সোমবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২৪

<<<< সম্পাদকীয় >>>>

 



কালিমাটি অনলাইন / ১২০ / একাদশ বর্ষ : দশম সংখ্যা





গণিতশাস্ত্রে ক্যালকুলাস অধ্যায়ে দুটি বিভাগের একটি হচ্ছে – ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাস, অন্যটি হচ্ছে ইন্টিগ্রাল ক্যালকুলাস। যদি আমরা এই দুটি শব্দ অর্থাৎ ডিফারেন্সিয়াল ও ইন্টিগ্রালকে রঙ ও আলোর প্রেক্ষিতে আলোচনা করি, তাহলে বলা যায়, আলোর ডিফারেন্সিয়েশন করলে রঙ পাওয়া যায়, আর রঙের ইন্টিগ্রেশন করলে পাওয়া যায় আলো। পাতি কথায় বিভিন্ন রঙ যখন মিলেমিশে একান্নবর্তী পরিবারের মতো থাকে, তখন তাকে আলো বলা হয়, আর যখন যৌথপরিবারের তোয়াক্কা না করে স্বতন্ত্রভাবে থাকতে চায়, তখন  তাকে রঙ বলে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের চারপাশে যে এত বিভিন্ন রঙ দেখি, তাহলে তাদের মোট সদস্যসংখ্যা কত? অসংখ্য? বিজ্ঞান বলছে, না,   মৌলিক রঙ মাত্র তিনটি – লাল, নীল, হলুদ (নাকি সবুজ?)। বাকি যাবতীয় রঙ এই তিনটি মৌলিক রঙের পারমুটেশন কম্বিনেশন। যদিও বর্ণালীতে মাত্র সাতটি রঙের কথা বলা হয়েছে – বেগুনী, নীল, আকাশি, সবুজ, হলুদ, কমলা ও লাল – কিন্তু প্রকৃতিতে আমরা এত অসংখ্য রঙের মুখোমুখি হই, যা গুণে শেষ করা অসম্ভব। আবার এত রঙের রমরমা দেখে যদি আমরা রঙবাজি শুরু করি, প্রত্যেকটি রঙকে কাটাছেঁড়া করে তার অন্তর্নিহিত রঙের  অনুসন্ধান করি, তাহলে খুব হতাশ হয়ে দেখব, রঙের অন্তরমহলে কোনো রঙই নেই, যা আছে তা হলো বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ ও কম্পাঙ্ক। সেইসব তরঙ্গ যখন কোনো বস্তুর ওপর পতিত হয়, তখন সেই বস্তু তার নিজস্ব গুণ ও ধর্মে সেই তরঙ্গগুলোকে শোষণ করে নেয়, আর যে তরঙ্গকে শোষণ করতে পারে না, তা প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে পড়ে এবং আমরা সেই তরঙ্গদৈর্ঘের রঙ প্রত্যক্ষ করি। আবার কোনো বস্তু যখন সব তরঙ্গদৈর্ঘকেই শোষণ করে নেয়, কোনো তরঙ্গদৈর্ঘকে প্রতিফলিত করে না, তখন সেই বস্তুকে আমরা প্রত্যক্ষ করি কালো বর্ণ রূপে, আসলে কালো কোনো রঙই নয়।

আর বিজ্ঞানের এইসব সূত্র ও নিয়মকানুনকে যখন আমরা প্রয়োগ করি আমাদের জীবন ও যাপনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, যেমন ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং তারই সূত্র ধরে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা, ধর্ম, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ইত্যাদি জীবনের প্রতিটি স্তরে ও চিন্তাভাবনায়, তখন সেখানেও আমরা মুখোমুখি হই অসংখ্য রঙের আর তারই ছত্রছায়ায় জন্ম নেওয়া রঙবাজির। সমাজশিক্ষা পাঠ করে আমরা জেনেছি, মানুষ সামাজিক জীব, কেননা  মানুষ সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করে। তবে যেহেতু বিশ্ব অনেক বড় ও প্রসারিত, তাই বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ও স্থানে বিকশিত হয়ে ওঠা সমাজের রূপ ও রঙ অর্থাৎ চরিত্র কখনই এক হতে পারে না। একই বিশ্বে অসংখ্য সমাজের তাই চারিত্রিক রঙ আলাদা আলাদা। বিশেষত সভ্যতার বিকাশ সারা বিশ্বে একই সময়ে একই রকমভাবে হয়নি, তাই সেইসব সমাজের গঠন হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে। আর সেই প্রত্যেক সমাজের প্রেক্ষিতেই তার অর্থনীতি, রাজনীতি, জীবনযাপন, ব্যক্তিচরিত্র, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতির রঙ আলাদা আলাদা। কারও সঙ্গে কারও মিল খুঁজে পাওয়া যায়   না। আবার একথাও উল্লেখ করতে হয় যে, মানুষ সমাজবদ্ধ জীব হলেও তার আইডেনটিটি শুধুমাত্র সেই সমাজের পরিপ্রেক্ষিতেই নির্ধারণ করা যায় না, বরং তার আইডেন্টিটি নির্ধারিত হয় তার নিজস্ব অর্জিত শিক্ষা, চিন্তাভাবনা, বিজ্ঞানমনস্কতা, সংস্কৃতিমনস্কতা এবং আরও আরও অনেক উপাদান ও সংসাধনের ওপর। আর তাই প্রতিটি মানুষ ভিন্ন, তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ভিন্ন, তার মনের রঙ ভিন্ন। আবার মনের এই ভিন্নতাই সৃষ্টি করে বৈচিত্র্য, বহুরৈখিকতা।

‘কালিমাটি’ পত্রিকার ১১০তম সংখ্যার আলোচ্য বিষয় বেছে নেওয়া হয়েছে ‘রঙ ও রঙবাজি’। ২০২৪ কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে। আমার জানা নেই, এই  নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে বিশ্বসাহিত্যে ইতিপূর্বে আরও কী কী কাজ হয়েছে। পাঠক-পাঠিকার অবগত থাকলে অবশ্যই আমাদের তা জানাবেন, আমরা সমৃদ্ধ হব। আমরা এই সংখ্যায় লেখার জন্য যাঁদের অনুরোধ করেছি, তাঁরা প্রত্যেকেই বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং লেখা পাঠিয়ে সহযোগিতা করেছেন। বিভিন্ন চিন্তাভাবনা ও দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং তাঁদের অভিজ্ঞতায় জারিত করে এই সংখ্যাটিকে সমৃদ্ধ করেছেন। তবে সম্পাদক হিসেবে একটা কথা আমাকে স্বীকার করতেই হয়, এবার এবং ইতিপূর্বে যেসব নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে ‘কালিমাটি’ পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশ করেছি, তা সেই সেই বিষয়ে কাজের সূত্রপাত মাত্র করতে পেরেছি। আরও বিশদভাবে কাজ করার প্রচুর সুযোগ ও অবসর আছে। বর্তমান ও পরবর্তী প্রজন্ম এইসব অসম্পূর্ণ কাজকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন, তবেই তা সামগ্রিকভাবে বিশ্বসাহিত্য ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করবে।

আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা :

kajalsen1952@gmail.com / kalimationline100@gmail.com                

দূরভাষ যোগাযোগ : 9835544675

অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ : Kajal Sen, Flat 301, Phase 2, Parvati Condominium, 50 Pramathanagar Main Road, Pramathanagar, Jamshedpur 831002, Jharkhand, India.

 



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন