কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২৪ |
স্মার্টওয়াচ
এই কিছুদিন আগেকার কথা। দাদুর জন্মদিন।
ভাবলাম দাদুকে একটা স্মার্টওয়াচ দেব। আসলে আজকালকার যুগে এতো কিছু বেরিয়েছে, দাদু সেসব
কিছুই জানে না। মায়ের কাছ থেকে কিছু টাকা জোগাড় করে দাদুর জন্য স্মার্টওয়াচটা কিনেই
ফেললাম। জন্মদিনের দিন দাদুকে যখন ঘড়িটা খুলে দিলাম, দাদু বুঝতেই পারেনি ওটা ঘড়ি। কীকরে
বুঝবে! ঘুড়িতে তো কোনও কাঁটা নেই। আমায় বলল, এটা কী? আমি বললাম, এতে শুধু সময়ই নয়,
দিনে কতো পা হাঁটছ, কতোবার শ্বাস নিচ্ছ, সবকিছুই দেখা যায়। শুনে দাদু বলল, "এই
ঘড়ি দিয়ে আমার পুরনো পাড়ার বন্ধুদের ফিরে পাওয়া যাবে?" দাদুর শোনানো গল্পে ওই
বন্ধুদের কথা অনেক শুনেছি। কেউ গাইত, কেউ ছবি আঁকত, সবাই পাড়ার সরু গলিটার সামনে বসে
ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প করত। কখনও কখনও গলির ভিতরেই ইঁট পেতে ক্রিকেট ফুটবল খেলা হতো।
মাঝেমাঝে পাড়ার ক্লাব সেক্রেটারি বিমানদা একটা ছোট ট্রফি নিয়ে আসত। ব্যাস। শুরু হয়ে
যেত টুর্নামেন্ট।
দাদুকে বললাম, স্মার্টওয়াচে সবকিছু
করা গেলেও পুরনো বন্ধুদের ফিরে পাওয়া যায় কিনা, জানি না তো!
জেনে বলছি।
আমার দাদু মাঝেমাঝেই আমার দেওয়া ঘড়িটা পড়ত। মনে হল দাদুর ঘড়িটা পছন্দ হয়েছে। কিছুদিন পর দাদু আমাকে ডেকে বলল, জানিস, কাল রতনের সঙ্গে দেখা হল।
আমি কিছুক্ষণ ভেবে বললাম, রতন কি
তোমার সেই বন্ধু, যে ভালো গান গাইতো? দাদু বলল, একদম ঠিক। তোর মনে আছে, আমি বলেছিলাম?
আমি বললাম, আর বাকিরা, দাদু?
দাদু একটু মনখারাপ করে বলল, সুনীল
হাসপাতালে, আর রাজেন চলে গেছে। এখন শুধু আমি আর রতন রয়ে গেছি।
আমি বললাম, ঈশ। আমারও খুব মনখারাপ
লাগছে। কিন্তু একটা কথা বলো, পুরনো পাড়ার গলির মুখে তোমার পুরনো বন্ধু রতনকে তুমি কী
ওই স্মার্টওয়াচটা দিয়েই খুঁজে পেলে?
দাদু বলল, না রে! আমরা তো বুড়ো!
তোদের ওসব স্মার্টওয়াচ কিছুই বুঝি না। কিন্তু পুরনো বন্ধু ফিরে পেতে আমাদের মনের ভিতর জোরালো কানেকশনটা বোধহয় এখনও রয়ে
গেছে। বুঝলি?
Excellent
উত্তরমুছুনSujit Maulik, Pune. I liked it. Excellent.
উত্তরমুছুনK
উত্তরমুছুনমন্ত্রমুগ্ধ। রঞ্জন আঙ্কল।
উত্তরমুছুন