কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২৬ |
মনের মানুষ
আমি নাকি লীনাকে মারতে গিয়েছিলাম!
কী আশ্চর্য কথা! লীনা আমার বউ, নতুন বউ। ওকে আমি মারতে পারি? ও নাকি বাজে দেখতে। মোটা, বেঁটে, কালো,
দাঁত ফাঁক-ফাঁক, বুড়ি-বুড়ি - বিয়ের দিন সব আলোচনা করছিল, আমার কানে এসেছে। আমার তো
তেমন লাগল না। আমি দেখতে ভালো, একটা সরকারি চাকরি করি। দোষের মধ্যে মাঝে-মধ্যে মাথার
ওষুধ খেতে হয়। সম্বন্ধটা বউদি এনেছিল। তাই সকলকে চুপ করাচ্ছিল, "লীনা মানসিক হাসপাতালের
সিস্টার, ঠিক সামলে নেবে। ওদের সেজন্য সেভাবে জানানো হয়নি।"
দিন, সময়, ঘন্টা এগুলো হিসাব করতে খুব ভুল হয়ে যায় আমার। মানকুণ্ডু হাসপাতালের একফালি জানালা দিয়ে তাকিয়ে বসে থাকি সারাদিন - লীনা কখন আসবে। লীনাকে আমি ভীষণ ভালোবাসি, অন্যায় রকমের ভালোবাসি, ওকে কথাগুলো বলাই হয়নি। বিয়ের পর যখন আমরা একসঙ্গে থেকেছি, কতদিন আমার মনে নেই। তখন ও-ও তো বলেছে, আমাকে খুব ভালোবাসে। আমাকে ইহজীবনে ছেড়ে যাবে না। ওর কোনও লাভারও নেই।
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে বাড়িতে আমার ঘরে ঢোকার পরই বউদি বলল,
"বাবলু, লীনা কিন্তু চলে গেছে।"
"কোথায় গেল? বলে গেল না তো!
আমি না ওর স্বামী!"
বউদি অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,
"ডিভোর্স চেয়েছে। পেয়েও যাবে।"
আমি বুঝতে পারছিলাম না। লীনা আমার
বউ, ও কেন আমাকে ছেড়ে চলে যাবে? রেগে বউদিকে বললাম,
"বাজে কথা। সব তোমাদের সাজানো
কথা।"
বউদি মাথা নীচু করে চলে গেল।
আমি এখন অজয় নদের চড়ায়। কবে এলাম হিসেব-ফিসেব সব গোলমাল লাগে। দেখতে পাচ্ছি আমার মনটা ফাটা টেনিস বলের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে চলেছে - ঢপ্ঢপ্ করে আওয়াজ হচ্ছে। আমার চোখ তার পেছন পেছন গিয়ে লীনাকে খুঁজছে। কাল না পরশু কী জানি, বোলপুর স্টেশনের বেঞ্চে বসে পাঁউরুটি খাচ্ছিলাম, দোকানদার নিজে থেকে দিয়েছিল। দেখলাম লীনা ট্রেনে উঠতে দৌড়াচ্ছে, পাশে একটা লোক স্যুটকেস হাতে। আমি "লীনা তুমি যেয়ো না" করে ছুটলাম। পেছন থেকে লোকজন চেঁচামিচি করে সরিয়ে আনল। বলতে লাগল,
"পাগলটা মরবে দেখছি এবার"!
কে জানে কাকে বলল! আমার লীনাকে
আর দেখতে পেলাম না। আমার মনের মানুষ হারিয়ে গেল!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন