সোমবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৩

<<<< সম্পাদকীয় >>>>

 


কালিমাটি অনলাইন / ১১২ / একাদশ বর্ষ : দ্বিতীয় সংখ্যা    

                         

সম্প্রতি ‘অভিষেক’ সাহিত্য পত্রিকার আমন্ত্রণে গেছিলাম মালদা শহরে। উপলক্ষ্য ছিল বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট কবি প্রশান্ত গুহ মজুমদারের দুটি কবিতার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন এবং তারই প্রাসঙ্গিকতায় সাম্প্রতিক বাংলা কবিতার ধারা সম্পর্কিত আলোচনা ও পরিশেষে স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। ‘অভিষেক’ আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে মালদার বিশিষ্ট কবি ও গদ্যকাররা সমবেত হয়েছিলেন। যেমন আমার পরিচিতির মধ্যে ছিলেন তৃপ্তি সান্ত্রা, শুভ্র মৈত্র, পলাশ গঙ্গোপাধ্যায়, অনুরাধা কুন্ডা, শর্মিষ্ঠা বিশ্বাস, শক্তিপদ পাত্র; তেমনি আরও অনেকের সঙ্গেও পরিচিতি ঘটল। এছাড়া কলকাতা থেকেও আমন্ত্রিত হয়ে গেছিলেন কয়েকজন, ‘দূর্বা প্রকাশনী’র প্রকাশক এবং প্রাবন্ধিক পূর্ণেন্দুশেখর মিত্র, ‘আলোপৃথিবী প্রকাশনী’র প্রকাশক ও কবি শুভদীপ সেনশর্মা ও মৌমিতা পাল, কবিতা ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক ও কবি অলোক বিশ্বাস। সামগ্রীক অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনার গুণে এবং আলোচনার গভীরতায় এক স্বতন্ত্র উচ্চতায় পৌঁছে গেছিল। ‘অভিষেক’ পত্রিকার সম্পাদক তানিয়া গুহ মজুমদার অনুষ্ঠানের শুরুতেই তাঁর সম্পাদিত পত্রিকা সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক বক্তব্য রাখেন। তারই সূত্র ধরে প্রশান্ত গুহ মজুমদারের দুটি কবিতার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয় – ‘দূর্বা প্রকাশনী’ থেকে প্রকাশিত ‘কবিতা সমগ্র ১’ এবং ‘আলোপৃথিবী প্রকাশনী’ থেকে প্রকাশিত ‘পেয়ালা’। অত্যন্ত মনোরম প্রচ্ছদ ও সুদৃশ্য বাঁধাই, বই দুটির আকর্ষণ নিঃসন্দেহে বাড়িয়েছিল। এবং বলা বাহুল্য, প্রকাশিত বই দুটি সম্পর্কে উপস্থিত গুণীজনদের আলোচনাও সমান আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছিল। 

তা মালদায় গেছিলাম, অথচ মালদার আম ও আমের বাগানের কথা আলোচনা করব না, এটা তো হতে পারে না! মালদা মানেই তো আম এবং আমের বাগান! কথাটা শত প্রতিশত ঠিক কথা। মোট প্রায় তিনদিন ছিলাম মালদায়, প্রথম দিনে সম্ভব না হলেও পরবর্তী দুটো দিন কিছুটা ঘোরাঘুরি করেছিলাম। আর বলা বাহুল্য, আমাদের চারপাশ ঘিরে ছিল শুধু আমের বাগান। চারিদিকে এত এত আমগাছ আর আমগাছের বাগান, বিস্ময়ে শুধু দেখেই যেতে হয়। তবে একটা দুঃখ আমাদের থেকেই গেল, আমের সাম্রাজ্যে পদার্পণ করেও মিষ্টি পাকা আমের স্বাদ গ্রহণ করা সম্ভব হলো না, কেননা, সময়টা চৈত্র মাস, গাছভরা আম, কিন্তু সব আমের রঙই সবুজ, গেরুয়া বা লাল রঙের ছোপ এখনও লাগেনি তাদের কচি শরীরে। লাগবে আরও কিছুদিন পরেই, রূপসী হয়ে উঠবে তারা, বুকে টসটস করবে মিষ্টি রস, কিন্তু তখন আমরা সেখানে থাকব না, স্থানীয় বাজার থেকে মালদার আম কিনে খাব, মালদায় বসে মালদার আমের স্বাদ আস্বাদন করার আনন্দ অধরাই থেকে যাবে।

প্রসঙ্গত আম সম্পর্কিত সামান্য কিছু পড়াশোনা করে অবগত হলাম, ভারত ও বাংলাদেশে যে প্রজাতির আমচাষ হয়, তার বৈজ্ঞানিক নাম Mangifera indica। এই প্রজাতি Anacardiaceae পরিবারের সদস্য। তবে সারা পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন প্রজাতির আমের চাষ হয়, অর্থাৎ আমেরও বিভিন্ন প্রজাতি আছে, যেমন ফজলি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, খিরসা, অরুণা, আম্রপালি, মল্লিকা, সুবর্ণরেখা, মিশ্রিদানা, নীলাম্বরী, কালীভোগ, কাঁচামিঠা,  আলফানসো, বারোমাসি, তোতাপূরী, কারাবাউ, কেঊই সাউই, গোপাল খাস, কেন্ট, সূর্যপূরী, পাহুতান, ত্রিফলা, হাড়িভাঙ্গা, ছাতাপরা, গুঠলি, হিমসাগর ইত্যাদি। এছাড়াও আছে আরও অনেক আমের প্রজাতি। বাংলাদেশে আমগাছকে জাতীয় গাছের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।

আমাদের ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলা ফজলি আমের জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও এখানে আরো অনেক ধরনের আম চাষ হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে কয়েক হাজার আগে থেকেই আম চাষের প্রচলন হয়েছে। কথিত  আছে, পূর্ব এশিয়াতে খৃষ্টপূর্ব চতুর্থ বা পঞ্চম শতাব্দী থেকেই আমের প্রচলন এবং চাষের শুরু হয় খৃষ্টীয় দশম শতাব্দী থেকে। মূলত উষ্ণপ্রধান অঞ্চল আমচাষের পক্ষে উপযোগী। পূর্ব এশিয়া ছাড়া ব্রাজিল, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, মেক্সিকো, মরোক্কো ইত্যাদি দেশেও আমচাষ হয়ে থাকে। তবে তুলনামূলক বিচারে সব থেকে বেশি আম উৎপাদিত হয় ভারতেই। এর পাশাপাশি উল্লেখ করা যেতে পারে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, চীন, অস্ট্রেলিয়া, উত্তর-দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ-পশ্চিম ও মধ্য-আফ্রিকা ইত্যাদি অঞ্চলেও আমের যথেষ্ট উৎপাদন হয়ে থাকে।

মালদা অবশ্য শুধুমাত্র আমের জন্য সুখ্যাত এবং বিখ্যাত নয়, বরং এই অঞ্চলের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলা ও বাঙালির অতীত ইতিহাস এবং ঐতিহ্য। একসময় এই মালদা সংলগ্ন গৌড়বঙ্গ ছিল বাংলার রাজধানী। সেই গৌড়বঙ্গের রাজা তথা সুলতানদের শাসনকাল ছিল গৌরবজনক। বাংলা সাহিত্য ও শিল্পের এক সুবর্ণ সময়কাল। তবে সেই আলোচনা এখানে নয়। পরে কখনও বিশদভাবে করা যেতে পারে।

শুরু হলো আবার একটি নতুন বছর। বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই সবাইকে। প্রতিটি দিন সবাই সুস্থ থাকুন, সৃজনে থাকুন, আনন্দে থাকুন – এই আন্তরিক কামনা করি।

আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা :

kajalsen1952@gmail.com / kalimationline100@gmail.com

দূরভাষ যোগাযোগ : 9835544675

অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ : Kajal Sen, Flat 301, Phase 2, Parvati Condominium, 50 Pramathanagar Main Road, Pramathanagar, Jamshedpur 831002, Jharkhand, India.

 

 

 

 


২টি মন্তব্য:

  1. এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।

    উত্তরমুছুন
  2. সম্পাদকীয় শুধু কি লেখায়... রসাত্মক ব্যঞ্জনায় মুগ্ধ করেছে। যেমন কবিতা তেমন গল্প লেখায় সম্পাদক কাজল সেন হ্যাটস অফ । চলুক এই সাহিত্য প্রবাহ। প্লাবিত হই যে ... শুভ নববর্ষ ...

    উত্তরমুছুন