শনিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০২৩

সৌগত বালী

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১৫


একটা লাইটার সঙ্গে রাখা হোক

 

একেবারে চারুবাবুর মতো টানটান। লালিত্য নেই। পোড়ো বন্দরে মাল খালাস করে নেমে যাবে। ঘাসের জঙ্গল। একটা গঙ্গাফড়িং ঝোপের মধ্যে বিবর্ণ লেপটে। দেখো এখান দিয়ে তুমি হেঁটে গেছ আর তোমার দুঃখগুলো ঝোপ ঝোপ কেমন আগাছা… বুনোফুল ফুটে আছে।

এভাবে কতগুলো বছর খোলা রাস্তায় কাটিয়ে দিলাম সেই তেরো থেকে। বললে বিশ্বাস করবে না, আমি এ শহরে এমন গলি চিনি এমন শুনশান চিনি যে আমি  এখনো অসূর্যস্পশ্যা থেকে গেছি।

বলতে বলতে ও একটু এগিয়ে যায়। ওর প্রদর্শিত হাত আমি সীমারেখা টানি। আর নয়, তুমি এবার চলে যাও, না হলে কোনো কারণে তুমি ফিরে এলে আমার একাকী রুমে তোমার রান্নার ঝাঁজ… এবার খাবার সার্ভ করতে করতে রাত অনেক অথচ পাশের ঘরে যেতে চাইছ না, তোমার ভয় পাচ্ছে। আশ্চর্য এতকাল তো সেই খাঁ খাঁ গলিতে নাকি অনেক একা সেই তেরো বছর থেকে। নাকি কখনো একাই থাকেনি মেয়েটা!

ও রান্না করে টেবিলে সাজাতে থাকে এমন যে রেঁধে বেড়ে আমারই পাশে নিশ্চিন্তে ঘ্রাণে শুয়ে কাটিয়ে গেছে এখানে কতকাল। নাকি সেই শুনশান গলির কন্দরে এখনো এক মানুষ ছায়া ছায়া ফেঁদে রেখে এসেছে, গভীর রাতে আমার জানলা ঝুঁকে আমাকেই গলতে পচতে রেখে নেমে যাবে ওরা। আমি ভয় পাচ্ছি দেখে ও বলল এইসব না, এই শিহরিত রাতে একবার সে কারুর গায়ের ওপর  পা তুলে গরম পেতে পেতে ঘুমাতে চায়। কেননা এভাবে সে তেরো বছর… এবারে ও আমার গায়ে পা রেখে শুয়ে যাবে, ওর বাবা মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে  বা আমি ওসব শুনতে চাইনি। আমি সমুদ্রমন্থনে আঙুলগুলো ভিজিয়ে ফেলছি। মন্থনে একটা পাহাড় উঠে আসছে, তার ধারালো টানটান চেহার্‌ একেবারে চারুবাবু। মৃত বন্দরে ঘাস ফুলে একটা ড্রাগন ফ্ল্যাই। আমার আঙুল ও ছেড়ে দিচ্ছে, ও দূরে চলে যাচ্ছে, আমি ওর  হাতে কিছু নোট গুনে দিয়েছি। কয়েকটা রুটি ওই ঠান্ডা রাতগুলো, ও পা তুলে দেবে শুনশান গলি কিছু নোংরার ওপর… আমি গরম পেতে থাকব।

 

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন