বড় পর্দায়
ইংরেজী ছবি
সম্ভবত ১৯৬৬ সালে নিজেকে নতুন করে সাজিয়ে মধ্য কলকাতায়, নিউ মার্কেটের উল্টো দিকে, পুনর্বার আত্মপ্রকাশ করে মেট্রো-লাইটহাউসকে টক্কর দেবার উপযুক্ত গ্লোব। বাইরে আলোকিত অক্ষরে জ্বলতঃ Home of 20th Century Fox, United Artists। আর ছবি প্রক্ষেপণের জন্য, সম্ভবত কলকাতায় এই প্রথম, দেখা গেল, পর্দা নয়, plastic paint করা সাদা দেওয়াল, যা ঢাকতে ওপর থেকে নেমে আসত বিচিত্র আকারের ধূসর পর্দা, অন্যান্য প্রেক্ষাগৃহের মতো চৌকো নয়।
এই পুনঃসংস্কৃত হলে প্রথম মুক্তি পেল এলিজাবেথ টেলর, রিচার্ড বার্টন ও রেক্স হ্যারিসন অভিনীত ১৯৬৩ সালের ছবি Cleopatra,
যাকে প্রযোজনা করার
বিপুল খরচ টানতে গিয়ে 20th Century Fox নাকি দেনার দায়ে ডুবতে বসেছিল! ছবিটি আজ অবধি দেখা হয় নি, আর ১৯৬৬-তে তো দেখার প্রশ্নই ছিল না! সেন্সর ছবিটিকে
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নির্ধারণ করেছিল।
দাদা প্রথম গ্লোবে, সম্ভবত ১৯৬৬-তে, নিয়ে গেলেন দেখতে ১৯৬৫ সালের Those
Magnificent Men in Their Flying Machines। ১৯১০ সালে, এরোপ্লেন যখন শৈশব অবস্থা কাটিয়ে ওঠে নি, সেই সময়, সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে অতি প্রভাবশালী লর্ড রন্সলি (অভিনয়ে রবার্ট মর্লি) তাঁর
জামাই-হবার-অভিলাষী সেনাধিকারিক রিচার্ড মেসের (জেমস ফক্স) পরামর্শে লন্ডন থেকে
প্যারিস অবধি এক বায়ু-দৌড়ের ব্যবস্থা করেন। প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় এখন লুপ্ত প্রাশিয়া, ফ্রান্স, ইটালি, আমেরিকা, এবং জাপানের প্রতিযোগীরা। দারুণ মজার এবং উত্তেজক ছবি, বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগীরা তাদের জাতীয় চরিত্রের প্রতিভূ
হয়ে ওঠায় তাদের মধ্যে মিথষ্ক্রিয়া ছবিটিকে আরও উপভোগ্য করে তুলেছে। এর সঙ্গে যোগ
হয়েছে নীতিজ্ঞান-বর্জিত স্যার পার্সির (টেরি টমাস) মজার-মজার কূটকৌশল আর রিচার্ড, লর্ড রন্সলি-কন্যা প্যাট্রিশিয়া (সারা মাইলস), আর আমেরিকার প্রতিযোগী অর্ভিল নিউটনের স্টুয়ার্ট ওইটম্যান)
ত্রিকোণ প্রেম। ৭০ মিমি প্রক্ষেপণের প্রকাণ্ড পর্দায় পুরো ব্যাপারটি আরও জমিয়ে
তুলেছিল।
এরপর, ১৯৬৬-তে গ্লোবে মুক্তি পেল ইংরেজী-বাংলা-হিন্দীতে দেখা যাবতীয় ছবির মধ্যে আমার
দ্বিতীয় সবচেয়ে প্রিয় ছবি, কিন্তু তার প্রসঙ্গে আসব এই ধারাবাহিক লেখার সবশেষে, আমার প্রথম সবচেয়ে প্রিয় ছবির সঙ্গে, যার উল্লেখ দ্বিতীয় কিস্তিতেই করেছি।
গ্লোবে এরপর, ১৯৬৭-তে, দাদা দেখতে নিয়ে গেলেন বহু তারকা-খচিত মজার ছবি, ১৯৬৩ সালের It’s a Mad, Mad, Mad, Mad World। দেখুন, বিদেশী ছবি কিরকম আগে-পরে এদেশে মুক্তি পেতঃ ১৯৬৫-র ছবি এলো আগে, ১৯৬৩-র ছবি পরে। একদল মানুষ এক মৃতপ্রায় ব্যক্তির মুখ থেকে কোন এক W-এর তলায় অনেক ডলার পোঁতা আছে শুনে একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমে ছুটে চলে সেই W-এর খোঁজে, কেউ গাড়ীতে, কেউবা চালাকি খাটিয়ে প্লেন ভাড়া ক’রে, যদিও সে এমন আদ্যিকালের প্লেন যে তাতে চড়ে স্বামী-স্ত্রী দেখে যে নীচে হাইওয়ে দিয়ে গাড়ীগুলো তাদের ভাড়া-করা প্লেনকে পেছনে ফেলে ছুটছে! অবশেষে, অকূস্থলে পৌঁছে সবাই দেখে যে চারটে নারকেল (নাকি তাল?) গাছ পাশাপাশি, মাঝের দুটো এমনভাবে একে অপরের ওপর হেলে রয়েছে যে সব মিলে তৈরি হয়েছে একটা ঢ্যাঙা W! তার তলা থেকে টাকা উদ্ধারের পরেও চলে প্রতিযোগিতা, কে সবটা নিয়ে পালাবে! যিনি সবার মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ, অভিনয়ে স্পেন্সার ট্রেসি, তিনিই শেষ অবধি প্রায় সফল হ’ন, কিন্তু সবাই তাঁর পেছনে ধাওয়া করে। যতদূর মনে পড়ে, টাকা কারুরই ভোগে লাগে নি।
গ্লোবে ষাট আর সত্তরের দশকে এত ছবি দেখেছি যে ঠিক বলতে পারব
না সবচেয়ে বেশী ইংরেজী ছবি দেখেছি এখানে না মেট্রোয়! তার মধ্যে পরের দিকে
অনেকগুলোই ৭০ মিমি প্রোজেকশানে ছিল না, যেমন এলিটের ক্ষেত্রে হয়েছিলো। আপাতত ৭০ মিমি ছবির কথাই
বলি।
ভাল লেগেছিল ১৯৬৭ সালে তৈরি, এখানে পরে মুক্তিপ্রাপ্ত, Hugh
Lofting-সৃষ্ট চরিত্র অবলম্বনে Doctor
Dolittle। যাঁর নামে গল্প, সেই ভেটেরিনারি ডাক্তার জন্তুজানোয়ারদের চিকিৎসাই শুধু করেন
না, তাদের সঙ্গে
কথাও বলতে জানেন! সার্কাসে নাকি চিড়িয়াখানায় বন্দী, নিজের স্বাভাবিক আবাসের জন্য কাতর এক সীলমাছকে ডাক্তার
ঘোমটা পরিয়ে মানুষ সাজিয়ে সমুদ্রে ফেলে দেন, ফলে তাঁকে গ্রেপ্তার হতে হয় মানুষ খুনের দায়ে। আদালতে ওটি
যে সীলই ছিল, মানুষ নয় সাব্যস্ত হবার ফলে ডাক্তারকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়ে বিচারক শেষ
মুহূর্তে ডাক্তারকে মানসিকভাবে অস্থিতিশীল আখ্যা দিয়ে পাগলা গারদে পাঠাবার
সিদ্ধান্ত নেন! যে ঢাকা ঘোড়ার গাড়ী করে তাঁকে গারদে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তা থেকে তাঁকে নাটকীয়ভাবে উদ্ধার করে তাঁরই পোষা পশুপাখীরা!
এরপর – বা আগে – আছে ডাক্তারের এক সার্কাস মালিকের সঙ্গে মিলে তাঁর দুই-মাথাওয়ালা Pushmepullyu-র প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা, আর শেষে ডাক্তারের সমুদ্র-যাত্রা, এমন এক অদ্ভূত দ্বীপে যেখানে রাজত্ব করেন কৃষ্ণাঙ্গ দশম
উইলিয়ম শেক্সপীয়র! একেবারে শেষে ডাক্তার চাঁদেও যাবেন, এবং ছবির শেষ দৃশ্যে ডাক্তার পৃথিবীর বুকে নামবেন চাঁদের
মথের পিঠে চেপে! ডাক্তারের ভূমিকায় ছিলেন My Fair Lady-খ্যাত রেক্স হ্যারিসন, মুখ্য নারী চরিত্রে সামান্থা এগার, আর সার্কাস মালিক হয়েছিলেন পরে ৮০-র দশকে ‘গান্ধী’ পরিচালনা
করে খ্যাত রিচার্ড অ্যাটেনবরো। ১৯৯৮ সালে ডাক্তার ডুলিটল-কে নতুন করে পর্দায়
রূপায়িত করেন এডি মার্ফি।
১৯৭০-এ গ্লোবে মুক্তি পায় যিশুখ্রিস্ট-কে কেন্দ্র করে ছবি, ১৯৬৫ সালের The Greatest Story Ever Told। যিশুর ভূমিকায় ছিলেন ম্যাক্স ভন সাইডো, ১৯৫৬ সালে The Ten Commandments-এ মোজেস করে বিখ্যাত চার্ল্টন হেস্টন করেছিলেন দীক্ষাগুরু জন, আর যা এই ছবির সম্বন্ধে অনেকেই বলেন, শেষাংশে উপস্থিত হ’ন প্রায় সমস্ত হলিঊডঃ এমন কি সাধারণত যিনি ওয়েস্টার্ন এবং দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তৈরি ছবিতে অভিনয় করে বিখ্যাত, সেই জন ওয়েনকেও দেখা গেল রোমান শতানীক-অধিনায়কের বেশে! আমার মনে সবচেয়ে দাগ কেটেছিল শয়তানের ভূমিকায় ডোনাল্ড প্লেজেন্সের সংযত অভিনয়, বিশেষ করে যিশু বন্দী হবার পর যেভাবে শয়তান পীটারকে, যিশুর ভবিষ্যদ্বাণী-অনুযায়ী, যিশুকে অস্বীকার করার প্ররোচনা দিচ্ছে।
এই ১৯৭০-এর বড়দিনের ছুটিতে গ্লোবে আসে জেমস বন্ড-স্রস্টা
ইয়ান ফ্লেমিং-এর ছোটদের জন্য লেখা গল্প Chitty Chitty Bang Bang-এর ১৯৬৮ সালে করা চলচ্চিত্রায়ন। মূল গল্পের সঙ্গে কয়েকটি
চরিত্রের নাম ছাড়া ছবির গল্প ফ্লেমিং-এর আখ্যান থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। চিত্রনাট্য
লিখেছিলেন ছোটদের জন্য ভিন্ন স্বাদের গল্পের লেখক রোয়াল্ড ডাহল। বাস্তবের সঙ্গে
রূপকথার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে তৈরি হয়েছিলো এক মুগ্ধ-করা ছবি যা গ্লোবে চলাকালীন তিন
হপ্তায় দেখি তিনবার! মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন সেই ১৯৬৮-তে দেখা Mary
Poppins থেকে পরিচিত ডিক ভ্যান
ডাইক, নায়িকা চরিত্রে
স্যালি অ্যান হোস (বেশ মিষ্টি দেখতে, কিন্তু গানের গলা – যদি তাঁর নিজের হয় – মেরী পপিন্স-সাউন্ড অব মিউজিক খ্যাত
জুলি অ্যান্ড্রুজের ধারেকাছে নয়। শিশু-অভিনেতা দু’জন ভালই, তাদের ঠাকুরদাদার ভূমিকায় লায়োনেল জেফ্রীস দারুণ, আর মূল প্রতিপক্ষ – বাস্তব অংশে নয়, ভ্যান ডাইক অভিনীত মিঃ পটসের বলা রূপকথায় – যার মধ্যে পটস
রেখেছেন নিজেকে, বড়লোকের মেয়ে আর পটসের দুই ছেলেমেয়ের বন্ধু ট্রুলি (স্যালি অ্যান হোস), ঠাকুরদাদা, সবাইকে – ভালগেরিয়ার ব্যারন বম্বি-রূপে জেমস বন্ডের এক ভয়ঙ্কর প্রতিপক্ষ
গোল্ডফিংগারের ভূমিকায় অভিনয় করা গার্ট ফ্রোব এবং ব্যারনেস-রূপিণী অ্যানা কোয়েল; দুজনেই খুব ভাল। আর সমস্ত ছবি জুড়ে এককালে মোটর গাড়ীর দৌড়ে
দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়ে আবর্জনার মাঝে পড়ে থাকা একটা গাড়ী, যাতে ব’সে পটসের ছেলেমেয়ে দুটি খেলত, এবং যেটা বিক্রী হয়ে যেতে উপক্রম হয়েছিলো। ছেলেমেয়ের
গাড়িটির প্রতি ভালবাসা দেখে পটস এক অপ্রত্যাশিত উপায়ে অভাবের সংসারে টাকার
ব্যবস্থা করে সেটিকে কিনে মেরামত করে ঝকঝকে করে তোলেন। এবার ট্রুলিকে নিয়ে পটস এবং
তাঁর দুই সন্তান বেড়াতে যান সমুদ্রের ধারে। এখানে বসে পটস বলতে শুরু করেন তাঁর
গল্প। ব্যারন বম্বি জাহাজে করে এসেছেন ‘চিটি চিটি ব্যাং ব্যাং’ (গাড়ীর নামকরণ
পটসের) চুরি করতে, কারণ সে এক প্রায়-অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন গাড়ী – প্রয়োজনে সে জলে জাহাজের সঙ্গে
পাল্লা দিতে পারে, আবার অবস্থামতো আকাশেও উড়তে পারে! বম্বির চরেরা ঠাকুরদাদাকে ভুল করে অপহরণ
করায় চিটি বাকীদের উড়িয়ে নিয়ে যায় ভালগেরিয়ায় (সে নিজের স্টিয়রিং নিজেই ঘোরায়; পটস বলেন, “চিটি জানে কোথায় যেতে হবে, আমি জানি না!”) ভালগেরিয়ার ব্যারনেস শিশুদের সহ্য করতে পারেন না, তাঁর এক অশিব ছেলেধরা আছে, যে বাচ্চা দেখলেই তাদের তুলে নিয়ে গিয়ে প্রাসাদে বন্দী করে।
পটসের দুই সন্তান তার দ্বারা অপহৃত হয়। কিভাবে পটস-ট্রুলি এবং ঐ রাজ্যের অসংখ্য
সুড়ঙ্গে-লুকিয়ে-থাকা শিশুর দল তাদের উদ্ধার করে, তাই হল রূপকথার শীর্ষবিন্দু, যার পর কাহিনী ফেরত আসে বাস্তবের জগতে, কিন্তু সেখানেও অবশেষে ঘটে মোহিনী ইচ্ছাপূরণ, দুই মা’-হারা শিশু ট্রুলির মধ্যে পায় তাদের মা’কে!
বাস্তব আর কল্পনাকে পদেপদে সুন্দর ভাবে মিশিয়েছেন
চিত্রনাট্যকার। শুরুতে আবিষ্কারক পটসের অভাবী সংসারে ঠাকুরদা-বাবা-ছেলেমেয়ের
পারস্পরিক সম্পর্কের, এবং প্রথমে দুই শিশুর বাবার জন্য স্বার্থত্যাগ, আর তার বিনিময়ে কৃতজ্ঞ বাবার তাদের সখ মেটানোর চেষ্টা
মর্মস্পর্শী। আধ-পাগলা আবিষ্কারকের সঙ্গে প্রথমে মনোমালিন্য হলেও, পরে দুই শিশুর টানে তাদের একে-অপরের প্রতি বিরূপতা দূর হওয়া
ট্রুলি, আর সবশেষে
পটসেরই এক আপাত-ব্যর্থ আবিষ্কারের অপ্রত্যাশিত সাফল্যে সংসারে দারিদ্র্যের অবসান –
সমস্ত কিছু বারবার দেখতে ইচ্ছে করে। উইকিপিডিয়া পড়ে জানলাম যে ছবির নির্মাতারা
‘মেরী পপিন্সে’র সফল জুটি জুলি অ্যান্ড্রুজ আর ডিক ভ্যান ডাইককেই আবার আনতে
চেয়েছিলেন। কিন্তু অত্যন্ত সঙ্গতভাবে জুলি বলেন যে ট্রুলির চরিত্রটি মেরী পপিন্সের
(এবং, আমি যোগ করব, ‘সাউন্ড অব মিউজিকে’র মারিয়ার) পুনরাবৃত্তিই হয়েছে – সেই
মায়ের (এবং ‘মেরী পপিন্সে’ বাবা-মা দুজনেরই) স্নেহ-বঞ্চিত শিশুদের মূল
মহিলা-চরিত্রের মধ্যে তাদের মাকে খুঁজে পাওয়া! তাই জুলি এই ছবিতে থাকতে অসম্মত হন।
আসেন মঞ্চে My Fair Lady এবং The Sound of Music-এ জুলি-অভিনীত এলাইজা ডুলিটল আর মারিয়া চরিত্রদুটিতে জুলির
বদলি হিসেবে কাজ-করা স্যালি।
৭০ মিমি ছবি গ্লোবে এরপর দেখেছি প্রায় সবই যুদ্ধের ছবি। যেমন, ১৯৭১-এ পুনর্মুক্তিপ্রাপ্ত ১৯৬২ সালের দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ সংক্রান্ত ছবি The Longest Day। অভিনব ব্যাপার – ৭০ মিমি প্রোজেকশানে সাদা-কালো ছবি! যথারীতি, এই জাতীয় ছবিতে যা হয়, অভূতপূর্ব তারকা সমাবেশ ছিল। আমার দেখার কারণ ছিলেন আমার হলিউড ‘হিরো’ জন ওয়েন! এর পর দেখেছি ১৯৭০ সালে তৈরি দুটি ছবি, জর্জ সি স্কট অভিনীত Patton আর আমেরিকা-জাপানের যৌথ উদ্যোগে তোলা ১৯৪১-এ পার্ল বন্দরের ওপর জাপানী আক্রমণের উপাখ্যান Tora! Tora! Tora!
আরেকটি পুনর্মুক্তিপ্রাপ্ত যুদ্ধের ছবি গ্লোবে দেখেছি
সত্তরের দশকের মাঝামাঝি, তবে তা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের নয়, ১৮৩৬ সালে ঘটা টেক্সাস বিদ্রোহের সময় মেক্সিকান সৈন্যের কাছে টেক্সিয়ানদের
সাময়িক পরাজয় নিয়ে ১৯৬০ সালে তৈরি জন ওয়েন প্রযোজিত, পরিচালিত, এবং অভিনীত The Alamo।
১৯৭৬-এ পার্ক স্ট্রীট অঞ্চল থেকে কলকাতার উত্তর-পূর্বে সল্ট
লেকে নিজস্ব বাড়ীতে উঠে যাবার পর সেখান থেকে সকাল ৭ঃ৩০-এ ফরাসী ভাষা শিখতে আসতাম
পার্ক স্ট্রীট-ফ্রী স্কুল স্ট্রীটের সংযোগস্থলে পার্ক ম্যানশন্সে অবস্থিত আলিয়ঁস
ফ্রঁসেজে। ক্লাস সেরে মধ্য কলকাতায় দুপুরের শোতে ছবি দেখা প্রায়ই হতো। গ্লোবে
দু’-বার – একবার একা, দ্বিতীয়বার ঐ আলিয়ঁসে পাঠরতা বেথুন কলেজের তিন বান্ধবীর সঙ্গে – দেখেছি ১৯৬০
সালে শ্রেষ্ঠ ছবি হিসেবে ‘অস্কার’-প্রাপ্ত বিখ্যাত My Fair
Lady। ছোটবেলায় (ষাটের
দশকে) ছবিটি এলিটে এসেছিল, তবে বাবা-মা আমাকে বাদ দিয়েই দেখে এসেছিলেন, এবং অন্তত মা’র ছবিটি খুব-একটা ভাল লাগেনি। ইতিমধ্যে
ইস্কুলের একাদশ শ্রেণীতে ছবির উৎস যে নাটক, বার্নার্ড শ রচিত Pygmalion, সেটি কাউন্সিলের পরীক্ষায় পাঠ্যরূপে আসে। খুব জানা কাহিনী, আর ব্রিটিশ কাউন্সিলের
প্রেক্ষাগৃহে পরে ১৯৩৮ সালের সাদা-কালো চলচ্চিত্রায়নটিও দেখা ছিল, অভিনয়ে লেসলি হাওয়ার্ড ও ওয়েন্ডি হিলার। কিন্তু কি সেখানে
আর কি অ্যালান জে লার্নারের করা এই সঙ্গীতবহুল নাট্যরূপে – যা পরে চিত্রায়িত হয়ে
তুমুল জনপ্রিয়তা পায় – নেই নাটকের ভাবালুতা-বর্জিত উপসংহার, যেখানে এলাইজা তার শিক্ষাগুরু হিগিনসের সংস্রব ত্যাগ করে
বিয়ে করছে হাবাগোবা কিন্তু তার প্রেমে পাগল ফ্রেডিকে। দুটি ছবিতেই এলাইজা-হিগিনসের
মিলনের দিকেই ইঙ্গিত স্পষ্ট। তবে, My Fair Lady-তে, এক জেরেমি ব্রেট অভিনীত ফ্রেডিকে বাদ দিলে (যিনি পরে আশির দশকে শার্লক হোমস
হয়ে ছোট পর্দা কাঁপাবেন!), প্রত্যেকের অভিনয় নিখুঁত, গানগুলো অতি সুখশ্রাব্য, এবং ছবিটি সামগ্রিকভাবে অতীব মনোরঞ্জনকারী। শুধু এলাইজার (অভিনয়ে অড্রি হেপবার্ন)
মুখের গানে, যিনি মঞ্চে চরম সফলতার সঙ্গে চরিত্রটি রূপায়িত করেছিলেন, এবং যার গলার গানের ভক্ত আমি সেই ১০ বছর বয়স থেকে, সেই জুলি অ্যান্ড্রুজের অভাব পদে-পদে বোধ করেছি! মার্নি
নিক্সন, যিনি ছিলে
অড্রির নেপথ্য কণ্ঠ, গায়কী এবং স্বরক্ষেপে জুলিকেই মনে করান, এবং ১৯৬৪ সালে নিউইয়র্কে তিনি মঞ্চে এলাইজার ভূমিকায় অভিনয়ও
করেছিলেন (ঠিক যেমনটি করেছিলেন ‘চিটি চিটি ব্যাং ব্যাং’-এর স্যালি অ্যান হোস; আপনাদের মনে থাকবে যে ঐ ছবিতে স্যালি ছিলে জুলির বদলি
অভিনেত্রী)।
১৯৭৮-এ সকালের ফরাসী ক্লাস সেরে ছুটলাম নিউ মার্কেটে গ্লোবে লাইন দিতে। সেদিন সকাল থেকে সেখানে খুলছে আরেক যুগান্তকারী ছবির অগ্রিম বুকিংঃ ১৯৭৭-এর Star Wars। এই কল্পবিজ্ঞান-ভিত্তিক রূপকথার ট্রেলর দেখেছিলাম একাধিকবার, ঐ My Fair Lady এবং অন্যান্য ছবি দেখার সময়। গিয়ে দেখি কাউন্টার খোলার অনেক আগে থেকেই লাইন সিনেমার পাশের গলিতে দীর্ঘায়িত হয়েছে। দুরু-দুরু-বক্ষে দাঁড়িয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর গম্ভীর মুখ করে এসে দাঁড়ালেন এক পুলিশম্যান। লাইনের ওপর চোখ বুলিয়ে দু’জনের দিকে আঙুল তুলে তিনি উচ্চারণ করলেন একটাই শব্দ, “নিকলো!” বিনা বাক্যব্যয়ে বেরিয়ে গেল দুই ছোকরা, বোঝা গেল টিকিট কিনে তার কালোবাজারী করা তাদের পেশা! শোনা গেল মাথা পিছু চারটের বেশী টিকিট দেওয়া হবে না। প্রায় ঘণ্টাখানেক পরে যখন কাউন্টারে পৌছলাম, বললাম, “তিনটে ২ টাকা ৪৫।” (আজকের দিনে এই Star Wars saga-র কোন ছবি এলে কত টাকা খরচ করতে হয় একটা টিকিটের জন্য?) অমনি পেছন থেকে আকুতি, “ও দাদা, আমাদের হয়ে একটা নিয়ে নিন না, আপনাকে দাম দিয়ে দেব।” লাইনে দাঁড়িয়েই কালো বাজারী নিয়ে যা দেখেছিলাম, সেই দৃশ্য মনে কু গাইল। বললাম, “না দাদা, নিজের টিকিট নিজে কিনুন!”
বাবা-মাকে নিয়ে শো-এর দিন গ্লোবে উপস্থিত। বাড়ীতে তখন
‘স্টেটসম্যান’ নেওয়া হত, তার সমালোচক উচ্ছ্বসিত ছবির কাহিনী এবং চিত্রায়ন নিয়ে। কিন্তু এই অতিপ্রচারের
ফলেই বোধহয় তেমন মন ভরল না, শেষে কি রকম যেন ভাবাবরোহের অনুভব হলো! অথচ, আশির দশকের গোড়ায় যখন এই গ্লোবেই মূল ছবির পরবর্তী কাহিনীর
চিত্রায়ন দেখলাম, The Empire Strikes Back (১৯৮০), দারুণ লাগলো! এ তো সেই গুগাবাবা-র
চেয়ে হীরক রাজার দেশে বা গুপী-বাঘা ফিরে এল বেশী ভালো লাগার
মতো!
বিদেশ থেকে ১৯৮৮-তে ফেরার পর হবু-শ্যলিকা-শ্যালককে নিয়ে
গ্লোবে দেখি স্পিলবার্গ-সৃষ্ট দুর্দান্ত চরিত্র ইন্ডিয়ানা জোনসের তৃতীয় অভিযান Indiana
Jones and the Last Crusade (১৯৮৯) । এই অনবদ্য
সৃষ্টির প্রথম কিস্তি, Raiders of the Lost Ark (১৯৮১) এই গ্লোবেই মুক্তি পেয়েছিল, তখন দেখা হয় নি। অক্সফোর্ডে কলেজে ভিডিওতে দেখে আমি মুগ্ধ!
ওদেশে একটি টিকিটে দুটি বা তিনটি ছবি দেখানোর চল ছিল – বলা হত double বা triple bill। সেইভাবে ওখানকার ABC Cinema-য় একসঙ্গে দেখলাম Raiders আর ১৯৮৪-তে মুক্তিপ্রাপ্ত, ভারতের প্রেক্ষাপটে – এবং ভারতে নিষিদ্ধ – Indiana
Jones and the Temple of Doom, যাতে পরাধীন
ভারতে ঠগীদের সঙ্গে সংঘাতে নামছেন ইন্ডিয়ানা, তিনটি অমূল্য শিবলিঙ্গ উদ্ধার করতে। প্রধান দুই প্রতিপক্ষের
চরিত্রে অমরীশ পুরী (কাপালিক) এবং অ্যাটেনবরোর গান্ধী ছবিতে পণ্ডিত নেহরু করে খ্যাত রোশন শেঠ (দুরাচারী মন্ত্রী)।
ছবিটি নিয়ে আমার বিলিতী সহপাঠীদের সন্ত্রস্ত অপরাধবোধ দেখে সকৌতুকে বলেছিলাম, “একজন ভারতীয় – বিশেষ করে বাঙালী – হয়ে এই ছবি যতটা উপভোগ
করেছি, তা’ তোমাদের
পক্ষে সম্ভব নয়। তোমরা তো আর আমার মতো সেইসব ‘কাপালিকের কবলে’ জাতীয় গল্প পড়ে বড়
হও নি!” দুর্ভাগ্যক্রমে ছবিটির পরিচালক স্পিলবার্গ স্বয়ং রাজনৈতিক শুদ্ধতার দোহাই
দিয়ে এই দ্বিতীয় ছবিটিকে তাঁর ত্যাজ্য সন্তানের পর্যায় রেখেছেন!
তৃতীয় অভিযানে ইন্ডিয়ানার বাবারূপে আমরা পাচ্ছি জেমস
বন্ড-রূপে খ্যাত শন কনারিকে। যে পবিত্র পাত্র (Holy
Grail) থেকে যিশুখ্রিস্ট তাঁর
সর্বশেষ নৈশভোজের সময় পান করেছিলেন, এবং তিনি ক্রুশে বিদ্ধ হবার পর যে পাত্রে আরিমাথিয়ার জোসেফ যিশুর শোণিত রক্ষা
করেছিলেন, সেই পাত্রের খোঁজে এই অভিযান, যে পবিত্র বস্তুর পেছনে ধাওয়া করেছে হিটলার এবং তার ঘৃণ্য নাৎসি সতীর্থরা।
দুটি অবিস্মরণীয় দৃশ্যের কথা বলিঃ শত্রুদের প্লেন ধাওয়া করেছে ইন্ডিয়ানা ও তার
বাবাকে। হঠাৎ জোনস সিনিয়র তাঁর ছাতাটি খুলে তেড়ে গেলেন সমুদ্রতীরে বসে থাকা পাখীর
দলের দিকে। ভয় পেয়ে পাখীরা উড়ে গেল আকাশে, প্লেনের প্রপেলারের সঙ্গে একের পর এক পাখীর ধাক্কায় ভেঙে
পড়ল প্লেন! দ্বিতীয় দৃশ্যঃ বার্লিনে চলছে নাৎসিদের পৌরোহিত্যে বই-পোড়ানোর উৎসব।
তার মাঝখানে অতর্কিতে স্বয়ং হিটলারের মুখোমুখি ইন্ডিয়ানা (হ্যারিসন ফোর্ড) ।
হতভম্ব ইন্ডিয়ানা ঐ নরপিশাচের সামনে তুলে ধরে পবিত্র পাত্রের সন্ধান-সম্বলিত
পুঁথিখানি! বিনা বাক্যব্যয়ে হিটলার বইটি নিয়ে তাতে স্বাক্ষর করে দেয় নিজের নাম!
গ্লোবে এই ছবিটি দেখতে গিয়ে একটি বাড়তি অভিজ্ঞতা হয়েছিল।
হলের লবিতে রাখা ওজনের যন্ত্রে চড়েছিলাম আমরা তিনজনই। আমাদের পরেই এক হৃষ্টপুষ্ট
ভদ্রলোক উঠলেন তাতে; পয়সা ফেললেন, হাতে পেলেন ওজন-ছাপা টিকিট। সেটি দেখে আমাদের কাতর স্বরে প্রশ্ন করলেন, “আপনাদের কত ঊঠল?” যে যার ওজন (কোনটাই খুব কম নয়!) বলতেই, তিনি আর্তনাদ ছাড়লেন, “আমার একশো কে জি!” তারপর ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলে সেখান থেকে
দ্রুত প্রস্থান!
গ্লোবে সেই ষাটের দশক থেকে একাধিক ৩৫ মিমির ছবিও দেখেছি। এর
মধ্যে উল্লেখযোগ্যঃ
·11১৯৬৮-তে ১৯৬৬ সালের কল্পবিজ্ঞান-ভিত্তিক Fantastic
Voyage। এক বৈজ্ঞানিকের
মস্তিস্কের ক্লট গলাতে একটি সাবমেরিন সহ একদল মানুষকে জীবাণুর আয়তনে ঠিক ৬০
মিনিতের জন্য ক্ষুদ্রায়িত করে বৈজ্ঞানিকের শরীরে প্রবিষ্ট করা! ৬০ মিনিটে কাজ শেষ
না করলে জাহাজসহ সবাই স্বাভাবিক আয়তনে ফিরে গিয়ে রোগীর শরীর ভেদ করে বেরিয়ে আসবে!
লবি থেকে জোর করে কিনেছিলাম ছবির কাহিনী-বলা বাংলা পত্রিকা (সম্ভবত আশ্চর্য), যার পেছন মলাটে ছিল বিধায়ক ভট্টাচার্যের অমরেশকে নিয়ে একমাত্র উপন্যাস অমরেশ চন্দ্রাহত হ’লো-র বিজ্ঞাপন!
যথাসময়ে দাদার সঙ্গে কলেজ স্ট্রীটে গিয়ে অধুনালুপ্ত ‘বুক সার্ভিস’ থেকে আড়াই টাকা
দিয়ে সংগ্রহ করেছিলাম সে বই। Fantastic Voyage-এ অভিনয় করেছিলেন বেন
হুর-এ মেসেলা-চরিত্রে খ্যাত স্টীভেন বয়েড, খলচরিত্রে ডোনাল্ড প্লেজেন্স, এবং নার্সের চরিত্রে Raquel Welch (শরীর প্রদর্শনের সুযোগ ছিল না, অতএব, কেন যে এঁকে রাখা হয়েছিলো কে জানে!) প্রমুখ।
· ১৯৬৯-এ দেখেছি কল্পবিজ্ঞান-ভিত্তিক (আমার কাছে) ডিস্টোপিয়
স্যাটায়ার, ১৯৬৮ সালের Planet of the Apes, মূল চরিত্রে ‘টেন কমান্ডমেন্টস’, ‘বেন হুর’-খ্যাত চার্ল্টন হেস্টন। একদল নভোচারীর নেতা তিনি, তাঁদের মহাকাশযান বিকল হয়ে আছড়ে পরে এমন এক গ্রহে যেখানে
বনমানুষেরা সভ্য আর মানুষ জংলী জানোয়ার, বনমানুষদের শিকারের লক্ষ্য! শেষে নভোচারীদের নেতা জানতে
পারেন যে তিনি অন্য কোন গ্রহ নয়, এসে পড়েছেন ভবিষ্যতের পৃথিবীতেই, যেখানে মানুষ মারণযুদ্ধে নিজের সভ্যতা ধ্বংস করার পর,’যোগ্যতমের বেঁচে থাকা’-র নিয়মে বনমানুষেরা বিবর্তিত হয়েছে
ক্ষমাতাবান সভ্য জীবের স্তরে!
·
১৯৬৯-এ চন্দ্রাবতরণের পর গ্লোবে এসেছিল তা নিয়ে তথ্যচিত্র।
তখন দেখা হয় নি, পরে রবিবার সকালের শোতে সেখানে দেখেছি ১৯৬৯-এর Footprints
on the Moon।
·
১৯৭০-এ ১৯৬৭ সালের A Challenge for Robin Hood। বাবা-মার কাছে
এরল ফ্লিন রূপায়িত রবিন হুডের ছবিসমূহের গল্প অনেক শুনেছি। এটি আমাদের যুগে তোলা
রবিন-আখ্যান।
· ১৯৭০-এই আবার, আমার প্রিয়তম হলিউড-স্টার জন ওয়েন এবং রক হাডসন অভিনীত আমেরিকার গৃহযুদ্ধের ঠিক পরের সময়ের প্রেক্ষিতে ১৯৬৯ সালের The Undefeated। এক সপ্তাহ চলাকালীন শেষদিন শেষ রাতের শোতে বাবার সঙ্গে দেখেছিলাম, কারণ সপ্তাহের প্রথম দিকে পেট খারাপ হয়েছিলো। বাবা বলেছিলেন, “তাড়াতাড়ি সেরে ওঠো! জন ওয়েন কি মনে করবে? ‘আমার ভক্ত কিনা পেট হড়কে আমার ছবি miss করল!’
·
মার সঙ্গেই গ্লোবে আরও দেখেছি এক বিচিত্র ধরণের ছবিঃ
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য কার্টুন Heavy Metal (১৯৮১)!
গ্লোবে সর্বশেষ দেখা ছবি
বোধহয় ১৯৯৭ সালের Titanic, যা দেখেছিলাম স্ত্রী, শ্যালিকা ও শ্যালককে নিয়ে। এটি ৭০ মিমি প্রোজেকশানেরই ছিল।
সবশেষে আবার বলি, এই গ্লোবেই মোট চারবার দেখা ছবিটির কথা বলব আলাদা ভাবে, কারণ সেটি আমার দেখা যাবতীয় ছবির মধ্যে
(ইংরেজী-বাংলা-হিন্দী) দ্বিতীয় সবচেয়ে প্রিয়। ছবিগুলির সবার শেষে তার পোস্টারই
শুধু রাখলাম!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন