ধারাবাহিক উপন্যাস
দিগন্তসেনা
(১৭)
ভাল গার্দিনা চুক্তির ফলে দিগন্তসেনা ইতালি থেকে আমদানি করবে ধাতব বিভিন্ন জিনিসপত্র, ইঞ্জিনিয়ারিং দ্রব্যাদি ও যন্ত্রপাতি। ঊল্টোদিক থেকে দিগন্তসেনা রপ্তানি করবে অত্যাধুনিক ফ্যাসানের নানা বস্ত্র, লোহা, মোটর ভেহিকেলস, চামড়া। ভাল গার্দিনা চুক্তির সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব হচ্ছে দিগন্তসেনার মূল বস্ত্র বিপণি কেন্দ্র গুলোর একটা হতে যাচ্ছে ইতালির ভেনিস শহরে নির্মীয়মান বিশেষ একটি আন্তর্যাতিক মল ও শো রুম যেখানে মডেলদের র্যাম্পে হাঁটানোর জন্যেও থাকছে একটা বিশেষ মঞ্চ। অদূর ভবিষ্যতে ইতালি দিগন্তসেনাকে কূটনৈতিক আদানপ্রদান ও সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছে। দিগন্তসেনায় কয়েকটি ইতালিয়ান কোম্পানি তাদের ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছে চলতি বছরের শেষ দিকেই। তারা হল নাভাজা, হেইজ ইতালিয়া, নেচ্চি কম্প্রেসরি ও সাই পিয়াজিনো। এছাড়াও দুটি রাষ্ট্র একসঙ্গে কাজ করবে ভ্রমণ, খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ, শক্তি প্রযুক্তি ও কৃষিক্ষেত্রে অদূর ভবিষ্যতে।
কিন্তু হঠাৎ করেই মূল ভূখন্ডে নবদিগন্তউন্মোচনহিসেব দলের কাজকর্ম চলাকালীনই একটা গুলি শ্যামাঙ্গীর ডান কাঁধ ফুঁড়ে বেরিয়ে গেল, যেটা আসলে আরও বাঁ দিকের বুকে লাগতেই পারত যদি না শ্যামাঙ্গী মাত্র দু মিনিট আগেই নিজের অবস্থানটা বদলাতো। সঙ্গে সঙ্গেই দিগন্তসেনার হাসপাতালে নিয়ে আসা হল তাকে বিশেষ বিমানে আর চিকিৎসার ব্যবস্থাও করা হল। সেই সঙ্গেই গোয়েন্দা দপ্তর কাজে নেমে পড়ল। সাংবাদিক আর গণমাধ্যমের ভিড় সরিয়ে বেশির ভাগ রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী, কোথাওকার অর্থমন্ত্রী বা বিদেশমন্ত্রী, দিগন্তসেনার বিভিন্ন পদাধিকারী ব্যক্তিদের ও মন্ত্রীদের ভিড় বেড়েই চলতে লাগল যতক্ষণ না বিশেষ বুলেটিন প্রকাশ করে জানান হল পর্যায়ক্রমে তার অবস্থা ভালোর দিকেই যাচ্ছে।
বাড়ি ফিরে বিশ্রামের সময় শ্যামাঙ্গী দেখতে পেল তার চোদ্দ জন দত্তক ছেলেদের প্রায় সকলেই কোনও না কোনও সঙ্গী নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে যাদের মধ্যে রয়েছে এখানে আসা ইতালিয় ছাত্রছাত্রীদলের পাঁচ জন। ধৃতিমানের সঙ্গে ধানী লোলোব্রিগিদা, প্রাচীনের সঙ্গে অনুষ্কা বারীক্কো, আর উজানের সঙ্গে শিলালিপি মোরেত্তি ছাড়াও অন্যরা নয় কেউ একজন ছেলে সঙ্গী, নয় কেউ কোনও মেয়ের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পেদ্রো গুয়েররেস এসে ওকে খবর দিল ঊল্কা আর সুতনুকার একটি পুত্র সন্তান হয়েছে যার নাম রেখেছে ওরা পঞ্চম। লগ্নলতা এসেছে ওকে দেখতে তার তিন পুত্রসন্তান সহ, উঠেছে চৈতির বাড়িতে। আজ আর কিছুক্ষণের মধ্যে ও এখানে চলে আসবে কিন্তু ওর আসার আগেই শ্যামাঙ্গী দেখল বারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রবাহ ঋকভেসকোভো বলে একটি ছেলের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেই সঙ্গে ঊপমান হেলেন মানফ্রেদি আর কোনারক ইলিনা লোরেনের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে। লগ্নলতা ওদের পাশ দিয়েই শ্যামাঙ্গীর কাছে এল ওকে দেখতে। শ্যামাঙ্গীকে দেখেই বলল, ‘এ আর দেখছ কি! এর আগে ওরা ক’জনের সঙ্গে যে ঘুরেছে আর ছেড়েছে তার পুরো হিসেব আমিও তোমাকে দিতে পারব না’। শ্যামাঙ্গী হাসল আর বলল, আমাদের নতুন প্রজন্মের নতুন অভিরুচি’। ইতিমধ্যে শকুন্তলাও এল শ্যামাঙ্গীর কাছে বাইরে দুজন গাঁট্টাগোট্টা লোককে দাঁড় করিয়ে রেখে আর জানাল, এখন থেকে ওরা শ্যামাঙ্গীর সর্বক্ষণের সঙ্গী আর যখন তখন কাউকে না জানিয়ে কোথাও বেরানো শ্যামাঙ্গীর মানা। যেন শকুন্তলার কাছে নিজেদের অস্তিত্ব ঘোষণার জন্যেই সঙ্ঘমিত্রা ঘুরছে আয়ুষ পিক্কো বলে এক ইতালিয়ান যুবকের সঙ্গে, অভিযান কলা সেভেরন্যিনি, ইলোরা অজন্তা চিতারিস্তি আর অগ্নিভ অ্যানজেলা ব্রাউনের সঙ্গে। শকুন্তলাকে লগ্নলতা সে কথা বলতেই ও হাসল আর বলল,’ওটাই ভালো আর তাতে মানুষ আর সমাজ দুইয়েরই স্বাস্থ্য ভালো থাকে’।
ভাল গার্দিনা চুক্তি মত বস্ত্র রপ্তানির জন্য তিন জন বিখ্যাত ফ্যাসান ডিজাইনারকে ডাকা হল আর তাদের ওপর দেওয়া হল দায়িত্ব যাতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তারা ইতালিতে র্যাম্প শোএ অংশগ্রহণ করে ওখানে বস্ত্রবিপনি কেন্দ্র খুলতে পারে। পাঁচ দিনের মাথায় জানাল তারা প্রস্তুত আর সাত দিনের মাথায় ভেনিসের মলে কাজটা শুরু হয়ে গেল। সেই সূত্র ধরে দিগন্তসেনার অর্থ তহবিল ভরে যেতে লাগল। শ্যামাঙ্গী দীর্ঘকাল ধরেই প্যান্ট শার্ট পরতে অভ্যস্ত। তাকে প্রায় অন্য পোশাকে দেখা যায় না বললেই চলে। আর নবদিগন্তউন্মোচণহিসেব শুরু হওয়ার সময় যেহেতু দলেও এই ব্যপারটা চালু করা হয়েছিল আর রাতারাতি অন্য জায়গাগুলোতেও সেটা সংক্রামক ব্যাধির মত ছড়িয়ে পড়েছিল, সেই থেকে দুজায়গাতেই মেয়েদের প্রধান পোষাক বলতে ওটাকেই গণ্য করা হয়। তাই এই দু জায়গার ফ্যাসান ডিজাইনারদের মূল পোশাক প্যান্টশার্ট। তবে এখানকার মন্ত্রীসভার অন্যদেশের যেসব মেয়েরা আছে, তারা স্কার্টও পরে। তাই ডিজাইনাররা স্কার্টও বাজারে ছাড়ে, সঙ্গে কিছু কিছু শাড়ি, সালোয়ার, চুড়িদার, ঘাগরা সহ। শিল্পমন্ত্রী ফ্রান্সিস্কো চাইওয়াক ও জুলি ভ্যাঁসি নিজেরা দুজনে বসে ঠিক করে ফেলল ইতালীয় কোম্পানিগুলোকে কোন কোন জায়গা দেওয়া হবে। তারপর তাদের দেখানো হলে তারা খুশি হয়েই তাদের কোম্পানির বিল্ডিং তৈরীর কাজ শুরু করে দেয়। ক’দিনের মধ্যেই বাজারে তারা তাদের প্রোডাক্ট ছাড়তে শুরু করে দিল। কিছুদিনের মধ্যে ইতালি থেকে আমদানি করা নানারকম যন্ত্রপাতি ও ইঞ্জিনিয়ারিং দ্রব্যর হিসেব আর ব্যবহারের ক্ষেত্রগুলো নিয়ে দুই শিল্পমন্ত্রী নিজেরাই কাজ শুরু করে দিল। লোহা আর মোটর ভেহিকেলস যন্ত্রপাতি ইতালির চাহিদা মত পাঠানো হল। সব মিলিয়ে ভাল গার্দিনা চুক্তি কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই দিগন্তসেনায় বয়ে নিয়ে এল এক অফুরন্ত আনন্দ আর সমৃদ্ধির ফুরফুরে হাওয়া যেটা গায়ে মেখে বেড়াতে আর উপভোগ করতে লাগল সেখানকার অধিবাসীবৃন্দ।
শ্যামাঙ্গীর তিন মেয়ে ডাক্তারি পড়তে শুরু করেছে আর চোদ্দজন ছেলের চারজন ইঞ্জিনিয়ারিং ও বাকী দশ জন সেনাবাহিনীতে যোগ দেবার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেছে। শকুন্তলার পনের জন ছেলেই যারা কুন্তল পদবী যুক্ত তারা সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য বিশেষ তালিম নিচ্ছে। অতসী, অলকা, অন্তরা, অনিন্দিতা, অনন্যা, অদিতি, এই ছজন ডাক্তারী পড়ছে আমেরিকায়। ইচ্ছে, ইছামতি, ইলোরা, ইমন, ঈপ্সিতা আর ইতু ডাক্তারি পড়ছে লন্ডনে। আহুতি, আবৃতা, আগমনী, উন্নতি, উপত্যকা আর উজ্জয়িনী ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে গেছে মেলবোর্নে আর বাকী সাত মেয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে ফ্রান্সে। লগ্নলতার তিনটি ছেলেই সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে বিশেষ উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহী। তারা সেকথা জানালেই লগ্নলতা তা জানায় শকুন্তলাকে। শকুন্তলা প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্য যে অ্যাকাডেমীটা আছে তাতে ওদের ভর্তি করে দেয় প্রায় নিজে দাঁড়িয়ে থেকে। দিগঙ্গনার নতুন একটা ছেলে হয়েছে, আর নীলনদ তার নাম রেখেছে উদিত। দিগন্তসেনায় চিকিৎসা ব্যবস্থা শকুন্তলা এমন ঢেলে সাজিয়েছে আর এতগুলো বিভাগ করেছে আর সেখানে এত উন্নত মানের প্রযুক্তির ব্যবহার হয় যে চিকিৎসার কথা ঊঠলেই পৃথিবীর যে কোনও মানুষই চোখ কান বুঁজে একটা নামই শুধু ভেবে ফেলে - দিগন্তসেনা। ফলে চিকিৎসার জন্যে সেখানকার অর্থ তহবিল প্রায় প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় চক্রবৃদ্ধি হারে ভরে চলেছে।
অসুস্থ শ্যামাঙ্গী যখন বাড়িতে বিশ্রামের জন্য বন্দী, যখন কোথাও কোনও রকম দেখা সাক্ষাতই সে করছে না, ঠিক সেই রকমই একটা সময় সে অবাক হয়ে দেখল তার সহকারী পেদ্রো গুয়েররেসের সঙ্গে তাকে নিয়ে যাবার জন্য এসেছে মানকো আপারু আর তুপাক ইউপানকি লাতিন আমেরিকায় তার স্বাস্থ্যের কল্যাণ কামনায়। প্রথমে শ্যামাঙ্গী একটা দোটানায় ভুগলেও সে পেদ্রোকে বলল শুভেচ্ছা লাতিন আমেরিকায় যেতে খুবই আগ্রহী, তাই তাকে ডাকতে। শুভেচ্ছা এলে শ্যামাঙ্গী ওকে নিয়ে একটা জলযানে উঠল যেটা দৈর্ঘে চোদ্দশ কিলোমিটার আর প্রস্থে চারশ কিলোমিটার, রামধনুর সাত সাতটা রঙ মেলে দাঁড়িয়ে থাকে জলের ওপর আর ভেসে যাবার সময় অষ্ট প্রহর ধরে বাঁশি, সানাই, তার সানাই বেজে যায়। বঙ্গোপসাগর থেকে ভারত মহাসাগরের ওপর দিয়ে ভাসতে ভাসতে ডান দিকে আফ্রিকাকে ছেড়ে দক্ষিন অ্যাটল্যান্টিক মহাসাগর থেকে ওরা তিয়েররা দেল ফুয়েগোকে ডান দিকে ছেড়ে দক্ষিন প্রশান্ত মহাসাগরে এসে একটু উত্তরের দিকে গিয়ে একটা তীরভূমিকে ডান দিকে রেখে জাহাজের নোঙর ফেলল আর ফেলেই শ্যামাঙ্গী আর শুভেচ্ছাকে নিয়ে নামল যে মাটিতে সেটার নাম পেরু। সঙ্গে সঙ্গে ওদের স্বাগত জানাতে এগিয়ে এল দুজন। তুপাক ইউপানকি তাদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিল ওদের, যার একজন হল হুয়ানা আপাক আর দ্বিতীয়জন হল আতাহুয়ালপা, বিখ্যাত ইঙ্কা সম্রাট। ওরা যখন সমস্ত জায়গা ঘুরে ঘুরে দেখাতে লাগল ওদের সমস্ত নগর, শহর, বন্দর এমনকি মন্দিরগুলো, যেগুলোর সবটাই সোনায় মোড়া আর সুর্যের আলো পড়ে চিকচিক করে উঠছে তখন শ্যামাঙ্গী দেখল পেদ্রো ওদের সঙ্গেই আছে। কিন্তু ওদের মন্ত্রীসভার দুই মন্ত্রী পেছনে কোথাও নেই। পেদ্রোকে জিজ্ঞাসা করতে সে বলল হয়ত দরকারে কোথাও কাছাকাছিই আছে, এসে যাবে ঠিক সময়ে, তখন শ্যামাঙ্গী ওকে জিজ্ঞেস করল ঠিক সময়টা কখন, তখন সে বলল দরকারী কাজটা শেষ হবার পর আর শ্যামাঙ্গী আবার জিজ্ঞেস করল যে কী সেই দরকারী কাজ, তখন পেদ্রোর মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে শুভেচ্ছা বলল যে উত্তর, আগ্রাসনের। শ্যামাঙ্গী কিছু বুঝতে পারল না। ইতিমধ্যে একটা গরাদের ওপারে চার জনকে দেখিয়ে তাদের নাম বলা হল ফ্রানসিস্কো পিজাররো, আলমাগ্রো পিজাররো, গোনজালো পিজাররো আর খুয়ান পিজাররো যারা একে অপরের সহদর শুধু নয়, আতাহুয়ালপা আর হুয়ানা আপাকেরও চরমতম শত্রু। অনেকক্ষণ এদিক ওদিক ঘুরে অনেক কিছু দেখার পর পেদ্রো ওদের নিয়ে জাহাজে উঠে একটু এগিয়ে গিয়ে যে দেশের মাটি ছুঁল, শ্যামাঙ্গী শুভেচ্ছাকে বলল এই দেশটার নাম মেখিকো।
‘মাদ্রে’, হঠাত পেছনের থেকে আসা একটা আওয়াজে চমকে উঠে শ্যামাঙ্গী দেখতে পেল একটা লোককে চেন দিয়ে বেঁধে নিয়ে আসছে একজন, পেদ্রো যার নাম বলল মনতেজুমা, আজতেক সম্রাট, আর বন্দী লোকটার নাম বলল, ‘ভাসকো নিন্যয়েজ বালবোয়া, যে শুভেচ্ছার দিকে তাকিয়ে হাত জোড় করে বলল, ‘মাদ্রে নুয়েভা, পেরদোনে মে!’ তারপর শ্যামাঙ্গীর দিকে হাত জোড় করে বলল, ‘মাদ্রে ভিয়েখা, পেরদোনে মে! লো সিয়েন্তো, মি মাদ্রে, লো সিয়েন্তো!’ অনেকক্ষণ পর তুপাক ইউপানকি ধরে নিয়ে এল একজনকে যার নাম পেদ্রো বলল,’পেদ্রো আলভারাদো’। তারই পাশে দাঁড়িয়ে আছে আরও একজন যার নাম, ’পেদ্রারিয়াস দ্যাভিলা’। ওরা আস্তে আস্তে ওদের বাহক তরীটির দিকে এগিয়ে গেল যেটা আসলে ছিল একটা রণতরী। সেটা দেখেই রাজা পঞ্চম চার্লস ভয় পেয়ে ছুটে এসেছে আর বস্তা বস্তা সোনা রুপো ভেট দিয়েছে। সেগুলো অবশ্য ততক্ষণে জায়গা মত তুলে রেখে দেওয়া হয়েছে। সম্রাট মন্তেজুমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ওরা তরীতে ওঠবার জন্য পা ফেলতেই হাত বাড়িয়ে সাহায্য করতে এগিয়ে এল মানকো আপারু। তীরভূমি ওদের কাছ থেকে দূরে সরে যেতে লাগল। হঠাৎ মাঝ সমুদ্রে বেরনান দিয়াজ নামে একটা হাত পা বাঁধা লোককে তুলে ছুঁড়ে ফেলে তুপাক ইউপানকি, আর শুভেচ্ছা তৎক্ষণাৎ বলে উঠল, ‘আগ্রাসন। তবে সেটা ঋণাত্বক না ধনাত্বক সেটা নির্ভর করছে দেখার দৃষ্টিকোণের ওপর’।
দেহরক্ষীদের সঙ্গে নিয়ে অসুস্থ্যতাজনীত কারণে বিশ্রাম ভেঙে বেরিয়েই শ্যামাঙ্গী মন্ত্রীসভার বৈঠকে দিগন্তসেনায় নির্বাচনের প্রস্তাব দিল। তারপরেই উদ্বোধন করল ‘সহস্রাব্দিক হালখাতা’ যেটা মূলত শকুন্তলার মস্তিস্কপ্রসূত এবং যাতে মানবসভ্যতার সমস্ত উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো তখনও অব্দি যেগুলো ঘটেছে, সেগুলো লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এর পর থেকে যেগুলো ঘটছে আর ঘটতে থাকবে সেগুলো লিপিবদ্ধ করা হবে। তারপরেই মূল ভূখন্ডে নবদিগন্তঊন্মোচনহিসেব-এর সংগঠনমূলক কাজের জন্য বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে মিটিং, মিছিল, বক্তৃতা শুরু করল যার প্রাধান অংশই হল নারী অবদমন, অত্যাচার ও ধর্ষণ বন্ধ করা। গৃহশ্রমে নারীকে বাধ্য না করে নিজেরা নিজেদের যাতে ছোট থেকে স্বাবলম্বী করে তোলে সেই বিষয়ে সচেতন হবার আবেদন জানান। সমস্ত মেয়েদের আত্মরক্ষার জন্য জুডো, ক্যারাটে, বক্সিং এগুলো শিখতে উৎসাহিত হওয়া ও করা, নিজেদের পোশাক পরিচ্ছদের ব্যাপারে সচেতন হয়ে সবচেয়ে সুবিধেজনক পোশাক হিসেবে সমস্ত মেয়েদের প্যান্ট শার্ট পরার আবেদন জানাল, অযথা বেশি ক্যালোরিযুক্ত খাবার না খেয়ে শ্যামাঙ্গী প্রচুর প্রোটিনযুক্ত খাবার খেয়ে মেয়েরা যাতে নিজেদের শরীরকে সবসময় যে কোনও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত রাখতে পারে সেই আবেদন জানাল। প্রত্যেক গৃহস্থকে ও শিশুদের মধ্যে ছেলে এবং মেয়ে বলে কোনরকম আচরণগত প্রভেদ না করতে অনুরোধ করে সকলকেই সমান চোখে দেখা ও সমান শিক্ষাদীক্ষার সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ জানাল। ভূখন্ডের সমস্ত বাসিন্দাদের পাড়ায় পাড়ায় মেয়েদের খেলাধুলোর জন্য ক্লাব প্রতিষ্ঠার ও পরিচালনার আবেদন জানাল শ্যামাঙ্গী। সেই সঙ্গে সঙ্গে সরকারী চাকুরীজীবীদের কর্মসংস্কৃতিকে নষ্ট না করে বরং তা সম্মানের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করা, নিজেদের ব্যক্তিগত ধর্মাচরণকে সমাজের সামনে না নিয়ে এসে সেটাকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ রাখতে অনুরোধ জানাল। বিভিন্ন জায়গায় মিটিং বা সভা শেষ হলেই ‘কর্নেল সি শ্যামাঙ্গী জিন্দাবাদ, কর্নেল সি শ্যামাঙ্গী জিন্দাবাদ’ ধ্বনিতে চারদিকে মানুষে মানুষে ছয়লাপ। শুভেচ্ছা আর মানময়ী দুজনে বসে দূরদর্শনে যেটুকু ওর প্রচার দেখাচ্ছে, সেগুলো দেখতে লাগল। দিগন্তসেনায় ওর ছেলেরা ট্রেনিং শেষে বিশ্রামের ফাঁকে মাকে দেখতে লাগল দূরদর্শনে। শকুন্তলা ও চৈতির ছেলামেয়েরা, ছাত্রছাত্রীদের দলটা, আবাসিক বিদ্যালয় ও সেনা অ্যাকাডেমির ছাত্রছাত্রীরা সবাই দেখতে লাগল আর মুহূর্তের মধ্যেই ‘কর্নেল সি শ্যামাঙ্গী জিন্দাবাদ, কর্নেল সি শ্যামাঙ্গী জিন্দাবাদ’ ধ্বনির মধ্যেই কে যেন বলে উঠল হঠাৎ ‘কর্নেল সি শ্যামাঙ্গী মুর্দাবাদ’। সঙ্গে সঙ্গেই শ্যামাঙ্গী মাটিতে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেল রক্তাক্ত অবস্থায়। দেহরক্ষীরা সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজনকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ল। প্রেস, ক্যামেরা সবাই সব ছেড়ে তাড়াতাড়ি এসে ওকে একটা গাড়িতে তুলে হাসপাতালে নিয়ে গেল।
(ক্রমশ)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন