কলকাতায় বাংলা ছবির ‘মুক্তি-শৃঙ্খল’ ষষ্ঠ পর্ব
(কলকাতায় বাংলা ছবির একক প্রেক্ষাগৃহ)
পাঁচ পর্ব লেখা হলো, প্রথমে ত্রয়ী
প্রেক্ষাগৃহ যেখানে বাংলা ছবি মুক্তি পেত, এবং তারপর যুগল প্রেক্ষাগৃহ নিয়ে। এবার বলব
কিছু একক প্রেক্ষাগৃহের কথা।
বসুশ্রী
ভবানীপুর-কালিঘাট অঞ্চলে হাজরা
রোড আর শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রোড চৌমাথার কাছে বসুশ্রী যুক্ত ছিল উত্তর কলকাতার
ঠনঠনে কালিবাড়ী সংলগ্ন বীণা সিনেমা হলের সঙ্গে। আমি কোনদিন বীণায় ঢুকিনি, আর যবে থেকে
(১৯৭৬-এর মাঝামাঝি) কলেজ স্ট্রীট-বিধান সরণী দিয়ে যাতায়াত শুরু করেছি, বীণাতে শুধু
হিন্দী ছবির প্রদর্শনই চোখে পড়েছে। তাই শুধু বসুশ্রীর কথাই হবে।
মা’র স্মৃতিচারণের খাতায় দেখছি ১৯৬২ সালে বসুশ্রীতে ‘তরণীসেন বধ’ ছবির কথা। ছোট পিসেমশাই বসুশ্রীতে ‘তরণীসেন বধ’ দেখিয়েছিলেন। রামভক্ত তরণী রামের দিকে তীর ছুঁড়লেন, আর সেই তীর রামের গলায় লেগে মালা হয়ে গেল – এ দৃশ্য আজও চোখে ভাসে। আর রামের হাতে তরণীর মৃত্যু একেবারেই মেনে নিতে পারিনি। মন এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে মা কৃত্তিবাসের ছন্দ অনুসরণ করে ‘তরণীসেনের পুনর্জীবন লাভ’ নামে একখানা গল্প লিখে,আমাকে শুনিয়ে মন ভালো করার চেষ্টা করেছিলেন! আর ঐ বছরের ১৬ই সেপ্টেম্বর তারিখ দিয়ে মা লিখছেন যে বাড়ীতে ছবির দৃশ্য অভিনয় করছি। মা’র ভাষাতেই শুনুনঃ ‘ধনুক-বাণ নিয়ে প্রদীপকে [আমার ১০ বছরের বড়দাদা] বলা হল, “এই বাণে আমি তোকে সংহার করব!” কিন্তু বাণ ছুঁড়তে পারল না, প্রদীপ হেসে ফেলায় বল্লে – “শিখিয়ে দিবি তো, হাসচিস্ কেন?”
এরপর ১৯৬৫ সালে পরপর বাংলা ছবি দেখেছি। মা ৩০শে এপ্রিল তারিখে তিনটি ছবির নাম লিখে রেখেছেনঃ একটি ইংরেজী, দুটি বাংলা। একই দিনে একাধিক ছবি দেখার চল আমাদের পরিবারে ছিল না, আর তিনটি ছবি একদিনে তো অকল্পনীয়! ৩০শে এপ্রিলেই মুক্তি পেয়েছিল হাসির ছবি ‘পতি সংশোধনী সমিতি’। রাতের শোয় বসুশ্রীতে গিয়ে গিয়ে হলে বেশীর ভাগ মহিলা দর্শক দেখে বলে উঠেছিলাম, “এরা সবাই পতি-বিরোধী!” মা আঁতকে উঠে আমার মুখ চেপে ধরেছিলেন। ছবিটি মোটামুটি উপভোগ্য লেগেছিল। অভিনেতাদের মধ্যে গোঁফ লাগানো ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন, আর মহিলাদের নেত্রী ছিলেন মঞ্জু দে।৭১-এর শেষে বসুশ্রীতে দেখলাম বহু-প্রতীক্ষিত হাসির ছবি ‘ভানু গোয়েন্দা জহর অ্যাসিস্টেন্ট’। জনপ্রিয় ছবি, তবে মনে হয়েছিল যে ভানু-জহরের চেয়ে বেশী প্রাধান্য পেয়েছে শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়-লিলি চক্রবর্তীর ‘রোমান্স’।
৭৪-এর ডিসেম্বরে মুক্তি পায় বাংলায়
যুগান্তকারী অ্যাডভেঞ্চার ছবি, সত্যজিৎ রায়ের ‘সোনার কেল্লা’।
ঐ মাস থেকেই ৩ মাস ধরে আমি ছিলাম রোগে শয্যাশায়ী। কলেজ যাওয়াই বন্ধ, সিনেমা তো কোন
ছার! অবশেষে ১৯৭৫-এর গোড়ার দিকে বসুশ্রীতে দেখা হল যে ছবি তার থেকে মনে গেঁথে আছে হলুদ
মরুভূমির বুক চিরে কালো ধোঁয়ার কুজ্ঝটিকা উড়িয়ে ছুটে চলা ট্রেন! এটি আমার দেখা সম্ভবত
প্রথম সম্পূর্ণ রঙিন বাঙলা ছবি। ৭৪-এ কিছু অতি-আঁতেল হাহাকার করে উঠেছিলেন যে ‘এইসব’
(তুচ্ছ) বিষয়ে ছবি করার নাকি “অনেক লোক” আছে, সত্যজিৎ তাঁর স্বভাবসিদ্ধ গভীর-গম্ভীর বিষয়বস্তু
নিয়েই ছবি করুন!’ ‘এইসব’ ছবি করা একেবারেই সহজ নয়। আজও, কোটি-কোটি টাকা খরচ করে মিশরে,
দক্ষিণ আফ্রিকায়, বা আমাজনের জঙ্গলে গিয়েও, কোনো বাংলা অ্যাডভেঞ্চার ছবি ‘সোনার কেল্লা’কে
অতিক্রম করতে পারেনি।
১৯৮০ আপামর বাঙালীর কাছে ইন্দ্রপতনের বছর! কিন্তু তা ছাড়াও ১৯৮০ এক যুগান্তকারী বাংলা ছবির রজত জয়ন্তী বর্ষ, এবং সম্ভবত সেই বছরেই বসুশ্রীতে আমি সেটি দেখি। সেই ১৯৫৫ সালে এই বসুশ্রী, বীণা আর শ্রী-তে মুক্তি পেয়েছিল সত্যজিৎ রায় পরিচালিত প্রথম ছবি ‘পথের পাঁচালী’! উপন্যাসখানা পড়া ছিল, তাই দেখতে-দেখতে কিছু তুলনা টেনেছিলাম। সর্বজয়ার হাতে দুর্গার প্রহার, এবং তার অনেক পরে, দুর্গার অকালমৃত্যু ঘটেছে, আর সে ব্যাপারে অজ্ঞ হরিহর বাড়ি ফিরে যখন স্ত্রীকে মেয়ের কথা জিজ্ঞাসা করছে, দুটি দৃশ্যেই পরিচালকের সংযম চমৎকৃত করেছিল, বিশেষ করে দ্বিতীয়টিতে, যেখানে বিভূতিভূষণ প্রত্যাশিত গ্রাম্য হাহাকারযুক্ত কান্নাই রেখেছিলেন। সঙ্গে পণ্ডিত রবিশঙ্করের আবহ সঙ্গীতও অসাধারণ! আর চোখে আজও ভাসে, ঝড়ের হাওয়ায় পুকুরে পদ্মপাতাগুলি উল্টে যাওয়ার চিত্রায়ন!
কোন এক সময় রবিবার সকালে বিশেষ প্রদর্শনীতে দেখেছি আরও দুটি পুরনো বাংলা ছবিঃ
১। ১৯৫২ সালের মহাপ্রস্থানের পথেঃ প্রবোধকুমার সান্যালের আখ্যানভিত্তিক ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন বসন্ত চৌধুরী ও অরুন্ধতী মুখোপাধ্যায়। অন্যান্য চরিত্রের মধ্যে নজর কেড়েছিলেন, যথারীতি তুলসী চক্রবর্তী, এবং এক আপাত-কৌতুকধর্মী কিন্তু জটিল ‘ব্রহ্মচারী’ চরিত্রে অভি ভট্টাচার্য। এই দ্বিতীয় অভিনেতাকে আগে ও পরে অনেক ছবিতে দেখেছি – এমনকি হিন্দী মহাভারত-এ কৃষ্ণ-রূপেও – কিন্তু ব্রহ্মচারীর মতো বিচিত্র চরিত্রে আর কখনও তাঁকে দেখিনি। সবার ওপরে ছিল ছবির গানঃ হিন্দী এবং সংস্কৃত ভাষায়! হিন্দীতে বীরেন বল, ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য, এবং বিনতা চক্রবর্তী, সংস্কৃত শ্লোকগানে মুখ্য কণ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক পঙ্কজকুমার মল্লিকের। এই ছবির পদাঙ্ক অনুসরণ করেই আসে ১৯৫৯ সালে মরুতীর্থ হিংলাজ, ১৯৭২-এ বিগলিত করুণা জাহ্নবী যমুনা (এই ছবিরও সুরকার পঙ্কজবাবু), আর ১৯৭৮-এ তুষারতীর্থ অমরনাথ।
২। ১৯৬২ সালের দাদাঠাকুরঃ শরৎচন্দ্র পণ্ডিতের জীবন কাহিনি। ছবি বিশ্বাস-অভিনীত শেষ ছবিতে তাঁর ছাড়াও ভাল লেগেছিল ছায়া দেবী ও তরুণকুমারের অভিনয়। বাড়তি পাওনা ছিল দাদাঠাকুরের স্বরচিত গান, ‘কলকাতা কেবল ভুলে ভরা’ (কণ্ঠ দেবব্রত বিশ্বাসের), আর ‘ভোট দিয়ে যা’ (কণ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের), যে গান প্রতি ভোটের সময় মাইকে বাজানো উচিৎ। হেমন্ত-দেবব্রতর এই যুগলবন্দী এর আগে বাঙালি দর্শক পেয়েছেন ১৯৪৮ সালে ‘ভুলি নাই’ আর ১৯৫১-য় ‘৪২’ ছবিতে।
এছাড়া বসুশ্রীতে রবিবার সকালে দেখেছি একের পর এক বিখ্যাত ইংরেজী ছবি – Hatari (তৃতীয় বার!), The Robe, Abbot and Costello Meet the Invisible Man – এবং নিয়মিত প্রদর্শনীতে দুটি হিন্দি ছবিঃ ১৯৬৭-তে শাম্মী কাপুর, আশা পারেখ, প্রেমনাথ অভিনীত, এবং জনৈক ‘আর ডি বর্মণ’ সুরারোপিত রহস্য ছবি ‘তিসরী মঞ্জিল’! এত ভাল লেগেছিল যে দুবার দেখেছিলাম (এবং তার জন্য মা’র কাছে বকুনিও খেয়েছিলাম) আর এক কাকার কাছ থেকে ছবির সমস্ত গানের লং-প্লে রেকর্ড উপহার হিসেবে আদায় করেছিলাম! দ্বিতীয় ছবি ১৯৬৯ সালে পৌরাণিক ‘বলরাম-শ্রীকৃষ্ণ’, নাম ভূমিকায় যথাক্রমে কুস্তিগীর দারা সিং এবং শাহু মোডক।
সবশেষে উল্লেখ করব এক রবিবার সকালে
বসুশ্রীর সাদা পর্দা সরিয়ে স্টেজে দুটি নাটক দেখার কথা। একটি সংস্থা উপস্থাপিত করেছিলেন
সুকুমার রায়ের ‘চলচ্চিত্ত-চঞ্চরী’ এবং রসরাজ অমৃতলাল বসুর ‘ব্যাপিকা বিদায়’।
প্রিয়া
সেই ছোট পিসেমশায়, যিনি বসুশ্রীতে ‘তরণীসেন বধ’ দেখতে নিয়ে গিয়েছিলেন, তিনিই ১৯৬৫ সালের পর কোন এক সময় দেশপ্রিয় পার্কের পাশে প্রিয়াতে সম্ভবত রবিবার সকালের শো তে, ১৯৫৯ সালের ছবি ‘দেড়শো খোকার কাণ্ড’ দেখিয়েছিলেন। ততদিনে পড়তে শিখেছি, হেমেন্দ্রকুমার রায়ের বইটি পড়াও হয়ে গেছে। প্রথমেই মূল শিশু-চরিত্র (গোবিন্দ?) কে দেখেই চিনেছি – এতো সেই তরণীসেন (মাস্টার তিলক)! চোর জটাধর বক্সীর ভূমিকায় কে অভিনয় করেছিলেন মনে নেই, কিন্তু তাঁর সঙ্গে আমার এক কাকার চেহারার খুব মিল খুঁজে পেয়েছিলাম! রেস্তোরাঁয় ঢুকে গোবিন্দর কাছ থেকে চুরি করা টাকা দিয়ে জটাধর খাবে বেশ কিছু টোস্ট, মামলেট, আর চা। তার দেওয়া অর্ডার শুনেই মনে হলো, টোস্ট আর মামলেটের সংখ্যা তো বইতে যা আছে তার সঙ্গে ঠিক মিলছে না! বাড়িতে ফিরে সে কথা বলতে মা বা দাদা সহানুভূতির সঙ্গে বলেছিলেন, “তাই তো! খুব অন্যায় করেছে!” এছাড়া মনে আছে ছবির প্রথম দিকে নেচেনেচে এক বৃদ্ধ গাইছেন, ‘খড় খড় খড়’। গানের শেষে সম্ভবত এক পাহারাওয়ালা বা পুলিশ এসে একটানে নাচিয়ের ছদ্মবেশ খুলে দেখান যে ব্যক্তিটি মোটেই বুড়ো নন! সাম্প্রতিক গানটি পেয়েছি। গায়ক সেই হেমন্ত!
এরপর প্রিয়াতেও, বসুশ্রীর মতো, রবিবার সকালে দেখেছি ইংরেজী ছবি, আর নিয়মিত প্রদর্শনে অনেক হিন্দী ছবি, যার মধ্যে আছে শাম্মী কাপুর-সাধনা-প্রাণ-পৃথ্বীরাজ কাপুর অভিনীত ‘রাজকুমার’, বিশ্বজিত-আশা পারেখ-প্রাণ অভিনীত ‘মেরে সনম’, দেব আনন্দ-ওয়াহিদা রহমান অভিনীত ‘গাইড’, নিরূপা রায়-বলরাজ সাহনী-কুমুদ চুগানী অভিনীত ‘লাডলা’, যা অনেক পরে বুঝেছি, বাংলা ‘মায়ামৃগ’ ছবির রূপান্তর, আর রাজেশ খান্না-তনুজা অভিনীত ‘হাথী মেরে সাথী’।
১৯৯৩ সালে বিয়ের পর আবার কয়েকবার প্রিয়াতে সস্ত্রীক আসি। এর মধ্যে একমাত্র গৌতম ঘোষ পরিচালিত ‘দেখা’ (সৌমিত্র-পরাণ-রূপা গাঙ্গুলী-ইন্দ্রাণী হালদার) খাঁটি বাংলা ছবির তকমা পেতে পারে। অপর্ণা সেন পরিচালিত Mr and Mrs Iyer-কে কোনও বিচারেই বাংলা ছবি বলা চলবে না, যদিও পরিচালিকা এবং নায়ক-নায়িকা, এবং বেশ কিছু পার্শ্বচরিত্রের অভিনেতারা সব বাঙালী।
দর্পণা
১৯৮০তে দর্পণায় (শ্যামবাজার) দেখেছি জীবেন বসু, প্রণতি ঘোষ, নবদ্বীপ হালদার, তুলসী চক্রবর্তী অভিনীত ১৯৫২ সালের ‘পাত্রী চাই’। মূলত হাসির ছবি, কিন্তু কিছু অভিমান-ভুল বোঝাবুঝির মশলা ছিল। বিলেত-ফেরত বিত্তবান পাত্র (জীবেন বসু) কবি-পাত্রীর খোঁজ করছেন। এক প্রতারক পুরুষ মেয়ে সেজে এসে সরু গলায় তার কাব্যপ্রেম ব্যক্ত করছে, “আমি খাবার সময় ডালে পটলভাজা ডুবিয়ে তাই দিয়ে থালায় পদ্য লিখি!” বিশ্বস্ত ভৃত্য (নবদ্বীপ হালদার) সব বিপদ থেকে প্রভুকে রক্ষা ক’রে তারপর দাবি করে, “একবার ‘মাই ডিয়ার’ বলে ডাকো!” চিত্রনাট্যকার সাহিত্যিক এবং আমার ছোটবেলা থেকে আমার অতিপ্রিয় দুজন বাঙালী লেখকের অন্যতম, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়!
১৯৮৯-র একটি উপভোগ্য ছবি ৬ই জানুয়ারী শ্যামবাজারের দর্পণায় মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ভ্যাম্পায়ার’দের নিয়ে ‘নিশিতৃষ্ণা’! ছবিটির প্রথমার্ধ খানিকটা ভয়-উৎপাদনে সফল হয়েছিল, বিশেষ সেই দৃশ্যে, যাতে মানবী থেকে রক্তশোষকে রূপান্তরিত বান্ধবী প্রেমিকের গাড়ির রাস্তা আটকে দাঁড়িয়ে তার গলায় নিজের ছুঁচলো শ্বদন্ত-দ্বয় বিঁধিয়ে রক্তপান করতে থাকে! তবে, বিরতির পর প্রসেনজিৎ, দ্বৈত-ভূমিকায় মুনমুন সেন (যমজ বোন, একজন প্রসেনজিতের বেদিনী-প্রেমিকা, আরেকজন রক্তশোষক ‘ডাকুন’ মানস মুখোপাধ্যায়ের শিকার), শেখর চট্টোপাধ্যায় (‘ডাকুনে’র আজ্ঞাবহ ভৃত্য, যে ডাকুনের কফিন ঘোড়ার গাড়িতে করে নিয়ে প্রভুর শিকারের খোঁজে ঘুরে বেড়ায় – মনে হয় ষাটের দশকে নির্মিত Dracula, Prince of Darkness-থেকে এ ব্যাপারটি অনুপ্রাণিত!) চিত্রনাট্য ও পরিচালনার ত্রুটির জন্য তেমন জমাতে পারেননি! গত পর্বে রাধায় দেখা ‘রক্তের স্বাদ’ ছবির মতো, বন্ধু ও ভ্যাম্পায়ার-বিশেষজ্ঞ Andy Boylan, এই ছবিটিরও একটি আলোচনা লিপিবদ্ধ করেছেনঃ
https://taliesinttlg.blogspot.com/2018/08/nishi-trishna-review.html
বিয়ের পর দর্পণায় আরও দু’বার এসেছি, দু’বারই অপর্ণা সেন পরিচালিত ছবি দেখতেঃ
১। যুগান্ত (১৯৯৫) অতিদীর্ঘ, ক্লান্তিকর একটি ‘আঁতেল’ ছবি। বিবাহ-বিচ্ছিন্ন যুগল, অনসূয়া (রূপা গাঙ্গুলী) আর দীপক (অঞ্জন দত্ত) তাদের মধুচন্দ্রিমা-যাপনের জায়গায় আবার দেখা করে। ছবিটির একটি ব্যাপারই নজর কেড়েছিল। নারী এবং নারীবাদী পরিচালিকা অতীত দেখাতে গিয়ে প্রত্যাশিতভাবেই অনসূয়াকে কাব্যিককল্পনাপ্রবণ, আদর্শবাদী, আর দীপককে এক কথায় অসংবেদনশীল ‘শালার ব্যাটা’ পুরুষ প্রতিপন্ন করেছেন। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে অনসূয়াই অনেক বেশী cynical, বিশেষ করে পরিবেশের প্রতি দীপককেই মনে হয় অনেক বেশী সংবেদনশীল।
২। পারমিতার একদিন (২০০০) একান্নবর্তী পরিবারের গৃহিণী সনকা (অপর্ণা সেন) এবং তাঁর পুত্রবধূ পারমিতার (ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত) সম্পর্কের পতন-উত্থান নিয়ে আখ্যান। অপর্ণা প্রাণপণে ‘লুচি’-কে ‘নুচি’ উচ্চারণ করে উত্তর কলকাতার গৃহবধূ হবার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু এ জাতীয় চরিত্রে তিনি চিরকালই ব্যর্থ। তাঁর নাগরিক পরিশীলিততা এবং গ্ল্যামার ভেদ করে তিনি খুব-একটা বেরোতে পারেননা। তুলনায়, অভিনয়- জীবনের গোড়ায় চরমভাবে অদক্ষ ঋতুপর্ণার অভিনয় অনেক পরিণত এবং বিশ্বাসযোগ্য। রবীন্দ্রসঙ্গীতের ব্যবহার সুচিন্তিত, কিন্তু প্রেক্ষাগৃহ-কর্তৃপক্ষ তো শেষে ‘বিপুল তরঙ্গ রে’ একটু হবার পরেই প্রোজেকশান বন্ধ করে দিলেন! ছবির প্রকৃতি বুঝে আর একটু সংবেদনশীল হওয়া যেত না?
কলকাতার বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে বাংলা ছবি দেখার আখ্যান এখানেই শেষ করছি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন