সমকালীন ছোটগল্প |
দোস্ত রহিয়া যা
গ্রীষ্মের বৈকাল নামিয়াছে৷ গৃহের দ্বিতল বারন্দায় বসিয়া একাকী বালিকা তাহার পোষা পক্ষীর সহিত গল্প করিতেছিল। তাহার কুঞ্চিত কেশে বাঁধা দুটি বেণী রুটির লেচির মতো লাগিতেছিল। বালিকা কথার ফাঁকে ফাঁকে বিদ্যালয়ে শেখা গীত গাহিতেছিল। গীতের সুমধুর ছন্দে লেচি দুটি দদুম দুদুম দুলিতেছিল। তাহার অপূর্ব কণ্ঠে পক্ষী ভরা ছোলার বাটি হইতে মুখ তুলিয়া বালিকার দিকে চাহিয়া রহিল। পক্ষীর সংশয় -- বালিকা বাস্তবিক সুন্দর নাকি গীতের সুষমা তাহার মুখে ক্রীড়া করিতেছে! সে বুঝিয়া পাইল না এত মনোহর কন্যা কী করিয়া এক পক্ষীকে খাঁচায় আবদ্ধ রাখিতে পারে! মিনমিন করিয়া পক্ষী কহিল -- আমাকে please ছাড়িয়া দিবে? দাও না ভগিনী! গগন ডাকিতেছে মোরে –উড়িব।
বালিকার মাতা নাই। পিতা রাত্রিদিবা ধাতুব্যবসা লইয়া ব্যস্ত। কন্যার মন বুঝিতে তাহার ভারি দায় পড়িয়াছে ৷ কেবল পল্লীবাসীর ক্রমাগত তাড়নায় কন্যার জন্য দ্বিগুণ মূল্যে পক্ষী ক্রয় করিয়া অনিয়াছে এবং আনিয়াই পক্ষীকে বদ্ধ করিয়াছে। ক্ষুদ্র কন্যা বদ্ধতাকেই স্থায়ী ভালোবাসা মনে করিয়া তৃপ্ত হইয়াছে ৷ পক্ষীর সহিত কথা বলিবার - গান শুনাইবার তৃপ্তি এ জীবনে যেন শেষ হইবে না তাহার ৷ পক্ষীকে মুক্ত করিবার কথা সে চিন্তায় আনিতে পারে না ৷ এমতাবস্থায় পক্ষীর আবেদন শুনিয়া সে মস্তক নাড়াইতে লাগিতে লাগিল ৷ সেই নাড়াইবার ভিতর Yes and No দুটিই ছিল এবং দুটিই পূর্ণমাত্রায়।
এদিকে গ্রীষ্মে টবের গুল্মলতা কাতরাইতেছিল ৷ তাহারা শুষ্ক হইয়াছে - জল চায় ৷ জলসিঞ্চন করিতে করিতে বালিকা হতবাক -- গুল্মলতার সর্বাঙ্গে অস্তমিত রবির আলো পড়িয়াছে ৷ জলসিঞ্চনে তাহারা যেন ঝলকাইতেছে ৷ বালিকার বোধ হইল -- প্রতি পত্রে যেন রক্তিমবাতি জ্বলিতেছে ৷ বালিকা হতবাক -- এত আলোয় পক্ষীর মুখ আঁধারে। টানা দুই চক্ষুতে জল পড়িব পড়িব করিতেছে ৷ বালিকা ভাবিল -- এই বৈকালে বাকহীন সবুজ জীবগুলি এত আলোময় অথচ তাহার বাকপটু পক্ষীটি -- যে সমস্তদিন ডাকিয়া মনুষ্যের ন্যায় কথন করিয়া তাহাকে আনন্দে রাখে সে কেন ক্রন্দন করিতেছে ৷ কাঁদিতেছ কেন -- এ প্রশ্ন অত্যন্ত অনাবশ্যক মনে হইল মাতৃহারা কন্যার ৷ সে কেবল পক্ষীর দ্বার টান দিয়া খুলিয়া দিল। দৃঢ় কণ্ঠে বলিল -- ভগিনী u must go -- যাও গো ৷ কেবল আমার ক্ষুদ্র দুটি হস্তে তোমার চক্ষের জল মাখাইয়া দিয়া যাও।
যাওয়ার কালে পক্ষী ও তাহার বন্ধুর খুব দুঃখ হইতেছিল ৷ তবু বালিকা একমতি -- পক্ষীকে আর বান্ধিয়া রাখিবে না ৷ পক্ষী চুমু টুমু ইত্যাদি খাইয়া উড়িল ৷ বলিয়া গেল -- মাঝে মাঝে আসিয়া তোমার হস্তে ভরপেট ছোলা খাইয়া যাইব ৷
রাত্রি নামিয়াছে ৷ বালিকা গবাক্ষ দিয়া দেখিতে লাগিল -- চন্দ্রের মধ্য দিয়া মেঘের টুকরা এলোমেলো নাচিতেছে ৷ মনে হইতেছে চন্দ্র দুই টুকরা হইয়া যাইতেছে। চন্দ্র Confident। মধ্যযামে দুই টুকরা মিলিয়া গেল।
এক্ষণে পূর্ণচন্দ্র স্থানে স্থানে সমান জোছনা ঝরাইতেছে। ভগিনীদ্বয় চিরতরে একে অপরের হইয়াছে। এক পক্ষীর দুইটি ডানা। পৃথিবীর প্রিয় উপগ্রহ তাহাদের সুখী করিয়াছে।
অপূর্ব লাগল ময়ূরী মিত্রের এই লেখা! দোস্তির এক অপূর্ব নিদর্শন - মন স্নিগ্ধতায় পরিপূর্ণ! সাধু ভাষা লেখাটিকে এক অন্য স্তরে নিয়ে গেছে! শুধু গুটিকয়েক ইংরেজী শব্দ বাংলায় লিখলে আরও মধুময় হোতো! একান্তই আমার ব্যক্তিগত মতামত! ….. সুচিত্রা সেন
উত্তরমুছুনসাধু ভাষায় লেখার অধিকার সবার থাকে না। সাধু! সাধু!! ময়ূরী মিত্র নামের মানুষটা সভ্য মানুষের জগৎ থেকে প্রকৃতির বুকে যাবার সিঁড়িটা চেনেন - অবাধ যাতায়াত তার এই প্লেন থেকে ঐ প্লেনে। লেখাটি পড়ে এক অনাবিল আনন্দ পেলাম। 💚💙
উত্তরমুছুন