কবিতার কালিমাটি ১৩২ |
অনুপম জ্বর নিয়ে
অনুপম
জ্বর নিয়ে শুয়ে আছ,
আকাশ
দেখতে চাইছ চোখ মেলে
ধূমায়িত
পেয়ালা জুড়িয়ে যায়,
অনুপম
জ্বর নিয়ে শুয়ে আছ তুমি
দিনগুলি
অনেক লম্বা এখন, তোমাদের যে বাড়ি
আর
নেই তার দীর্ঘ বারান্দার মত স্বচ্ছ সমর্পিত
তোমার
হারিয়ে যাওয়া দেওয়াল জুড়ে রঙে রেখায়
আঁকিবুকিঁ,
সেইসব ধ্রুব হয়ে থাকেনি কোথাও
তবু
কোন বন্দরে উঠে আসে ঢেউ বিপন্ন সমুদ্র থেকে
অবিরাম
ধোঁয়াশার চাদর জড়িয়ে যে দেখছে বৃষ্টি সে
মৃত্যুকে
বোঝেনি কোনদিন। তোমার অনুপম জ্বরে শুয়ে থাকা
ভ্রষ্টলগ্নের
মত সন্ধ্যেবেলার মলিন আলো ছিন্ন করে দেয় পথবাতি।
আমৃত্যু
ফুলের সাধনা করেছে যে তার করতলে দক্ষিণ সমুদ্রের
উতরোল
হাওয়া। তুমি আকাশ দেখতে চাইছ। তোমার জুড়িয়ে যাওয়ায়
পেয়ালার
মত আকাশ। তোমার অনুপম জ্বর। নষ্ট ভ্রষ্ট বেলা।
বিসর্জনের নদীতে
বিনোদিনী
ইস্কুলের সামনে মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে
তুমুল
বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে শাড়ি। বিকেলের আলো
মরে
যাচ্ছে একটু একটু করে। এ পরবাসে রবে কে।
কোথায়
বাজছে গান। মেয়েটি চেনে সেই গান।
চলে
যাবে সব ছেড়ে। তাদের ধোঁয়া ওঠা উনোন,
ময়লা
দেওয়াল, সাতঘরের একটা কলতলার শ্যাওলা
ডিঙিয়ে
ঝগড়াঝাটি। রাতের আকাশে সে ধোঁয়া দেখে,
ধোঁয়াশায়
ঢাকা এক অচেনা শহর। আলো জ্বলে
আকাশের
বুক থেকে নামতে থাকে বিমান। আলোকিত
শহরের
কাছাকাছি উঠোন পার হয়ে তার আঁধার যাপন।
বিনোদিনী
ইস্কুলের সামনে অঝোর বৃষ্টি পড়ে। যে ছেলেটি দাঁড়াতে বলেছে
তার
হাতে লক্ষ হীরার এক জীবন
কিংবা
যাদুকরের মায়া রুমাল আছে এমনটা জানে সে।
দূরে
কোথাও প্রস্তুত হচ্ছে হাড়িকাঠ। বৃষ্টিতে ভেসে যায় শহর।
বৃষ্টি,
বৃষ্টি। বিসর্জনের নদীতে উপচে ওঠে জল।
ভিক্ষুণীর মত দাঁড়িয়েছে যে মেঘ
অমলতাস
রঙের দরজার সামনে ভিক্ষুণীর মত
দাঁড়িয়ে
আছে মেঘ। সমস্ত বাক্যগুলি বেদনারহিত হয়ে
নিস্তরঙ্গ
ঘুমিয়ে থাকে। তখন আগুন লাগে দূরের পাহাড়ে।
অশ্বমেধ
যজ্ঞের আগে হারিয়ে যায় দুরন্ত দৌড়। একজীবন
আঁধার
উত্তীর্ণ হবে ভেবে সাজিয়ে রাখে মন্দার পুষ্পের থালা।
আকাশ
থেকে নেমে আসে যে আলো তাতে পথ দেখতে দেখতে
সোনার
আংটিখানি হারিয়ে ফেলে মেয়ে। কনকচাঁপার সুবাস নিয়ে
দাঁড়িয়ে
থাকে ভিক্ষুণীর মত মেঘ। অলীক দিন রাত্রি অনাহুত বেদনার
গান
সমাপন করে। কিন্তু একাকী জীবন কোন গল্পকথা নয়, রূপকথাও নয়।
মেঘের
ভিতরে থাকা অস্পষ্ট আলো; ভুল হয় বারবার। তবু অমলতাস রঙের
দরজার
সামনে ভিক্ষুণীর মত দাঁড়িয়েছে যে মেঘ তার সঙ্গে একজীবন,
একাকী
জীবন, বজ্রাহত জীবন এক—সেটুকুই লেখা আছে কবিতার খাতায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন