কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২৪ |
সুখ
অটো থেকে নেমে হাঁফ
ছাড়লো অরুণা। নিজের জায়গা, নিজের বাড়ি বলে কথা। অন্য যে কোন বাড়িতে যত্নআত্তির যে
অভাব হয়, তা নয়। তবু, তবু নিজের বাড়িঘর, বিছানা - এর একটা আলাদা তাপ থাকেই। বাড়ির
গলিতে ঢুকেই মনে মনে গুনলো, সাতদিন। ঠিক সাতদিন বাড়ি ছাড়া সে। অথচ এখন মনে হচ্ছে, যেন কত্তো দিন।
একটু পা চালিয়ে হাঁটার
চেষ্টা করলো অরুণা। যেন কিসের তাড়া। ভারী শরীর। তার উপর হাঁটুর ব্যথা। আজকাল বেশ
থপথপিয়েই হাঁটে সে। হাতে ছোট ব্যাগ ছাড়া আর কিছু নেই, তবু।
একটা সাইকেল আসছে। বিনোদ
না! সাইকেল চালিয়ে পাশ দিয়ে বেড়িয়ে গেল দ্রুত। উঠতে বসতে যে ছেলেটা কাকিমা কাকিমা
করে, সে কীভাবে এমন চলে গেল! যেন অরুণাকে দেখেও দেখলো না। দাঁড়িয়ে খানিক অবাক হয়ে পিছন ফিরে তাকালো। হ্যাঁ, বিনোদই
তো! মেজাজটা গেল খিঁচড়ে। কিম্বা অরুণারই হয়ত ভুল। হয়ত বিনোদ অন্যমনস্ক ছিল!
এই সব ভাবতে ভাবতেই
অরুণা নিজের দোরগোড়ায়। গেট খুলেই মাথাটা আবার গরম হয়ে গেল। এ ক’দিনেই কী ছি্রি
হয়েছে বাড়িটার! গেটের দুপাশে আগাছা। বেলি, জবার পাতাগুলো কেমন হলুদ হয়ে উঠেছে। এরা কি জলটল দেয়নি কিছু! যা হয়। বামুন
গেল ঘর, তো লাঙল তুলে ধর। ওই তো বারান্দার কোণে বুড়ো দিব্যি বসে আছেন বেতের
চেয়ারখানায়। সামনের টেবিলে থালাবাটিতে খাবার। উনি সকালের পেপারে তন্ময়। আহা! কী
সুখেই যে আছেন! আমি বাড়িতে না থাকলেই যেন...
অরুণার উপস্থিতিটুকুও কি
টের পেলেন না ভদ্রলোক! অবাক হয়ে যায়। সদর দরজা হাট করে খোলা। নিস্তব্ধ ঘরদুয়ার। ঝুম, কাবেরী, রাহুল,
বৌয়েরা কোথায় সব! পায়ে পায়ে তেরছা চোখে দ্যাখে, বড় বৌ গ্যাসের সামনে। ছেলের খাবার
করছে বোধহয়। কেউ কি বুঝতে পারছে না, শুনতে পাচ্ছে না ওর আসা! অরুণা তো কালকে ফোনেই
জানিয়েছিল! তবে! কোন অপেক্ষা নেই তার জন্য! ভারী পায়ে নিজের ঘরের দিকে এগোয়।
ছোট বৌয়ের ঘরে কয়েকটা
বড়ো কার্ডবোর্ডের বাক্স। দেখে তো নতুনই মনে হচ্ছে। ঝুড়িতে বেশ কিছু ফল, মিষ্টির
প্যাকেট। কী ব্যাপার! অরুণা ঠাওর করতে পারে না। ছানাপোনাগুলো কি দেখেও দেখছে না
তাকে!
গলা ধরে আসে অভিমানে।
মাত্র সাতদিন সে বাইরে। যাওয়া তো হয় না কোথাও এ পোড়া সংসার ফেলে। এবার জোর করেই
প্রায় গিয়েছিল সে। বোনের বাড়ি। ওর শরীরটা ভালো নেই। এতেই এতো!
ঘরে পা দেওয়া মাত্রই দুম
করে বেলুন ফাটার শব্দ। অরুণার মাথার উপরে ঝরে পড়লো একরাশ লাল গোলাপের পাপড়ি।
তা হলে...! অরুণার হাত
থেকে মাটিতে পড়ে যায় ব্যাগটা। আজ ১লা ফাল্গুন!
সব ক’টা একসঙ্গে এসে
দাঁড়িয়েছে দরজার সামনে। হাততালি দিচ্ছে সবাই, এমন কি বুড়োটাও...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন