প্রতিবেশী সাহিত্য
সুকীর্থরানি’র কবিতা
(অনুবাদ : বাণী চক্রবর্তী)
কবি পরিচিতিঃ সুকীর্থরানি (Sukirtharani) তামিলনাড়ু রাজ্যের ভেলোর জেলার অন্তর্ভুক্ত রানিপেত গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দলিত সম্প্রদায়ের জন্য নির্দিষ্ট এক পাড়াতে তিনি এখনও থাকেন এবং বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করেন। শিক্ষাক্ষেত্রে ইকনমিক্স এবং তামিল সাহিত্যের মাস্টার্স ডিগ্রি হাসিল করেছেন। মূলত তাঁর লেখা নারীবাদী ও দলিতসম্প্রদায়ের ছবি তাতে ফুটে ওঠে। তিনি তামিলনাড়ুর বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। সম্প্রতি তিনি ‘দেবী পুরস্কার’-এর জন্য মনোনীত হয়েছিলেন, কিন্তু যখন তিনি জানতে পারেন যে, আদানি গ্রুপ এই পুরস্কারের মূল স্পনসর, তিনি এই পুরষ্কার বর্জন করেন। তাঁর লেখা অত্যন্ত অন্ত:স্পর্শী এবং অনেক ভাষায় অনুদিত হয়েছে। এখানে তাঁর কয়েকটি কবিতার ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করা হলো।
Infant language (শিশুর ভাষা)
মায়ের গর্ভে ভাসমান অবস্থাতেও
আমার একটা ভাষা প্রয়োজন।
যে ভাষায় এখনো কেউ সংকেত অথবা
মৌখিক উচ্চারণেও কথা বলেনি!
এ ভাষা হবে মুক্ত এবং সম্মানজনক,
আমার ছেঁড়া অন্তর্বাসের নিচে লুকোনো নয়।
এর ভেতর হৃদয়জ মানবিক শব্দ থাকবে
যা কখনো তোমার পিঠে ছোরা মারবে না!
শেষরাতের স্বপ্নে আমি অভিভূত!
সেটা সবাইকে বলে দিতে চাই, কোনো নালিশ নয়,
সে ভাষা আকাশের মত প্রশস্ত, এর মৃদু শব্দগুলো
কাউকে আঘাত দেবে না... নরম জিহ্বাকেও নয়!
এ অদ্ভুত ভাষা সব দু:খের সমাপ্তি ঘটাবে
একটা গর্বের জায়গা বানাবে, সেখানেই
আমার বর্ণমালা শুনতে পাবে! এবং ভীত হবে।
তোমার টক, তেতো ও আক্রমণাত্বক
শব্দগুলো দিয়ে তর্ক করবে
আমাকে অন্ধকার প্রেক্ষাপটে নিয়ে যেতে!
সে বিষয়েও আমি বিশদভাবে লিখবো
চিটচিটে রক্ত দিয়ে শিশুর ভাষায়!
আমি স্পষ্ট বলতে চাই (I speak it bluntly)
বাবা যখন
মৃত গরুর চামড়া ছাড়াতেন
বিরক্ত করতে আসা কাকগুলোকে
আমি দূরে তাড়িয়ে দিতাম।
আবার ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে
অপেক্ষা করতাম শেষ বাজারের পরিত্যক্ত
সব্জি দিয়ে খাবার খাওয়ার জন্য! আর বলতাম
আমি সদ্য রান্না করা গরম ভাত খাই!
রাস্তায় যদি কখনো বাবাকে দেখতে পেতাম,
তার কাঁধে ঝুলত চামড়ার ব্যাগ
আমি মুখ ফিরিয়ে নিতাম, তাকে পাশ কাটিয়ে যেতাম,
কারণ বাবার কাজ কাউকে জানাতে চাইনি!
স্কুলে টিচার আমাকে মারতেন
বন্ধুহীন একা আমি লাষ্ট বেঞ্চে বসে
প্রায়শই কাঁদতাম, যদিও
কেউ সেটা জানতে পারতো না!
কিন্তু বর্তমানে
যখন কেউ জানতে চায়-
আমি মাথা উঁচু করে স্পষ্ট স্বরে বলি
আমি একজন দলিত!
আমি উঠে দাঁড়াবো (I will stand again)
যদি আমাকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলবে,
আমি সবুজ ঘাসের মাঠ হয়ে তাকিয়ে থাকব,
শুয়ে থাকব, ছড়িয়ে থাকব এক উর্বর ভুখন্ড হয়ে!
যদি আগুন লাগাও আমার শরীরে
ফ্লেমিংবার্ড হয়ে উড়ে বেড়াব
আরও আরও প্রশস্ত আকাশ জুড়ে!
ছবির ফ্রেমের মতো চতুষ্কোণে বদ্ধ ক'রে
দেয়ালে টাঙিয়ে রাখতে পারো আমাকে
কিন্তু মনে রেখো নদীতে অকস্মাৎ আসা
বন্যার মতো
তোমাকে ডিঙিয়ে চলে যাবো!
রূপান্তরিত হ'ব, প্রকাশিত হ'ব
ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুত, ব্যোমের মধ্যে!
যত আমাকে আবদ্ধ করবে
ততই ছড়িয়ে যাবো অনন্তে অসীমে!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন