বুধবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৫

প্রদোষ ভট্টাচার্য

 

বড় পর্দায় দেখা হিন্দী ছায়াছবি (পর্ব আট, কিছু মন্তব্যযোগ্য ছবি – ২০১৪-২০১৬)

 


আগেই বলেছি যে ২০১৪ থেকে বছরে হিন্দী ছবি দেখার সংখ্যা এক লাফে অনেকটা বেড়ে যায়। এই বৃদ্ধি বজায় থাকে ২০১৮ অবধি। ২০১৪-য় দেখা আটটি হিন্দী ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি। ‘ক্রিচার – থ্রী ডি’ হিমাচল প্রদেশের গ্লেন্ডেল অঞ্চলে ‘ব্রহ্মরাক্ষস’ নামে এক মানুষখেকো দানবের আক্রমণ নিয়ে বিপাশা বসু-ইমরান আব্বাস অভিনীত ছবি। একই বছরে মুক্তি পায় রোর – ‘টাইগারস অব দ্য সুন্দরবনস’ সুন্দরবনে সাদা বাঘের উপস্থিতি নিয়ে মোটামুটি উপভোগ্য ছবি। বাঘ ছাড়াও সুন্দরবনের অন্যান্য জীবজন্তু দেখানো হয়েছে।

২০১৫ থেকে ২০১৮ হিন্দী ছবির সংখ্যা একক থেকে দশকের পর্যায় গিয়েছিল। ২০১৫-য় ‘সিঙ্গলপ্লেক্স নবীনায় দেখা উক্ত বছরের সফলতম ছবি বিশেষ কারণে পরে আলোচিত হবে, যে কথা ষষ্ঠ পর্বে বলা হয়েছে।

এছাড়া ২০১৫-তে দেখা কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ে অত্যন্ত উপভোগ্য ছবি দীপিকা পাড়ুকোন, অমিতাভ বচ্চন, ইরফান খান, যীশু সেনগুপ্ত অভিনীত ‘পিকু’। মানুষের ‘ইমোশান’ যে তার ‘মোশান’-এর সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত, তা প্রায় সবাই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে স্বীকার করবেন। ছবির কাহিনির আরেকটি দিক ভালো লেগেছিলঃ পিকু (দীপিকা পাড়ুকোন) কোন প্রেমের সম্পর্কে জড়াবার উপক্রম করলেই তার বৃদ্ধ পিতা ভাস্কর (অমিতাভ বচ্চন) দায়িত্ব নিয়ে তা অঙ্কুরে বিনষ্ট করেন, এবং সগর্বে সে কথা সর্বসমক্ষে জাহির করেন। শেষে বাবা কলকাতায় প্রয়াত হলে পিকুর নিখাদ সখ্যতা দেখতে পাই ইরফান খান-অভিনীত ট্যাক্সিচালকের সঙ্গে, যার গাড়ি করে বাবা-মেয়ে দিল্লী থেকে কলকাতা গিয়েছিল – কারণ সেই ভাস্করের নিত্যনৈমিত্তিক কোষ্ঠসাফ সমস্যা! গাড়ির মাথায় ৯০০ মাইল ধরে সগর্বে বিরাজ করেছে ভাস্করের ‘চেয়ার-কমোড’!

২০১৬-য় সবচেয়ে বেশী সংখ্যক হিন্দী ছবি দেখা হয়ঃ ১৫টি! এর মধ্যে যেমন ছিল ‘ফিতূর’, ‘রাজ রিবুট’, ও ‘ডিয়ার জিন্দেগী’-র মতো বিভিন্ন রকমের বাজে ছবি, তেমনই ছিল কিছু প্রশংসনীয় ছবিও। প্রথমে বলব  বছরের চতুর্থ সফলতম ছবি, ১৯৫৯ সালের নানাবতী-মামলার ওপর আধারিত, অক্ষয়কুমার, ইলিয়ানা ডি-ক্রুজ, অর্জন বাওয়েজা অভিনীত ‘রুস্তম’। সুনির্মিত ছবি, আপত্তি শুধু শেষে অক্ষয়কুমার রূপায়িত রুস্তম  পাভরির মুখে একটি উক্তি। রুস্তম বন্ধু বিক্রম (অর্জন বাওয়েজা)-কে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছিলেন, প্রধানত বিক্রম রুস্তমের স্ত্রী সিন্থিয়ার সঙ্গে পরকীয়া করেছিল বলে। রুস্তম শেষে নিদান দেন যে তাঁর স্বৈরিণী স্ত্রীর “কোন দোষ ছিল না!” জানতে ইচ্ছে করে যে পরকীয়া যদি স্ত্রীর বদলে স্বামী করত, তাহলে এই উদার ক্ষমাশীলতা দেখা যেত কিনা!

২০১৬-র ষষ্ঠ সফলতম ছবি ১৯৯০ সালে ইরাক-কর্তৃক কুওয়াইত আক্রমণের প্রেক্ষাপটে অক্ষয়কুমার রূপায়িত ব্যবসায়ী রঞ্জিত কাটিয়াল (বাস্তবে মাথুন্নি ম্যাথিউস) দ্বারা কুওয়াইতে আটকে পড়া ভারতীয়দের উদ্ধার করা নিয়ে রুদ্ধশ্বাস চলচ্চিত্র। এর চিত্রনাট্যে অনেকে স্পিলবার্গের ‘শিন্ডলার্স লিস্ট’-এর (১৯৯৩) প্রভাব লক্ষ্য করেছেন। ১৯৮৬ সালে নিজে যে এরোপ্লেনে হোস্টেস ছিলেন, তার যাত্রীদের পালেস্তিনীয় ‘হাইজ্যাকার’দের নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে গিয়ে কার্যত শহীদ হওয়া নীরজা ভানোটের জীবনালেখ্য নীরজা  (রূপায়ণে অনিল কাপুর-কন্যা সোনম কাপুর) ২০১৬-র আরেকটি প্রশংসনীয় ছবি। নীরজার অসমসাহসিকতার পাশাপাশি তিনি ব্যক্তিগত জীবনেও তাঁর স্বামীর দিক থেকে কীভাবে গার্হস্থ্য হিংসার শিকার হয়েছিলেন, তাও দেখানো হয়েছে।

২০১৬-র এক ব্যতিক্রমী ছবি ‘কাপুর অ্যান্ড সনস’। পারিবারিক টানাপোড়েনের নাটকীয় উপস্থাপনার মধ্যে  একটি প্রবাদবাক্যের অসারতা প্রকট করা হয়েছেঃ কুপুত্র যদি বা হয়, কুমাতা কদাপি নয়! রত্না পাঠক শাহ-রূপায়িত সুনীতা কুমাতার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। দুই ছেলের মধ্যে বড়, সফল ঔপন্যাসিক রাহুলের প্রতি প্রথমে নির্লজ্জ পক্ষপাত, এমনকী ছোটছেলে অর্জুনও উপন্যাস লেখার চেষ্টা করছে শুনে তাকে হেয় করা, আবার ‘মেরা পারফেক্ট বাচ্চা’ যে আদতে সমকামী, তা জানবার পর ক্রোধোন্মাদ হয়ে গৃহত্যাগ, আবার স্বামীর  অপঘাত মৃত্যুর পর সুড়সুড় করে বড় ছেলের আশ্রয়ভিক্ষা করা – মাতৃত্বের কী অসাধারণ নমুনা! রাহুলের চরিত্রে অভিনয় করার সাহস কোন বলিউডি অভিনেতা দেখাতে পারেননি, দেখালেন পাকিস্তানের মতো মৌলবাদী সমাজ থেকে আগত, অত্যন্ত সুপুরুষ ফাওয়াদ খান! অন্যান্য চরিত্রে, পরিবারের ঠাকুরদা-রূপে ঋষি কাপুর, এবং টিনা-চরিত্রে আলিয়া ভট্ট নজর কেড়েছেন।

এই বছরের আরেক উল্লেখযোগ্য ছবি, সেই আলিয়া ভট্টের অভিনয়-দীপ্ত মাদক-পাচার নিয়ে হাড়-হিম করা ছবি ‘উড়তা পাঞ্জাব’, অন্যান্য চরিত্রে শহীদ কাপুর, করীনা কাপুর-খান ও দিলজিত দোসানজী। ২০১৬-র শেষ উল্লেখযোগ্য ছবি, তথাকথিত ঐতিহাসিক ‘মহেঞ্জোদারো’। হৃত্বিক রোশন, পূজা হেগড়ে, কবীর বেদী, অরুণোদয় সিং অভিনীত অতি-উপভোগ্য কচুঘণ্ট, যার শেষে ‘সিন্ধুমাতা’-র (সিন্ধু তো নদ, পুং লিঙ্গ বলেই  এতকাল জেনে এসেছি) প্রবল জলপ্লাবনের ফলে সিন্ধু উপত্যকা ছেড়ে গাঙ্গিক সমতলে নেমে আসেন কুশীলবেরা।

পরের পর্বে ২০১৭ ও ২০১৮-য় দেখা ছবির কথা থাকবে।

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন