বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৩

অভিজিৎ মিত্র

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২১


শ্রাবণ বাইশ

আজ থেকে মৃগনাভিকে রাজরানী ডাকব।

অগস্ট এসে গেছে, তিন এসে গেছে। শ্রাবণ তো আগেই। যেদিন মৃগনাভিকে নিয়ে খড়ি নদী পেরিয়ে অনেক সবুজে সবুজের ঢেউ ধরে এগিয়ে ওর হলুদ ব্লাউজ থেকে পরাগরেণু ঝেড়ে পুরোটাই বিলিয়ে দিয়েছিলাম, প্রকৃতি শিখেছিলাম, সেদিন। নরম বুকে হাত রেখে অনেকক্ষণ এক ঝুলন্ত সেতুর ওপর বসেছিলাম। পাশে প্রকৃতি। ওর মুখে এক রহস্য হাসি, চোখে জিজ্ঞাসা।

- কী? বলো?

- কিছু বলিনি তো! আমি তো আকাশ দেখছি, খেজুর গাছ দেখছি, সাদা মেঘের মধ্যে দিয়ে পাখি দেখছি।

- সে কি? তাহলে আমার দিকে এতক্ষণ চেয়ে আছ কেন?

- তোমার চোখের মধ্যে দিয়ে দেখছি। তোমার আঁচিলের ওপরের গভীর আইরিশ, আমাকে শেখাচ্ছে।

- হাত সরাও। নির্লজ্জ।

- এটা হাত নয়, বিশ্বাস করো। স্টেথো। আমি তোমার পি-কিউ-আর-এস-টি খুঁজছি, ঐ কার্ভগুলোয় আমার অস্তিত্ব খুঁজছি। আমাকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছ বলো তো! 

মাথায় মাথা দিয়ে এক গুঁতো, আর মুখে মুক্তোর ঝকঝক।

- জল দাও, তেষ্টা পেয়েছে।

চুমুর ছলে জল। এইজন্য বেদের আরেক নাম ছিল শ্রুতি। আর তেইশ শ্রাবণে এসে সেটা রাজরানী। হাত কামড়াতে ইচ্ছে হল, মহীনের গানটা আজ যদি খুঁজে পেতাম – ‘শহরের উষ্ণতম দিনে, পিচগলা রোদ্দুরে, বৃষ্টির বিশ্বাস, তোমায় দিলাম আজ’।

- ভাবো, অগস্টের তিন, তুমি হয়ত সেদিন এলে না। শুধু হলুদ শাড়ি সবুজ ব্লাউজে এসে আমায় ফুঁ দিয়ে চলে গেলে। আমি বসে রইলাম। তোমার হলুদ সবুজ ছাপিয়ে আমার আশেপাশে চাপ অন্ধকার। ভাবো, আমি তলিয়ে যাচ্ছি। আর তুমি কিছু কাগজের টুকরো আমার ওপর কুচিয়ে ফেলে হাসছ। তোমার ফোনটা ইচ্ছে করে সুইচ অফ করে রেখেছ। তখন?

- তাহলে আমি আর রাজরানী থাকব না?

ওর হাত আবার শক্ত করে ধরলাম। মাথার দুদিকে নড়াচড়া। হৃদ যেন জলের মত ওর দিকেই।

- না। তোমার বিশ্বাসের কাছে আমি হেরে যাই। হাঁটু মুড়ে বসি। সেজন্যই তুমি রাজরানী। আমি ভিখিরি।

ঠিক তখন বাইরে বাইশে শ্রাবণের বৃষ্টি নামল। গাড়ির মধ্যে আমি তুমি, বাইরে শ্রাবণ ফোঁটায় ধুয়ে যাচ্ছে। অনেকদিনের তেষ্টা। আঙুলের মধ্যে চুলের বিলি। বাকিরা ঝাপসা। কেবলি আঁখি দিয়ে, আঁখির সুধা পিয়ে...

 

- আমাকে একটু জল দেবে, রাজরানী?

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন