সোমবার, ১ জুলাই, ২০২৪

শাহনাজ নাসরীন

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২৬


মল্লিকা

 

আমার নাম মল্লিকা। মল্লিকা সেনগুপ্ত নয়, মল্লিকা রহমান। তবে একেবারে ছোট থেকে কবি মল্লিকা সেনগুপ্তের কবিতা পড়ে পড়ে আমিও কবি হয়ে উঠেছিলাম। আমার মা’র বিছানার সাইড র‌্যাকে মল্লিকা সেনগুপ্তের সবগুলো বই সাজানো থাকতো। মায়ের মুখে গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ার বয়স পার হবার পরেই আমি বুঝে না বুঝে মল্লিকা সেনগুপ্তের কবিতা পড়তে শুরু করেছিলাম। মা কি মল্লিকা সেনগুপ্তকে ভালোবেসেই আমার নাম মল্লিকা রেখেছিলেন,  নাকি ফুল ভালোবেসে? মল্লিকা তার প্রিয় ফুল ছিল? ফুলও তো খুব ভালোবাসতেন মা! প্রতিদিন তীব্র গন্ধযুক্ত  অনেকগুলো সাদা ফুল আনাতেন মা। প্রতিটি ঘর, বারান্দা সাজানো হতো সেই ফুলে। মা ফুলে ফুলে নাক ডুবিয়ে একটু টেনে আস্তে করে বলতেন আ..হ! অবশ্য শুধু ফুল নয়, আমাদের দু’বোনের চুলে নাক ডুবিয়েও গন্ধ নিতেন মা। প্রায়ই আমাদের দু’বোনকে কাছে টেনে আমাদের চুলে ঝুটি বা বেণী করে সাদা ভেলেভেটের ফিতে দিয়ে বড় বড় ফুল বানাতেন, তারপর নাক ডুবিয়ে গন্ধ নিয়ে চুমু খেতেন।

তারপর বহুদিন গেছে। কোন এক মৌন সন্ধ্যায় চুপচাপ বসে আছি। জানালায় হাস্নাহেনার তীব্র গন্ধ। এমন সময় হঠাৎ খুব হৈ চৈ। মা ঘুমিয়ে গেছেন চিরতরে। ঘুমোতে না পারার অসহ্য যন্ত্রণা আর তাকে সইতে না হয়, নিজেই সেই ব্যবস্থা করে নিয়েছেন। তারপর রাত গভীর হয়েছে। কতো কী ঘটে গেছে ঘরে বাইরে আর হিমে জমে গেছে আমার চোখের পাতারা। শুকনো চোখে শূন্য বুকে কিছু পংক্তির আঁকিবুকি মুঠোয় করে আমি বসে থাকি। একা হলেই খালি বোতলের মতো টুপ করে পড়ে থাকি ঘরের কোনো এক টেবিলে। দেখি, একের পর এক আমারই মতো শূন্য বোতল এসে জড়ো হচ্ছে। আমি বোতলের গায়ে হেলান দিয়ে বলি, তুমিও আমারই মতো শূন্য জলে ডুবে থাকা ভুল।

সে-ই আমার প্রথম কবিতা, আমার প্রথম ভালোবাসা। এমনকি আমার একমাত্র ভালোবাসা। সেই থেকে কবিতা আমার একমাত্র সঙ্গী, কবিতাকে নিয়ে বেড়ে ওঠা। এই তুরীয় অবস্থা চললো বহুদিন। কবি আর কবিতার মধ্যে আমি  এমনভাবে ডুবে গেলাম যে অনেকদিন পর্যন্ত আমি জানতেই পারলাম না, আমার বয়স বেড়েছে, চরম দুর্ভাগ্যের মতো ভালোবাসা এসেছে জীবনে!

 

 

 

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন