মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৩

মৌসুমী মুখোপাধ্যায়

 

ধারাবাহিক উপন্যাস   

 

দিগন্তসেনা

 


(১৭)  

দুজনেই বলে উঠল, ‘সব ঠেকা কি আমরা নিয়ে বসে আছি? আর লোকগুলো কী করছে?’ কিছুক্ষণ পর শুভেচ্ছা ঘরে ঢুকল। বাড়িতেই ছিল। তাই একটা হাফ প্যান্ট আর সরু ফিতেওলা গেঞ্জি পরে আছে। সবটা শোনার পর ও বলল, ‘আমিও বাবা ওদের দলে। আগে আমি ভালো থাকি। তবে তো অন্যকে ভালো রাখব’। শ্যামাঙ্গীর চোখ আগেই কপালে ও মাথায় ধাপে ধাপে উঠেছিল। তাই এখন আর কোথাও ওঠবার জায়গা ছিল না বলে চোখটা নিচে নেমে মেঝে দেখতে লাগল। হঠাৎ একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে প্রশ্ন  করল শ্যামাঙ্গী, ‘মম, এইসব পোষাক পরে তুই ঘুরে বেড়াচ্ছিস কেন?’ এবার অন্যদের চোখ ছানাবড়া। শুভেচ্ছা বলল,’কেন? কী হয়েছে? তুমি কি আজ নতুন দেখলে? আমি তো এরকমই পরি!’ শকুন্তলা বলল, ‘আমিও এরকমই পরি গো ঘরে শোবার সময়’। চৈতি বলল, ‘আমি পরি না। কিন্তু আজ থেকে পরব’। শুভেচ্ছা বলল, ‘গরমে আর কী পোষাক পরব?’ শকুন্তলা বলল, ‘আমরাও মানুষ। আমাদেরও গরম লাগে’। চৈতি বলল, ‘পিপি, আমার মনে হয় তুমি প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে যাচ্ছ’। তারপর সবাই মিলে হো হো করে হেসে উঠল। শ্যামাঙ্গী গম্ভীর হয়ে ঊঠে গেল আর পেদ্রোকে বলল দ্বিধা, পিপীলকা আর মহিমাকে ডাকতে।  

অনতিবিলম্বে শকুন্তলার ছেলেমেয়েরাও তাদের পড়াশুনো শেষ করে বা না করে একে একে দিগন্তসেনায় ফিরে এল। মেয়েরা এসেই হিসেবচরিত্রচিত্তির দলে নিজেদের নাম লেখাল আর সর্বপ্রকারে উঠে পড়ে লাগল দলটাকে সব জায়গায় ছড়িয়ে দিতে। ফলে মূল ভূখন্ডের সর্বত্র অচিরেই তারা তাদের অস্তিত্ব ঘোষণা করল। তবে সেখানে খুব একটা সাড়া পাওয়া গেল না। সাসা এসে শুধু দলে নাম লেখাল তাইই নয়, সে হয়ে উঠল দলের একনিষ্ঠ কর্মী।

দ্বিধা, পিপীলিকা, মহিমা এলে শ্যামাঙ্গী ওদের বোঝাবার চেষ্টা করল যে কোনো ব্যাপারেই চরমপন্থা অবলম্বন করা ঠিক কাজ না। কেননা আজ যা ঠিক কাল তা ভুল প্রমাণিত হতে পারে। তাই যা করার ঠান্ডা মাথায় ভেবে চিন্তে করা উচিত। অধিকতর কঠোরতা আসলে দূর্বলতার লক্ষণ। তাই ওদের সঙ্গে জনসংযোগ ছিন্ন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থেকে যাচ্ছে। পুরুষ মানেই খারাপ, এমন ধারণা সাংঘাতিক ভুল শুধু নয়। এ থেকে জন্ম নিতে পারে নানারকম অপরাধপ্রবণতা। তখন তা সামলানো অসম্ভব হয়ে পড়বে। ওরা উঠে পড়ে জানাল যে ওরা ওর কথা মতো দলটাকে নতুন করে সাজাবে।

মূল ভূখন্ডে অসিধারা, আনন্দময়ী, সভ্যতা, আগামী বলে চারটি মেয়ে চার জায়গায় হিসেবচরিত্রচিত্তির দলের প্রধান হিসেবে কাজ করতে শুরু করেছে। অসিধারা, যে মূলত নীলনদের বন্ধু, থাকে দক্ষিণের দিকে এক শহরতলি অঞ্চলে। প্রথমে  সেখানে মত প্রকাশের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার তাগিদ থেকে নিজের বাড়িতেই একটা মাসিক আলোচনা সভার ব্যবস্থা করে। সেখানে আশেপাশের বিভিন্ন অঞ্চলের নানা বয়সের মানুষজন আসতে ও নির্ভয়ে নিজের মত প্রকাশ করতে শুরু করে। ব্যপারটা অবিলম্বেই বেশ জমে ওঠে। আর তার ফলাফল স্বরূপ উদারপন্থী দলের লোকজনের মানসিক অস্থিরতার কারণ হয়।

ইতিমধ্যে অনেক ছেলেরাও এগিয়ে এসেছে ওদের দলের সদস্য হওয়ার ও কাজ করার জন্য। শ্যামাঙ্গীর কথা  মাথায় রেখেই দ্বিধা, পিপীলিকা, মহিমা এবার সেই দরজাটা খুলে দিতেই হিসেবচরিত্রচিত্তির দলটার সাংগঠনিক শক্তি একেবারে লাফিয়ে যেন দশগুণ বেড়ে গেল। পরিস্থিতিটা এমন দাঁড়াল যে শেষপর্যন্ত ওরা আঠেরো জন  ভাইবোন ও তাদের প্রেমিক প্রেমিকারা, ফাগুন, উল্কা, নীলনদ, তাদের স্ত্রীরা, দিগন্তসেনার মন্ত্রীসভার সদস্যদের ছেলেমেয়েরা সবাই এসে দলে যোগ দিল। ওদের মূল ঊদ্দেশ্য হল মূল ভূখন্ডে এই দলের প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়ান যাতে সামাজিক মানসিকতা ও মূল্যবোধগুলো  বদলানো যায়। কিন্তু এই ব্যাপারটা ক্রমশই মরীচিকা হয়ে দাঁড়াল যেন সকলের কাছেই।

একদিন আফসানাকে আক্রমণ করা হল। দলের বৈশিষ্টই হচ্ছে মেয়েরা একসঙ্গে দল বেধে ঘুরে বেড়ায় হৈ চৈ করে। সে দিন সামান্যের ওপর দিয়ে গেলেও পরের দিন আবার ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল। সঙ্গে থাকা অন্য মেয়েরা ছেলেদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। প্রথম প্রথম ছেলেগুলো পাত্তা না দিয়ে আরো বিরক্ত করতে মেয়েদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় অবলীলায় হাত দিতে লাগল। জামাকাপড় ধরে টানাটানি করতে শুরু করল  যেন তারা পুতুল নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। অনেকক্ষণ ধরে পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করতে করতে মেয়েগুলোর মাথা জ্বলে ঊঠল। সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের মধ্যে চোখের ইশারা দিয়ে শুরু করে দিল তাদের প্রাণপণ লড়াই। যে যাকে হাতের কাছে পেল তাকেই বেধরক পেটাল। তারপর একজনকে ধরে জামাকাপড় ছিঁড়ে দিয়ে গোপনাঙ্গে চূড়ান্ত আঘাত করল পা দিয়ে। ছেলেটি অজ্ঞান হয়ে যেতেই ওরা চলে গেল। সোজা থানা আর সংবাপত্রের অফিসে গিয়ে সমস্ত জানিয়ে বিবৃতি দিল যাতে এটা প্রচারের আলোয় আসতে পারে। ঘটনাটা প্রচারের আলোয় এল এবং গোটা দেশে চূড়ান্ত চাঞ্চল্য তৈরী করল। পুরুষদের সত্তর শতাংশ পুরুষই যে খুশি হল তাইই নয়, আগেরবার শ্রাবণ সোফিয়ার সমীক্ষা চলাকালীন যারা যারা বলেছিল যে ক্রমবর্ধমান ধর্ষণের ঘটনায় তারা তাদের পুরুষ অস্তিত্বকেই ঘৃণা করে ও হীনমন্যতায় ভোগে এবার তারা রীতিমত সোল্লাসে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে এল। সকলেই হিসেবচরিত্রচিত্তির দলের সদস্যপদের জন্য হন্যে হয়ে বিভিন্ন শাখা সংগঠনগুলোয় ভীড় করল। বেশ কিছু সংখ্যক ছেলে তো মূল সংগঠকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিজেরাই সংগঠনের অফিস খুলল। গোটা দেশে সংগঠনের  সংখ্যা দিনের অনুপাতে মাত্রাতিরিক্ত ভাবে বেড়ে গেল। মেয়েরাও বেড়িয়ে এল। যে মেয়েরা তখনও বেড়িয়ে এল না, ঘরে বসে থাকল তাদের বাবা কাকা দাদারা তাদের টেনে বের করে এনে দলের সঙ্গে যুক্ত করে দিল এবং নিলও। আট থেকে আশি বছরের সমস্ত মেয়েরা এমনভাবে দলে যুক্ত হওয়ার জন্য লাইন লাগাল যে এরই মধ্যে কেউ কেউ যারা পৌরুষের দম্ভ ধরে রাখতে আগ্রহী এখনো, সেইসব মানুষের অন্তরের ক্ষোভ যে চাপা পড়ে গেল সেটা কেউ আর খেয়াল করল না। তারা পুরুষ নির্যাতন মঞ্চ বানিয়ে রাষ্ট্রীয় অনুগ্রহ পাবার জন্য প্রাণপণ লড়াই শুরু করে দিল। আন্তর্জাতিক স্তরে হিসেবচরিত্রচিত্তির একটা কমিটি গঠন করল। ফলে সেটা আন্তর্জাতিক লড়াইয়ের চেহারা নিল। উন্নত দেশের বেশির ভাগ রাষ্ট্রনেতাই এর ভূয়সী প্রশংসা করলেও সবাইই কিন্তু এ নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো বিবৃতি দিল না।

অভিমন্যু হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনো চলাকালীন কাছাকাছিই এক জায়গায় পেয়িং গেস্ট হিসেবে এতদিন থাকত। এবার তার পাশেই নতুন একজনের সঙ্গে আলাপ হল। মেয়েটি তার চাইতে দশ বছরের বড়। মেয়েটির নাম রাধিকা অগ্নিহোত্রি। যদিও এদেশেই তার জন্ম। তবু বাবা মা বিদেশের একটা ইউনিভার্সিটিতে গবেষণা করে বলে ও মূলত বিদেশেই বড় হয়েছে। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই ও একজন অংকবিজ্ঞানী হবার স্বপ্ন দেখত বলে বড় হয়ে সে হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়েরই অংক বিভাগের প্রধান। পাশাপাশি চলে তার গবেষণা। ইউনিভারসিটিতেই অভিমন্যু তাকে প্রথম দেখে ও দেখা মাত্রই প্রেমে পড়ে। আস্তে আস্তে ও তার বাসস্থানটাও খোঁজখবর করে জানে এবং প্রায় দিনই নানা ছলছুতোয় যাওয়া শুরু করে। তাকে বারবার আসতে দেখে রাধিকা কিছু বলে না। কেননা এ ঘটনা তার জীবনে নতুন নয়। তারপর অভিমন্যু একদিন সত্যি কথাটা বলেই ফেলে যার ফলস্বরূপ সে পুরোনো জায়গা থেকে নিজের সব জিনিসপত্র নিয়ে এসে রাধিকার ফ্ল্যাটে ওঠে। ওরা লিভ ইনে থাকতে শুরু করে। দিন মাস বছর কিভাবে কেটে যায় অভিমন্যু বুঝতেই পারে না। শুধু ফাইনাল ইয়ারের ফাইনাল পরীক্ষা আসার মুখে অত্যন্ত ভালো প্রস্তুতি থাকা স্বত্বেও অভিমন্যুর মনে হয় পরীক্ষাটা যেন হঠাৎ একেবারে হুড়মুড় করে তার ব্যক্তিগত জীবনের চৌহদ্দিতে ঢুকে পড়ে জীবনটাকে লন্ডভন্ড করে দিল। কদিন ধরে রাধিকা বেরিয়ে গেলে ও দরজা জানলা বন্ধ করে কাঁদতে থাকে। তারপর একদিন সিদ্ধান্ত নেয় পরীক্ষাটা ও দেবে না।  বাড়িতেও জানিয়ে দেয় যে পর্যাপ্ত প্রস্তুতির অভাবে সে এ বছর পরীক্ষায় বসছে না।

রাধিকা কিন্তু শুনে বিষয়টা সহজে বুঝে উঠতে পারে না। কেননা অভিমন্যুর মুখেই সে শুনেছে যে ওর বাবা মা কেউ নেই। তাহলে আর কোন পিছু টান আছে যে জন্য ওকে এতটা অদৃশ্য এক কড়া শাসনের মধ্যে জীবন নির্বাহ করতে হয়। অভিমন্যু যে কথাগুলো ওকে কোনো দিনই বলে না সেগুলো হল ওর জন্য অপেক্ষায় আছে ওর আরব্ধ কাজ। এখানে পড়াশুনোর  শেষে ও সেই কাজেই ফিরে যাবে সে কথা আর আর স্বপ্নটা সে কোন শৈশব থেকেই বুনতে শুরু করে দিয়েছিল। আজও প্রতিদিন প্রতি মুহুর্তেই অবচেতনে বুনে চলে তার নানা কর্মপদ্ধতি আর পরীক্ষা নিরিক্ষার এক অনাবিল স্বপ্নজাল যা ওর স্বত্ত্বাকে পৃথিবীর যে কোনো চাওয়া পাওয়া থেকে অত্যন্ত সহজে বিচ্ছিন্ন করে রেখে এক মোহময়ী যাদুকাঠির ছোঁইয়ায় এমন টানতে থাকে যে পৃথিবীর আর সমস্ত কিছুই তার কাছে অর্থহীন হয়ে পড়ে এক অনিবার্য নিয়তি হিসেবে যেন।  তার ওপরে তাদের পারিবারিক প্রতিপত্তি ও ছত্রছায়া তার কোনো বান্ধবীর পক্ষেই বোঝা সম্ভব বলে সে মনে করেনি বলে কাউকেই সে এ বিষয়ে কিছু কখনও কিছু বলে নি। তাছাড়া অতি সম্প্রতি তার এমন একজনের সঙ্গে আলাপ হয়েছে এবং  তার কাজকর্মের দ্বারা সে এমনভাবে মোহাবিষ্ট হয়ে থাকে প্রায়শই যে আগে থেকে না জানলে তার সঙ্গেও সম্পর্কটা শেষপর্যন্ত দাঁড়াত এই রাধিকারই মতো হয়তো, যদি না সে তার দাদুর মুখ থেকেই তার নানা কাজকর্মের কথা ছোট থেকেই শুনতে শুনতে বড় হত। এমনকি দাদুর সঙ্গে তার প্রথম সাক্ষাতের দৃপ্তময় অস্তিত্বের কথাও। তাই নামের সঙ্গে ব্যক্তির প্রথম মিলে তার অন্তরে শুরু হয়েছিল এক বিয়োগান্তক করুণ কনসার্ট। কেননা সে আগেই বুঝতে পেরেছিল যে  ভেতরে  সে তার যত প্রেমেই পড়ুক না কেন, এর অন্যপ্রান্তে থাকা সেই মানবীটি কিছুতেই এই প্রেমকে স্বীকার করে নেবে না। তাই শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকা একমাত্র উপায়টাকেই সে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে নিজেকে উদ্দীপিত করার, সেটা হল তার উপস্থিতির কথা টের পেলেই বৃত্তাকার, উপবৃত্তাকার, গোলীয় এরকম সর্ববিধ পথেই তাকে ভ্রমণ করে তার উষ্ণতায় নিজেকে দীপ্তিমান করে তোলে। অথচ সারা পৃথিবীতেই এমন তো কত হচ্ছে একজন প্রতিভাধর পুরুষ তার অর্ধেক বয়সের কাউকে সঙ্গিনী হিসেবে বেছে নিয়ে বিয়ে করছ। শুধু তার বেলায়ই যে কেন এই জাগতিক নিয়মগুলো উল্টোপাল্টা যে যার ইচ্ছে মতো চলতে শুরু করে তা সে অনেক চেষ্টাতেও বুঝতে পারে না। তবে তার অন্তরের অধিষ্ঠাত্রী দেবীর উৎসারও কিছু কম বৈচিত্রময়  নয়। কেননা ‘ধর্ষণ’কে ঘিরে একটা মানুষের এই অস্তিত্ব গোটা পৃথিবীকে কিভাবে যে এককাট্টা করে ফেলেছে সেটা যদি অভিমন্যু নিজে চোখে না দেখত তাহলে তারও তো অবিশ্বাসই ঠেকত।

কথাটা অভিমন্যু রাধিকাকে বলবে ভাবল। কিন্তু বলতে গিয়ে সে উপলব্ধি করল তার অন্তরের মধ্যে ঘনায়মান দ্বৈরথ যুদ্ধ যার তান্ডবে সে ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতে যেতে আর অপসৃয়মান আত্মাকে খুঁজতে সে কয়েকদিন রাধিকাকে একা যাপন করতে সে নানা কৌশলে একপ্রকার বাধ্যই করে বলা চলে। এর ফলে রাধিকা অভিমন্যুর মধ্যে আবিস্কার করে ফেলে এক চির বিরহী যক্ষকে যে সত্যি সত্যিই এ পৃথিবীতে তার প্রেয়সীর কোনোদিন নাগাল পাবে না। কিন্তু তবু হাজার চেষ্টা করেও সে বেচারা কোনো দিন কখনো তাদের বর্তমানে এমনকি ভবিষ্যতেও জানতে পারবে না যে তার নাম শ্যামাঙ্গী।

চ্যাটার্জী পরিবারের রক্তই হল স্বাধীনতাপ্রিয় জমিদারী রক্ত। সেই পরিবারের জমিদার প্রতাপনন্দন যিনি তার সাদা ঘোড়ায় ধুলো উড়িয়ে রাস্তা দিয়ে যখন যেতেন তখন প্রজাসাধারনের মনে হোতো পথের ওপর দিয়ে অন্য কেউ বা স্বয়ং ঈশ্বর যাচ্ছেন। আর তিনি যখন শুনেছিলেন যে তার আত্মীয়রা তার বিরুদ্ধে এক জোট হয়েছিল সম্পত্তির লালসায় আর মাথার দাম ধার্য করেছিল, তখন শোনা মাত্র তার ধবধবে সাদা ঘোড়াটি শত্রুবেষ্টনী ভেদ করে জলের ওপর থেকে তটভূমিতে এমন একখানা লম্বা ঝাঁপ দিয়েছিল আর সঙ্গে পিঠের ওপরে বসে থাকা প্রতাপনদনের ছড়িও এমন দ্রুতিতে ঘুরেছিল যে সেই ঘুর্ণনক্রিয়ার ফলে আত্মীয় বর্গের শত্রুবাহিনী চোখের পলক পড়তে না পড়তেই দেখতে পেয়েছিল তার অবস্থানের পরিবর্তন। শ্যামাঙ্গী সেই রক্তেরই উত্তরাধিকারী। তাই তার রক্তে এক একটা ধর্ষণের ঘটনা শুনে যে দামামা বেজে ওঠে, সেটা অন্য বেশির ভাগ মেয়েদের ক্ষেত্রেই ঘটে না। তবু দেশ বা দশে যে সে রক্ত একেবারেই বিরল তাও নয়। তার পাশে তাই এসে দাঁড়ায় আরো আরো ছেলেমেয়েদের, আরো আরো নারীপুরুষের দল। কয়েকটা প্রজন্ম না গেলে এ লড়াইটা জিতে ওঠা কোনো ভাবেই সম্ভব নয়।

 শ্যামাঙ্গীর সত্যিকারের ঠিকঠাক উত্তরাধিকারী আসলে কিন্তু তার ভাইয়ের নাতনি, শকুন্তলার মেয়ে ইলোরা হয়ে দাঁড়ায়।  কেননা শ্যামাঙ্গীর মতো ঘোড়ায় চড়ার দক্ষতা সে ইতিমধ্যেই আয়ত্ব করে ফেলেছে। সেটাকে সে তার দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ করে গড়ে তুলেছে তাইই নয়। বিবাহের জন্য নিজেকে বলিপ্রদত্ত না করে ইতিমধ্যেই সে যৌথ জীবন যাপন করছে অজন্তা চিতারিস্তি বলে একটি মেয়ের সঙ্গে। মায়ের মতো একজন বিজ্ঞানীর সঙ্গে সহবাস করে নিজেকে সে অন্তস্বাত্ত্বাও করে তুলেছে ইতিমধ্যেই যার ফলে আসবে সেই সন্তান যার নাম রাখবে সে আরাধ্যা – সেটাও আগেভাগেই ঠিক করে রেখে মূল ভূখন্ডের নবদিগন্তউন্মোচন দলের একজন একনিষ্ঠ কর্মী হয়ে উঠেছে সে। প্রখর বিচক্ষণ আর দূরদর্শী ওই মেয়ে আগামী চল্লিশ পঞ্চাশ বছরের সমাজ প্রবাহমানতার ধারা এখনই যে শুধু নির্ণয় করে বলে দিতে পারে তাইই নয়, সেই অনুযায়ী সে তার সিদ্ধান্তও নিতে থাকে। অথচ আদতে মার মতো সে একেবারেই নয়। বরং শ্যামাঙ্গীর মতো প্রখর সংযমী। অজন্তার বদলে অন্য কোনো সঙ্গীকে সে বিছানায় একেবারেই পছন্দ করে না। সন্তান জন্ম দেবার ক্ষেত্রে আগে তার পিতাকে, তার মেধা, মনন, বুদ্ধি ও স্থৈর্য্যকে যাচাই করে তবেই তাকে ব্যবহার করে। নচেৎ কোনোভাবেই নয়। আট  মাস অষ্ট আশি দিনের মাথায় ঊষাকালে একটি শিশুর কান্না শোনা গেল এবং সে তার আরাধ্যা আরাধ্যাই।

দুদিন পরে শ্যামাঙ্গী যখন তাকে হাসপাতালে দেখতে গেল, তখন সে বলল,’ ব্যপারটা আসলে নেহাতই প্রাকৃতিক নির্বাচনের একটা উদাহরণ মাত্র, বুঝলে কর্ণেল।‘ শ্যামাঙ্গী বলল,’বুঝলাম। তাহলে মাননীয়া মহাশয়া, আপনি আগামী ক’দিনের মাথায় আপনার সেনাবাহিনীতে যোগদান করতে পারবেন বলে মনে করছেন?’ তখন সে তড়াক করে উঠে বসে বলল,’কেন? যুদ্ধ লাগল নাকি?’ শ্যামাঙ্গী ততধিক ধীরে বলল,’ধীরে। ধীরে ধীরে।‘ সেখান থেকে বেড়িয়ে শ্যামাঙ্গী মন্ত্রীসভার মিটিঙে গেল। সমস্ত মন্ত্রীদের নিয়ে দিগন্তসেনার ভবিষ্যৎ গতিবিধি নির্ধারণ করার সময় তার সহকারী পেদ্রো গুয়েররেস ও অন্যান্য অফিসাররা হৈ হৈ করে সেখানে হাজির হয়ে জানাল একটি সন্ত্রাসবাদী জোট দিগন্তসেনাকে হুমকি দিয়েছে।

কথাটা শোনামাত্র সকলেই দূরদর্শন আর কিছু লোক বেতারের ধারাভাষ্য শোনার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। চিঠিতে দেখা গেল দিগন্তসেনার দূরদর্শন ভবনে পাঠানো হয়েছে একটি হুমকির চিঠি যাতে বলা হয়েছে দিগন্তসেনা যদি অবিলম্বে ধর্ষকদের শাস্তি হিসেবে খোজা করে দেওয়ার পদ্ধতি বাতিল না করে তাহলে তাদের জন্য সামনে অপেক্ষা করছে অনিবার্য এক যুদ্ধ। এর জন্য তারা সময় ঘোষণা করেছে মাত্র একচল্লিশ সপ্তাহ। দিগন্তসেনার গোয়েন্দা দপ্তর চিঠিটার আদ্যপ্রান্ত ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে পরীক্ষা করে জানাল, এটি একাধিক জঙ্গী ধর্মীয় সংগঠন গুলোর একটি জোট যারা তাদের নিজেদের অস্তিত্বের সমর্থনে একটি করে জীবের ছবির চিহ্ন  দিয়েছে কোনো নাম বা নামের আদ্যক্ষর ব্যবহার না করে, যেটা পৃথিবীতে এর আগে কখনো দেখা যায় নি। এটাই প্রথমবার। 

দিগন্তসেনার তরফ থেকে গোটা পৃথিবীর রাষ্ট্রগুলোর যে একটা জোট বা সঙ্ঘ আছে, সেই সঙ্ঘকে জানানো হল। সকলেই একটা ব্যাপারে নিশ্চিত হল যে এটা কোনো রাষ্ট্রের কাজ নয়। বরং কয়েকটা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বেড়ে ওঠা কতগুলো দলের কাজ। চিঠিটার শেষ দিকে ল্যাটিন ও গ্রীক ভাষায় লেখা বক্তব্যের অর্থোদ্ধার করলে তো অন্তত তাই পাওয়া যাচ্ছে। চিঠিতে সর্ব মোট তিন প্রকারের ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে - ল্যাটিন আর গ্রীকের সঙ্গে ইংরাজীতেও লেখা হয়েছে কিছুটা। সমস্যা সকলেরই এইখানে, ইংরাজীতে শুরু করে গোটা চিঠিটাই শেষ পর্যন্ত ইংরাজীতে না লিখে গ্রীক ও ল্যাটিন ভাষা ব্যবহারের তাতপর্যটা আসলে কী। পরিস্থিতি এমন দাঁড়াল যে আন্তর্জাতিক ও বিদেশী গণমাধ্যমগুলোও এর সঙ্গে জড়িয়ে গেল। কিন্তু এদের অস্তিত্বের কোনো আঁচ পেল না।

কর্ণেল সি শ্যামাঙ্গী নাগাড়ে একশো বারো ঘন্টা ঘরের এ মাথা থেকে ও মাথা পায়চারি করতে করতে চিন্তা করতে থাকল তার কর্তব্য। কিন্তু প্রথম দিকে সেও যদিও কোনো কুলকিনারা পেল না। তবে বাহাত্তর ঘন্টা কাটার পর গন্ডায় গন্ডায় বড় আর লম্বা সিগারেটের দফা রফা করে তার অবশিষ্টাংশের  পাহাড়টা যখন খানিকটা একটা পাহাড়ের চূড়ার মতো হয়ে উঠেছে, ঠিক তখনই তার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল। সে তার মাথায় সেই বুদ্ধিটাকে শিরস্ত্রাণ দিয়ে ঢেকে গায়ে বর্ম পরে গিয়ে হাজির হল হাসপাতেলের বেডের পাশে যতক্ষণে, ততক্ষণে বারোটা বেজে গেছে আর ইলোরাও বাড়ি যাবার জন্য পা ঝুলিয়ে বসে বসে বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে সবে খাওয়াচ্ছে। শ্যামাঙ্গীকে ঢুকতে ঢুকতে দেখেই সে তার বাচ্চা সামলাতে সামলাতে বলল,’বোসো কর্ণেল। তা সমস্যাটা কী?’ শ্যামাঙ্গী  কিছু বলতে যাবার আগেই সে বলে উঠল,‘আমি সব জানি। তবে জায়গা হিসেবে এটাকে তুমি কতটা নিরাপদ মনে করছ আগে সেটা বিচার কর।‘ শ্যামাঙ্গী ভেবে দেখল সত্যিই সে প্রায় একটা অবিবেচকের মতো কাজ করে ফেলতে এইমাত্র যাচ্ছিল। যদি না মেয়েটা সতর্ক করে দিতে পারত তাহলে দিগন্তসেনার রাষ্ট্রপতি হিসেবে ল্যাজে গোবরে হতে হোতো সবচেয়ে বেশি তাকেই।

শেষ পর্যন্ত শকুন্তলার বাড়িতে পৌঁছে বাচ্চাটাকে  ঘুম পাড়িয়ে শকুন্তলা, চৈতি, উল্কা, নীলনদ, আর অবশ্যই ইলোরাকে সঙ্গে নিয়ে শুরু হল এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক যেটা চলেছিল দুশো পঁচিশ দিন, যার মধ্যে ছিল অসংখ্য বিরতি যাতে ইলোরা আরাধ্যাকে খাওয়াতে, শোওয়াতে পারে। অংশগ্রহণকারী অন্য  যে কেউ নিয়মিত খাওয়া ঘুমের বরাদ্দ নিতে পারে আর নেয়ও। শ্যামাঙ্গীও বিশ্রাম বিরতির সময় বিশ্রাম নেওয়া ছাড়াও আরো নানা রকম ভাবনা চিন্তার সময় পেয়ে গিয়ে মাথাটাকে ভালো করে খেলায়। এভাবেই সে করে ফেলে তার নতুন সেনাবাহিনীর এক চরম খসড়া যার মধ্যে থাকে যাজ্ঞসেনী, সাসা, ইলোরা, তার দত্তক পুত্ররা, শকুন্তলার পনেরো জন কুন্তল পদবী ভুক্ত ছেলেরা, আগমনী জয়েস, নীলনদ, উল্কা, প্রবাহ, উপমান, কোনারক, রনিত, সহ দ্বিধা, পিপীলিকা, মহিমা, যাদের আসলে বিভিন্ন রাষ্ট্রের জনসংযোগের সেতু হিসেবে ব্যবহার করা  হবে বলে শ্যামাঙ্গী পরিকল্পনা করে। দ্বিধা, পিপীলিকা, মহিমাকে দলে নেওয়ার উদ্দেশ্য হল শ্যামাঙ্গী চায় না যুদ্ধটা হোক। বাকীদের নিয়ে সেনাবাহিনীটা গড়ে তুলতে হয় তাকে স্রেফ এই কারণেই, কর্নেল সি শ্যামাঙ্গী কখনোই কোনো কারণেই  যুদ্ধ থেকে পিছিয়ে আসতে তো পারেই না, বরং প্রয়োজনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শত্রুবাহিনীকে ধূলিস্যাত করে চলে যেতেও যে পারে অবলীলায় সেটাও পৃথিবীর সব রাষ্ট্রের সামনে একবার জানানো দরকার। সর্বোপরি রয়েছে দিগন্তসেনার রাষ্ট্রীয় সম্মান। শ্যামাঙ্গী চট্টোপাধ্যায় তার প্রথম রাষ্ট্রপতি।

দুশো পয়তাল্লিশ দিনের মাথায় দিগন্তসেনার দূরদর্শন ও বেতার মারফত জানান হল ধর্ষকদের জন্য দিগন্তসেনায় যে শাস্তি ধার্য করা হয়েছিল, কোনো রকম পরিবর্তন না করে সেই সেই শাস্তিই বলবত থাকছে। এর জন্য যারা যুদ্ধের হুমকি দিয়েছিল, দিগন্তসেনা সেই আসন্ন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। সেই সঙ্গে এটাও জানানো হল পৃথিবীর যে কোনো অঞ্চল থেকে তাদের উদ্দেশে আঘাত আসবে তারাও সেই অঞ্চলের উদ্দেশ্যে  তাদের প্রত্যাঘাত ফিরিয়ে দেবে। তাই অন্যান্য রাষ্ট্রনেতাদের অনুরোধ করা হচ্ছে তারা যেন নিজের নিজের রাষ্ট্রীয় জনপদকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখেন। কিন্তু যুদ্ধটা যাতে বেশি দূর  গড়াতে না পারে  সে ব্যপারে যুদ্ধকালীন তৎপরতার সঙ্গে কাজ শুরু হয়ে যেতে শুরু করল দুশো ছেচল্লিশ দিনের মাথা থেকেই। সেই জন্যে সঙ্ঘের অন্তর্ভুক্ত সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর সীমানার অভ্যন্তরে শুরু করে দেওয়া হল একরকম  পদ্ধতি যাতে করে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের অধিবাসীবৃন্দ হয়ে উঠতে পারে যুদ্ধ শুরুর আগেই মানসিকভাবে দিগন্তসেনার পত্তনের দর্শনগত গৌরবে আপ্লুত। এর জন্যে কাজ করতে শুরু করে দিল হিসেবচরিত্রচিত্তির। দুশো পঞ্চাশতম দিনের মাথায় সঙ্ঘের অন্তর্গত সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর পাঁচজনের সঙ্গে সামরিক প্রতিনিধিদের মধ্যে আলাপ আলোচনা হয় দিগন্তসেনায়। দিগন্তসেনার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেয় দিগন্তসেনার প্রতিরক্ষামন্ত্রী তথা রাষ্ট্রপতি কর্নেল সি শ্যামাঙ্গী ও চৈতি চত্তোপাধ্যায়। বলা বাহুল্য যে তার হাতে পুরো ক্ষমতা ছিল। দিগন্তসেনার পক্ষ থেকে জানান হল যে সত্যিই যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে তারাও প্রচুর পরিমাণে সামরিক শক্তি খাড়া করবেঃ ২৯৯ টি পদাতিক ও অশ্বারোহী ডিভিশন, ১৯ হাজার ভারী কামান, ২৭ হাজার ট্রাক, ২২০০০ জঙ্গী বিমান, ৩২০০০ বোমারু বিমান। ৩২০০ রকেট, অত্যাধুনিক স্বয়ংকৃয় রাইফেল ৫৫০০০০ এবং সর্বোপরি আছে হাইডোজেন বোমা। ফলে সকলেই বুঝতে পারল একটা বৃহৎ যুদ্ধের সামনে দাঁড়িয়ে আছে গোটা পৃথিবীর মানুষ।

পাঁচটি রাষ্ট্রের সঙ্গে  দিগন্তসেনার শেষ পর্যন্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হল যাতে বলা হল যুদ্ধের দামামা বাজান কয়েকটি সন্ত্রাসবাদী দলের জোটটি যেখান থেকেই যে অবস্থায়ই হামলা করুক না কেন তারা যদি উক্ত রাষ্ট্রের অভ্যন্তরস্থ জায়গা থেকে কোনো হামলা করে তাহলে সেই রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব হবে তাদের দিগন্তসেনার হাতে তুলে দেওয়ার। না হলে ধরে নেওয়া হবে উক্ত হামলার পেছনে সেই রাষ্ট্রশক্তির সহায়তা আছে। যদি হামলাটা তার বাইরের অন্য কোনো রাষ্ট্র থেকে আসে, তাহলেও এই পাঁচটি রাষ্ট্রের যেগুলো অবশ্য করণীয় হবে – ১। চুপচাপ নিস্ক্রিয় হয়ে বসে থাকা ও দেখা, ২। কোনোভাবেই সেই রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রগুলোকে সাহায্য বা মদত না দেওয়া এবং ৩। পরিস্থিতি সাপেক্ষে প্রয়োজন হলে দিগন্তসেনা চাইলে ওই পাঁচটি রাষ্ট্র তাদের সর্বোশক্তি নিয়ে দিগন্তসেনার পক্ষ অবলম্বন করতে বাধ্য থাকবে। 

দুশো পঞ্চাশ দিনের মাথায় গোপনে চর প্রেরণ করা হল দিগন্তসেনার। গোটা পৃথিবীর সমস্ত রাষ্ট্রের নাম করা সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় বড় বড় হরফে ছাপা হল, ‘গোটা পৃথিবীই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দোরগোড়ায়’।  আবার কেউ কেউ লিখল, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হতে আর মাত্র ১৫ দিন বা ১১ দিন বা ৪ দিন বাকি! সকলেই হিসেব কষতে শুরু করে দিল যুদ্ধের ফলে কি কি ক্ষতি হবে এবং মানবসভ্যতার কোন কোন মহান কীর্তিগুলো ধংস হবে। আবার কেউ কেউ বলল যে যেহেতু শত্রু শিবিরের হাল হদিশ করা যাচ্ছে না, তাই দিগন্তসেনার উচিত ব্যপারটা বিবেচনা করে দেখা, তাছাড়া যারা হুমকি দিয়েছে তাদের জন্য পৃথিবীর বৃহত্তর অধিবাসীবৃন্দকে ধূলিসাৎ করে দেওয়াটা মোটেই মানবিকতার কাজ নয়। এই সমস্ত সংবাদই দিগন্তসেনার সবাই শুনল। এমনকি অধিবাসীরাও। কিন্তু সকলের একটাই কথা – ধর্ষণের জবাব খোজা করে দেওয়া অথবা ধ্বংস। কিন্তু কোনো ভাবেই প্রতিপক্ষের আধিপত্যকে আর স্বীকার করে নেওয়া নয় কিছুতেই।

(ক্রমশ)


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন