মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৩

অর্ক চট্টোপাধ্যায়

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২৩


হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মৃত্যু

একটা হ্যান্ড স্যানিটাইজারের জন্য কি আর ফিরে যাওয়া যায়? ফেলে এসেছি তো এসেছি! টুকরো চিহ্ন। স্মৃতির মত হয়ে থাকবে! তার জন্য কি বম্বের জ্যাম উজিয়ে আবার ফেরত যাওয়া সম্ভব? তাছাড়া যখন গেলাম ওঁর বাড়ি, বৃদ্ধ মানুষটা নিজেই বললেন, 'এই এলে, এবার চিনে গেলে, এরপর আসলে দেখা করে যেও!' আমিও বললাম, 'হ্যাঁ হয়ত বম্বে আসা যাওয়া হবে আগামী কয়েক বছরে। কিছু খুচরো কাজও রয়েছে।' কিন্তু তা আর হয়নি। যেমনটা হয় আর কী! খুচরো স্মৃতির মত ডেটলের স্যানিটাইজার রয়ে গেছে সদ্য  মৃতের বাসায়, গল্পের প্রলোভন হয়ে!

আজকাল তো আর হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বিশেষ প্রয়োজন হয় না! বাল্যবন্ধু যে করোনার সময় স্যানিটাইজারের ব্যবসা শুরু করেছিল, কে জানে এখন সে কেমন আছে? ডেটলের ছোট্ট হ্যান্ড স্যানিটাইজারটাই বা কেমন আছে বসার ঘরের টেবিলের ওপর, যেখানে ফেলে এসেছিলাম প্রায় একবছর  আগে? সেটা কি এখনো সেখানেই আছে? কেউ কি ব্যবহার করেছে, নাকি ফেলে দিয়েছে, কিম্বা ব্যবহারে ফুরিয়ে গেছে মনুষ্যজীবনের মতো? যদি সে কোন অবাস্তব কারণে থেকে  গিয়ে থাকে টেবিলের ওপর, তবে কি ঐ স্যানিটাইজার আমার হয়ে দেখে নিয়েছে মানুষটির শেষযাত্রা? জানি না মৃত্যুর পর হাসপাতাল থেকে ওঁকে বাড়ি আনা হয়েছিল কিনা। মৃত্যু সংবাদের পর আর ফোন করিনি। কে ধরবেন কে জানে? অস্বস্তি হবে হয়ত।

এখন মনে হয় সেদিন কি ইচ্ছে করেই ফেলে এসেছিলাম হ্যান্ড স্যানিটাইজার? স্মৃতির ইচ্ছা আর অনিচ্ছাপতনের ভিতরকার ব্যবধান তেমন মজবুত নয়! কে জানে, হয়ত চাইছিলাম ওঁর বাড়িতে থাক কিছু একটা যা নিয়ে হয়ত আগামী কোন গল্প লিখবেন? উনি অগ্রজ লেখক। অনুজ লেখকের সামগ্রী নিয়ে রচিত হবে কোন আখ্যান বা অন্যাখ্যান। এখন দেখছি উল্টোটাই হল। আমিই লিখছি হ্যান্ড স্যানিটাইজারের গপ্প।

ঝাপসা দেখছি প্লাস্টিকের ভেতর থেকে। ছোট্ট চোখ, তার ওপর তরলতার ঠুলি। যাকে এক বছর ঘোরাফেরা করতে দেখলাম এই বসার ঘরে, এই প্রথম তাকে শোয়া অবস্থায় দেখছি। বসার ঘরে শোয়া। অন্যরা এনে  শুইয়ে দিয়েছে মেঝেতে। বন্ধ চোখে আর দেখবার নেই কিছু। বন্ধ হাত লিখবে না  আর। দেখনজীবন আর লিখনজীবন শেষ হয়েছে। আর পূর্ণবিরামের এই মুহূর্তে তুচ্ছ অথচ আত্মরসে টইটুম্বুর আমি খালি ভাবছি: 'কে লিখবে আমাকে নিয়ে একটা গল্প?'

(উৎসর্গ: মলয় রায়চৌধুরী)


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন