন প্রাণপণ ঝুলে পড়ে ট্রেনের দরজার খেই ধরে। দাঁতে দাঁত চেপে কর্কটের সাথে সে মুহূর্তেই যেন লড়াই শুরু হয় তার। দু’হাতে উপরের বাড়তি কিছু হাতল চেপে ধরে সে ভিড়ের কাঁকড়াটাকে বুক দিয়ে ধাক্কা মারতে মারতে একসময় কামরার মাঝখানে পৌঁছে যায়। গোটা কামরা পুরনো ক্ষয়াটে তাসের মতো গন্ধে আচ্ছন্ন। জীবনের কান্না পায়।
দমদম চলে আসলে তার গোটা লড়াইকে অর্থহীন বানিয়ে কামরা ফাঁকা হতে থাকে। জীবন শূন্য দৃষ্টিতে সেই রিক্ততা মেখে নেয়। চোখে জল আসতে ভুল হয়ে যায়। মুসামরি, সেফটিপিন, জেন্টস রুমালের বেওয়ারিশ কোলাজ কানে ঢুকে আসায় ঘোর কাটে তার। ফাঁকা ট্রেনের গড়পড়তা সীটে সে গা এলিয়ে দেয়। বাইরের হাওয়ার দমক অবশেষে আরামদায়ক বিলি কেটে যায় জীবনের কপালের বলিরেখায়। আরামের প্রতিটা বিন্দু পান করতে করতে তার চোখ পড়ে কলেজপড়ুয়ার দলের ওপর। এলেবেলে হাসিঠাট্টায় ওদেরই রাজার মতোন লাগে। জীবনের হিংসা হয় বাবার তৃতীয় দশায় ক্লান্ত হওয়ার অবসর নেই বলে। কুকুরের মতো ধুঁকতে থাকা কামরার বাকি মানুষগুলোর ক্লান্তিও তাই জীবনকে ভয়ানক ঈর্ষা দেয়।
এই সময়েই দরজার পাশ থেকে ‘ওর’ স্বর শোনা যেতে ক্লান্ত লোকগুলো কুন্ডলী খুলে একপাক দিয়ে ওঠে। কারো কারো চোখে মস্করা ছ্যাৎ ছ্যাৎ করে উঠল। মানুষটার গায়ের উগ্র গন্ধ কামরার মন ভুলিয়ে দিচ্ছে। সচকিত হাততালি দিতে দিতে প্রত্যেকের কাছে গিয়ে মানুষটা বলতে শুরু করে, “দে উর্চিবাবু, দশটা টাকা দে। বাহামণির মতোন বউ পাবি! ভালো মানুষ হবি!” কলেজপড়ুয়াদের দলে শোরগোল বেড়ে কেউ একজন বলে -- “তুইই তো আমাদের বাহামণি!”, তবু সে শাড়ির বেয়াড়া আঁচল সম্বল করে অবিচল বলে চলে, “দে উর্চিবাবু...”।
জীবন দেখে, ‘ভালো মানুষ হবি!’র নালিশ বা অভিশাপ দিয়ে সবার প্রতি ঈর্ষান্বিত মানুষটা নেমে যাচ্ছে ট্রেন থেকে। তার ফেলে যাওয়া উগ্র গন্ধ হিংসা করছে বাকিদের ক্লান্তি, মস্করা, গলার স্বর, পেলব ত্বক আর প্রবলভাবে -- যৌনাঙ্গকে। এমনকি মানুষটার হিংসা জীবনের বলিরেখা আর হাল্কা হতে শুরু করা বায়প্সি রিপোর্টকেও ছাড়ছে না; কামরার তাসের গন্ধে হিংসুটে জোকারের মতো বাড়তি হয়ে বিলিয়ে যাচ্ছে। ক্লান্ত জীবন নিশ্চিন্তে চোখ বন্ধ করে।
ক্রমশ ভারী হয়ে ওঠা বাবার বায়প্সি রিপোর্ট বুকে আগলে জীবন প্রাণপণ ঝুলে পড়ে ট্রেনের দরজার খেই ধরে। দাঁতে দাঁত চেপে কর্কটের সাথে সে মুহূর্তেই যেন লড়াই শুরু হয় তার। দু’হাতে উপরের বাড়তি কিছু হাতল চেপে ধরে সে ভিড়ের কাঁকড়াটাকে বুক দিয়ে ধাক্কা মারতে মারতে একসময় কামরার মাঝখানে পৌঁছে যায়। গোটা কামরা পুরনো ক্ষয়াটে তাসের মতো গন্ধে আচ্ছন্ন। জীবনের কান্না পায়।
দমদম চলে আসলে তার গোটা লড়াইকে অর্থহীন বানিয়ে কামরা ফাঁকা হতে থাকে। জীবন শূন্য দৃষ্টিতে সেই রিক্ততা মেখে নেয়। চোখে জল আসতে ভুল হয়ে যায়। মুসামরি, সেফটিপিন, জেন্টস রুমালের বেওয়ারিশ কোলাজ কানে ঢুকে আসায় ঘোর কাটে তার। ফাঁকা ট্রেনের গড়পড়তা সীটে সে গা এলিয়ে দেয়। বাইরের হাওয়ার দমক অবশেষে আরামদায়ক বিলি কেটে যায় জীবনের কপালের বলিরেখায়। আরামের প্রতিটা বিন্দু পান করতে করতে তার চোখ পড়ে কলেজপড়ুয়ার দলের ওপর। এলেবেলে হাসিঠাট্টায় ওদেরই রাজার মতোন লাগে। জীবনের হিংসা হয় বাবার তৃতীয় দশায় ক্লান্ত হওয়ার অবসর নেই বলে। কুকুরের মতো ধুঁকতে থাকা কামরার বাকি মানুষগুলোর ক্লান্তিও তাই জীবনকে ভয়ানক ঈর্ষা দেয়।
এই সময়েই দরজার পাশ থেকে ‘ওর’ স্বর শোনা যেতে ক্লান্ত লোকগুলো কুন্ডলী খুলে একপাক দিয়ে ওঠে। কারো কারো চোখে মস্করা ছ্যাৎ ছ্যাৎ করে উঠল। মানুষটার গায়ের উগ্র গন্ধ কামরার মন ভুলিয়ে দিচ্ছে। সচকিত হাততালি দিতে দিতে প্রত্যেকের কাছে গিয়ে মানুষটা বলতে শুরু করে, “দে উর্চিবাবু, দশটা টাকা দে। বাহামণির মতোন বউ পাবি! ভালো মানুষ হবি!” কলেজপড়ুয়াদের দলে শোরগোল বেড়ে কেউ একজন বলে -- “তুইই তো আমাদের বাহামণি!”, তবু সে শাড়ির বেয়াড়া আঁচল সম্বল করে অবিচল বলে চলে, “দে উর্চিবাবু...”।
জীবন দেখে, ‘ভালো মানুষ হবি!’র নালিশ বা অভিশাপ দিয়ে সবার প্রতি ঈর্ষান্বিত মানুষটা নেমে যাচ্ছে ট্রেন থেকে। তার ফেলে যাওয়া উগ্র গন্ধ হিংসা করছে বাকিদের ক্লান্তি, মস্করা, গলার স্বর, পেলব ত্বক আর প্রবলভাবে -- যৌনাঙ্গকে। এমনকি মানুষটার হিংসা জীবনের বলিরেখা আর হাল্কা হতে শুরু করা বায়প্সি রিপোর্টকেও ছাড়ছে না; কামরার তাসের গন্ধে হিংসুটে জোকারের মতো বাড়তি হয়ে বিলিয়ে যাচ্ছে। ক্লান্ত জীবন নিশ্চিন্তে চোখ বন্ধ করে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন