শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বিদ্যুৎলেখা ঘোষ

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২৮


একটি শ্রাবণের লু অবলম্বনে

লু হাওয়া বইছে যেন মনে হচ্ছে এই ভরা শ্রাবণের দুপুরে। আকাশ জুড়ে নীল সামিয়ানায় ধবধবে তুলোট মেঘের অ্যাপ্লিক সেলাই করছে ডুবছে উড়ছে পাখিগুলো ওই মেঘের মধ্যেই। ক্যাবে কিছু সমস্যা হওয়ায় চারটে স্টপেজ আগেই নেমে অগত্যা হাঁটতে হচ্ছে। গাড়িটা বিগড়ানোর আর সময় পেলো না। মামাতো ভাইঝির বিয়ের আইবুড়ো ভাতের অনুষ্ঠান চলছে বাড়িতে। জোর করেই অফিসে গিয়ে একরকম পালিয়ে বেঁচে ছিল অনেকক্ষণ। যত আত্মীয়দের সঙ্গে সামনাসামনি হতে হবে সবাই এক প্রশ্ন করবে, কী রে আর কবে বিয়ে করবি তুই? ছোট ভাইঝিরও তো বিয়ে হয়ে গেল!

কাঁহাতক ভালো লাগে এইসব বিষফোঁড়ায় ভুগতে! ধুর ছাই!

পিকু খুব পছন্দ করে ওর একমাত্র পিপিকে। বলেও ছিল পিকু আর ওর হবু বর মিলে একজন পিসেমশাই এবার ঠিক খুঁজে আনবেই আনবে। পিকু অবশ্য এখনকার মেয়েদের তুলনায় একটু তাড়াতাড়িই মানে পঁচিশ বছরের মধ্যেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে যাচ্ছে। পিপির বয়স আটত্রিশ। কিছুতেই বোঝান যায় না তাকে যে ওর বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে। এতসব প্রবল চাপ মনে মনে সামলে নিয়ে বাড়ির গলিতে ঢুকতেই দেখে প্রণয়কে। ধানবাদের জ্ঞাতিগোষ্ঠী তবে দূর সম্পর্কের। মধুর হেসে বলল, এই এতক্ষণে ফিরলি? আমাদের তো দুপুরের খাবার হজম হয়ে আবার ক্ষিদে লেগে গেলো। অহনা বলল, আমার মাথাটা বাদ দিস প্লিজ, একটু পরে আসছি, হ্যাঁ!

প্রণয় ওকে থামানোর আগেই হাওয়া।

ঘন্টাখানেক পর অহনাকে খুঁজতে খুঁজতে তিনতলায় ওর ঘরে চলে এসেছে প্রণয়। অহনা বাথরুমে তখনো। দরজাটা আটকায়নি ঠিকমতো। নক করতেই খুলে গেলো। বললো, শালা কত উপোস করিয়ে রাখবি আমাকে? এখনো এত টইটুম্বুর কেন তুই, আজকেও নিস্তার নেই তোর…। উলঙ্গ এক নারী আর লোলুপ জন্তুর ধস্তাধস্তির মধ্যেই অহনা ফোনে প্রণয়ের স্ত্রীকে রিং করে। সুমনা কেমন আছো, কতদিন পরে তোমাদের সঙ্গে আড্ডা দেবো, শিগগির এসো তিনতলায় আমার ঘরে। কেঁপে উঠল প্রণয়।

ফোন রেখে অহনা বলল, যা বাইরে বেরো। কেমন লাগলো পাল্টা স্ক্রিপ্ট? অভিনয়ে সুযোগ করে দেওয়াটা এখনো চালাচ্ছিস নাকি? টাওয়াল জড়িয়ে নিতে নিতে বলল, ঐ যাকে সুসো আন্টি ডাকিস, ওনাকে মা ডাকবি শুধুমাত্র ওনার সামনে। প্রণয় বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে জিজ্ঞেস করলো, কী যা তা বলছিস তুই? অহনা বলল, ছোটবেলায় তোরা গরমের ছুটিতে এখানে এলে তোর বাবা আমাকে বারণ করতো তোর সঙ্গে খেলতে, তুই যে ঘরে থাকিস সেই ঘরে যেতে। বালিকা আমাকে যে তোর বাপ অপমান করতো সেটা তার মনে নিশ্চয়ই অপরাধবোধ তৈরি করেছিলো। তাই তোর বিয়ের নেমন্তন্ন দিতে এসে পাশের বাড়ির অবিবাহিতা তনুজাদি'কে নিয়ে নানান ঠাট্টার ছলে এটাও বলেছিলো অবলীলায় যে, ঐ অফিস কলিগ সুসো আন্টিকে ডেকে তার রুমে ফাঁকে ফোকরে...





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন