বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৩

জরিনা আখতার

 

কবিতার কালিমাটি ১৩৪


ভোর ও রোদের গাথা

 

রৌদ্র বলেছে — একখণ্ড ভূমি পাবে তুমি

নদীগর্ভ থেকে একখানি সুবর্ণ সবুজ চর

জেগে উঠবে তোমার নামে।

আমার সৌহার্দ্য সোহাগ পেলে পলিময় হবে মাটি

তোমার শস্য বাড়বে — বলেছে রোদ।

সূর্যের পরিক্রমায় প্রতিদিন আসবো আমি

তোমাকে জাগাবো—

ফুলের সুগন্ধ দেবো, পাখিদের শিস দেবো উপহার

বলেছে ভোর।

তোমার হৃত সম্পদ আমরা ফিরিয়ে দেবো,

তুমি কি জানো না, ভোর ও রোদ কখনো প্রতারণা করে না;

আমরা তোমার আজীবন বরাভয়

বলেছে ভোর ও রোদ।

 

জৈব স্বভাবে

 

বালুরও যৌবন আছে, বেদনা আছে

ভেজা চুল আর পালকের কাছে উদ্বেল ওষ্ঠ তার;

কঠিন কণিকা ফুঁড়ে বালুর শব্দলতা বেড়ে ওঠে হাওয়ার পেশিতে।

জ্যোৎস্নাস্নাত নদী, কলমির জলজ সৌরভে উন্মন পারাপার

ছিপছিপে রাত্রি মেয়ে বালুর গল্প শোনে নির্জন মোহনায় —

শিশিরের কোলে মাথা রেখে বালুও ঘুমাতে চায়।  

 

কখন জমেছে মেঘ বালুর স্বভাবে,

জলভারে আপ্লুত হৃদয়ের স্পন্দনে

সচকিত বালুর শরীর;

জৈব স্বভাবে ওঠে ঝড়,

তছনছ হয়ে যায় রুদ্ধ বিরহ

স্রোতে ভাসে জীবনের চৌকাঠ;

ধ্যান ভেঙে স্রোতের উচ্ছ্বাসে বালুও বেরিয়ে আসে

দিগন্তের গলুইয়ে বসে বয়ে চলে,

জলের প্রতিবিম্বে জ্বলে ওঠে উত্থান-বেলাভূমি।

বালুরও ধমনি আছে, রক্তে বাজে কামনার অভিষেক,

যৌবন জড়ানো শাড়ি খুলে গেল ধীরে ধীরে

হরিৎ পলির বুকে অবনত হলো তৃষ্ণার্ত বালুর শরীর।

 

গন্তব্য

 

গন্তব্য কোথায় আজ কেউ যেন ডেকেছিল, যাই

উদ্বেল প্রতিজ্ঞা রেখে ডেকেছিল সুদূর সানাই।  

ভুল যদি হয় হোক ফুরাক মায়াবী ঘোরে বেলা

গন্তব্য সন্ধান ভুলে হৃদয়ের প্রদোষের খেলা

যেখানে হিল্লোল তোলে, কাঁপে ভ্রূণ তমসার গাছে

পূর্ণিমার স্বাদ পেতে; সব ভুলে যাই তার কাছে।

বাঁশিতে তুমুল ঝড় ভোরের পাখির শুনে রব

লাজ ভয় ভোলে মন; দুকাঁধের দধি ভাড় সব

অশেষ পারানি নাও, পাটনি দিলাম কুলমান

এপারে কলঙ্ক-রাত ওপারে আলোর অভিযান।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন