মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫

<<<< সম্পাদকীয় >>>>

 


 

কালিমাটি অনলাইন / ১৩৫ / ত্রয়োদশ বর্ষ : অষ্টম সংখ্যা

 


ভাবনাটা মাঝেমধ্যেই মাথায় আসে, এই যে সারা বিশ্বে এত অসংখ্য ভাষা প্রচলিত আছে, কিছু হয়তো কথ্যভাষা, বাকি ভাষার নিজস্ব লিপি আছে, যে ভাষার নেই সে ভাষা অন্য কোনো লিপির ওপর নির্ভরশীল, সেইসব ভাষাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে সাহিত্য সৃষ্টি হয়ে চলেছে। ভেবে অবাক হই, এই বিপুল সৃষ্ট সাহিত্য কারা পড়ে, পড়ে কতটা সমৃদ্ধ হয়, কতটুকু মনে রাখে, এবং তা কোথায় সংরক্ষিত হয়? লিপি আবিষ্কারের অব্যবহিত পরে সেই সেই ভাষার সাহিত্য লিখিত হতো বিভিন্ন গাছের বাকলে, তালপত্রে, ভুর্জপত্রে। কাগজ আবিষ্কৃত হবার পরে কাগজে। জানা যায়, সেই যুগে সংরক্ষণের কোনো উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা ছিল না। কিছু পুঁথি সংরক্ষিত হতো প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগারে, রাজ দরবারে, বিভিন্ন মঠ এবং উপাসনালয়ে, বাকিটা পুঁথিকারের ব্যক্তিগত সংগ্রহে। বিশেষজ্ঞরা অবশ্যই অবহিত আছেন, এইসব সংরক্ষণ পুঁথিগুলির স্থায়িত্ব কতটা দীর্ঘায়িত করতে পারত। তবে এখনও যে বিপুল পরিমাণে প্রাচীন পুঁথি উল্লেখিত স্থানে আছে, তা অস্বীকার করা যায় না। সেইসঙ্গে এটাও উল্লেখ করতে হয়, প্রযুক্তির উন্নতির কল্যাণে যখন কাগজ এবং মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কৃত হয়েছে, তখন জ্ঞানের ভান্ডার ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বজুড়ে। আর আজকে আমরা যে নতুনতর যুগে প্রবেশ করেছি, সাইবার যুগ, তাতে সারা বিশ্ব ব্রম্ভান্ড এসে গেছে মানুষের হাতের মুঠোয়। কেউ আগ্রহী হলে সে জ্ঞানভান্ডারের উত্তুঙ্গ শিখরে পৌঁছে যেতে পারে।

তবে আমার ভাবনাটা ঠিক এই পর্যায়ে নয়, বরং আমি ভাবি, সারা বিশ্ব জুড়ে যে অসংখ্য বিদ্বান, ভাবুক, চিন্তক, শাস্ত্রপ্রণেতা, কবি, দার্শনিক, রাজনীতিক, সমাজবিদরা তাঁদের অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার কথা বিভিন্ন মাধ্যমে লিপিবদ্ধ করে গেছেন, তা আমাদের সাধারণ জনসাধারণের কাছে কতটুকু এসে পৌঁছেছে, যেটুকু এসেছে তার কতটা গ্রহণযোগ্য হয়েছে, মানুষের জীবন ও যাপনে তার প্রভাব কতটা এসে পড়েছে? যদি সেইসব প্রভাব যথাযথভাবে এসে পড়ত, তাহলে আজকের সভ্যতা ও সংস্কৃতির রূপ অন্য হতো, প্রকৃত মানবিকতার আলোকে আলোকিত হত। বিশ্বের কোনো নির্দিষ্ট দেশ বা সমাজের কথা এখানে বলছি না, বরং বিশ্বের সব দেশে এবং সমাজে আজকের এই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অচিন্ত্যপূর্ব জয়যাত্রার যুগে মানুষের মধ্যে, তাদের স্বভাবে ও আচরণে, তাদের রাজনীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক জাতি তথা ধর্মীয় ভাবনায় যে অমানবিকতা নিরন্তর প্রকট হয়ে উঠছে, লোভ হিংসা দ্বেষ যেভাবে একে অপরের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন করে তুলেছে, পাশবিক প্রবৃত্তি কী পরিমাণে উৎকট হয়ে উঠেছে, তা কোনো সভ্য দেশ বা সমাজের পরিচায়ক  নয়। আর সবচেয়ে দুঃখের ব্যাপার, আমরা সবাই বসবাস করছি, বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছি সেইসব অসভ্য দেশে অসভ্য সমাজে, যা আমাদের কখনই কাম্য হতে পারে না। আরও কষ্ট লাগে, সারা বিশ্বব্যাপী জ্ঞান, সততা ও মানবিকতার বিপুল চর্চা হলেও আমরা তা আত্মস্থ করতে পারিনি, জীবিন ও যাপনে প্রয়োগ করতে পারনি। তথাকথিত সভ্যতার বহিরঙ্গের আড়ম্বরে নিজেদের নিমগ্ন করেছি শুধু, সভ্যতার অন্তরঙ্গ আলোকে স্পর্শ করতে পারিনি।

‘কালিমাটি অনলাইন’ ব্লগজিনের পক্ষ থেকে সবাইকে জানাই শুভেচ্ছা শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা।

 

আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা :

kajalsen1952@gmail.com / kalimationline100@gmail.com

দূরভাষ যোগাযোগ : 9835544675

 

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন