কবিতার কালিমাটি ১৩১ |
অশোধিত কালো
কবি-হৃদয়ের খনি-গর্ভে, গমন করোনি কখনও
করেও না কেউ, কোনো কালে, কয়লা উত্তোলনে
অথবা আকরিকের আঁকাবাঁকা ভাস্কর্য-আকর্ষে
স্যাঁতসেতে জল চোঁয়ানো, প্রায় প্রত্ন প্রচ্ছন্ন
পথে।
দূর থেকে কী দেখো রাণী, কালো রানীগঞ্জ-খনি
হ্যাঁ, প্রায় তেমনই, বোকাদের এ লৌহ-বোকারো
দৃষ্টিতে যতটাই দূরদর্শী, দূর... ধূ ধূ, ঘোলা শার্শি
বাতাসে হু হু কার্বন, নিঃশ্বাসে রিরি সালফারও।
সারাদিন রিনরিনে মালভূমে বালুকা ও সিলিকন
সারারাত শিকলের ঘর্ঘর, ট্রলি ভরা চাঙড় খনন
আলো কম,বড় কমই, প্রায়ান্ধকার, জীবনের মমি
কবিতা-আগুনে উৎসাহ, ধাতব মনের গূঢ়তর খনি।
সকলেই অপটু,কেউ নামে না,তুমিও পা ফেলোনি
সেখানেই সক্রিয় গাইতির, খুঁড়ে চলা ভগ্ন ও খণ্ডে
বিরক্ত বেলচার ক্ষয়ে যাওয়া মুখ,অতিষ্ঠ পল,দণ্ডে
খনিমুখ নির্বিকার, সুড়ঙ্গে কী অত্যাচার, শোনোনি।
সুখী সুখী অক্সিজেন, রোজ তার, সে তীব্র হাহাকার
প্রাণবায়ু, পরমায়ু দ্বন্দ্ব, প্রত্যহ, মুখোমুখি,
পরস্পর
কবি-হৃদয়ের খনি-সমাচার, বড় একঘেয়ে, প্রান্তিক
কে আর খেয়াল করেছে কবে, পাতালের দশদিক।
ধোঁয়া-কল বন্ধ
চিমনি বন্ধ হয়ে যাওয়া
কারখানা-শ্রমিকের পরিবারে ওঠা
ঢেউয়ের মতো এলোমেলো
আজকের ফুসফুস, অনিহ, উদ্বিগ্ন, সারাদিন উপোস
জ্বলেনি-- গুল গুঁজে গুঁজে কেরোসিনে ধরানো উনুন
আসলে কতৃপক্ষ চাইছে, কারখানা বন্ধ করে,
চালু করবে আরোগ্য নিকেতন
ফুসফুসের অগণিত কুঠুরিতে তাই কানাঘুষো--
চিরতরে থেমে যাবে কারখানার বাঁশী
বা মধ্যরাতের ঘুমকে তুড়ি-মারা কাশি...
বেকার হয়ে যাওয়া ফুসফুসের
বড্ড উসখুস মুখ তাই
যা দেখে মাথার ভেতর দলবাজি চালাচ্ছে
সর্বহারার ইউনিয়ন
পোস্টারে লিখেছে-- কালো হাত ভেঙে দাও
কেননা হাতটা হাতড়ে আনছে না দেশলাই,
কফের মিছিল লাগাচ্ছে কালি ধনতান্ত্রিক
মুখের দেঁতো ছবিতে--
কারণ ঠোঁটের উপর আজ ভয়ঙ্কর রাগ
ওগরানো ধোঁয়ার উৎসাহ চেপে ধরে টানাচ্ছে না
শ্রমজীবী ফুসফুসের ফোকোরে গাঢ় টানে
নিকোটিন-বাণিজ্যের এ এক ধ্বংস সংকেত।
শতাব্দী পেরিয়ে
সমীক্ষকেরা মোটামুটি প্রায় একমত--
মাথা গুলো সেভাবে ঠায়, ভেজে না আর এখন
প্রত্যেকেই পেরেছে প্রায় পৌঁছতে
নিজেকে টেনে নিতে, কোনও ছাতার তলায়।
ছাতা গুলোর আধুনিকিকরণ-- দেখার মতন
বিস্তৃত, নানাবিধ, ফেস্টুন-রঙিন, রহস্যময়
কেবলমাত্র, মধ্যবর্তী দণ্ডটি যত দুর্বল--
হঠাৎ করেই খুলে ছিটকে যেতে পারে স্প্রিং।
ছাউনির বৃত্ত-ব্যাসের ছায়া-গর্ভে
ডুবে থাকা মহার্ঘ, সারি সারি কালো কালো
মুখ মাথা প্রায়-- দেখতে একই রকম
হেঁটে যায়, বৃষ্টি রোদ দুই-ই বাঁচায়, তারা
জানে শূন্য থেকে তাপ, আসে শূন্য থেকে জল
শতাব্দী পেরিয়ে-- হয় শ্রাবণ, না হয় নির্বাচন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন