মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৩

বিমান মৈত্র

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২৩


সম্পর্কের চোরাবালি

মুন্ডুকাটা পশুর মত ছটপট করছিল পুরন্দর। পুঞ্জাক্ষি মশারি তাকে দেখতে পাচ্ছে কিনা তার চেয়েও বড় কথা একজোড়া স্নিগ্ধ চক্ষু এবং জ্যোৎস্নাময় তাকানো; একাধারে  চতুর ঊর্ণনাভ এবং অনুসন্ধিৎসু। ও আজও বুঝতে পারে না কেন এমন হয়েছিল। যেমন ভিতরে ভিতরে বিতর্কিত সম্পর্কের মধ্যে ঘটে যাওয়া এক নিঃশব্দ গোপন বিপ্লব। ক্রমশঃ ভেসে আসছিল তার ফেলে আসা প্রান্তিক কক্ষের ইউটোপিয়ান গলিঘুঁজির সাপলুডু, ফ্যালোপিয়ান সরণি, নিষিক্তিকরণের স্বয়ম্বর সভা, যেন বুঝতেই পেরেছিল লক্ষকোটি রাজপুত্রের মধ্যে সেও এক অব্যর্থলক্ষ্য অর্জুন। তারপর ১০৩৬৮০০০ সেকেন্ড ধরে জৈববিপ্লব। ল্যান্ডিং কুন্দপুর জেনারেল হাসপাতালের এক মেটার্নিটি বেডে।

পুরন্দর বুঝতে পারে কেন তার রিসাইকেল বিনস্ নিয়ত ভারি হচ্ছিল এতোদিন। কোন কিছুই সম্পুর্ণ ডিলিট হয় না। এ এক সাময়িক অনুপস্থিতি। স্মৃতিভ্রংশতা। পৌষের মধ্যরাতে ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে যাচ্ছে তাকে। যেন খানিকটা গলানো লাভা এবার জমতে শুরু করেছে। মনের অনেক কথাই মনের অগোচরে থাকে। যতটুকু মনে পড়ছে তাকে একটা দুর্বোধ্য কোলাজ মনে হয়। একটা সুতোকাটা ঘুড়ি, কতগুলো উন্মাদ ঘোড়া। আর পুরন্দর  তলিয়ে যাচ্ছে সমুদ্রের নিচে, প্রকান্ড এক তিমির হাঁ-মুখ তাকে তাড়া করেছে। তারপর অস্পষ্ট একটা গন্ধ যা তার প্রত্যেক কোষে কোষে এখনও জমা আছে, থেকে যাবে চিরকাল, এটা তার অজানা নয়, আর  তাঁর মা মেঝেতে, উবু হয়ে ঝুঁকে, পাশে নোংরা জলের বালতি হাতে ঘরমুছুনি মাঝে মাঝে নিংড়ে নিচ্ছে জল, পুরন্দর তাকিয়ে থাকে একদৃষ্টে; এইরকম কয়েকটা পেপারকাটিং দিয়ে তৈরি কোলাজটি। ওকে দেখে উঠে আসে ওর মা, মলিন আটপৌরে আঁচল দিয়ে হাত মুছতে মুছতে, কি রে বাবা ডাকছিস কেন, আমার পাঁজা ভরা বাসন, রান্নার জোগাড়, তোর বাবার অফিসের তাড়া, আমার কি তোর কাছে বসার সময় আছে?

না, আমি শুনবো না। বসতেই হবে। একটু বসো। প্রায় চেঁচিয়ে উঠলো পুরন্দর।

এড়ায়নি মন্দাকিনীর চোখ; এড়ায়নি সিক্তবসন পুরন্দরের কাঁপতে থাকা শরীরের বিহ্বল বিভঙ্গ। গভীর রাতে মন্দাকিনী মশারি তুলে যুবককে শুইয়ে দেয়। ঘুমো বাবা... ডুকরে কেঁদে উঠল পুরন্দর।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন