সোমবার, ১ জুলাই, ২০২৪

অনিরুদ্ধ সুব্রত

 

কবিতার কালিমাটি ১৩৬


ইতিকথা

 

রিয়েলিটি আর সাহিত্যের ভেদরেখা

ভুলে গিয়ে, বারংবার তোমাকে জড়িয়ে ধরি।

হে নকশা কাটা পাথরের গোলাপী স্তম্ভ,

পৃথিবীর রাজকীয় দিন কী ভীষণ ভারি---

এতো দীর্ঘ, অনড়, কঠিনের নিকটে তবু

জনৈক অনৈতিহাসিক; ভূতপূর্ব কাহিনির রেশ

প্রত্যক্ষ করি। অশ্বারোহীর কালো ঘোড়া

বাঁধা ছিল, একদিন যে থামে,

বেজেছিল যুদ্ধভেরী যে নামে,

সেই চাতালেরই মাঝখানে। একটি নিঃশব্দ

চেতনের ফলিত ফ্যান্টাসি,

দু'বাহুতে জড়িয়ে ধরে--- পুনঃ পুনঃ মরি।

 

নৌকো

 

ঘাটে ঘা খেয়ে পানসি আবার

মাঝজলাশয় ফেরে

বৈঠার বশ্যতার চেয়ে, এই ঘুরপাক

তার যে দারুণ ভালো লাগে

সচ্চিদানন্দে চিৎ পাটাতন বলে,

প্রিয় পবন, শূন্য ওজন করে

সারারাত ভব বুকে ভাসা দিস

আমারও যে ভাল্লাগে না---

নিত্য নিত্য এ বিচ্ছেদের প্র্যাকটিস।

 

তালু

 

এই যে করতল, ব্যর্থ ও আত্ম-ধিক্কারে সিক্ত

অপেক্ষাকৃত পুরু চামড়ার নিচে অগণিত স্নায়ু

কখনও তারা কম্পিত, কিন্তু কেন জানি না

অথচ একটি অ-প্রখর আলোর তলে দাঁড়িয়ে

জিজ্ঞাসা করি, হে মহাকাশ এও কি দর্পণ...

 

ভাঁজগুলো নামাঙ্কিত রেখায়--- প্রাচীন টলেমি

আমি মূর্খ, কিন্তু অন্ধবিশ্বাস করি গ্যালেলিও

গ্রহের বিচার করতে দিই না কাউকে, কেবল

করতলে দেখি, অজানা উপগ্রহের গতিপ্রকৃতি

 

তবু মধ্যরাতে মুঠো করতে গিয়ে, কোথাও প্রদাহ

পাঁচ আঙুলের মধ্যবর্তী চাতালে হলদে আগুন

আর ঠিক তক্ষুনি, এক লাইন বার্তা পাঠায় প্রিয়,

'প্রতিটি সমস্যা আসলে--- তোমারই সৃজন'

আমি করতলে করতল ঘষি তারপর দীর্ঘক্ষণ।

 

স্তোত্র

 

প্রতিটি চুমুর জন্যে, ঠোঁটের সক্রিয়তা খুব কম

যদি বিশ্লেষণ করো, তবে তো সমুদ্র পেরতে হয়

ক্ষত ডিঙিয়ে আসতে আসতেই ভুলে যেতে হয়

পিটুইটারির জংশনে কীসের দংশনে ছিল দম।

ঠোঁটেরা হয়তো জানেই না ভূত ও অভূতপূর্বের

মধ্যবর্তী সকল মস্তিস্ক-কোষের প্রতিটি হ্যাঁ ও না

যেমন চঞ্চল চোখেরা মুহূর্ত স্তব্ধ করেনি পলকে

হয়তো তেমনি, গ্রন্থি-গ্রন্থের খোলা ছিল না পাতা

যদি বিশ্লেষণ করো, তবে তেপান্তর পেরতে হয়

প্রতিটি চুমুর জন্যে, রাগের সক্রিয়তা খুব বেশি।

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন