মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫

দীপক সেনগুপ্ত

 

সমকালীন ছোটগল্প


শোনা কথার কথকতা

শোনা কথা শোনাতে বসলে সমস্যায় পড়তে হয়। কারণ যখন সে কথা শুনি, যে শোনায় সে তার মতো করে শোনায়। আমিও শোনার আনন্দে শুনে যাই। সেই ঘটনাবলীই শোনাতে বসলে মনে হয়, না না এভাবে নয়। অন্যভাবে বলতে হবে। তাহলেই শুনতে ভালো লাগবে। আর ঐ "ভালো লাগবে"এর তাগিদেই ঘটনাবলীতে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন ঘটে যায়। পাঠক মনোরঞ্জনের খাতিরে এই ভেজাল দেওয়া মনে হয় অন্যায় নয়। সোনাতে খাদ মিশিয়েই তো গহনা গড়া হয়। শোনানোটাও না হয় সে ভাবেই হলো!

যাইহোক ঘটনায় ফিরি।

ঘটনাস্থল নিউ দিল্লির বাঙ্গালী অধ্যুষিত চিত্তরঞ্জন পার্ক এলাকা। সেখানে এক চারতলা ফ্ল্যাটের তিনতলায় মিত্র কাকিমাদের বাড়ি। তার একমাত্র মেয়ের নাম সুমিত্রা। বেশ ছন্দবদ্ধ নাম। সুমিত্রা মিত্র। মিত্র কাকিমা গর্ব করে আমাকে জানিয়েছিলেন,

- এটা আমার দেওয়া নাম। আমি খুব ভালো রবীন্দ্রসঙ্গীত গাই বলে বয়েস কালে ওর বাবা আমাকে ইয়ে করে সুচিত্রা মিত্র ডাকতো। তার সাথে মিল রেখেই আমি খুকিকে এই নামটা দিয়েছি।

চমৎকার! এদিকে খুকি কিন্তু আর খুকি নেই। তার বয়েস হয়েছে। বর্তমানে সে একটি আইটি কোম্পানিতে কাজ করে। সদা ব্যাস্ত। এছাড়া ওর একটা ভাই আছে। তার নাম টারজান। ভাইয়ের মর্যাদা দেওয়া হলেও টারজান আসলে একটি সারমেয়। উঁচু পে ডিগ্রির দোঁআশলা ডগ। কিন্তু বাসার সবচেয়ে মান্যগণ্য সদস্য। তার খাতির যত্ন আমি নিজের চোখে দেখেছি। এবং মনে মনে ভেবেছি, ইস্ আমি যদি টারজান হতাম! বাবা, মা, মেয়ে তিনজনের কোলেই বসতে পারতাম!

কিন্তু আবারও পথ হারিয়ে ফেলেছি। গল্পে ফিরতে হবে। গল্পটা শুরু হয়েছে সে বছরের দুর্গাপূজোর সময়। মিত্র কাকু, কাকিমা ঠিক করলেন পূজো কাটাতে কলকাতা যাবেন। মাস খানেকের জন্য যাওয়া। এই একমাস বাড়িতে থাকবে টারজান আর খুকি। খুকি আর কতোটুকু থাকবে! তার তো গোটা দিন অফিস। প্রথমে ঠিক  হলো টারজানকে "পেট শেল্টারে" রাখা হবে। এখানে এরকম ব্যবস্থা আছে। সামান্য খরচে অসামান্য সার্ভিস। অনেকেই তাদের প্রিয় পেটকে (এ পেট মানে যে ভুঁড়ি নয় সেটা নিশ্চয় বলে দিতে হবে না) এই সেন্টারে রেখে যান। এমনকি রেখে বিদেশেও চলে যান। সেন্টার পেট সামলায়। এবং এই করেই সেন্টারের মালিকের ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স বাড়ে।

কিন্তু টারজান অতি ঠ্যাঁটা ডগ। সে এই ব্যবস্থাকে সরাসরি অস্বীকার করলো। কিছুক্ষণ থেকেই সেন্টারের মালিককে ধমকে চমকে সে ছুটতে ছুটতে বাড়িতে পালিয়ে এলো। ঠিক তখনই মিত্র কাকিমাদের রওনা দেবার সময়।

খুকি ওনাদের আশ্বস্ত করে বললো,

- ডোন্ট ওরি মা। আমি টারজানকে ঠিক সামলে নেবো।

- কীভাবে? তোর তো অফিস থাকবে?

- তাও হবে। টারজান থাকবে ব্যালকনিতে। চেনে বাঁধা। খাবার, জল, পটির পট সবই দেওয়া থাকবে। টারজান গুডবয় হয়ে থেকে যাবে। এ কটা দিন আমিও অফিস কম করবো। দেরিতে যাবো। তাড়াতাড়ি ফিরবো। ঠিক সামলে নেবো।

- দুগ্গা দুগ্গা। দেখো, তাই যেন হয় মা!

না এটা খুকিকে নয় যেতে যেতে মিত্র কাকিমা এই ডিউটিটা মা দুর্গাকেই দিয়ে গেলেন। প্লেন থেকে শিবালয় নিশ্চয় আরো কাছে। প্লেনে বসেও তিনি দুর্গা মাকে মনে করাতে করাতে গেলেন। এসব কথা উনি পরে নিজের মুখেই শুনিয়ে ছিলেন আমায়।

পরের ঘটনা সুমিত্রা মিত্র বলেছিল। কিন্তু বিস্তারিত নয়। অল্প স্বল্প। তাই তার অংশটা আমাকে কল্পনা দিয়ে ভরাট করতে হয়েছে। অবশ্যই বাস্তবসম্মত কল্পনা। সুমিত্রা মিত্র অফিস যায় নিজের চার চাকার গাড়িতে। সেটা বাড়ির নিচেই দাঁড়িয়ে থাকে। ও বেশ দক্ষ ড্রাইভার। কিন্তু ও মোটেই দক্ষ রাঁধুনি নয়। রাঁধতে মোটে জানেই না। কিন্তু বর্তমান অনলাইন জগতে সেটা কোনো সমস্যাই নয়। সেদিন ও অনলাইন খাবার বুক করে দিয়েছিল। খেয়ে যাবে। নিয়েও যাবে।

নিজের খাবার অর্ডার করে ও গেল টারজানের খাবারের ব্যবস্থা করতে। ডগ ফুডের ব্যাগ খুলে নির্দিষ্ট বউল ভরে দিল। আর একটা পাত্রে দুটো নকল হাড় রেখে দিল। ওগুলো চিবিয়ে চিবিয়ে টারজান টাইম পাস করবে। এসব করতে করতে ও অবিরাম টারজানকে বুঝিয়ে গেল।

- গুডবয় হয়ে থাকবে। একটুও নটি নটি করবে না। তুমি এখন অনেকটাই বড়ো হয়েছো। একা থাকা শিখতে হবে। আর আমি তো আর্লি আর্লি ফিরে আসবো। ওকে?

- ভুক। ভুক।

ওটা ডগি ভাষায় ওকে-ই হবে। এরপর সুমিত্রা টারজানের গলায় চেনটা পরিয়ে দিল।

- টাইট করিনি। অসুবিধে হবে না।

এরপর ও গেল স্নান করতে। ঝটপট পোশাক টোশাক পরে রেডি হয়ে নিল। ও সাজে কম। ন্যাচারাল ফর্সা মুখ আর গোলাপী ঠোটে অতিরিক্ত পালিশ লাগায় না। ও জানে ও এমনিতেই বেশ বিউটিফুল।

এমন সময় টুং টুং করে ডোরবেল বাজলো। যাক যাবার আগে মা মনে করে রিং টোনটা পাল্টে দিয়েছে। "জয় জগদিশ হরে"টা আর নেই। ওটা যে খুকির পছন্দ নয়। মা সেটা খেয়াল রেখেছে।

কলকাতার বিখ্যাত এক বিরিয়ানির হোটেল দিল্লিতে তাদের ব্রাঞ্চ খুলেছে। সেখান থেকেই মাটন বিরিয়ানি অর্ডার করেছে ও। মাটন বিরিয়ানি ওর খুব পছন্দের ডিস। কিন্তু সেটা যে আরো একজনের পছন্দের ডিস সেটা জানা ছিল না। তাই অঘটনটা ঘটে গেল। দরজা খুলে সুমিত্রা ডেলিভারি বয়ের সাথে কথা বলছিল। OTP শেয়ার করছিল। এমন সময় বিদ্যুত গতিতে টারজান ছুটে এসে ঝাঁপিয়ে পড়লো তার উপর। তার ধাক্কায় সুমিত্রা টলে গেল। কিন্তু ডেলিভারি বয়ের অবস্থা হলো মারাত্মক। টারজান গায়ে গতরে বেশ স্বাস্থ্যবান। তার ধাক্কায় সে ছেলে আছড়ে পড়লো সিঁড়িতে এবং গড়িয়ে পড়ে গেল সিঁড়ির পাঁচধাপ পেরিয়ে সিঁড়ির মোড়ের চাতালে। ততক্ষণে মাটন বিরিয়ানির প্যাকেট টারজানের দখলে। চতুর কুকুর লক্ষ্য অর্জনে সফল। কিন্তু সাথে সাথে এও বুঝতে পারলো, লাঞ্চটা এখানে করাটা ঠিক হবে না। বাইরে অন্য কোথাও করতে  হবে। ও তীরের গতিতে সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেট ঠেলে বাড়ির বাইরে ছুটে চলে গেল। কোনোমতে টাল সামলে সুমিত্রা উঠে দাঁড়িয়ে দেখলো সিঁড়ির চাতালে ডেলিভারি বয়টা হাঁটু চেপে ধরে কাতরাচ্ছে। ওর মুখ দিয়ে দুটো শব্দ পরপর বের হয়ে এলো,

- ছুট গয়া। টুট গয়া।

ছুট গয়া মানে খাবারের প্যাকেটটা ডেলিভারি দেবার আগেই হাত ছাড়া হয়ে গেছে। আর টুট গয়া মানে ওর ডান পায়ের হাঁটুটা ভেঙ্গে গেছে।

অগত্যা সুমিত্রাকে সিঁড়ি বেয়ে নামতে হলো।

- ছুট যানে দো। টারজান নাস্তা করকে জরুর ঘর লৌট আয়েগা। তুম বাতাও কাঁহা দর্দ হ্যায়?

খোঁজ নিয়ে দেখা গেল। হাঁটুতে চোটটা অপেক্ষাকৃত কম। আসলে ফুলে ঢোল হয়ে গেছে ওর বাঁ পায়ের গোড়ালি। বুড়বক ছেলেটা গুরুতর আহত গোড়ালি ভুলে হাঁটু নিয়েই বিব্রত। সুমিত্রা ওকে ধমকালো।

- ওয়ে। চুপ কর্। মুঝে পকড় কর খড়ে হোনে কা কোশিশ করো। তুম্হে হসপিটাল লে জানা হ্যায়। এক্স রে করবানা হ্যায়।

- নহি। উসকে পহলে খানা ডেলিভারি করনা হ্যায়।

বিপদের মধ্যেও কর্তব্যপরায়ণ ছোকরা কর্তব্য ভোলেনি।

- ক্যা নাম হ্যায় তুম্হারা?

- বিকাশ।

- শুনো বিকাশ। ডেলিভারি কা বাত ভুল যাও। তুম্হারা ট্রিটমেন্ট উসসে জাদা জরুরি হ্যায়।

- ঔর তিন প্যাকেট। সবকে সব ইসি সি আর পার্কমে। মেরে বাইকমে রক্খা হ্যায়।

ও নিজের কথাই বলে গেল।

অতি কষ্টে ওরা সিঁড়ি বেয়ে চারতলা থেকে নিচে নেমে এলো। ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরেছিল সুমিত্রা। সংকোচ বশত ছেলেটা ওর শরীরের ভার যথাসম্ভব নিজের কাছেই রাখার চেষ্টা করছিল।

- ও হ্যায় মেরা বাইক।

এতক্ষণে লাল রং-এর বাইকটা নজরে পড়লো সুমিত্রার। ওর লাল কারটার পাশেই দাঁড় করানো। বাইকের পেছনে লাল রং-এর বন্ধ বাক্স। খাবারের প্যাকেটগুলো ওর ভেতরেই আছে। ওখানে থাকলে খাবার গরম  থাকে।

সুমিত্রা চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখার চেষ্টা করলো কিন্তু টারজানকে কোথাও দেখতে পেলো না। গেল কোথায় ব্যাটা?

মরুক গে যাক। ও ঠিক বাসায় ফিরে আসবে। মাঝখান থেকে ওর অফিসটা আজকের জন্য ভন্ডুল হয়ে গেল। একটা মেসেজ করতে হবে। সেটাও ভেবে চিন্তে করতে হবে। ঠিকমত মজবুত গ্রহণযোগ্য কারণ সহ। কিন্তু আগের কাজ আগে। গাড়ির দরজা খুলে ও বিকাশকে পেছনের সিটে বসিয়ে দিল।

- ম্যাডাম। মেরা ডেলিভারি!

- ঠিক হ্যায় য়ে বাবা। দেখতি হুঁ।

লাল বাইকের কাছে গিয়ে ঢাকনা খুলে প্যাকেট তিনটে পেয়ে গেল ও। প্যাকেটের গায়ে ঠিকানা লেখা। তিনটেই সি আর পার্কের। তবে ভিন্ন ভিন্ন ব্লকে। গাড়িতে অবশ্যি খুব একটা সময় লাগবে না।

- চলো।

- OTP লেনা হোগা।

- ও তো পুছ লুঙ্গি।

- ফির চিল্লাকে মুঝে বতা দিজিয়েগা। মৈ অপনা মোবাইলমে এন্ট্রি কর লুঙ্গা।

- ও কে বাবা ও কে।

বিকাশের পাশে প্যাকেট তিনটে রেখে সুমিত্রা গাড়ি ছুটিয়ে দিল। প্রথম ঘরটা গ্রাউন্ড ফ্লোরে। যে মহিলা দরজা খুললেন, তিনি দামি ফোর হুইলার থেকে সুসজ্জিতা ডেলিভারি গার্লকে দেখে অবাক হয়ে গেলেন।

- হায় রাম। ক্যা জমানা আ গয়া। অপনা গাড্ডি দেশি। ইসকা গাড্ডি ফোরেনবালা।

- OTP বোলিয়ে।

বিস্ফারিত চক্ষু মহিলার হাতে ফুড প্যাকেটটা তুলে দিয়ে সুমিত্রা এগিয়ে গেল পরবর্তী এড্রেসের দিকে। এটা আবার চারতলায়। তবে লিফ্ট আছে।

- উপর সে OTP কৈসে বতাউঙ্গি? উপর সে আওয়াজ ইতনা নিচে শুনাই দেগা ক্যা?

- আপ মেরা ফোন লে যাইয়ে।

- জানে দে। দেখতি হুঁ।

লিফ্টে চেপে চারতলায় পৌঁছে গেল ও। বেল টিপতেই "ওম জয় জগদিশ ও হরে"। মাই গড! এখানেও সেই! কী ধর্মের ছড়াছড়ি! এদিকে খাবারের অর্ডার মাটন বিরিয়ানি।

কোনো সাড়াশব্দ নেই। কী হলো! অর্ডার করে ঘুমিয়ে পড়লো নাকি?

ও বারকয়েক বেল টিপলো। এতে করে পুরো ভজনটাই ওর শোনা হয়ে গেল।

ততক্ষণে লিফ্ট থেকে হঠাৎ একটি সালোয়ার কামিজ পরা যুবতী মেয়ে বের হয়ে সুমিত্রার পাশে এসে দাঁড়াল।

- নমস্তে ম্যাম। ম্যাম ম্যায় হুঁ সোনিয়া। বিকাশকা ফ্রেন্ড।

মেয়েটিকে দেখতে বেশ। এবং সপ্রতিভ।

- বিকাশ মুঝকো ফোন করকে বুলা লিয়া। মেরা ঘর পাশ মেই হ্যায়। গোবিন্দপুর ই মে।

ততক্ষণে বাথরোব পড়া এক মহিলা দরজা খুলেছেন। সুমিত্রার হাতে খাবারের প্যাকেটটা দেখে উনি চেঁচিয়ে উঠলেন।

- আঁয়। ইতনা দের? হমারা বো তো বগের নাস্তা কে হি অফিস নিকল গয়ে।

- OTP বোলিয়ে।

- নে হি লেনা মুঝে।

- উসমে লস আপকা হি। পেমেন্ট তো হো চুকা। ও নন রিফান্ডেবল হ্যায়।

এ কথা কটা বললো সোনিয়া। তাতেই জোঁকের মুখে নুন পড়লো।

- অন্দর আকে টেবল পর রখ দো। পুজা কে পহলে ম্যায় মাস নহি ছুউঙ্গি।

সুমিত্রার হাত থেকে প্যাকেটটা নিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে গেল সোনিয়া। সোনিয়াকে দারুন পছন্দ হয়ে গেল সুমিত্রার। চমৎকার স্মার্ট মেয়ে। কেমন পরিস্থিতি সামাল দিলো!

নিচে নেমে এসে সুমিত্রা দেখলো। সোনিয়া এসেছে সাইকেলে। তিন নম্বর প্যাকেটের ঠিকানাটা দেখে সোনিয়া বললো,

- পহচানতি হুঁ মৈ। আপলোগ যাইয়ে। মৈ সাইকিল সে বড় রহি হুঁ।

গাড়ি চালাতে চালাতে সুমিত্রা বিকাশকে বললো,

- তুম্হারা গার্লফ্রেন্ড তো বহুত স্মার্ট হ্যায়। কৈসে দোস্তি হুয়া?

- ডেলিভারি দেতে দেতে। সোনিয়া কো বিরিয়ানি বহত পসন্দ হ্যায়।

বাহ্। এ তো মন্দ নয়! ডেলিভারি দিতে গিয়ে বদমেজাজি খদ্দেরদের মুখ ঝামটা জোটে। কুকুরের আক্রমণ  জোটে। সেই সাথে প্যার মুহাব্বতও জোটে দেখছি।

তার পরের ডেলিভারিটা সোনিয়াই করে দিয়ে এলো।

এরপর হাসপাতাল। ডাক্তারবাবু সুমিত্রার খুবই চেনা মানুষ। ওকে স্নেহ করেন। ওর মুখে সব গল্প শুনলেন উনি।

- স্ট্রেঞ্জ। টারজান তো বেশ জেন্টেলম্যান। তার এমন কান্ড!

- কান্ডটা ঘটিয়ে সে তো পিট্টান দিয়েছে। এখন নিজে নিজে বাসায় ফিরলে হয়। ফিরে এসে ঘরের দরজা বন্ধ দেখলে আবার কী করে কে জানে!

- চিন্তার কথা। তবে এর ক্ষেত্রে চিন্তার কিছু নেই। হেয়ার লাইন ক্রাক। ছোটো একটা প্লাস্টার করে দিলেই হয়ে যাবে।

- বিলটা আমি দেবো।

- দ্যাটস অল রাইট।

ডাক্তারবাবুর ওখান থেকে বের হবার সময় এক ঝলক দেখতে পেলো। বিকাশ সোনিয়ার হাতটা জড়িয়ে ধরে আছে। ডাক্তারবাবু বিকাশের গোড়ালিটা সেট করছেন। বিকাশের মুখে যন্ত্রণার ছাপ। সোনিয়ার মুখে অগাধ  ভালোবাসা আর মায়া। সুমিত্রার মনে হলো, ভালোবাসার পৃথিবীটা খুব সুন্দর। তাকে ভরসা করা যায়। কিন্তু হারামজাদা টারজানটা কি ভালোবাসা বোঝে?

আশঙ্কাটা সত্যি করে বাসায় ফিরে টারজানকে পাওয়া গেল না। কোথায় যেতে পারে? সুমিত্রা যখন এই ভাবনায় অস্থির, তখন ফোনটা এলো। পেট সেন্টার থেকে ফোন।

- ডোন্ট ওরি ম্যাম। টারজান আমাদের কাছে। ও নিজে নিজে এসে নিজেকে ভর্তি করে নিয়েছে। কোনো তাড়া নেই, আপনি সময় করে এসে পেমেন্ট করে দিলেই হবে।

দিনটা ঘরেই কাটালো সুমিত্রা। দ্বিতীয়বার অর্ডার করে মাটন বিরিয়ানি আনিয়ে নিল। তাড়িয়ে তাড়িয়ে সেটা উপভোগ করতে করতে ওর মনে হলো, বিরিয়ানি ওর ভালোবাসা, কিন্তু বিরিয়ানি ছাড়াও জীবনে অন্য ভালোবাসারও গুরুত্ব আছে। এতোদিন ভাবেনি। এবার সেটা সিরিয়াসলি ভাবতে হবে।

বিকেলে পেট সেন্টারে গিয়ে টারজানকে দেখে এলো সুমিত্রা। তখনো তার চেহারা অপরাধবোধে মলিন। সুমিত্রা ওর গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বুঝিয়ে দিল, অপরাধ মাফ হয়ে গেছে। বুঝলো কি? মায়ের ফোন এলো রাতে।

- কী রে কেমন আছিস খুকি?

- ভালো। না না শুধু ভালো না চমৎকার।

- টারজানের খবর কী?

- সেও চমৎকার আছে। তবে বাড়িতে নয়। পেট সেন্টারে।

- ওমা শেষমেশ যেতে রাজি হলো?

- রাজি কি বোলছো। সে নিজে নিজে সেন্টারে গিয়ে ভর্তি হয়েছে।

- যাঃ! কী যে বলিস!

- ঠিকই বলছি। ফিরে এলে সব শোনাবো।

আপাতত আমি আপনাদের সবটা শোনালাম। শোনা কথার কথকতা। যথাসম্ভব সত্যি বাঁচিয়ে কল্পনার মিশেল মিশিয়ে আর সুমিত্রাক্ষর ছন্দে।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন