![]() |
কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৪০ |
অমনোনীত
এ আই আসাতে চাকরি গেছে। আটমাস ধরে সমানে চেষ্টা করছি, ফলাফল শূন্য। বাড়িতে মা, বাবা আর অটিস্টিক আধপাগল ছোটভাই।
বৌ মিতা হাই-ইস্কুলের টিচার। ওর রোজগারই ভরসা। সকালে বেরোচ্ছিল। বললাম, “বাবার জ্বরটা কমেনি, মা বলছিল যদি একটু ডাক্তার… আমার কাছে তো আর কিছু…”
“আরও জোরে পাখা চালাক, জ্বরের কী দোষ! গুষ্টিশুদ্ধুর ভার তো আমাকেই বইতে হবে, কী কপাল করে যে…”
মিতা ইচ্ছে করেই গলা তুলে বলল যাতে জ্বরের ঘোরে বাবাও শুনতে পায়। এর পরে আর কিছু বলা যায় না। মা, বাবা দুজনেই নীরব। করবেই বা কী! নিজেকে কীরকম যেন সন্ন্যাসী সন্ন্যাসী লাগছিল। এই মেয়েটির সঙ্গেই আমার ভালোবাসা হয়েছিল! তখন তো ওর এই রূপ দেখিনি! এ কি তার ভেতরেই সুপ্ত ছিল, না কি এখন আমাদের এই অবস্থার জন্য বেরিয়ে এসেছে! নাকি সবই মায়া!
জানি না। অতশত ভেবেই বা কী হবে! একটা উপায়
তো করতে হবে…
বন্ধু বিভাস একটা পত্রিকায় আছে, গল্প ছাপলে হাজার-বারোশো দেয়। আগে দু-একটা ছাপার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। একটা গল্প লিখতে পারলে হতো। কিন্তু লিখব কী? সন্ন্যাসীরা কি গল্প লিখতে পারে? বুদ্ধি, কল্পনা, অনু্ভূতি সব জমে পাথর হয়ে আছে। কলম সরবে কী করে!
একটা বুদ্ধি মাথায় এল। নতুন কিছু না ভেবে যদি আমাদের বাড়ির কথাই লিখি! অনেক মনীষী তো বলেছেন – সাহিত্য সত্যের প্রকাশ মাত্র। নামধাম পালটে আমার এবং আমাদের অভিজ্ঞতা গল্পের ধাঁচে লিখে ফেললাম। দেখলাম মনীষীদের কথাই ঠিক – যা হচ্ছে, যা দেখছি তা গড়াপেটা বানানো গল্পের থেকে অনেক সহজে লেখা যায়।
বিভাসের আপিসে গেলাম। বিভাস ব্যস্ত ছিল, আমাকে একটা সব থেকে ছোট সাইজের কাগজের কাপে চা আনিয়ে দিল। বসে রইলাম অনেকক্ষণ। দুটো মোবাইলে টানা কথা বলতে বলতে বিভাস আমার দিকে হাত বাড়াল। মানে কী লিখেছি দেখবে। দিলাম। ছোট লেখা, তিন মিনিটেই বিভাসের পড়া হয়ে গেল। ওর মুখ গম্ভীর, চোখে বিরক্তির ভাব।
বিভাস বলল, “এসব কী লিখেছিস? এসব ছাপানো যায় কখনো! নারীবিরোধী লেখা পাবলিকের ভীষণ অপছন্দ।”
মিনমিন করে বললাম, “আমি তো সত্যি কথাই লিখেছি রে... নামধাম ছাড়া একটা বর্ণও বানিয়ে লিখিনি, বিশ্বাস কর…”
বিভাস আমার অবস্থাটা বুঝে স্বর একটু নরম করল। হাজার হোক ছোটবেলার বন্ধু তো! বলল, “তোকে কিছু কিছু ব্যাপার ভালো করে বুঝতে হবে। কড়া নির্জলা বাস্তব, বিশেষ করে তা যদি স্রোতের উল্টোদিকে হয়, তা বাঙালি পাঠক নেয় না। এতো কাফকা-কামু-স্টাইনবেকের পাঠকগোষ্ঠী নয় যে বাস্তব সাহিত্যের কদর করবে। যাইহোক, তুই গল্পটাকে উল্টো করে লেখ, মানে নারী-পুরুষের ভূমিকা পাল্টে দে… নারীকে ভালো দেখাতে হবে…
বাড়ি ফিরে আসছি। কী করি! হাতে কটা টাকার যে
ভীষণ দরকার!
“তুই বরং নারী-পুরুষের ভূমিকা উল্টে গল্পটা
লেখ, দেখছি…”
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন