কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২৩ |
আমার বিদগ্ধ প্রেমিক
আমার বিদগ্ধ প্রেমিক ‘বই পড়িতে পড়িতে ঘুমাইয়া পড়া’ জাতীয় অভ্যাসকে কঠিনভাবে ঘৃণা করে জানা ছিল না বলিয়া গতরাতের কথা অকপটে বলিয়া ফেলি। আমার উদ্দেশ্য ছিল ঘুমাইয়া পড়িবার পর তাহাকে লইয়া যে মধুর স্বপ্নখানি দেখিয়াছি তাহা পল্লবিত করিয়া বলা। উহা বলিবার জন্য বই পড়িতে পড়িতে ঘুমাইয়া পড়ার কাহিনি বিস্তার জরুরি ছিল না। কতভাবেই ঘুরাইয়া বলা যাইতে পারিত। অথচ বলিয়া ফেলিয়া এমন ফাঁপড়ে পড়িলাম যে স্বপ্ন পেটের ভিতর গুড়গুড় করিতে লাগিল।
আমার বিদগ্ধ প্রেমিকের বদ্ধমুল
ধারণা সুন্দরীদের ‘আপার চেম্বার’ খালি হয়। সুন্দরী হিসাবে আমার কিঞ্চিত কুখ্যাতি আছে
বিধায় তুচ্ছতাচ্ছিল্য, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ চলিতেই থাকে। আমার বাংলা কথাও তাহাকে নাকি কষ্ট
করিয়া বুঝিতে হয়। এমনই ‘আজিব’ আমার ভাষাগত জ্ঞান! আমার কথাবার্তা তাহার ভাষায় রসগোল্লার
মতো। না না রসালো বা মিষ্ট নহে, কেবলি গোল গোল।
আমার বিদগ্ধ প্রেমিককে সংশয়ী বলিলে
নিশ্চিতভাবে ত্রুটি ঘটিবে। বিদগ্ধ কী করিয়া সংশয়ী হয়! ব্রাহ্মণ কী চণ্ডাল হইতে পারে!
এ তো রীতিমতো ‘হাসজারু কিসিমের’ বিষয় হইয়া দাঁড়ায়!
কথা সত্য এবং এক্ষণে আপনারা নিশ্চিতভাবে
আমার ভুলভাল ভাষা প্রয়োগ সম্পর্কে তাহার উক্তির প্রতি সমর্থন জানাইতেছেন। তবে বলি,
আমার সারল্য তিনি কখনোই বিশ্বাস করেন না। কোন কূটাভাস ধরিতে না পারিলে এমন এক হাসি
দেন যেন আমি অভিনয় করিতেছি। আর বিষাক্তভাবে বলেন ‘তুমুল সব ঘোড়েলদের সংগে লীন থাকিয়াও
আমি রাজহংসীর মতো গা ঝাড়া দিয়া ময়লা ফেলিয়া পবিত্রতার ভান করি আর এমন সারল্য দেখাই
যেন এক পাঁতিহাস, আকাশের দিকে একবার চাহিয়া মুখ নামাইলেই সব ভুলিয়া আবার সরল-সাদাসিধা
হইয়া যাই।’
বান্ধবগণ চোখ কপালে তুলিয়া ‘আশা
করি এমত প্রেমিক বিদায় হইয়াছে’ ভাব ঠোঁটে ঝুলাইয়া চাহিয়া থাকিলে আমি হাসিয়া বলি, কিছুই
নিশ্চিতভাবে বুঝিতে পারি না। কখনও মনে হয় বিদায় দিয়াছি, কখনও মনে হয় প্রেম জারি আছে।
জগৎ আসলে বড়োই রহস্যময়। তাহাতে কুঞ্চিত ভুরুতে দাগ ফেলিয়া কুটিল ওষ্ঠ বেঁকাইয়া তাহারা
‘কেমনে কী’ ভাব দেখাইয়া বলেন, আমার ভিমরতি হইয়াছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন