কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২১ |
রবিবারের রান্না
সৃজন বলল: তারপর আর কি! ওদের বিয়ে হয়ে গেল। পিনাকী আর হৃতিকা চলে গেল পুনায়, আমি রয়ে গেলাম আমহার্স্ট স্ট্রিটের আদি ও অকৃত্রিম আন্নাকালী লজের এঁদো অন্ধকারে। চলে যাবার আগে হৃতিকা সমস্ত চিঠিপত্র আমার কাছে রেখে দিয়ে গেল। কিছুদিন আগে সেগুলো ফেরত চেয়ে পাঠিয়েছে; সাথে আমাকে পাঠানো ওর চিঠিও। নানা অছিলায় এখনও ফেরত দেয়া হয়নি। এখন মনে হচ্ছে, চিঠিগুলো কাছে রেখে সারাজীবন ওকে একটা উৎকণ্ঠার মধ্যে ফেলে না রাখাই ভালো। ঘনিষ্ঠভাবে মিশেছিলাম আমরা; তার খেসারতও দিতে হয়েছিল। আজও বহন করে চলেছি সেই চিঠির বোঝা। তমাল হেসে বললো, বোঝা কি তোর ক্রস-ব্যাগে নিয়েই ঘুরিস?
এই তো দ্যাখ না, বলে একটা বড় খাম,
বেশি নয়, সাকুল্যে আট দশটা চিঠি হবে, সৃজন বার করে তমালের হাতে দিল। কি মনে করে তমাল
চিঠিগুলো পড়তে শুরু করল। মাঝে মাঝেই ওর চোখ মুখ লাল হয়ে উঠছিল। পড়ার পর ধীরে ধীরে
বলল, এভাবে কোন মেয়ে চিঠি লিখতে পারে, আমার জানা ছিল না। কিন্তু এত দূর এগোবার পরেও
কি করে একটা মেয়ে ফিরে যেতে পারে? আর এই বয়সে এসে ওই চিঠিগুলো ফেরত নিয়েই বা কি
হবে?
এ কথার কোন উত্তর না দিয়ে তমালের
হাত থেকে চিঠিগুলো নিয়ে নিল সৃজন। তারপর বললো, তোর কি খবর, শুধু নিজের কথাই বলে গেলাম।
তোদের তো দুজনকেই শুধু দেখছি, ছেলেমেয়ে?
একটা মাঝারি মাপের দীর্ঘশ্বাস ফেলে
তমাল বলল, "এই যেমন দেখছিস, বাবা হতে পারলাম না। বিয়ের পর ওর শরীরে নানা কমপ্লিকেশন
দেখা দিতে শুরু করলো। দু দুটো বাচ্চা পরপর নষ্ট হয়ে যেতে ডাক্তার সান্ত্বনা দিলেন,
তমালবাবু, আর রিস্ক নেবেন না। কি করবেন, মেনে নিন। অনেকেরই কোন সন্তানাদি হয় না। আর
আজকাল যেসব পদ্ধতি বেরিয়েছে সেগুলোর পিছনে ছুটবার ইচ্ছে বা আর্থিক ক্ষমতা কোনটাই আমার
ছিল না।" সৃজন বলল, ছাড় ওসব, এখন আর মনে রেখে লাভ কি বল।
আরও কিছুক্ষণ গল্প করে সৃজন উঠে
দাঁড়ালো। বলল, আজ আসি রে। তমাল বলল, দুপুরবেলা না খেয়ে চলে যাবি? না না, খেয়ে যা।
: বলে আসিনি, ফিরতেই হবে। নইলে
মিল কাউন্ট হয়ে যাবে, আজ যাই পরে কখনো হবে। এদিকে যখন এসে পড়েছিস, দেখাও হবে আসাও
হবে। তাছাড়া পুরনো কাসুন্দি ঘেঁটে মনটা বড় বিক্ষিপ্ত হয়ে গেল রে, আজ যাই। আচ্ছা,
ওয়াশরুমটা কোনদিকে?
: ওই তো, রান্নাঘরের পাশ দিয়ে
যা, মিত্রা দেখিয়ে দেবে।
মিত্রার মুখোমুখি হতে সৃজন বলল,
ম্যাডামের সাথে তো ভালো করে আলাপই হলো না।
"রবিবারের রান্নায় ব্যস্ত"।
মিত্রা বললো।
সৃজন চলে গেল। কথা দিয়ে গেল আর
একদিন এসে খাওয়া দাওয়া করে যাবে। রবিবারের শ্যাম্পু-স্নানের পর আজ ভারি সুন্দর লাগছিল
মিত্রাকে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন