![]() |
সমকালীন ছোটগল্প |
সুমানী—ব্যাঘ্রযোনি
শেষপর্যন্ত সুমানীর উপর ঝাঁপিয়াই পড়িল দক্ষিণ রায়। নিমেষেই চেতন হারা হইল সুমানী বউ। চকিতে চেতনা ফিরিল। নাকে আসিল বিশ্রী বোঁটকা গন্ধ। চোখে পড়িল সাদা কন্ঠতল, তুলার ন্যায় নরম, বেশ উষ্ণ। ছিন্ন সায়ার উপর বিবর্ণ শাড়িটি জড়ানো ছিল। প্রাণ বাঁচাইবার জন্য পলায়ন কালে উহাই দক্ষিণ রায়ের প্রথম নাগালে আসে। শাড়ির পাকদণ্ডী মুক্ত হয় সুমানী বউ। চেতনা ফিরিবার প্রথমেই সে আবিষ্কার করে সে বর্তমানে ব্যাঘ্রের বক্ষলগ্না। তারপরই ঠাহর করে সায়াটি অঙ্কদেশ হইতে সমদ্বিখন্ডিত হইয়াছে। দক্ষিণ রায় নির্ঘাত ছিন্ন অন্তর্বাস পছন্দ করেন না। তাই উহা নিরস্তিত্ব করিতে চাহিয়াছিলেন নখরের কার্যকারিতায়। তপ্ত পিচ্ছিল জিহ্বা এইবার পরিল সুমানীর কপালে, তারপর কপোলে, অতঃপর নাসিকায়। তৎপশ্চাৎ নাসারন্ধ্রের নিম্নে একবার, দুইবার, বারংবার। সুমানীর সমগ্র মুখমণ্ডল ব্যাঘ্রের তপ্ত লালায় জ্বলিয়া গেল।
ব্যাঘ্র এইবার সুমানীর কন্ঠ আস্বাদন করিবার পর বক্ষে মনোনিবেশ করিল। দক্ষিণের সুডৌল
বক্ষ - কপোত ঊর্ধ্ববাসের নিম্নদেশ হইতে খানিক বাহির হইয়াই ছিল। ব্যাঘ্র ইহার ঘ্রাণ লইতে
লাগিল। সুমানীর দুই বাহু এতক্ষণ ব্যাঘ্রের কবলে ছিল। এইবার সুমানী বিরক্ত হইয়া বলিল
- "ছাড়
ছাড়"।
ব্যাঘ্র সুমানীর দুইবাহু লতামুক্ত করিয়া দিল।
সুমানী তার ঊর্ধ্ববাস টানিয়া খুলিল। সে ব্যাঘ্রের উদ্দেশ্য বুঝিতে পারিয়াছে। কিয়ৎক্ষণ
পর ব্যাঘ্র সুমানীর নাভিমন্ডল লেহন করিতে লাগিল। শ্রোণীদেশ হইতে আরো নিম্নে গিয়া ব্যাঘ্র
পুনরায় ঘ্রাণ লইতে লাগিল। তারপর দৃঢ়ভাবে লেহন করিতে লাগিল দীর্ঘক্ষণব্যাপী। সুমানীর
শিহরণ গাঢ়তর হইল।
এরপর শুরু হইল সুমানীর শরীরে ব্যাঘ্রের সুরঙ্গ
অভিযান। প্রথমবার... দ্বিতীয়বার... তৃতীয়বার... চতুর্থবার।
ব্যাঘ্রের বীর্যপাত ঘটিয়া গেল। সুমানীর শ্রোণী
দেশের উপর আঠালো, সান্দ্র ঈষৎ পীতাভ উষ্ণ ব্যাঘ্রসত্ত্ব বাতাসের সংস্পর্শ লাভ করিল।
এতক্ষণে ব্যাঘ্র কিঞ্চিত শ্রান্ত হইয়াছে। সুমানীকে ছাড়িয়া সে একটু সরিয়া বিশ্রাম
লইতেছে। ব্যাগের বীর্যে কিয়ত মেটে মেটে গন্ধ। সুমানী তাহা লইয়া কপালে পরিল, তারপর
দ্বিখন্ডিত অন্তর্বাস ও ঊর্ধবাস পরিধান করিয়া বিবর্ণ শাড়িটি তাহাতে জড়াইয়া লহিল।
সূর্য পশ্চিম দিকে যাইতেছে। সে তাহার কাষ্ঠ বোঝা মাথায় করিয়া অরণ্য ছাড়িয়া গ্রামাভিমুখে
চলিল। মাস সমাপ্তির পূর্বেই সুমানীর ঋতুস্রাব শুরু হইল।
গৃহে আসিয়া সুমানী দেখিল মাঝি ভাত খাইয়া, বাসন রাখিয়া পুনরায় নদীতে গিয়াছে। তাহাদের তিনটি শাবক অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র হইতে ফিরে আসিয়াছে। প্রতিরাতের মত আজও মাঝি চাহিল কিন্তু সুমানী এখন রজস্বলা। দিন গুনিতে গুনিতে মাঝি ঘুমাইয়া পড়িল।
(২)
পরদিন হইতে যথাস্থানে যথাসময়ে ব্যাঘ্রের সহিত সুমানীর সাক্ষাৎ হইতে লাগিল। ব্যাঘ্রের উপর সুমানীর মায়া পড়িয়া গিয়াছে, কারণ তাহার নিকট আসিয়াই ব্যাঘ্র তাহার কৌমার্য হারাইয়াছে। ব্যাঘ্রও সুমানীর মূল্য বোঝে। তাই প্রতিদিনই কিছু না কিছু তাহার জন্য মারিয়া আনে। শূকর, সম্বর, চিতল, ছাগ, মহিষশাবক। সুমানী বর্তমানে আর কাষ্ঠ লইয়া গৃহে ফিরে না। মাংস লইয়া যায় চোরাবাজারে। মাঝিকে সে পাশে পাইয়াছে। তাহাদের অনটন ঘুচিয়াছে।
প্রথম যেদিন সন্ধ্যার আঁধারে সদ্য মৃত হরিণ লইয়া সুমানী তাহাদের কুঁড়েঘরে ফিরিয়া আসিল তাহার তিন সন্তান হতবাক হইয়া যায়। রাতে মাঝি যখন ফিরল তাহারও অবস্থা তথৈবচ। সুমানী কহিয়াছিল যে সে ব্যাঘ্রের ডেরার সন্ধান পাইয়াছে। ব্যাঘ্র যখন উপস্থিত থাকে না তখন সে তার অভুক্ত শিকার ডেরা হইতে চুরি করিয়া আনে। মাঝি ইহাতে অবিশ্বাস করার মত কিছু খুঁজিয়া পায় নাই। দিনের পর দিন যায়। পুরুষ মানুষের মন! তাহাতে সন্দেহ দানা পাকাইতে থাকে। মাঝিরও উচাটন আরম্ভ হইল।
(৩)
একদিন গোপনে সুমানীর অনবধানে মাঝি অরণ্যপথে সুমানীকে নিঃশব্দে অনুগমন করিল। সুমানীর সহিত ব্যাঘ্রের সাক্ষাৎ হইল। ইদানিং কেবল ব্যাঘ্র নহে, সুমানীও ব্যাঘ্রকে আদর করে। বিপরীত রতিতে ব্যাঘ্রের প্রবল সুখ হয়। সুমানী তাই আজ বিপরীত রজাতুরা। এইরূপে সুমানী ব্যাঘ্রের লোমশ কর্ণের পার্শ্বে চুম্বন আঁকিতে লাগিল। অতীব সুখে ব্যাঘ্র চক্ষু পল্লব মুদিত করিয়া চিত হইয়া পড়িয়া রহিল। ব্যাদিত মুখগহবর হইতে তীক্ষ্ণ দীর্ঘ কৃন্তকের পার্শ্ব দিয়া লোল জিহ্বা বাহির হইয়া পড়িল। কন্ঠ হইতে অতি নিম্ন গ্রামে সুমধুর ঘর্ঘর শব্দ বহির্গত হইতে লাগিল। তাহার উষ্ণ নিঃশ্বাস সুমানীর বক্ষে ঝঞ্ঝা ঝাপটার ন্যায় পড়িতে লাগিল। এবার সুমানীর খোঁপা এলাইয়া পড়িল। মগ্ন সুমানী এবং ব্যাঘ্রের খেয়ালই রহিল না যে আর কেহ তাহাদের দেখিতেছে। সুমানীর সাহচর্যে ব্যাঘ্রের উন্নতি ঘটিয়াছে। সে চুষিতে শিখিয়াছে।
মাঝির সর্বাঙ্গে অগ্নিস্রোত প্রবহমান। এই দৃশ্য তাহার অতিবাস্তব দর্শন। সহসা সে অনুভব করিল তাহার ইন্দ্রিয় দৃঢ়তায় দন্ডায়মান। ভারী হইতেছে। ভার বাড়িতেছে। এ ভার সে আর সহিতে পারিতেছে না। তাহার ইচ্ছা হইতেছে বাঘটিকে এক ঝটকায় টানিয়া ফেলিয়া দিয়া সুমানীকে সে দখল করে।
না। মাঝির সাহস হইল না। ব্যাঘ্র এখন সুমানীর পদতল লেহন করিতেছে। মাঝি নিঃশব্দে ফিরিয়া গেল। আজ সে বুঝিল কেন প্রতিরাতে পরিবার সীমিত রাখিবার অজুহাতে সুমানী নিজেকে অধরা করিয়া রাখে।
(৪)
পরদিন সন্ধ্যার প্রারম্ভে মৃত বন্য বরাহ লইয়া চোরাশিকারি দলের গুপ্ত হাটে যাইবার পথে সুমানী বামাল বুনো বাবুদের হাতে ধরা পড়িল। খবর পাইয়া মাঝি ছুটিয়া আসিল। সে বারংবার অরণ্য পাহারাদারদিগকে বোঝাতে চাহিল যে মৃত শিকারের গাত্রে কোন মনুষ্য নির্মিত অস্ত্রের আঘাতের চিহ্নমাত্র নাই। সে দেখাইয়া দিল সেখানে কেবল ব্যাঘ্রের নখদন্তের ক্ষতচিহ্ন রহিয়াছে। কিন্তু বনরক্ষক তাহার যুক্তিতে কর্ণপাত করিলেন না।সুমানী এখন বন্দীদের জন্য নির্দিষ্ট ক্ষণস্থায়ী গৃহে দাঁড়াইয়া রহিয়াছে। আগামীকাল তাহাকে আদালতে তোলা হইবে। মাঝি ওই ঘরের বাহিরে ঠিক দরজার কাছটিতে বসিয়া শূন্য দৃষ্টিতে তাহার দিকে নির্নিমেষে চাহিয়া আছে। রাত্রি গাঢ় হইল। একজন অরণ্য প্রহরী মাঝিকে ডিঙাইয়া সুমানীর নিকট গেল। মাঝিকে শুনাইয়া দন্ত বিকশিত করিয়া দন্ডায়মান সুমানীকে সে বলিতে লাগিল যে আগামী কল্য প্রথম প্রাতেই বড় সাহেব সুমানী কে ছাড়িয়া দেবে যদি সুমানী...।
কথা শেষ হইবার পূর্বেই সশব্দে সুমানী এক থাপ্পড় কষাইয়া দিল পাহারাওয়ালার গালে। চিৎকার করিয়া সুমানী বলিল - "হুয়ারের বাচ্চা মুই বাঘের সাতে সুই"।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন