কালিমাটি অনলাইন / ১২৩ / দ্বাদশ
বর্ষ : তৃতীয় সংখ্যা
সময় কখনও সরল নয়, বরং জটিল। কখনও
কখনও সেই জটিলতা জটিলতর হয়ে ওঠে। সেই জটিলতর সময়ের মুখোমুখি হব কীভাবে, কীভাবেই বা
সেই জটিলতার মোকাবিলা করব, অনেক ক্ষেত্রেই দিশা খুঁজে পাওয়া যায় না, বিভ্রান্তি জাগে।
কিছুতেই বুঝে উঠতে পারা যায় না, সেই জটিলতর পরিস্থিতির কারণে যেসব দুর্ঘটনা ঘটছে, প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে
হচ্ছে, তা কীভাবে অতিক্রম করব! কিছুটা দ্বিধা, কিছুটা দ্বন্দ্ব, তারপর একটা পথ খুঁজে
নিতেই হয়। পথটা লড়াইয়ের, পথটা সংগ্রামের, জান বাজি রেখেই তখন পথে নেমে পড়তে হয়। চোখে
চোখ রেখে কথা বলতে হয়। সলিল চৌধুরীর লেখা সেই অবিস্মরণীয় গানের কথা মনে পড়ে যায়, ‘পথে
এবার নামো সাথী, পথেই হবে পথ চেনা’। ব্যক্তিগত জীবনে বেশ কিছু আন্দোলনের সাক্ষী থাকার
সুযোগ হয়েছিল আমার। তারমধ্যে আলাদা করে উল্লেখ ও স্মরণ করতে হয়, সত্তর দশকে সংঘটিত নকশালবাড়ি আন্দোলনের কথা। এই মহান আন্দোলন
সেই সময় রীতিমতো নাড়া দিয়েছিল পুঁজিবাদী শাসকগোষ্ঠির কায়েমী স্বার্থের ভিতকে। যদি সেই
আন্দোলন কার্যকরী হতো, তাহলে একটা অন্য সমাজব্যবস্থার হয়তো পত্তন হতো। বিশেষত আমরা
স্বপ্ন দেখেছিলাম মুক্তির দশকের। তারপর কেটে গেছে আরও বেশ কয়েকটি দশক। মুক্তির ভাবনা
স্বপ্নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। বরং আরও কঠোর ও কঠিন হয়েছে শাসকশ্রেণীর দমন ও পীড়ন
নীতির। দাসত্বের আরও সুচতুর ও নির্মম আবহে আমরা ক্রমাগত বন্দী হয়ে পড়েছি।
তবু আমরা যে পরাজয় মেনে নিতে রাজী নই, মনের মধ্যে রয়ে গেছে লড়াইয়ের সুতীব্র জেদ ও বাসনা, তাই চারিদিকের এত অবিচার ও অনাচারের মধ্যে বাস করেও সম্প্রতি সংঘটিত একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারা প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে এসে দাঁড়িয়েছি উন্মুক্ত পথে, আমাদের হাতে কোনো অস্ত্র নেই, কন্ঠস্বরেই উদ্গারিত হচ্ছে আমাদের যাবতীয় ক্ষোভ ও ক্রোধ। বিশেষত এই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের জনজোয়ারে নেতৃত্ব নেই কোনো তথাকথিত রাজনৈতিক দলের, ছড়ি ঘোরাচ্ছে না কোনো জাতি, প্রদেশ বা ধর্মের কোনো ভাবাবেগ, বরং শুধুমাত্র অন্যায় ও অপরাধের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছে সাধারণ মানুষের এই আপোষহীন প্রতিবাদের বিস্ফোরণ। আমাদের এই প্রচলিত সমাজব্যবস্থায় আমরা যে কেউই সুরক্ষিত নই, বিশেষত মহিলারা যে কোনোভাবেই সুরক্ষিত নয় ঘরে এবং বাইরে, পথে-ঘাটে-বাজারে-ময়দানে-কর্মস্থানে সর্বত্রই তাদের আক্রান্ত হতে হয়, সম্ভ্রম ভূলুন্ঠিত হয়, প্রাণনাশ হয়, এ তো আমরা জানি। প্রতিদিন বিভিন্ন ঘৃণ্য ঘটনার সাক্ষী হয়ে থাকছি। অথচ কোনো প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করতে পারছি না, এটা তো আমাদেরই ভীরুতা, দুর্বলতা। আর সেই ভীরুতা ও দুর্বলতাকে কাটিয়ে ঊঠতে পারলে যে অনেক সমস্যা সমাধানের পথ উন্মুক্ত হয়ে যায়, বিগত মাসের কলকাতার আর জি কর হাসপাতালের অত্যন্ত নক্করজনক ঘটনার বিরুদ্ধে তথাকথিত রাজনীতিহীন সাধারণ মানুষের আন্দোলন তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। না, এই সম্পাদকীয় প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত আমাদের তিলোত্তমার ওপর সংঘটিত পাষন্ডদের অত্যাচারের বিচার এখনও হয়নি, এখনও খোলসা করা হয়নি এই সরকারী হাসপাতালের মধ্যে দুষ্টচক্রের বিভিন্ন দুষ্কর্মের ফিরিস্তি, পরিষ্কার করে এখনও ঘোষিত হয়নি সেই দুষ্টচক্রে জড়িয়ে থাকা শাসকশ্রেণীর ভূমিকা। তবে পথে যখন আমরা নেমেছি, আমরা নিশ্চিত, আমাদের পথেই হবে পথ চেনা। এক্ষেত্রে কোনো আপোষ হতে পারে না। কেননা আমরা আপোষহীন।
‘কালিমাটি অনলাইন’ ব্লগজিনের পক্ষ থেকে সবাইকে জানাই শারদ শুভেচ্ছা শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা :
kajalsen1952@gmail.com / kalimationline100@gmail.com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন