শনিবার, ১৫ জুলাই, ২০২৩

বিমান মৈত্র

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২০


ঝোড়োহাওয়া

ডিসেম্বরের সপ্তাহ-শেষের একটি ঘনিয়ে আসা সন্ধ্যে। মোজাম্মেল শাহ রোড থেকে কেটে গিয়ে যে রাস্তাটা অনুশীলন পার্কের মুখে এসে থমকে গেছে সেখানে এক মাঝবয়সী দম্পতিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। অত্যন্ত নীচু গলায় ওদের আলাপ চলছিল।

বিয়ের প্রথম জীবনে উঁকি মারলে দেখা যায় গিরিকা, যভ্যের সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী, মাঝে মাঝেই ঘুমের ভেতর বিদ্যুতের মত ঝিলিক মেরে উঠে বসছে। এনিয়ে একজন মনস্তত্ববিদকে দেখাতে তিনি বললেন, কোথাও ওর জীবনে একটি জটিল অতীতের অস্তিত্ব আছে যা সাধারণ ভাবে প্রকাশ্য নয়। চিকিৎসা ও কাউন্সিলিং করার পাশাপাশি ডাক্তারবাবু যভ্যকে এনিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করতে বারণ করে দিলেন। যভ্য খুব বাস্তববাদী এবং পজিটিভ ছেলে। রুগীর প্রতি কর্তব্য এবং সহানুভূতির ত্রুটি রাখেনি। কিন্তু ইদানিং ওরই এক কলিগের সাথে গিরিকার ঘনিষ্টতা যভ্যকে একটু ভাবিয়ে তুলেছে। এবং গিরিকা এ ব্যাপারে আড্যামেন্ট।

বিয়ে এবং দ্বিরাগমন, গিরিকার বেলায় দুটোই হয় মামা বাড়ি থেকে।  মা তখনই বলে দেয়, আমরা মরে গেলেও আর এ মুখো নয়।  বিয়ের তিন বছরের মাথায় মা-বাবা দুজনেই মারা গেলেন। কথা রেখেছিল গিরিকা।‌ এদিকে বাপের বাড়ি কিংবা ইদানিং দাদার বাড়ি যাবার কথা বললেই কোন না কোন অজুহাত দেখিয়ে সে এড়িয়ে যেত‌। বহু চেষ্টা করেও যভ্য এর কিনারা করতে পারেনি। গিরিকাও যেমন এতকাল পর যভ্যই বা কেন ওকে না বলে কয়ে বাপের বাড়ির দিকে এলো, বুঝতে পারছিল না। এই যভ্যকে গিরিকা চেনেনা।

:: চিনতে পাচ্ছ গিরিকা? যভ্যের গলা একে গম্ভীর, তার  উপর ভাঙা,খসখসে আর চাপা থাকায় অস্বাভাবিক শোনাচ্ছিল। গিরিকা পিঠের উপর ফেলে রাখা শাড়ির আঁচলটা ডান কাঁধের ওপর দিয়ে ঘুরিয়ে বুকের সামনে এনে বাঁ হাতের মুঠোয় জোরে চেপে ধরলো। একধরনের বিপন্নতা, গিরিকার চোখে মুখে ফুটে উঠল।

:: অপরিচিত নয় জায়গাটা।  গিরিকা ক্ষীণ কন্ঠস্বরে বলল, কিন্তু এখানে নিয়ে এলে... কেন?

::  ঐ একা একা দাঁড়িয়ে থাকা বিল্ডিংগুলো, ওরই কোন একটায় তোমার দাদা আই মিন, আমার ইন-ল-ব্রাদার থাকেন । খুঁজে বার করতে হবে।

:: দাদাকে ফোন করো।

::  ফোন তুলছেনা। বরং‌ ফিরে যাবার আগে একবার খুঁজে দেখা যাক্। রাস্তাগুলোর আশেপাশেও কিছু বাড়ি রয়েছে। তুমি একদিকে ঢুকে যাও। আমি সোজা গিয়ে দেখি কোথায় কি আছে। যে আগে পাবে ফোন করে দেবে। বলে গিরিকার অপেক্ষা না করেই সোজা করে হাঁটা দিল যভ্য। কয়েকটা ছেলে দূর থেকে ওদের লক্ষ্য করছিল। খানিকটা হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে থেকে  ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করল গিরিকা। যভ্য তো এইভাবে আসার ছেলে নয়।

গিরিকা তাড়াতাড়ি একপাশে সরে গিয়ে ব্যাগ থেকে ফোন বার করতে গেল।  কিন্তু হাতে উঠে এল একটা কাগজ। কতগুলো নাম। অদ্ভুত ভাবে সাজানো

                                       মাধব

                                       জয়ন্ত

              মাধব জয়ন্ত   পরিতোষ  জয়ন্ত মাধব

                                       জয়ন্ত

                                       মাধব

ঘামছিল গিরিকা। শিড়দাড়াঁয় একটি সরীসৃপ শিহরণ শুরু হয়েছে। কিন্তু ফোনটা, ফোনটা কোথায় গেল?

এখন সে কি করবে?


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন