বুধবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৫

এ. কে. রামানুজানের কবিতা

 

 

প্রতিবেশী সাহিত্য

এ. কে. রামানুজানের কবিতা

(ভাষান্তর ও ভূমিকা: গৌরাঙ্গ মোহান্ত)

 


কবি পরিচিতিঃ আত্তিপপাত কৃষ্ণস্বামী রামানুজান ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে মাইশোরে জন্মগ্রহণ করেন এবং ডি. ভানুমাইয়া'স হাই স্কুল এবং মহারাজা'স কলেজে শিক্ষা গ্রহণ করেন। পুনের ডেকান কলেজে ১৯৫৮- ৫৯ শিক্ষাবৎসরে তিনি ফেলো এবং ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটিতে ১৯৬০-৬২ কালপরিসরে ফুলব্রাইট স্কলার হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দ থেকে কর্মব্যাপৃত ছিলেন এবং সেখানে দ্রাবিড়ীয় স্টাডিজ ও ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তাঁর প্রকাশিত সাহিত্যকর্মের মধ্যে Fifteen Tamil Poems (1965), The Striders (1966), The Interior Landscape (1967), No Lotus in the Navel (1969), Relations (1971), Speaking of Siva (1972), Selected Poems (1976), Second Sight (1986), The Black Hen (1995), Collected Poems (1995) উল্লেখযোগ্য। রামানুজান প্রাচীন তামিল কবিতার ইংরেজি অনুবাদকর্মে পুরোধার ভূমিকা পালন করেন। তিনি এই মর্মে আধুনিক কবি ও গবেষকগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন যে কতিপয় ভারতীয় ঐতিহ্যে অদ্যাবধি বিদ্যমান রয়েছে অনাবিষ্কৃত কাব্যসম্পদ। রামানুজান ১৯৯৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন; এ সময় তিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দক্ষিণ ভারতীয় ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয়ে তিনি একজন স্বীকৃত বিশেষজ্ঞ। তাঁর কবিতায় শক্তিশালী সংবেদনশীলতার সাথে বুদ্ধিবৃত্তিক দৃঢ়তার সমন্বয় লক্ষণীয়। পুরাণসংগ্রহ-১ (Mythologies-1) , ছায়ারা (Shadows) ও কুয়াশা (Fog) কবিতাত্রয় The Black Hen ( 1995) কাব্য থেকে চয়ন করা হয়েছে।

 

 

পুরাণসংগ্রহ-১

 

যে স্তন সে বাড়িয়ে দিয়েছিলো

তা পূর্ণ ছিলো বিষে আর দুধে।

ঝলকিত চোখ হঠাৎ নিষ্প্রভ,

কণ্ঠ তার ছিলো রেশমি।

 

শিশু মুখে পুরেছিলো

তার স্তন আর ঠিক তা বক্ষের বাইরে এনেছিলো চুষে।

তার ধড় বিস্তৃত ছিলো উত্তর থেকে দক্ষিণে।

 

সে রূপান্তরিত হলো, সুপ্রভাবে ধ্বংস হলো,

প্রাণঘাতী মা হলো সুখী রাক্ষসী,

মৃত্যুর ভেতর জীবনের পেলো সন্ধান।

 

শিশুর মুখভাবধারী হে সন্ত্রাসী,

আমাকে চুষে করো বিশুষ্ক। পান কর আমার হলাহল।

নবায়িত করো আমার নিশ্বাস।

 

ছায়ারা

 

সূর্যের আলোয় হাঁটবার সময়

মানুষের মাঝে ছায়ারা পড়ে।

অন্ধকারে গজিয়ে ওঠে সংশয়

এবং ভোর হলে জানালায়

জড়িয়ে থাকে দ্রাক্ষালতা ।

 

সময়ের কাজ সম্পূর্ণ হলে

গির্জার চূড়ো মাচায় আবৃত হয়।

ওকের বাকলে জন্মায় শৈবাল,

মাইনে পা রেখে মানুষ বিস্ফোরিত হয়, কপালে ভাঁজ পড়ে।

 

নারীরা পুত্রের আশায় পিপুল বৃক্ষের

চারপাশে প্রদক্ষিণ করে।

আর কন্যারা জন্মায় পরিত্যক্ত পারিবারিক তয়খানায়,

তারা মন্থর বৃক্ষের মতো বৃষ্টির অপেক্ষায় পড়ে থাক।

 

রণবীরেরা রক্ত ও পতাকায় আবৃত

বিশেষ ট্রেনে প্রত্যাবর্তন করে।

তারা ঘরে রণশিঙা বাজায়, পানশালায় মারপিট করে,

আর কুকুরদের চড়া গলায় আদেশ দেয়,

একুশ জন সেবিকাকে হত্যা করে চামড়া তুলে ফেলে,

এবং একজনকে ঝুলিয়ে রাখে মেপল গাছের শাখায়।

 

কুয়াশা

 

সামনে এগোবার প্রয়োজনে আটকে থেকে,

তেলের ঘানির বলদদের

চোখ ঘুরতে থাকে।

 

পরিবর্তনের অপেক্ষায়, শরীর

বদলে যায়, পাখা না মেললে

একটি গুটিপোকা

 

পচে যাবে। অস্থির, চলাফেরায় অক্ষম,

লিফটে দমবন্ধ লাগে,

নিজেই চলমান সেই বন্দিশালাগুলো,

 

হাত বর্তমান কালের বিরোধিতা করে,

সিমেন্টের স্তম্ভে ঘেরা এক গোলকধাঁধা,

বৃক্ষসমূহ পত্র ও ঋতুশূন্য,

 

পা ছুটছে তবে এগোচ্ছে না,

সব জায়গায় খুঁজছে শূন্যতা,

কুয়াশার ঘুর্ণন উর্ধ্বে ভাসে, প্রতি ঘণ্টায় ছেড়ে দেয় নিজের একেকটি স্তর।

 

শীত ফোস্কা ফোটায় না,

রয়েছে এর দহনজ্বালা,,

হৃৎস্পন্দন পরাজিত মল্লবীরের কাছে আম্পায়ারের মতো

সময় গোনে।

 

 

 

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন